কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫

অমৃতা চট্টোপাধ্যায়

ঘুম নেই




ঘুম একটা ভীষণ প্রিয় বিষয় আমার, কাজেই সেটা না আসার প্রবণতা খুব কমই থাকে আমার ক্ষেত্রে। তবুও আমাদের সাধারণ ঘুমের সময় যেটা, সেই রাতটা (বলে, রাতের ঘুমটা শরীরের জন্যও খুব প্রয়োজন আমাদের) বড় শত্রুতা করছে এই ঘুমের সাথে আজকাল। ল্যাপটপে "আজ জ্যোৎস্না রাতে" বা "নিশীথ রাতের বাদল ধারা" চালিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে যখন ভাবি এবার ডাকব তাকে, অমনি পুরো ঘরটা গিলে  খেতে আসে আমায়। তুমি থাকো বা না থাকো এই অসুখটা আমার বহুদিনের। সেবার যে আমি না বলে চলে এলাম তাতে তোমার রাগ হলো, কিন্তু আমি যে এতবার  কড়া নাড়লাম তা তুমি শুনতে তো চাওনি! ঘরে আলো জ্বলছিল। খিলটাও ভেতর থেকে দেওয়া ছিল। পিছনের দরজাও তো বন্ধ দেখলাম। কাজেই পাল রাজার মতো  পালাতে তো পারোনি তুমি! তুমি তো ভেতরেই ছিলে, নাকি অন্য কেউ? আমি তো  আর জানি না, তোমার ঘরে বাস করে কয়জনা! চলন্ত বাস থামিয়ে টেনে নামাও  হাত ধরে, তারপর অটো ধরে পালাও কাজ দেখিয়ে। জানি, এখন তুমি অস্বীকার  করবে, বলবে ব্রেক কষতে ভুলে গেছি, তাই একটু ছাড়িয়ে গেছি স্টপেজটা। তাই পরের গলি ধরলাম, যদি ইউ টার্ন থাক্‌ দেখা হবে ক্ষণ। কিন্তু এখন যে ঘুমের সাথে  বন্ধুত্বটা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমার। ঘুমবো বলে যেই না চোখ বুজি অমনি নির্ভয়া (সবার মতোই অনেক পরে জানলাম, জ্যোতি সিং) গায়িছে "তুমি তারে নাম দিলে না - মনের ভুলে কেউ দিল না"। ও যদি ওর বাবার কথা শুনে ওকালতি পড়ত তাহলে কি বিচারটা অন্যরকম হতো? ওর ধর্ষক বলছে, ও বাধা না দিলে হয়তো মরতো না। হয়তো বোকামিই করল মেয়েটা! অভিজিৎদাও নাকি জানতেন, ওভাবে বেঘোরেই মরতে হবে তাঁকে, তাও বন্যাদিকে নিয়ে বেফিকর ঘুরছিলেন ভিড়ে। কত সাহস বলো! আর আমি এসব ভাবতে ভাবতে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়েই থাকি,  যদি তুমি ভেসে ওঠো। তুমি কি যত সহজে শরীর-সংসার ভাগ করতে পেরেছো আমার সাথে তত সহজে মন-বন্ধুত্ব পারনি? তাই তোমার জগতে আমার প্রবেশ নিষেধ? তাই তুমি শুধু কিছু মুহূর্ত ভাগ করতে চেয়েছিলে আর আমি সবকটা মুহূর্ত? তাই জাতিস্মর ফিরিয়ে দিলাম তোমায় - যতবার আমি জননী হয়েছি ততবার তুমি পিতা। আমার চোখের নিচের ক্লান্তি বিলিয়ে দিলাম ওই আকাশভরা তারার মধ্যে। আকাশ যতবার আমাকে ওর বিশালতা দেখাতে চায় ততবার আমার ওকে ক্ষুদ্র মনে হয়। ছোটবেলায় খুব প্রিয় ছিল ও, বিশালও। কিন্তু দিন দিন কত ছোট হয়ে যাচ্ছে ও আর আমি ক্লসট্রোফোবিক হয়ে যাচ্ছি। আমি কি সত্যি ঘুমোতে ভুলে যাচ্ছি আস্তে আস্তে, না এও একপ্রকার শীতঘুম আমার যা কাটছে না আমার কিছুতেই? এরপর যখন তা ভাঙবে তখন হয়তো সব শেষ। আমি দেখতে পাবো সবাইকে আর আমাকে কেউ পাবে না। আমি ঘুমের মধ্যে দেখতে পাই তোমাকে যদি আড়চোখে তাকাই স্বপ্নে। তুমি ছুঁড়ে দাও তোমার একটা চোখ আর আমি তা লুফে নিয়ে তাকিয়ে থাকি। তারপর দেখি আবার অদৃশ্য হয়ে গেছি আমি। কুয়োর মধ্যে থেকে পাক খেয়ে উঠছে সাউণ্ড অফ সাইলেন্স আর আমাকে গ্রাস করছে আস্তে আস্তে। পুরোটা করে নিলো একসময়। এটা কি আমার মৃত্যুভয়? একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর যদি ঘুম না ভাঙে আমার? মরা মাছ হয়ে ভাসতে চাই না আমি জীবিতের অনেক ওপরে। অন্তত যতদিন না দেখে যাই নারীর শরীরটুকু ছাড়াও তার অস্তিত্ব আছে - কোনো কিছুর বদলেই আর শরীর চাওয়া হচ্ছে না তার থেকে। আর কলমের কালির রং লাল হোক, রক্ত নয়। আর তুমি সাড়া দেবে, আমার গালেও যে দুঃখ! তারপর হাত  রাখবে আমার কপালে, হাত বুলিয়ে দেবে মাথায়, আর আমি আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ব, পরম শান্তিতে।  

1 কমেন্টস্: