কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০৮) তুষ্টি ভট্টাচার্য


নদীর অভিঘাতে ঘূর্ণন রেখা


ঘন কালো কেন্দ্রের চারপাশে যে ছায়াপথ সেখানে অবিরাম ঘূর্ণন চলছে কবিতারকবিতারা পাক খাচ্ছে কেন্দ্রাতীত অভিমুখেবৃত্তের বাইরে থাকা ছায়া মানুষরা ক্রমাগত নিজেদের পিঠ চাপড়াচ্ছে, হাততালি দিচ্ছেকেন্দ্রবিন্দু উদাস চোখে পর্যবেক্ষণ করছে সব দৃশ্য। অনড়, অটল তার অবস্থান। কেন্দ্রাভিমুখী কোনো আলো আর এসে পড়ে না তার নিবিড় অন্ধত্বে
ওই যে দূরের সরলরেখা, যেখানে কোনো বাঁক নেই, ভঙ্গিমা নেই, অথচ ওর নাম দেওয়া হয়েছে নদী! সরলরেখাটির পাশে আরও একটি আবছায়া এসে কখন যেন উড়ে এসে জুড়ে বসল! আর তারপরেই নদীর সর্বস্বান্ত হওয়ার পালা এলো


ওর নিজ
ের বলে এরপর থেকে আর কিছু রইল নানদী নাম নিয়ে বইতেই লাগল। বাঁক এলো, মোচড় এলো; ছলছল, কলকল জল এলো হুড়মুড় করে। আর ভেসে গেল, ভাসিয়ে দিল এপার ওপারঅন্ধত্বের মোড়ক খুলে তীব্র চোখে আলো শুষে খেতে লাগল রাক্ষসী। জলে তখন দাউ দাউ আগুন, একদিকে জল পুড়ছে, অন্যদিকে আগুন ভিজছে 
জলের শেষে জেগে রইল সেই বৃত্তকখনও সেই চেহারায় লেগে থাকে টিপছাপ, কখনও নাকছাবির রেশ। আমি, আমি বলতে বলতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কেউসেও বৃত্তের অক্ষরেখায় মিশে যাচ্ছে অবধারিত ভাবে। যে আমি ছাদ হবে বলেছিল, সে তখন দেওয়ালের মুখোমুখিঘর হতেই পারত, উলম্ব রেখার পাশাপাশিকিন্তু এবারও দেওয়াল আর ছাদের মধ্যে একটা ছায়া কেমন করে যেন ঢুকে পড়ে তার অদৃশ্য অস্তিত্ব নিয়ে প্রবলভাবে নড়াচড়া করছেনদী ধীরে ধীরে মোহানার দিকে এগিয়েছে বলে ওর ছটফটানি চোখে পড়ছে না তেমন। এবার নদী মনস্থির করে ফেলেছে
বৃত্তের মধ্যে যে কেন্দ্রবিন্দুটি, সেও আজ মনস্থির করে ফেলেছে সমুদ্র হবে বলে, তার দিকেই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নদীনদীর ঘুম নেই, নদীর মৃত্যু নেইএক নদীর বিনাশ হলে, হাজারো নদী তৈরি হচ্ছে হিমবাহ ভেঙে। ফল্গুধারাও বইছে অবিরামনদীকে সমুদ্রে মিশতেই হয় যে শেষে – এ তার জানা আছে যেমন, সমুদ্রও জানে নদীর অপেক্ষাআর যেসব পাতা নদী বয়ে নিয়ে এসেছে তার পথ ধরে, তারাও জানে নদীর কেন্দ্রনদীর নাভিমূলে পাতার বাস, পাতারাও জানে। তবু পাতা ওড়ে দিগ্বিদিক, কেন কে জানে! যদিও পাতা জেনে যায়, শেষমেশ পুড়ে মরাই তার সমুদ্রতার নদীতে জীবন আর মৃত্যুর ডাক দেয় সমুদ্র  
ঘর আসবেই সমুদ্র ছুঁয়ে। ঠিক যেমনটা হয় সিনেমায়। আমরা দেখি আর হাততালি দিইমৃত যেমন জেগে ওঠে কারুর হাতের ছোঁয়ায়, ঘুম ভেঙে উঠে আসে চাঁদ নদীর পাড়ে! ঠিক এমনই এক হ্যাপি এন্ডিং দেখবে বলে যেন দর্শকরা জেগে থাকেপাতা সবুজ বর্ণে মর্মর করে আর বলে – নদী কই, আমার নদী! এদিকে নদী তখন সমুদ্র সঙ্গমে পরিপূর্ণ এক আকাশ হয়ে গেছে! সেই দেখে হিংসেয় জ্বলে পুড়ে পাতাও উড়ে চলে পাখি হয়ে আকাশের দিকে। হল ভর্তি দর্শক দেখে, একটা পাখি আকাশ হলো, আর একটা নদী মেঘ!  

3 কমেন্টস্:

  1. একেবারে ঠাস বুনোট। এই লেখা নতুন প্রাপ্তি।..."জলের শেষে জেগে রইল সেই বৃত্ত। কখনও সেই চেহারায় লেগে থাকে টিপছাপ, কখনও নাকছাবির রেশ। ‘আমি’, ‘আমি’ বলতে বলতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কেউ।...... .নদীর নাভিমূলে পাতার বাস, পাতারাও জানে। তবু পাতা ওড়ে দিগ্বিদিক, কেন কে জানে! যদিও পাতা জেনে যায়, শেষমেশ পুড়ে মরাই তার সমুদ্র। তার নদীতে জীবন আর মৃত্যুর ডাক দেয় সমুদ্র।"------এই উচ্চারণ ভিন্নতর দর্শনের দিকে টানে।

    উত্তরমুছুন
  2. অনবদ্য গদ্যে বিচরন ! পড়ে মুগ্ধ হলাম ।

    উত্তরমুছুন