এনার্জি ড্রিঙ্ক
“তুরুত তুরু, তুরু রুরু... আজই ঘরে আনুন এনার্জি ড্রিঙ্ক। যাতে আপনার বাচ্চা...”
ঝপ করে বন্ধ হয়ে গেল রেডিওটা। লোডশেডিং!
আধখ্যাচ্রা বিজ্ঞাপনটাই বেশ নাড়িয়ে দিল মোনালিসাকে। নামটা
একেবারে ঠোঁটস্থ করে ফেলেছে সে।
পাঁচবছরের বাচ্চার শরীরে গত্তি না লাগাতে পেরে এতদিনে প্রায় সব
রকম ট্রাই করে ফেলেছে মোনালিসা। হরলিক্স, কমপ্ল্যান, বর্নভিটা – সব ফেল। দিন দিন কেমন ঝিমিয়ে যাচ্ছে ছেলে। তাই আর দেরি নয়, আজই, উঁহু এক্ষুনি ঘরে আনতে হবে এই এনার্জি ড্রিঙ্কের শিশি।
ফিরিতি সিঁড়ির চৌকাঠে ঘুমের ছায়া দোল দোল...
ভর দুপুরে এনার্জি ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপনের আবহটা কানে বিন বিন
করে বাজছে মোনালিসার। শাড়ির কুঁচি করতে করতে গুনগুনিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে। মনে মনে
নিজেকেই নিজে বলছে “টিভির বিজ্ঞাপনগুলো ভাঁওতা, তাই অতো দেখিয়ে দেখিয়ে নাচন-কোদন! এটা নিশ্চয়ই সত্যি সত্যি কাজ
দেবে। আর খেতে না ভালো হলে মিষ্টি গুলে দেব!”
দোতারা তোর তারে জমিন পর...!
বাড়ির সামনের মেডিকেল শপ্টা সারা দুপুর খোলা থাকে। পাশেই
স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মোনালিসা বিনুনি দুলিয়ে কোমর বেঁকিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় মেডিকেল শপের
কাউন্টারে।
“কি বৌদি!” হেসে ওঠে মাঝবয়সি ছোকরা দোকানদার। “দাদাকে বলবেন, নতুন ফ্লেভার এনেছি...”
ঠোঁটের হাসি লুকিয়ে কথা ঘোরায় মোনালিসা। “তোরা এনার্জি ড্রিঙ্ক রেখেছিস দোকানে? একটু আগেই রেডিওর বিজ্ঞাপনে
শুনলাম...”
“হ্যাঁ রাখব না কেন! কিন্তু দাদা তো আমাকে অন্য ফ্লেভারের
কথা বলেছিল... আমি আবার হানিমুনটা আনিয়ে রাখলাম। এনার্জি ড্রিঙ্ক লাগবে জানতাম
না...”
হাওয়াটা একবার ক্লক ওয়াইজ আর একবার অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ পাক
খেলো।
পরিবেশটা ঠিক কেমন বোঝা যাচ্ছে না। এই বোঝা না বোঝার মাঝে
কাউন্টারের টেবিল, তার ওপর আড়াইশো গ্রামের টিনের কৌটো। ছোকরার ঠোঁটের হাসি ধীরে
ধীরে চওড়া হচ্ছে, হাসির ঠোঁটে খরা
লাগছে মোনালিসার। চোখ উল্টে আসে ওর... কৌটোর গায়ে লেখা নেশান অফ রিপ্রোডাকটিভ
গার্ডেন (N.R.G), সঙ্গে পুরুষ ও নারীর অন্তরঙ্গ অবয়ব।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন