কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

সাইলেন্ট স্পেস

- এই যে দাদা, হ্যাঁ বস আপনাকেই বলছি! পিছনে আমরা সবাই দাদুকে কনসিডার  করেছি। আপনি একটু পারছেন না বুড়ো মানুষটাকে লাইনে এগিয়ে দিতে?
- থামুন তো! বেশি কপচাতে আসবেন না। দাদু এমনিতেই এগিয়ে রয়েছেন। আর  ক’টা দিন শান্তিতে বেঁচে থাকতে দিন। আমার সরকারি চাকরি না, বুঝলেন? এ. জি. এম. আছে বারোটায়। ভি. সি. করতে হয় আমাকে। রোজই গাঁতন খাই, আজ দেরি হলে প্যান্ট হাতে করে চুপচাপ দেওয়ালের দিকে মুখ করে পেছন ফিরে দাঁড়াতে হবে
দাদু আপনি ছায়ায় ঐ বেঞ্চিতে বসুন! আমি লাইন রাখছি
           
গতকাল রাতে বাতিল হয়েছে নোট। বাতিল হয়েছে স্বস্তি। তোমার রং কালো বা ফর্সা যাইহোক
তোমার বাতিল হয়ে যাওয়া নোট হতেও পারে কালোধন। তাই আলোর ঠিকানা হাতে আধার জেরক্স বা প্যানকার্ড। বাতিল হেমন্তের ঝিম রোদটাও। খাঁ খাঁ করে পুড়িয়ে দিচ্ছে গা মাথা রোদ্দুরের তেজে মৃদুতার পরিবর্তেলাইন রাখা ঐ ছেলেটার মতো বৃদ্ধও একদিন ছিলেন টগবগে ঘোড়া। কর্পোরেশনে ভালো পোস্টে চাকরি করেছেন অবসর নেওয়া অবধিদীপ্তি দিদিমণি তাঁকে পছন্দ করেননি বলে আজও অকৃতদারঅথচ তিনি খুব চেয়েছিলেন দীপ্তি তাঁর স্ত্রী হোকতাঁদের ছেলে মেয়েও তেমনি বিদ্বান হবে। ঐ যে ছেলেটি বৃদ্ধের লাইন রেখেছে, বৃদ্ধের নাতি হলে আজ হয়তো এই বয়সেরই হতোদীপ্তি দিদিমণি কিন্তু, বৃদ্ধ যখন যুবক ছিলেন, তাঁর সেই ভালো লাগার কথা বিন্দুমাত্র জানতেন না।

এমনি করেই তো অনেকটা অপরিচিত থেকে যায় একে অন্যের যাপন মহাকাশ। মহাশূন্যের মতো বার্ধক্যে সেও তো শূন্য নয় পুরোপুরি
থেকে যায় অতি অল্প পরিমাণ পূর্ণতার প্লাজমা, কখনো একটু ভালো লাগার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ, প্রেম নামের চৌম্বক ক্ষেত্র এবং নিউট্রিনোর মতো অনেকটা হাহাকার। মনের ভেতরে  যে মহাবিশ্ব তার সবটুকু নিংড়ে কে কবে বলেছে! কেই বা তার নাগাল পেয়েছে!  যেমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক অংশে আমাদের বসবাস। তেমনই খুব অল্প বিষয় অন্যদের চোখে ধরা পড়ে। এর মধ্যে কত যে রহস্য রয়ে যায়, যা জানতে পারে না কেউ কখনোগতকাল রাতের আগে যেমন কেউ জানতে পারেনি কেন হাজার কিংবা পাঁচশোর নোট বাতিল! কবে সিদ্ধান্ত হলো! কাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে!  জনসমুদ্রের কাছে কীভাবে অজানা রয়ে গেল সমস্তটা!

দীপ্তি দিদিমণির বিয়ে হয়েছিল তাঁর অমতে এক ধনী লোহার কারবারির সঙ্গে। কারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! বৃদ্ধের লাইন রেখে দেওয়া ঐ ছেলেটার মুখ অনেকটা যেন বিবাহবিচ্ছিন্না দীপ্তি দিদিমণির মতো!
কোন ইথার বাতিল করে দিয়ে গেল পরস্পরের ঘুণাক্ষর যোগ...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন