কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

জিনাত রেহেনা ইসলাম

মেয়েখেলা (পর্ব-৮)




If not me, then who? If not now, then when?

আমি বিশ্বাস করি এমা ওয়াটসনের মতোই যে, জেন্ডার ইনইক্যুয়ালিটি পুরুষ মহিলা উভয়কেই প্রভাবিত করে। শুধু তফাৎ খুঁজে পাই অভিজ্ঞতা ও পীড়নের মাত্রায়। পুরুষও অত্যাচারিত কিন্তু তা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বয়ানযোগ্য। কিন্তু মহিলা সবটা বললে সে চিহ্নিত নয় আইসোলেটেড। সমাজ তাকে নির্লজ্জ ও দূরবৃত্তায়নের অভিযোগে  সভ্যতার আঙিনা থেকে বিদায় দেবে। তবু ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যেতে কে চা্য়! বলাটা প্রাথমিকভাবে জরুরী। সাহস নয় সত্যের প্রতি নারীদের এই দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন মনে হয়। আমি অকপটে বলি। কেননা খারাপ মেয়ের মার্কাতে আমি নিজেকে সেট করে নিয়েছি।

আমার লোকালিটিতে তিনটে মসজিদের সাইমাল্টেনিয়াসলি আজানের আওয়াজে ভোরের ঘুম ও সন্ধ্যার বিশ্রাম ভাঙ্গে। পাশেই গুলফাম শপ সেখানে হাদিস, কোরান ও বোরখা, শরীর ঢাকা চাদর পাওয়া যায়। গাড়ি ছাড়া রাস্তায় পা ফেললেই গুঞ্জন। আমার বর্তমান যৌন সঙ্গীটি কে? সে কি আমার ড্রাইভার নাকি পুরনো কেউ? উড়ে আসে এমন প্রশ্ন। আমাকে এরা নেফারতিতি বা আঞ্জেলিনা জোলির মতো নিজের ভাইয়ের সাথে থাকার অভিযোগেও অভিযুক্ত করতে পারত, যদি আমার সহোদরটি  পুরুষ হতো ও পরিবারে বসবাস করত ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের মতো ৩০০ প্রেমিক না থাকলেও বিয়ের ক্ষেত্রে সচরাচর রেকর্ড ব্রেক করে সাতটির শিরোপা পেয়েছি,  এলিজাবেথ টেইলরের চেয়ে একটি কম। আমি এই প্রতিবেশীদের সাথে বসবাস করি,  যার থেকে বুঝি নিরাপদ অজগর নিয়ে শয়ন করা! শুক্রবার মনে হয় পাকিস্তানে চলে এসেছি। জুম্মার নামাজ সেরে দলে দলে টুপি পরিহিত মানুষ রাস্তাজুড়ে ফিরতে  থাকে। আমাকে দেখলেই এখানকার পুরুষ ও নারী সমাজ নানা কাল্পনামিশ্রিত গসিপে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। যেমন আমার গাড়ি আমার প্রাক্তন প্রেমিকের গিফট, এমন কি  আমার লেখাও তিনিই লিখে দেন। শুনেছি এখানে নাকি আমাকে ব্যর্থ তসলিমা নাসরীন বা স্বঘোষিত তসলিমা বলা হয়।   

জীবনে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মেলাতে মেলাতে ক্লান্ত আমি অবশেষে জিরো পয়েণ্টে হিসেব শেষ করি কিন্তু একা মহিলার ফেক আ্যাডমায়ারের ভিড় যেন চক্রব্যূহ সব পুরুষই স্পর্শকাতর, মানে নারী শরীর ছুঁয়ে দেখার অসুখ খুব অবাক করার মতো  ভ্যানভেনে! অনেক পুরুষকে বলতে শুনি কোনো বিশিষ্ট মহিলা নিয়ে কথা উঠলেই,  আরে! উনি তো আমাকে প্রায়ই বাড়িতে ডাকতেন! মানে ভঙ্গীটা এমন যেন সেই  মহিলার আহ্বান তিনি উপেক্ষা করেছেন, যেখানে এক বিরাট কামনা চরিতার্থের ব্যাপার  ছিল দর্পের ঘোষণা মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁ পৌরুষ জাহির করেন স্ত্রী, বন্ধু, প্রতিবেশী অনুগামীদের সামনে আসলে মহিলাকে ব্যক্তি ভাবার অভ্যেস আমাদের দেশের পুরুষদের নেই মেয়ে মানেই তাকে শারীরীক এক অবয়বে দেখার অশিক্ষা তাঁরা কনসাসলি বা আনকনসাসলি বহন করে চলে তার ফসল এই যে তাঁরা ধরে নেন, যে মহিলারা তাঁদের সাথে কমফরটেবল বা ওপেন মাইন্ডেড, তারা পুরুষের সাথে বেড শেয়ারে অভ্যস্ত বা তাদের আপত্তির জায়গা তেমন নেই সেই বিষয়গুলিতে। 




স্কুল জীবনে যেসব অবিবাহিত ম্যাডামদের দেখেছি, তাদের নিয়ে গার্জেনরা ফিসফাস করত। রাগী ম্যাডামদের নিয়ে বলা হতো অমুকের তো রাগ বেশি। বিয়ে হয়নি যে এখনো! আমাদের এক বদ্ধ জলাশয়ের পরিমণ্ডল দেয় আমাদের সমাজ। মেয়ে মানেই জন্ম থেকে মৃত্যু এক বৃত্তসফরের ভাবনার অঙ্গীকার যেন! ছকে না মিললেই অরবিটের বাইরে। ইতিহাসে পড়েছি মৈত্রী, অপালা, লোপামুদ্রার পরের যুগে স্বাধীনতা একমাত্র অভিনেত্রী ও বারাঙ্গনাদের দেওয়া হতো এই শব্দবন্ধনীর ব্যবহার প্রমা করে,  স্বাধীনতার পরিসর কোন্‌ অঙ্গনে বাঁধা ছিল। সেই দন্ডের ভার বুঝি বহন করার দায় থেকে গেছে আমাদের!

একসময় আমার গাড়ি সংক্রান্ত এক সমস্যায় এক প্রশাসনিক আধিকারিক বাড়িতে আসেন তিনি সব শুনে যাবার বেলায় আমাকে অবাক করে বলেন, কোলাকুলিটা হয়ে যাক! পায়ে পায়ে এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে চলেও রাস্তায় বিশ্বাস হারায় না আমাদের। তাই বুঝি আমরা একদম এই মেরুর বিপরীতে থাকা শ্রদ্ধেয় দাদা বা পিতাসম মানুষদের কাছে পৌছে যেতে পারি জীবনে সেই সম্পর্কগুলি খুব মূল্যবান হয়ে ওঠে এক সিনিয়র লেখক পরিচয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই বলেন, মধুমাস কাকে বলে জানেন? রাগে ঘৃণা এমন জ্বালা তৈরি হয় যে তীব্র বিরক্তির সাথে বলি, না! তিনি আরো হতবাক করে বলেন, বসন্তকাল? কী নির্লজ্জ হতে পারে পুরুষ! এদের স্পর্ধিত উক্তি শুনলে সহস্র বছর মহিলা হবার স্বাদ প্রগা হয় এমন নিঃস্ব পুরুষজীবনের কিই বা দরকার যা সারাটা জীবন একমনে শরীরের আয়োজনে ব্যস্ত!

আমি জীবনের প্রায় প্রতিটি পদপক্ষেপে লক্ষ্য করেছি, নারীর বয়স ও দেহসৌষ্ঠব তার আইডেন্টিটি কার্ড। পরে তার শিক্ষা ও যোগ্যতা। সর্বত্র প্রথমে ভালো চেহারার মেয়েদের অনাবশ্যক সুবিধা ও অহেতুক আতিথেয়তার বাতুলতা। ব্যতিক্রম সেখানে খুব সীমিত। চেহারার নিরিখে মেয়েদের সাথে দ্রুত বন্ধুত্ব ও তার সহজলভ্যতা নিয়ে নানা মিথ। তারপরেও প্রায়ই শুনে বড় হয়েছি, দেখতে শুনতে ভালো একটি মেয়ে দেখো! ছেলের বিয়ে দেবশো পিসটি যেন নজরকাড়া হয়!

না বিদ্রোহ নেই এই মানসিকতার পরতে পরতে লেগে থাকা কাঁথার কাঠামোতে, যা অশিক্ষা থেকে শিক্ষার গন্ধই ওড়ায়। শুধু মেয়েদের বোধহীনতা থেকে উত্তর চাই,  কেননা এই অজ্ঞানতাই তার পরম শত্রু। এই ছায়াযুদ্ধের সংগ্রামে নিজের কাছে নিজেকেই জেতানো বাকি!



(ক্রমশ)  







0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন