কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫

কাজী জহিরুল ইসলাম

মধ্যরাতের পদ্য

মধ্যরাতে সদ্য লেখা পদ্যটাকে উড়িয়ে দিলাম
বন্ধ ঘরের অন্ধকারে ছন্দগুলো মুক্ত স্বাধীন
তোমার কাছে পাঠানো এই পত্রখানি ঠিকানাহীন
কষ্ট-রাতের অষ্টপ্রহর নষ্ট-মলিন স্মৃতির খামে
যত্ন করে রত্ন ভেবে পোষ্ট করেছি তোমার নামে

অদ্য আমি বিস্মৃত ব্র্যান্ড মদ্যপানে বিভোর ছিলাম
জানালাগুলো দরজাগুলো সমস্ত রাত খোলাই রেখো
সৃষ্টি-প্রহর বৃষ্টি হলে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে দেখো
দূরন্ত রাত উড়ন্ত এক চিঠির ঝাঁপি দূর আকাশে
অক্ষরেরা দক্ষ নিবিড় সখ্য করে তারার পাশে

বধ্যভূমির গদ্যগুলো দানার মতো কুড়িয়ে নিলাম
ঘণ্টি বাজে মনটি উদাস কয়েদখানার সেলের ভিতর
ভোর হলেও দোর খোলে না প্রবাসকারা এমনি ইতর
ছত্র কয়েক পত্র আমার তোমার কাছে সঙ্গোপনে
রাত্রি জেগে যাত্রী একা তীর্থবিহীন ইস্টিশনে।

  
লাল স্কার্ট

পাইনের বনে ছায়া পড়েছে
লাল স্কার্ট মেলে দিয়েছে সার্ব সুন্দরী
এখনি ঝড় হবে
আকাশে চোখ রাখে বুনো রাখাল, মাপে মেঘের ঘনত্ব
স্কার্টের কার্নিশ দোল খায় মেঘের সাথে সঙ্গমরত বসন্তের হাওয়ায়।

রাখাল যুবক খোঁজে নড়ে ওঠা রোদের উৎস।
স্কার্টের গভীরে ফেলে শিপটর দৃষ্টি
কত বন, নার্সিসের সুবাস
কত পাহাড়, ঝর্ণার কলকল
কত নদী, বহমান সময়
         পেরিয়ে অবশেষে
খুঁজে পায় সে রোদের উৎস।

এর পরের গল্পটা খুব কষ্টের
এক টুকরো বুনো রোদকে ভালোবেসে
ওভারকোটের বুকপকেটে, যার নিচে টিকটিক করে চলে হৃদয়
লুকোতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় রাখাল যুবক।

হোক না এক টুকরো
তবু তো রোদ, আগুনের সহদর
ওকে কি লুকোনো যায়?
ইলের সমাজে এ যে ঘোর অন্যায়
জাতিভেদ নেই বুঝি তোর মূর্খ রাখাল
বুঝি ভুলে গেছিস এরই মধ্যে
কী নির্মম দাহে জল্লাদ রৌদ্রের তেজ
পুড়িয়েছে তোর স্বজাতির সম্ভ্রম
আমাদের কচি ঘাস, সবুজ ফসলের মাঠ
শিপনঈয়ার ডানার পালক। 

এরপর
ইলের সমাজের রীতি অনুযায়ী
সেই পাইনের বনে
একটি নির্জন পাহাড়ের ছায়ায়
কল্লোলিত ঝর্ণার পাশে
ক্রুশবিদ্ধ করা হলো রাখালের প্রেমকে

কল্লোলিত ঝর্ণা বিষণ্ণ পাইনের বন পেরিয়ে
ক্রুশবিদ্ধ রাখালের রক্তকে পৌঁছে দিল
প্রবহমান নদীর কাছে
মেঘ ওকে উড়িয়ে নিয়ে গেল আকাশে।

আর বিরহী সার্ব-সুন্দরীর লাল স্কার্ট
প্রেমিকের রক্ত মেখে ক্রমশ আরো লাল হয়ে
ছড়িয়ে পড়লো সমস্ত বলকান আকাশে

সেই থেকে বলকানে আগুন, যুদ্ধ ও রক্তের খেলা
ঘরে ঘরে প্রেম ও ঘৃণার যুদ্ধ
যুদ্ধ ভাষা ও শব্দের
যুদ্ধ মসজিদ ও গির্জার
যুদ্ধ সম্ভ্রম ও মর্যাদার
দখলের যুদ্ধ, যুদ্ধ বাঁচা-মরার, প্রেম ও ভালোবাসার
স্বাধিকার ও স্বাধীনতার

যুদ্ধ এখন তাহাদের জীবনের অনুষঙ্গ
সবচেয়ে নিকট আত্মীয়।




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন