কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

অচিন্ত্য দাশ


বই


সতেরো বছরের নাতনী মণিকারই যা দাদুর ওপর টান আছে। তাছাড়া দাদুর   দোতলার কোণার ঘরটায় বড় একটা কেউ যায়-টায় না। বিশেষ করে বছর দুই আগে দিদিমা চলে যাবার পর থেকে।
সেদিন মণিকা এসেই বলল, “ঈস সারা ঘরে ধূলো, টেবিল-ঢাকাটা কাচা হয়নি কতদিন – তুমি কি তপস্যা-টপস্যা করছ নাকি? এই পারুল, একবার আয় তো, ঘরটা ঝাঁট দে ভালো করে...”

দাদু বরাবরই একটু রসিক গোছের মানুষ। সেই কতকাল আগে দাদু নিজেরই কলেজের মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। সে গল্প মণিকা জানে। আর বেশ বোঝে যে তখনকার দিনের আন্দাজে এরকম একটা বিয়ে করা বেশ সাহসের কাজ ছিল।  মণিকা টেবিল-ঢাকাটা টান মেরে তুলে নিয়ে দেরাজ থেকে কটা বই  নিয়ে ঝাড়তে শুরু করে দিলো। দাদুর সঙ্গে মজা করার জন্য বলল, “উফ ঘরভর্তি বই, এত বই কেন রেখেছ বল তো? যখন পড়তে, তখন না হয় দরকার ছিল, এখন তো পড়ও না, সব ভুলেও গেছ...”
“কে বলল সব ভুলে গেছি... অ্যা... বললেই হলো?” দাদু মিটিমিটি হাসছে।
“আচ্ছা, বাজি রাখবে আমার সঙ্গে? তুমি যে কোন একটা বইতে কী কী লেখা আছে আমাকে বল তো... তোমার পছন্দের যে কোন বই... তারপর আমি মিলিয়ে দেখব। রাজি?”
একদম রাজি। তুই হেরে যাবি...”
“আহা, হারাও দেখি... আমি জানি আমিই জিতব”।
“আচ্ছা তাহলে শোন, নীল মলাট, নাম সিলেক্টেড পোয়েট্রি অ্যাণ্ড প্রোজ,  আমাদের কলেজে পাঠ্য ছিল। প্রথমের লেখাটা টয়েনবির, বিষয় ‘ইতিহাস কেন পড়া উচিত’ ... তারপর চারপাতা জুড়ে শেক্সপীয়রের ম্যকবেথ থেকে একটা অংশ। তারপরে ডিকেন্স, কীটসের অ্যান ওড টু আ নাইট্যাঙ্গেল ... ওদিকের মলাটটা হালকা নীল, নিচে দাম লেখা এক টাকা চারআনা...”
“কোথায় বইটা... মিলিয়ে দেখি তো পরীক্ষায় কত পেলে... হি হি!
“বইটা যে আর নেই রে! কলেজে পড়তে তোর দিদিমা ধার নিয়েছিলো, আর  ফেরৎ দেয় নি। কোথায় হারিয়ে গেছে। নেই বলেই এত স্পষ্ট করে মনে পড়ে, মলাট থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা পাতা, প্রতিটি লেখা ... সে বই আজ আর তোকে কোথা থেকে দেবো রে!”
গলা জড়িয়ে দাদুর শুকনো গালে চুমু খেয়ে মণিকা বলল, “খেলায় তুমিই জিতেছ দাদু, আমি আজ একদম হেরে গেছি তোমার কাছে...”



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন