কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০১ অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা

৮) অণুগল্প 
ভাষা, রচনা বা লেখালিখি জিনিসটা কবে শুরু হয়েছিল কেউ বলতে পারো? না, আমি নেহাৎ পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের কথা বলছি না। খিদে পেলে বা জামাকাপড় ভিজে গেলে শিশু কেঁদে ওঠে, সেটাই তার ভাব প্রকাশ, মা তা ঠিক ধরে নেয়। তার বদলে ‘খিদে পেয়েছে, ভাত দাও’ গোছের মাতৃভাষায় ভাবপ্রকাশের কথাও বলছি না। বলছি সেই বস্তুর কথা, যা শুনতে, পড়তে বা মনে রাখতে হয়, যেমন গদ্য-পদ্য-প্রবন্ধ।

যখনই হোক, শুরুর দিকে উৎসাহ এত বেশি ছিল, যে অল্প কিছুতে মানুষের মন  ভরতো না। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখো, বেদ-ফেদ সব হুঁদো হুঁদো সাইজের। উপনিষদ-বেদান্ত-সংহিতা এই সব যোগ করলে তার ভল্যুম কী! সেইজন্যেই শুধুমাত্র সদ্‌-বেরাম্‌ভনেরা এই সব টুকরো টাকরা মনে রাখতে পারতো, বাকিরা তো হুলই  ফোটাতে পারতো না। আর শুধু কী এই! এরা না হয় ধম্মোগ্রন্থ। আমাদের যে প্রথম দিকের কাব্যি, রামায়ণ-মহাভারত! উরিব্বাবা। মহাভারতে লাখের বেশি শোলোক। ব্যাসদেব যখন সেটা কোলে নিয়ে পাঠ করতো, কুম্ভকর্ণ না কে যেন শুনতে শুনতে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। সেই জন্যে ওর কাকা বিভীষণ ওকে মহাভারত ছুঁড়ে মারলো, বেচারি মরেই গেলো। না হলে কুম্ভকর্ণ কি আর মরতো? রামায়ণের স্টোরিই পাল্টে যেত। স্যরি, ইয়ার্কি মারলাম।
কথা হচ্ছে, সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। দুনিয়া পাল্টে গেছে। আমাদের বাংলাভাষাতেও সেই গাবদা গাবদা সাইজের কাব্যি লিখেই ভাষার শুরু। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সাইজ ফ্যালনা নয়এমনকি হাল আমলে যখন গদ্য লেখা শুরু হলো   বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের হাত ধরে, তখনও সেই নভেল! বেতাল পঞ্চবিংশতি বা বিষবৃক্ষ, যাই বলো!
যদিও গদ্য লিখে রবি ঠাকুর নোবেলটা পাননি, তবু তিনিই বাংলা ভাষায় প্রথম ছোটগল্প লেখেন। অবশ্য নোবেলের জন্যে তার যে ইংরেজি গীতাঞ্জলি, সেটার ওপর  বড় বড় করে লেখা ছিল – প্রোজ ট্রানস্লেশন। তো সে যাই হোক, ভিখারিণী বলে একখান ছোটগল্প লিখেছিলেন দাদু, সেটা দিয়েই বাংলা ভাষায় ছোটগল্পের হাতেখড়ি হলোতার আগে ছোটগল্পের কন্সেপ্ট ছিল না বাংলায়, তাই বিশ্বকবি কবিতায় সেটা  বুঝিয়ে দিলেন –
ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা
নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারিটি অশ্রুজল
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ
দাদু নেই অনেক বছর হয়ে গেছে, এখনও এটাই ছোটগল্পের বেস্ট ডেফিনিশন। দাদু গল্পগুচ্ছ নাম দিয়ে প্রায় শ’খানেক মাস্টারপিস লিখে গেছেন। তারপরেও অনেকেই লিখেছেন। গল্প পড়া বেশ মজার জিনিস। গল্প শোনা আরও মজার। বাচ্চারা গল্প শুনতে ভালোবাসে। আমার বাচ্চারাও তার ব্যতিক্রম নয়
বছর পাঁচ-ছয় আগের কথা। ঘুম পাড়ানোর জন্যে আমার মেয়েকে রোজ একটা করে গল্প শোনাতেই হতোপ্রথম প্রথম আমার বেশ উৎসাহ ছিল। কিন্তু কদিন পরেই সব  গল্পের স্টক ফুরিয়ে গেল। তখন রামায়ণ-মহাভারত শুরু করলাম। কদিন পরে তাও  শেষ হয়ে গেল। কলকাতা এসে ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠাকুরমার ঝুলি কিনে নিয়ে গেলাম। সেসব দিয়ে কটা সেশন উৎরে গেল। তারপর আমি ফতুর। গ্যাঁজাখুরি গল্প  বানাতে লাগলাম, কিন্তু টানতে পারছিলাম না। অবস্থা এমন হলো যে ‘বাবা, গল্প বলো’ শুনলেই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম।
একদিন আমি তাকে বললাম, শোনো, ছোটগল্প বলে একটা জিনিস আছে।
সে বলল, ছোটগল্প আবার কী? কত ছোট গল্প?
আমি বললাম, না মা, ছোট সাইজের হলেই হবে না। গল্পটা শেষ হওয়ার পর মনে হতে হবে, তারপর কী হলো, তারপর? আমি তো দাদুর থিওরি নামিয়ে দিয়ে ওকে  একটু ভড়কে দিতে চাইলাম।
, মেয়ে বলল, একটা ছোটগল্প বলো না, বাবা।
আমি একটু ভেবে বললাম, একবার একটা লোক ছাদ থেকে পড়ে গেল।
বলে চুপ করে গেলাম, মানে গল্প শেষ। মেয়ে ঠিক বুঝে গেল, আমি ফাঁকিবাজি করছি। সে আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না। আর সত্যি বলতে কী, চালাকি দিয়ে কোনো মহৎ কার্য হয় না, স্বামীজী বলে গেছেন। বাচ্চাদের কাছে চালাকি করা একদম উচিত নয়
হঠাৎ একদিন আইডিয়াটা মাথায় এলোআমি বললাম, মা, আমি তো তোমাকে এত  এত গল্প বললাম। আজকে তুমি আমাকে একটা গল্প বলো। সে তো মহাখুশি। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কীসের গল্প শুনতে চাও বলো। আমি বললাম, তোমার যা খুশি। সে বললো, রাজকন্যার গল্প না ভূতের? আমি বললাম, ঠিক আছে, আজকে রাজকন্যারটা বলো, কালকে ভূতেরটা হবে।
টা কি সাতটা সেন্টেন্সে ওর রাজকন্যার গল্প শেষ হয়ে গেল। আমি বললাম, চলো এবার ঘুমিয়ে পড়া যাক। পরদিন ভূতের গল্পটাও শুনলাম। ওই ছসাতটা বাক্যেই। তারপর দিন ও বললো, আজকে তুমি বলো, বাবা। আমি বললাম, আমার তো কোনো গল্পই মনে আসছে না মা, তুমি আজকে একটা বলে নাও, কালকে আমি। ও  জিজ্ঞেস করলো, কীসের গল্প বলবো? আমি বললাম, তোমার যা খুশি।
ও বললো, ঠিক আছে, গর্তের গল্প বলি? আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, গর্তের গল্প আবার কী? ঠিক আছে, শুনি।
মেয়ে বললো, একটা গর্ত ছিল। যাচ্ছে, যাচ্ছে, যাচ্ছে। হঠাৎ ধুপ করে পড়ে গেল, আর পা-টা কেটে গেল। তখন একটা বাম লাগিয়ে দিলো। কী ব্যথা তাও। সারছেই না। তখন ওর মা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। তখন সেরে গেল।
এটাই ওর গল্প। শুনে আমি ভাবলাম, পদ্য নিয়ে যে এত আদিখ্যেতা হয়, মানুষের কাহিনী সবকিছু কিন্তু গদ্যেই। গর্ত একটা গল্পের চরিত্র হতে পারে, সে যে চলতে পারে, পড়ে গিয়ে তার পায়ে ব্যথা হয়, আমার ছবছরের মেয়ে না জানালে আমি কি কোনোদিন জানতে পারতাম?
আর এই গল্পের সূত্রে আরও একটা জিনিস মাথায় এসে গেল। এখন তো সময় আরও পাল্টে গেছে। পঞ্চাশ ওভারের ও ডি আই ক্রিকেটের চেয়ে বেশি পপুলারিটি পাচ্ছে এখন টোয়েন্টি টোয়েন্টিছোটগল্প পড়ার ধৈর্যই বা মানুষের কতদিন থাকবে, কে জানে! এখন তাই এসে গেছে অণুগল্প।
সবকিছু ছোট করে তার মধ্যে মহত্ব খোঁজা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তারই সূত্রে এসেছে ন্যানোটেকনোলজি। ন্যানো মানে যদিও অণু নয়, তবে তুলনাটা চলবেঅণুগল্প যে আজকেই এসেছে এমনও নয়বেশ কিছু লোক ইতিমধ্যেই অণুগল্প লিখে বিখ্যাতও  হয়েছেন। তবে ব্যাপারটা এগ্‌জ্যাক্টলি কী, সেটা জানার জন্যে আমি রঞ্জনদার দ্বারস্থ হলাম। ফেলুদা যেমন তথ্যের জন্যে হাজির হতো সিধু জ্যাঠার কাছে, আমারও সবেধন নীলমণি রঞ্জনদা।
রঞ্জনদার উত্তর সব সময় রেডিই থাকে। শুনেই নামিয়ে দিলেন অণুগল্পের শর্তাবলি।
অণুগল্প মানে যেমন লম্বা একটি আত্ম-জীবনীমূলক প্রবন্ধ নয়, তেমনি যা খুশি লিখে ফেলে একশো দেড়শো শব্দের পর বাকিটা ছেঁটে ফেলে দেওয়াও নয় অণুগল্পের  চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই রকমঃ
অণুগল্প মানে চুট্কিলা নয় কিন্তু রসকাহিনী হতেই পারে
অণুগল্পে থাকবে বাক্সংযম, ক্ষিপ্র গতি, মেধা এবং/অথবা অনুভব-নিবিড়তা
অণুগল্প হলো গল্পের জগতের আইপিএল এতে প্রতিটি বাক্যে থাকবে ছয়, চার কিম্বা  উইকেট পতনের উত্তেজনা, পরিণতির দিকে যত গড়াবে তত বাড়বে স্নায়ুযুদ্ধ এবং ঐ সময় স্বল্পতার মধ্যেই ঘটাতে হবে বিশ্বরূপ দর্শন
এইসব বলে উনি একটা বিখ্যাত অণুগল্প শুনিয়ে দিলেন গল্পটা এইঃ
দুজন শিকারী, একটি সিংহ
একজন শিকারী, একটি সিংহ
একটি সিংহ
শুনে আমি চমৎকৃত হয়ে গেলাম অবশ্য তক্ষুণি যে অণুগল্প লিখে ফেলব, এমন ট্যালেন্টও আমার নেই। তার জন্যে সঠিক মুহূর্তের দরকার হয়। দরকার হয় এক জবরদস্ত খোঁচার। সেই খোঁচাও এসে গেল একদিন, ফোনের টুংটাং আওয়াজে। মোবাইলের স্ক্রীনের ওপর তাকিয়ে দেখি একটা অচেনা নম্বর। অথচ গলাটা তো ভীষণ রকমের চেনা।
বেলাদির গলা শুনে চিনতে পারব না, এমন পাষন্ড আমি নই।
এই নম্বরটা আলাদা, কিন্তু সেই একই ভঙ্গিবয়স্কা মহিলারা যেমন কথা বলেন,  ধীরে ধীরে, টেনে টেনে। কানে কম শোনেন, তাই কণ্ঠস্বর উচ্চগ্রামে। আর, একবার কথা বলতে শুরু করলে চট করে থেমে যাবেন, এমন অপবাদ ওঁকে কেউ দেয়নি কোনোদিন।
বেলাদির সাথেও আলাপ ঐ রঞ্জনদারই সূত্রে। উনিই বছর তিনেক আগে ফোন করে আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, শোনো, তোমার কাছে একটা ফোন আসবে শ্রীমতী বেলা মিশ্রর কাছ থেকে। যা বলবেন, শুনে হ্যাঁ বলে দিও। দিয়েছিলাম।
বেলাদি ব্যাঙ্গালোরের সবচেয়ে পুরনো বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশনের লাইব্রেরিয়ান। বয়স্কা মহিলা। ওঁর স্বামী উড়িষ্যার কোনো উচ্চপদস্থ কর্মী এবং সাহিত্যিক ছিলেন, বেলাদির
 সেই সুবাদে লিটারেচারে প্রেম। আমাকে ফোনে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি অমুক মিশ্রর নাম শুনেছ? আমি তো উড়িষ্যার মানুষ বলতে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা, বিজু ও নবীন পট্টনায়ক, আর বিরজু মহারাজ-সংযুক্তা পাণিগ্রাহী এই সাতজনের বাইরে কারো নামই জানি না। বলেছিলাম, না। তাও উনি আমাকে নেমন্তন্ন করেছিলেন। বলেছিলেন, অমুক তারিখে আমাদের এক সাহিত্যসভা আছে। রঞ্জন বলল, তুমি নাকি ছড়া-টড়া লেখ। তো আমাদেরও শোনাও। শোনো, কন্ডিশান আছে। মৌলিক ছড়া হতে হবে কিন্তু। একটাই, একটার বেশি না। কাগজে লিখে নিয়ে আসবে। আমাকে একটা কপি আগে পাঠিয়ে দিতে পারবে? পারবে না? আচ্ছা, ঠিক আছে, যখন আসবে, তখনই সঙ্গে এনো। শোনো, আমি কিন্তু সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি, যে তুমি ছড়া পড়বে। সেদিন ঠিক আসবে তো? আসবে বলে শেষে অজুহাত দেখিয়ে এলেই না, এমন করবে না তো? কতক্ষণ সময় নেবে ছড়াটা পড়তে? তিন মিনিট? আচ্ছা, আমি চার মিনিট ধরে রাখছি। তার বেশি যেন না হয়। একবার ঘড়ি ধরে প্র্যাকটিশ করে নাও। দ্যাখো, কতক্ষণ লাগে। আমি ঐদিনের আগে আর একবার তোমাকে ফোন করে নেবোখন। তবে একবারের বেশি ফোন করতে পারব না। তাহলে আসছ কিন্তু...
গেছিলাম। ছড়া পড়েছিলাম। শুধু সেবারই নয়, তার পরেও বার তিনেক। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে সেই সুবাদে আলাপও হয়ে গেল। তারপর বেলাদি আমাকে নিজের বাড়িতেও এক সন্ধ্যায় নেমন্তন্ন করে ছড়াটড়া শুনলেন, ডিনার খাওয়ালেন। চমৎকার ভদ্রমহিলা, সবার মধ্যে প্রচুর গুণ খুঁজে পান। নিজেও লিখতেন এক সময়, এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় আর পেরে ওঠেন না। গল্পগুজব করতে খুব ভালোবাসেন।
এবার বেলাদি ফোন করেই বললেন, অমিতাভ, একটা বিপদে পড়ে গেছি।
প্রাথমিক উষ্ণতা বিনিময় দ্রুত শেষ করে আমি বললাম, বিপদে পড়ে আমাকে ফোন করছেন মানে নিশ্চয় ভেবে রেখেছেন আমি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারব।  নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন।
বেলাদি বললেন, হ্যাঁ, পারবে এই ভরসাতেই তো ফোনটা করলাম, কিন্তু আমি নিশ্চিত না। শোনো, আমাদের নেক্স্‌ট্‌ সাহিত্যসভা কিন্তু একুশ তারিখে।
-      একুশে ফেব্রুয়ারি? ভাষা শহীদ দিবস? বাহ্‌, তো আমাকে কী করতে হবে? শহীদ হতে হবে?
-      না, না, যাহ্‌, শহীদ হতে হবে কেন? তোমাকে আসতে হবে।
-      কোথায়, আপনার বাড়ি?
-      না, না, বাড়িতে কেন? বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশনের হলঘরে। যেখানে সভা হয়।
-      ও। ঠিক আছে। আপনি বলছেন যখন, যেতে তো হবেই। তো এতে বিপদ কীসের?
-      না, সেইটেই তো বলার। মানে কীভাবে যে বলি! শোনো, আমাদের এবারে একটা নতুন থিম হয়েছে সাহিত্যসভার। সবাইকে এবার একটা করে ছোটগল্প পড়তে হবে। ছোটগল্প জানো তো? রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ছোটগল্প মানে হচ্ছে যে গল্প শেষ হয়ে না হইলো শেষ, সেই রকম। আমরা চাইছি একেবারে ছোট সাইজের ছোটগল্প, যাকে অণুগল্পও বলা হয়।
-      ঠিক আছে, অণুগল্পই পড়ে দেব। সমস্যা কোথায়?
-      না, না, আছে। শোনো, অণুগল্পটা মৌলিক হতে হবে। তুমি তো ছড়া লেখো, গল্পের ব্যাপারে তুমি কি সাহায্য করতে পারবে? সেই জন্যেই –
-      আরে বেলাদি, আপনি মুখ ফুটে বলছেন, আর আমি করে দিতে পারব না? একুশ তারিখের তো অনেক বাকি, প্র্যাকটিশ শুরু করে দেব এক্ষুণি। অভ্যাসে কী না হয়! চাইলে মৌলিক চর্যাপদ বানানো থেকে শুরু করে ফরাসী ভাষায় সনেট লেখাও অভ্যাস শুরু করে দিতে পারি।
-      তাহলে বলছ তুমি অণুগল্প লিখে আনতে পারবে?
-      হারগিজ পারব, একশোবার পারব।
-      আমাকে আগে একটা কপি পাঠিয়ে দিতে পারবে? এই ধর ষোল-সতের তারিখের মধ্যে?
-      টেস্ট করবেন ঠিকমত হচ্ছে কি না? ঐটেই তো সমস্যা বেলাদি। অফিস থেকে আমার বাড়ি ফিরতে রাত্রি সাড়ে আটটা নটা। তারপর আপনার বাড়ি এতখানি উজিয়ে যাওয়া –
-      না, না, টেস্ট করার জন্যে না। ভাবছি, আসবো বলে আবার যদি অজুহাত দেখিয়ে না আসো! আমি কিন্তু সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি তুমি অণুগল্প পড়বে।  লেখাটা হাতে থাকলে ভরসা পাই। ঠিক আছে, একুশ তারিখেই তবে সঙ্গে এনো। একটাই কিন্তু, একটার বেশি না। কত সময় নেবে? সাত-আট মিনিটের বেশি কিন্তু সময় পাবে না। ঘড়ি ধরে একবার প্র্যাকটিশ করে নিও। শোনো, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসবে নাকি?
-      সে আসতে রাজি হলেই নিয়ে আসব। আপনি তো বিরিয়ানি কষা মাংস বোধহয় রাখছেন না। নিদেনপক্ষে একটা ফুচকাওলাকেও যদি ডাকতেন, তাহলেও বলে দেখতাম।
বেলাদির সাথে কথাবার্তা শেষ হলে ভাবতে বসলাম, এবার কী করা যায়? অণুগল্প লেখা কি চাড্ডিখানি কথা! রঞ্জনদার ফরমায়েশ তো কম না। বেলাদির সাহিত্যসভায় রঞ্জনদা থাকবেন নির্ঘাৎ। আজেবাজে কিছু পড়লে ওখানেই আমার মুন্ডুপাত করবেন।
আচ্ছা, এইটাই পড়ে দিলে কেমন হয়? ধ্যুৎ, এর মধ্যে শেষ হয়ে না হইলো শেষ ব্যাপারটা নেই।
এক কাজ করলে কেমন হয়? লাস্টে লিখে দিই, বেলাদির সহিত কথোপকথন অন্তে অমিতাভ কাগজ কলম লইয়া গল্প লিখিতে বসিল। ওখানেই শেষ করে দেব। যাতে এটা পড়া শেষ হয়ে গেলে বেলাদি ভাবতে থাকেন, কী গল্প, কী গল্প!




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন