চন্দ্রযান
‘প্লিজ একটু মুভ করুন না! খুব চাপ লাগছে’। যাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলা হল, তিনি সরি সরি বলে সামান্য নড়াচড়া করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাতে বিশেষ ফল হল না। একটা হলুদ ক্যাবের মধ্যে গাদাগাদি করে পাঁচজন পিছনের দিকের সিটে। তার মধ্যে মধুমিতা একমাত্র টিঙটিঙে রোগা যুবতী। কালো লেপাপোঁছা তক্তার মতো চেহারা। আর একমাত্র নারীও বটে।
আসলে এভাবে যাওয়া ছাড়া প্রত্যেকে অসহায়। বেদম ট্রেন অবরোধ। তার মধ্যে বিমানবন্দরে দিল্লির এক মন্ত্রী আসছেন। মহামহিমের কারণে বিভিন্ন রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ। কলকাতায় যেতে অনেক হানটান করে অনেক দরদাম করে ট্যাক্সি পাওয়া গেছে। বাড়তি এই খরচাটা বেশ কষ্টকর মধুমিতার কাছে। হস্টেলে থাকার জন্য টাকা নেই।
তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছে হ্যান্ডওভার দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে মৌলিকার কাছ থেকে। ওর খুব সুবিধা কলকাতায় থাকে বলে। আর রোগীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়। কাকে রেখে কাকে সামলাবে! একেবারে নাজেহাল হয়ে যাবে। একটু হাসিও পেল মধুমিতার এই কথা ভেবে যে, অপরাজিতা সেন নামের রোগিনীকে ও রেজিস্ট্রার খাতায় আঢ্য লিখে দিয়েছিল। ভাগ্যিস আর এম ও দিদি সেই মুহূর্তে ভুলটা ধরে ফেলেছেন! না হলে কী যে ঝাড় খেতে হত! অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য কী গভীরভাবে জনমানসে বিরাজ করছেন, এটা থেকেই বোঝা যায়।
গাড়ির ভিতর চিঁড়ে চ্যাপ্টা হতে হতে মধুমিতা ঘড়ি দেখতে পারছিল না। হঠাৎ সামনে একদল উন্মত্ত জনতা দেখতে পায় সবাই। বিপদ বুঝে গাড়ির চালক বাঁদিকের গলিতে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয় হঠাৎ। চালক আন্দাজে চালাচ্ছে। রাজ্যের দোলমন্দির বিশের বাজার শিয়ারখোলা পেরিয়ে গাড়ি ছুটছে। পাশের ভদ্রলোক বললেন, বাড়ি তাঁকে যে করে হোক পৌঁছতে হবে। একজন বললেন, বৌকে আজ রাতে ডাক্তারখানায় নিয়ে যাবার কথা ছিল। কেউ বা বাড়িতে ফোন লাগালো। কিন্তু কথা হচ্ছে না। টাওয়ার নেই। একজন ঘড়ি দেখে বললেন, এখন সাড়ে সাতটা বাজে। কলকাতায় পৌঁছতে দশটা বাজবে। কোথাকার এক শীতলা সমবায় সমিতির ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। সেই ভদ্রলোক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন। সর্বনাশ! এখনি তো দশটা বাজে! চালকভাই সান্ত্বনা দিলেন। ওটা কোনো ব্যাপার নয়। এই তো সামনে বিবেকানন্দ স্পোর্টস ক্লাব। ওখানে গেলে সন্ধ্যা ছ’টা বাজবে। শালা নির্ঘাত মাল্লু আছে। উঃ দাঁড়ান তো ভাই! পেচ্ছাপ করব। চালক বিকট হেসে উঠলো। গিলে নিন দাদা গিলে নিন!
মধুমিতার কান্না পাচ্ছে। শালার এন আর সি! বাপের ঠিক নেই জনগণের। তায় ঠাকুরদার খবর! কে একজন বাঁদিকের যাত্রী বলে উঠলেন, ওঃ! একটা চন্দ্রযানে উঠেছি বটে!
মধুমিতা বুঝতে পারছে না, বিভিন্ন সময়াঞ্চল পেরিয়ে সে আদৌ কলকাতা পৌঁছতে পারবে কি না!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন