কালিমাটি অনলাইন / ৭৪
সদ্য বিগত
বছরের ডিসেম্বরে অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিশাল লৌহ আকরিকের ভান্ডার
ঝাড়খন্ড রাজ্যের নোয়ামুন্ডি শহরে আয়োজিত হয়েছিল নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের
আঞ্চলিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের (ঝাড়খন্ড, বিহার ও ওড়িষ্যা) মনোরম অনুষ্ঠান।
এই তিনটি রাজ্য থেকে সমবেত হয়েছিলেন সংস্থার সদস্য ও শিল্পীরা। দু’দিন ব্যাপী
আনন্দ-উৎসবে একদিকে যেমন গুণী শিল্পীদের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনে উপস্থিত সবাই
মুগ্ধ হয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি বিভিন্ন চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বের সাহিত্য ও সংস্কৃতি
বিষয়ক ভাষণ ও বক্তব্যে ঋদ্ধ হয়েছেন প্রত্যেকেই। সেইসঙ্গে সংস্থার কর্মকর্তাদের
আপ্যায়ণ ও আতিথেয়তায় বিহ্বল হয়েছেন সকলেই।
এই সম্মেলনে
আলোচনার জন্য মূলত তিনটি বিষয় নির্দিষ্ট ছিল – শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগর,
বহির্বঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের
সঙ্গে অন্যান্য (ক্ষেত্রীয় ভাষা ও সাহিত্যের মেলবন্ধন - এই তিনটি বিষয়ে বক্তব্য
রাখার জন্য যাঁরা আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন, বলা বাহুল্য, তাঁরা অত্যন্ত গভীর ও
সুচিন্তিত বক্তব্য উপস্থাপিত করেছিলেন। তবে আজ কালিমাটি অনলাইন ব্লগজিনের চুয়াত্তর
তম সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখতে বসে, শুধুমাত্র একটি বিষয়ের ওপর সামান্য আলোকপাত করা
প্রয়োজন মনে করছি, যদিও প্রাসঙ্গিকতার বিচারে সম্মেলনের নির্দিষ্ট প্রত্যেকটি
বিষয়ই অত্যন্ত জরুরি।
রবীন্দ্রনাথ
বিদ্যাসাগরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত আলোচনায়, তৎকালীন বঙ্গদেশে বিদ্যাসাগরের
জন্মগ্রহণকে উপমিত করেছিলেন কাকের বাসায় কোকিলের ডিম পাড়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে। বলা
বাহুল্য, এখানে কোকিলের নিজের বাসা না বাঁধার অক্ষমতার প্রসঙ্গটি একেবারেই
অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু চতুর কাক যথেষ্ট বুদ্ধিমান না হওয়ার দরুন সে সাধারণ বিবেচনায়
নিজের ডিমের পাশাপাশি কোকিলের ডিমে তা দিয়ে উভয়ের সন্তানের জন্মদান ও শৈশব থেকে
কৈশোর পর্যন্ত যে লালন পালন করে থাকে, তাও খুব একটা জরুরি ব্যাপার নয় আমাদের
আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায়। বরং এটা বলা ঠিক হবে যে, কাকের সঙ্গে কোকিলের যে গুণগত এবং
চরিত্রগত পার্থক্য আছে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় সেদিকেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ
করেছেন। আসলে বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী ও সমকালীন বাংলার যে সমাজব্যবস্থা ও কাঠামো
ছিল, তার সঙ্গে নিতান্তই বেমানান ছিলেন বিদ্যাসাগর। রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণে
বিদ্যাসাগরের বহিরঙ্গ ছিল নিতান্তই বাঙালিসুলভ, কিন্তু অন্তরঙ্গে তিনি ছিলেন
ইউরোপীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর এই গুণগত কারণেই তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল,
প্রচলিত শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থার ঘুণধরা ও পরিবর্তিত সময়ের প্রেক্ষিতি পুরনো
কাঠামোকে ভেঙে ফেলে নতুন কাঠামো নির্মাণ করা। এবং তিনি তাই করার জন্য তাঁর জীবন
পণও করেছিলেন। প্রতিকূল আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা
প্রশ্ন উঠতে পারে, কোমল বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে তিনি কোন জাদুবলে এই ধরনের
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছিলেন? বলা বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ এই সম্ভাব্য
প্রশ্নের উত্তরও আমাদের জানিয়েছেন। আসলে বিদ্যাসাগরের জন্মগত ও স্থানগত ছাঁচটি ছিল
অত্যন্ত বলিষ্ঠ। একদিকে যে চারটি গ্রাম বিদ্যাসাগরের জন্ম ও পরিবারের সঙ্গে
নানাভাবে সম্পর্কিত ছিল – বনমালিপুর, বীরসিংহ, পাতুল ও গোঘাট – এই চারটি গ্রামেই
ছিল বিখ্যাত পন্ডিত ও গুণীজনদের বাস। বিদ্যাসাগরের জীবনে ও চরিত্রে তাঁদের সেই
বিদ্যা ও তেজস্বীতার গৌরব প্রবাহিত হয়েছিল। সেইসঙ্গে পারিবারিক সূত্রে তাঁর পিতামহ
রামজয় তর্কভূষণ, পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা ভগবতী দেবী এবং একইসঙ্গে পাঠশালার
শিক্ষক কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়, সংস্কৃত কলেজের শিক্ষক জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ও
প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ প্রত্যক্ষভাবে, আর
পরোক্ষভাবে রাজা রামমোহন রায়, স্বয়ং ডিরোজিও ও ডিরোজিওর অসামান্য ছাত্রদের প্রভাব সামগ্রীকভাবে তাঁর চারিত্রিক
বৈশিষ্ট্য গঠনে সাহায্য করেছিল। এছাড়াও আরও অনেকের নাম উল্লেখ করা যায়, যাঁদের
মধ্যে মাতৃসমা বাল্যবিধবা রাইমণির স্নেহ, দয়া ও সৌজন্য লাভ করে বিদ্যাসাগর পরবর্তী
সময়ে স্ত্রীশিক্ষা ও বিধবা বিবাহের আন্দোলনের জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
সম্পাদকীয়
লিখতে বসে লেখাটি আর দীর্ঘ করা ঠিক নয়। শুধুমাত্র আজকের পরিপ্রেক্ষিতে এই কথাই
উল্লেখ করা যায়, চারিদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পরিবেশে কিছু কিছু নদী-নালা
দৃষ্টিগোচর হলেও সাগরের দেখা আর পাওয়া যায় না। অথচ আমাদের জীবনে ও সমাজে সাগরের
সত্যিই প্রয়োজন। সাগরের জল মেঘ-বৃষ্টি হয়ে ঝরে না পড়লে নদী-নালাও যে জলশূন্য হয়ে
পড়বে!
শুরু হলো
ইংরেজি নতুন বছর ২০২০। নতুন বছর সবার শুভ হোক, এই কামনা করি।
আমাদের
সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ
যোগাযোগ :
08789040217
/ 09835544675
অথবা
সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen,
Flat 301, Phase 2, Parvati
Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar,
Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
উত্তরমুছুনসাগর হয়ে ওঠার আগেই নদী নালাদের হত্যা করা হচ্ছে
উত্তরমুছুনস্বল্প পরিসরে এক প্রয়োজনীয় সম্পাদকীয়।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।