দ্বন্দ্বসমাস ও কবির মুকুট
শুদ্ধ সঙ্গীতের ভাষা মানে শুধু সুরের ভাষা। যেসব প্রাকৃতিক শব্দ থেকে মানুষের মনে সুরের ধারণা তৈরি হয়েছিল, যেমন বিভিন্ন পশুপাখির ডাক, তা একান্তভাবে সুরের পর্দানির্ভর অনুভূতি। সৃষ্টি হবার পর বহুদিন পর্যন্ত সুর'কে কথার ভার বহন করতে হয়নি। আদিম সুরের ধারাটিকে যখন কথার অবলম্বন গ্রহণ করতে হয়েছিল তখন তার পিছনে ছিল দু'ধরনের প্ররোচনা। হয় অধ্যাত্ম, নয় মানুষী প্রেমের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া। পৃথিবীর সব দেশেই ধ্রুপদী সঙ্গীতে কথার কোনও ভূমিকা নেই। অন্যদিকে লোকগীতের যে ঘরানা, সেখানে শুধুই কথার শিল্প, সুর সেখানে বাহনমাত্র। কথাভিত্তিক বা বাণীভিত্তিক যে সঙ্গীতধারা'কে আমরা জানি, তা পৃথিবীর সামগ্রিক গীতসম্ভারের একটা অংশমাত্র, অতএব তার ভূমিকাও সেই অর্থে সীমাবদ্ধ।
একটা প্রশ্ন সব সময়েই প্রাসঙ্গিক থাকে। গীতিকবিতা, যা'কে আমি লিরিক নামেই অভিহিত করব, তা কতটা কবিতা? যাঁরা লিরিক তথা তা'কে ভিত্তি করে সঙ্গীতরচনা করেন, তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ স্পর্শকাতর। সারা পৃথিবীতেই লিরিক রচয়িতারা, বাংলায় গীতিকার, নিজেদের 'কবি', অর্থাৎ যাঁরা 'কবিতা' রচনা করেন তাঁদের সমান স্বীকৃতি দাবি করেন। কিন্তু অধিকাংশ পণ্ডিতই গীতিকারদের সেই স্বীকৃতি দিতে ঠিক রাজি ন'ন। এর মানে এই নয় লিরিকরচনা কবিতা রচনার চাইতে 'সহজ' বা সংস্কৃতিগতভাবে অকুলীন। আসলে উভয়ের ক্ষেত্রটাই একেবারে পৃথক। লিরিক সাধারণত শ্রাব্য সুরমাধ্যম, অন্যপক্ষে কবিতা একটি পাঠ্যমাধ্যম এবং সুরের সহযোগ প্রত্যাশী নয়। কবিতা অক্ষরের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্মাণ, অন্যদিকে লিরিক সুরনির্ভর রচনা। এই দু'টি শৈলির নির্মাণ ও সংযমের পরিভাষা আলাদা। কবিতার ভাষাটি'কে যদি বলা যায় সাহিত্যভাষা, তবে লিরিকের ভাষাটি সুবোধভাষা। লিরিকের একটা দায় থাকে, প্রথমবারেই শ্রোতার মনে 'বুঝে' যাবার মতো একটা অর্থের অভিঘাত তৈরি করা। অপরপক্ষে কবিতা'র 'অর্থে'র নানা স্তরবিভাজন থাকে। দুরূহতার মাপকাঠিতে ভিন্ন সমতল। কবিতা একবার কানে শুনেই তা'কে সম্পূর্ণতঃ আত্তীকরণ করা যায় না। অর্থাৎ কবিতাকে সাহিত্যের নানা ম্যানারিজম ও ফর্মের দুরূহতা'কে স্বীকার করে নিতে হয়। সাহিত্যের ছাত্র'কে কবিতার পাঠ নিতে গেলে একটা দীর্ঘ স্ট্রাকচার্ড পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। লিরিকের সে দায় নেই।
বঙ্কিম ভাবতেন, ভারতবর্ষের স্বর্ণযুগ মানে আর্যপুরুষের দাপটমুখর সময়কাল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ভারতবর্ষ 'ধর্মশৃঙ্খলে' এমন বাঁধা পড়ে গিয়েছিল যে তাদের উদ্যম, পৌরুষ সব বিসর্জিত হয়ে একদিকে 'ধর্মসাহিত্য' অর্থাৎ পুরাণ ইত্যাদি এবং অন্যদিকে কাব্যসঙ্গীত জাতীয় অলস, উদ্যমহীন বিলাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। তার উপর আবার বঙ্গদেশে মানুষ নানা কারণে স্বভাব-অলস হবার পাপে আর্যতেজের গৌরব থেকে প্রথম থেকেই বঞ্চিত। উপরন্তু তাদের দ্বারা “উচ্চাভিলাষশূন্য, অলস, নিশ্চেষ্ট, গৃহসুখপরায়ণ চরিত্রের অনুকরণে এক বিচিত্র গীতিকাব্য সৃষ্ট হইল। সেই গীতিকাব্যও উচ্চাভিলাষশূন্য, অলস ভোগাসক্ত গৃহসুখপরায়ণ। সে কাব্যপ্রণালী অতিশয় কোমলতাপূর্ণ, অতি সুমধুর, দম্পতিপ্রণয়ের শেষ পরিচয়। অন্য সকল প্রকার সাহিত্যকে পশ্চাতে ফেলিয়া, এই জাতিচরিত্রানুকারী গীতিকাব্য সাত আট শত বৎসর পর্যন্ত বঙ্গদেশে জাতীয় সাহিত্যের পদে দাঁড়াইয়াছে। এই জন্য গীতিকাব্যের এত বাহুল্য”। নিদারুণ অভিযোগ। বঙ্কিম যখন এই লেখাটি লিখেছেন তখন জোড়াসাঁকোর বিরাট মানুষগুলি প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের নানা শৈলি, প্রকরণকে আত্মস্থ করে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, অপেরা ইত্যাদি পূর্ণ উদ্যমে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। তখন সাহিত্যসমাজে কুলীন ছিল অধ্যাত্মিক বা দেশপ্রেমবিজড়িত উদাত্ত কাব্যচর্চা। মনে হচ্ছে সমাজের ‘মুভার’ আর ‘শেকার’দের কাছে গীতিকবিতা বা লিরিক নেহাৎ এক জল-অচল বিনোদন মাত্র।
কবিতা ও লিরিকের উত্তমর্ণতা বা অধমর্ণতার বিচার নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কগুলি ভাবনাচিন্তা করে এসেছেন। সেই সব মেধামুখিন উপলব্ধিগুলিকে সংক্ষিপ্ততম সাধারনীকরণ করেও এখানে ধরানো যাবে না। সে চেষ্টাও করব না। তবে একটা কথা অবশ্য মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলা লিরিকও প্রাক রবীন্দ্রপর্বে দেশেবিদেশে তার অন্যান্য সহযাত্রীদের মতোই 'কবিতা'র 'অভাবী আত্মীয়'ই ছিল। বঙ্কিমের উল্লিখিত অবস্থান থেকে এই ধারণাটি বিশেষ প্রকট হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ একা আমাদের ভাষায় এই হিসেবটি উল্টে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে তাঁর সমতুল কাউকে পাওয়া যায়নি বটে, কিন্তু বাংলায় লিরিক রচনাকারীদের সঙ্গে 'কবি'দের পার্থক্যটি অন্যান্য ভাষা'র তুলনায় কমে গিয়েছে। তার ফলে আমাদের সন্ধান'টি অনেকটা দূরবীনের বিপরীত দিক দিয়ে দেখা চরাচরের মতো দেখাবে।
ভবভূতি বলেছিলেন, “বিপুলা চ পৃথ্বী, কাল নিরবধি”। মানুষের বোধ-বুদ্ধি-রুচি সব কালনিয়ন্ত্রিত। কালের ধর্ম হলো পরিবর্তিত হওয়া। তাই কোনও পরিভাষা, উপলব্ধি, মননই চিরস্থায়ী নয়। তিনশো বছর আগে মানুষ যে প্রকাশভঙ্গিটিকে 'গান' বলে জানতো, আজ তার থেকে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। পাঁচ-ছশো বছর আগের বিদ্যাপতি বা জয়দেবের রচিত গান এখনও মানুষ গায়। গীতগোবিন্দমে সব গানের রাগ-তাল নির্দেশ দেওয়া আছে, তা মেনেই গায়। কিন্তু তা কি আর জয়দেবের নিজের সময়ের সঙ্গে মিলবে? তাই 'গান' কী বা 'কবিতা' কা'কে বলে, কখন তা সফল হয়, সার্থক হয়, তা'র কোনও সরল সমীকরণ নেই। অসংখ্য মানদন্ড রয়েছে, কোনোটাই তুচ্ছ বা ভ্রান্ত নয়। কবিতা হোক বা গান, আসলে তা একধরনের দূষণমুক্ত, অক্সিজেনভরা হাওয়ার প্রবাহ। আমাদের বোধের জানালা দিয়ে ঢোকে, দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। যত হাটের ধূলা, মনের কালো উড়িয়ে দিয়ে অনন্তের দিকচক্রবালে। আমরা তাকে অনুভব করি, কিন্তু মুঠোয় ভরে রাখতে পারি না। তাকে পেতে গেলে জীবনের সব দরজা-জানালা হাট করে খুলে রাখতে হবে। কখনও তা ঝোড়ো বাতাস, কখনও ভেজা আবেশ, কখনও বা বসন্তসমীর। একভাবে এটাকে 'যত মত, তত পথ' বলা যেতে পারে। লক্ষ্য তো একটাই। দিনের শেষে শিল্পের আয়নায় নিজের বোধবুদ্ধির পরিধিটা মেপে নেওয়া। শান্তি পাওয়া, অশান্তিও। তাও তো একটা পাওয়া। নয়তো বীণা বাজবে কী করে?
শুদ্ধ সঙ্গীতের ভাষা মানে শুধু সুরের ভাষা। যেসব প্রাকৃতিক শব্দ থেকে মানুষের মনে সুরের ধারণা তৈরি হয়েছিল, যেমন বিভিন্ন পশুপাখির ডাক, তা একান্তভাবে সুরের পর্দানির্ভর অনুভূতি। সৃষ্টি হবার পর বহুদিন পর্যন্ত সুর'কে কথার ভার বহন করতে হয়নি। আদিম সুরের ধারাটিকে যখন কথার অবলম্বন গ্রহণ করতে হয়েছিল তখন তার পিছনে ছিল দু'ধরনের প্ররোচনা। হয় অধ্যাত্ম, নয় মানুষী প্রেমের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া। পৃথিবীর সব দেশেই ধ্রুপদী সঙ্গীতে কথার কোনও ভূমিকা নেই। অন্যদিকে লোকগীতের যে ঘরানা, সেখানে শুধুই কথার শিল্প, সুর সেখানে বাহনমাত্র। কথাভিত্তিক বা বাণীভিত্তিক যে সঙ্গীতধারা'কে আমরা জানি, তা পৃথিবীর সামগ্রিক গীতসম্ভারের একটা অংশমাত্র, অতএব তার ভূমিকাও সেই অর্থে সীমাবদ্ধ।
একটা প্রশ্ন সব সময়েই প্রাসঙ্গিক থাকে। গীতিকবিতা, যা'কে আমি লিরিক নামেই অভিহিত করব, তা কতটা কবিতা? যাঁরা লিরিক তথা তা'কে ভিত্তি করে সঙ্গীতরচনা করেন, তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ স্পর্শকাতর। সারা পৃথিবীতেই লিরিক রচয়িতারা, বাংলায় গীতিকার, নিজেদের 'কবি', অর্থাৎ যাঁরা 'কবিতা' রচনা করেন তাঁদের সমান স্বীকৃতি দাবি করেন। কিন্তু অধিকাংশ পণ্ডিতই গীতিকারদের সেই স্বীকৃতি দিতে ঠিক রাজি ন'ন। এর মানে এই নয় লিরিকরচনা কবিতা রচনার চাইতে 'সহজ' বা সংস্কৃতিগতভাবে অকুলীন। আসলে উভয়ের ক্ষেত্রটাই একেবারে পৃথক। লিরিক সাধারণত শ্রাব্য সুরমাধ্যম, অন্যপক্ষে কবিতা একটি পাঠ্যমাধ্যম এবং সুরের সহযোগ প্রত্যাশী নয়। কবিতা অক্ষরের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্মাণ, অন্যদিকে লিরিক সুরনির্ভর রচনা। এই দু'টি শৈলির নির্মাণ ও সংযমের পরিভাষা আলাদা। কবিতার ভাষাটি'কে যদি বলা যায় সাহিত্যভাষা, তবে লিরিকের ভাষাটি সুবোধভাষা। লিরিকের একটা দায় থাকে, প্রথমবারেই শ্রোতার মনে 'বুঝে' যাবার মতো একটা অর্থের অভিঘাত তৈরি করা। অপরপক্ষে কবিতা'র 'অর্থে'র নানা স্তরবিভাজন থাকে। দুরূহতার মাপকাঠিতে ভিন্ন সমতল। কবিতা একবার কানে শুনেই তা'কে সম্পূর্ণতঃ আত্তীকরণ করা যায় না। অর্থাৎ কবিতাকে সাহিত্যের নানা ম্যানারিজম ও ফর্মের দুরূহতা'কে স্বীকার করে নিতে হয়। সাহিত্যের ছাত্র'কে কবিতার পাঠ নিতে গেলে একটা দীর্ঘ স্ট্রাকচার্ড পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। লিরিকের সে দায় নেই।
বঙ্কিম ভাবতেন, ভারতবর্ষের স্বর্ণযুগ মানে আর্যপুরুষের দাপটমুখর সময়কাল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ভারতবর্ষ 'ধর্মশৃঙ্খলে' এমন বাঁধা পড়ে গিয়েছিল যে তাদের উদ্যম, পৌরুষ সব বিসর্জিত হয়ে একদিকে 'ধর্মসাহিত্য' অর্থাৎ পুরাণ ইত্যাদি এবং অন্যদিকে কাব্যসঙ্গীত জাতীয় অলস, উদ্যমহীন বিলাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। তার উপর আবার বঙ্গদেশে মানুষ নানা কারণে স্বভাব-অলস হবার পাপে আর্যতেজের গৌরব থেকে প্রথম থেকেই বঞ্চিত। উপরন্তু তাদের দ্বারা “উচ্চাভিলাষশূন্য, অলস, নিশ্চেষ্ট, গৃহসুখপরায়ণ চরিত্রের অনুকরণে এক বিচিত্র গীতিকাব্য সৃষ্ট হইল। সেই গীতিকাব্যও উচ্চাভিলাষশূন্য, অলস ভোগাসক্ত গৃহসুখপরায়ণ। সে কাব্যপ্রণালী অতিশয় কোমলতাপূর্ণ, অতি সুমধুর, দম্পতিপ্রণয়ের শেষ পরিচয়। অন্য সকল প্রকার সাহিত্যকে পশ্চাতে ফেলিয়া, এই জাতিচরিত্রানুকারী গীতিকাব্য সাত আট শত বৎসর পর্যন্ত বঙ্গদেশে জাতীয় সাহিত্যের পদে দাঁড়াইয়াছে। এই জন্য গীতিকাব্যের এত বাহুল্য”। নিদারুণ অভিযোগ। বঙ্কিম যখন এই লেখাটি লিখেছেন তখন জোড়াসাঁকোর বিরাট মানুষগুলি প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের নানা শৈলি, প্রকরণকে আত্মস্থ করে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, অপেরা ইত্যাদি পূর্ণ উদ্যমে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। তখন সাহিত্যসমাজে কুলীন ছিল অধ্যাত্মিক বা দেশপ্রেমবিজড়িত উদাত্ত কাব্যচর্চা। মনে হচ্ছে সমাজের ‘মুভার’ আর ‘শেকার’দের কাছে গীতিকবিতা বা লিরিক নেহাৎ এক জল-অচল বিনোদন মাত্র।
কবিতা ও লিরিকের উত্তমর্ণতা বা অধমর্ণতার বিচার নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কগুলি ভাবনাচিন্তা করে এসেছেন। সেই সব মেধামুখিন উপলব্ধিগুলিকে সংক্ষিপ্ততম সাধারনীকরণ করেও এখানে ধরানো যাবে না। সে চেষ্টাও করব না। তবে একটা কথা অবশ্য মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলা লিরিকও প্রাক রবীন্দ্রপর্বে দেশেবিদেশে তার অন্যান্য সহযাত্রীদের মতোই 'কবিতা'র 'অভাবী আত্মীয়'ই ছিল। বঙ্কিমের উল্লিখিত অবস্থান থেকে এই ধারণাটি বিশেষ প্রকট হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ একা আমাদের ভাষায় এই হিসেবটি উল্টে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে তাঁর সমতুল কাউকে পাওয়া যায়নি বটে, কিন্তু বাংলায় লিরিক রচনাকারীদের সঙ্গে 'কবি'দের পার্থক্যটি অন্যান্য ভাষা'র তুলনায় কমে গিয়েছে। তার ফলে আমাদের সন্ধান'টি অনেকটা দূরবীনের বিপরীত দিক দিয়ে দেখা চরাচরের মতো দেখাবে।
ভবভূতি বলেছিলেন, “বিপুলা চ পৃথ্বী, কাল নিরবধি”। মানুষের বোধ-বুদ্ধি-রুচি সব কালনিয়ন্ত্রিত। কালের ধর্ম হলো পরিবর্তিত হওয়া। তাই কোনও পরিভাষা, উপলব্ধি, মননই চিরস্থায়ী নয়। তিনশো বছর আগে মানুষ যে প্রকাশভঙ্গিটিকে 'গান' বলে জানতো, আজ তার থেকে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। পাঁচ-ছশো বছর আগের বিদ্যাপতি বা জয়দেবের রচিত গান এখনও মানুষ গায়। গীতগোবিন্দমে সব গানের রাগ-তাল নির্দেশ দেওয়া আছে, তা মেনেই গায়। কিন্তু তা কি আর জয়দেবের নিজের সময়ের সঙ্গে মিলবে? তাই 'গান' কী বা 'কবিতা' কা'কে বলে, কখন তা সফল হয়, সার্থক হয়, তা'র কোনও সরল সমীকরণ নেই। অসংখ্য মানদন্ড রয়েছে, কোনোটাই তুচ্ছ বা ভ্রান্ত নয়। কবিতা হোক বা গান, আসলে তা একধরনের দূষণমুক্ত, অক্সিজেনভরা হাওয়ার প্রবাহ। আমাদের বোধের জানালা দিয়ে ঢোকে, দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। যত হাটের ধূলা, মনের কালো উড়িয়ে দিয়ে অনন্তের দিকচক্রবালে। আমরা তাকে অনুভব করি, কিন্তু মুঠোয় ভরে রাখতে পারি না। তাকে পেতে গেলে জীবনের সব দরজা-জানালা হাট করে খুলে রাখতে হবে। কখনও তা ঝোড়ো বাতাস, কখনও ভেজা আবেশ, কখনও বা বসন্তসমীর। একভাবে এটাকে 'যত মত, তত পথ' বলা যেতে পারে। লক্ষ্য তো একটাই। দিনের শেষে শিল্পের আয়নায় নিজের বোধবুদ্ধির পরিধিটা মেপে নেওয়া। শান্তি পাওয়া, অশান্তিও। তাও তো একটা পাওয়া। নয়তো বীণা বাজবে কী করে?
শ্রেয়ত্বের যে দায় কবিতাকে বহন করতে হয় তার স্ফূর্তি ঘটে
কবির স্বাধীন চিন্তা ও শৈলির কৌশলের মধ্যে দিয়ে। লিরিকের দায় অন্য জায়গায়। তাকে
নির্দিষ্ট সুর-তাল-লয়ের মধ্যে বাঁধা হয়ে থাকার বন্ধন স্বীকার করতে হয়। লিরিকের
ক্ষেত্রে দেখি শব্দ প্রয়োগে কখনও বা ধ্বন্যাত্মক শব্দ বা কখনও আবার ভারি তৎসম
শব্দের আশ্রয় নিতে হয় সুর বা লয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার প্রয়োজনে। লিরিক
শ্রুতিমধুর হওয়া প্রয়োজন। বাংলাগানের আদিরূপ অর্থাৎ কীর্তন রচয়িতারা কোমল ও ললিত
বাণী প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সুর বা তাল ও লয়ের জগতটি, বিশেষত মেলোডি প্রকরণে, সম্পূর্ণত আবৃত্ত বা বৃত্তীয় চলনটি মেনে চলে। তাই এই
গীতিশৈলিতে শব্দগুলিকে সুরের সম ফাঁক মেনে চলতে হয়। এই জাতীয় বন্ধনের খাঁচায়
স্বতস্ফূর্ত কবিতার শরীর স্বস্তি পায় না। অন্ত্যমিলের যে আবশ্যিক অনিবার্যতা তাতে কয়েকটি বিশেষ
বর্ণ, যেমন র, ন, ল বা আকারান্ত, ইকারান্ত ও একারান্ত শব্দকে প্রাথমিকতা দিতেই হয়।
রবীন্দ্রপরবর্তী পর্বে বাংলাগানের লিরিক'কে রেকর্ড, সিনেমা বা রেডিও'র বাজার অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছে। রবীন্দ্রনাথ বা সমসাময়িক দ্বিজেন্দ্র, রজনীকান্ত বা অতুলপ্রসাদের গীতরীতিকে এ জাতীয় বাজার অর্থনীতির অনিবার্যতা বহন করতে হয়নি। বিভিন্ন 'হিট' গানের সঙ্গে তাল রাখার দায়ে গীতিকারদের অনেক সময়ই আপস করতে হয়েছে। শ্রোতাসাধারণের প্রত্যাশা বা ইচ্ছা এক্ষেত্রে নান্দনিকতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধ সৃষ্টি করেছিল। বাংলাগানকে শিল্পের অভিমুখ থেকে সরে বিনোদনের গড্ডলিকায় সামিল হতে হয়েছে বার বার। লোকপ্রিয় গীতিকারদের কাব্যদক্ষতা আদৌ আছে কি না তার প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ তাঁদের কাছে বিশেষ আসেনি। এই প্রবণতাটি শুরু হয় নজরুলের সময় থেকে। নজরুল ছিলেন টোটাল কম্পোজার। পরবর্তীকালে এই ক্ষমতা দেখাতে পেরেছিলেন সলিল চৌধুরী ও সুমন। কিয়দংশে জটিলেশ্বর, মৌসুমি। যদিও সলিলের লিরিক অনেক সময়ই সুরের প্রয়োজনে আপোস করেছে। সুমন লিরিক নিয়ে আপোস করেননি বটে, কিন্তু তাঁর সুরে পুনরাবৃত্তি এসে গেছে বিভিন্ন গানে। একশো বছর আগে বাংলা কবিতায় নির্দিষ্ট বিষয়বদ্ধতা ছিল বিশেষভাবে প্রকট। কবিরা তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভাবনাগুলিকে প্রকাশ করতে চাইতেন কাব্যমাধ্যমে। তা প্রকৃতিপ্রেম, মানুষীপ্রেম, দেশপ্রেম, ভগবৎপ্রেম যে কোনও কিছুই হতে পারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অসংখ্য বিবর্তনের ধারায় কবিতার শরীর, ভাষা, শৈলি ক্রমশ বিমূর্ত হয়ে যেতে থাকে। বিষয়গুলির মধ্যে পরিবর্তন আসেনি, কারণ তারা চিরন্তন। কিন্তু প্রকাশভঙ্গির নিরন্তর ভাঙাচোরা ও পুনর্গঠন তাকে আপাতভাবে দুরূহ করে তুলতে থাকে। যে কাব্যচর্চা এককালে ছিল কীর্তন, রামায়ণগান, শ্যামাসঙ্গীত বা কবিগান, মূলত সঙ্গীতমাত্র, সেটি রবীন্দ্রপ্রভাবে কবিতা ও লিরিকে বিভক্ত হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ দু'টি ধারার প্রতিই সমান সুবিচার করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরিরা সে পর্যায়ের উৎকর্ষ স্পর্শ করতে পারেননি। কিন্তু যেহেতু শ্রোতৃসাধারণের কাছে 'গীতবিতান' ও 'স্বরবিতান', দুইই সুলভ, তাঁদের প্রত্যাশাও তাই অত্যন্ত বেড়ে যায়। পরবর্তীকালের বাংলাকাব্যে কবি ও গীতিকারের ভার্টিক্যালগুলি একেবারে পৃথক হয়ে যাবার ঘটনাটি তখন থেকেই শুরু হয়। ঘর পৃথক হওয়া পর্যন্ত শৈলেন রায়, হীরেন বসু, হিমাংশু দত্ত বা অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখের 'কবিত্বশক্তি' নিয়ে মানুষের সংশয় ছিল না। কিন্তু এই জলবিভাজনটি ঘটে যেতে তাঁদের লেখায় ক্রিয়াপদের গীতিকরণ বা আবৃত্ত দশমিকের মতো কিছু বহুব্যবহৃত কয়েনেজ ও ইমেজারি ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে এবং কবিতাপাঠকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আকর্ষণ করে। শ্যামল গুপ্ত বা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার পর্যন্ত বাংলা গীতিকবিতার যাত্রায় এই ধরনের সাজানো শব্দ ও তার ক্রমাগত প্রয়োগ তাদের বাংলাকবিতার মূলধারা থেকে বহুদূরে নিয়ে চলে গেল। কারণ যতদিন গেছে, গীতিকারদের উপর সুরকারদের চাপ ক্রমশ বেড়ে উঠেছে। এই চাপের পিছনে বাজারের সমর্থন ও আনুকূল্য ছিল। তাই গীতিকারদের খেলার মাঠটি বিশেষ ছোট হয়ে যায়। টিকে থাকার অনিবার্যতায় তাঁরা গতানুগতিকতার ঊর্ধে যাবার প্রয়াস বিশেষ করেননি। তবে এটাও স্বীকার্য যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো নানা গানে তাঁদের কাব্যকৌশল প্রতিফলিত হয়েছে বহুবার। কিন্তু 'কবি' হয়ে ওঠার স্বীকৃতি তাঁদের কাছে অধরাই থেকে গেছে। অত্যন্ত 'সফল' গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জন্য বারবার আক্ষেপ করে গেছেন। তাঁর অবসাদরোগের পিছনে হয়তো এটাও একটা কারণ ছিল।
এই মুহূর্তে বাংলাগানের বাণীর মধ্যে সংলাপবাহুল্যের লক্ষণ খুব স্পষ্ট। প্রাত্যহিক জীবন ও দৈনন্দিন যাপনের সঙ্গে 'সাযুজ্য' রাখার চাপ বিচিত্র শব্দবন্ধ ও ইমেজারির জন্ম অবশ্যই দিচ্ছে, কিন্তু কবিতার সঙ্গে ওতপ্রোত মননের স্ফূরণ বা উপলব্ধিকর্ষিত শ্রমের চিহ্ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। সুরযোজিত নাটকীয় মুহূর্ত বা ঘটনাক্রমের অস্থির চিত্রকল্প তাৎক্ষণিক কৌতূহল তো অবশ্যই জাগায়, কিন্তু কবিতার মতো দীর্ঘস্থায়ী অনুরণন জাগিয়ে তুলতে পারে না। এটা মনে করা অন্যায় হবে না যে এখনও বাংলা লিরিক, বাংলা কবিতার সমগোত্র হয়ে ওঠার ক্ষমতা অর্জন করেনি। হয়তো এভাবে ভাবাটাই অসমীচীন। কারণ লিরিক ও কবিতা বাস্তবিকভাবে দুটো পৃথক ভাষামাধ্যম। তাদের পারস্পরিক ডায়নামিক্সগুলি মাপার কোনও সাধারণ মাপকাঠি নেই। চিরকালীন এই দ্বন্দ্বসমাসের ব্যাসবাক্যে বদলের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই বলাটাই বিধেয়। কবির মুকুটের দাবিদার শুধু কবিরাই থেকে যাবেন, এটাই ভবিতব্য।
রবীন্দ্রপরবর্তী পর্বে বাংলাগানের লিরিক'কে রেকর্ড, সিনেমা বা রেডিও'র বাজার অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছে। রবীন্দ্রনাথ বা সমসাময়িক দ্বিজেন্দ্র, রজনীকান্ত বা অতুলপ্রসাদের গীতরীতিকে এ জাতীয় বাজার অর্থনীতির অনিবার্যতা বহন করতে হয়নি। বিভিন্ন 'হিট' গানের সঙ্গে তাল রাখার দায়ে গীতিকারদের অনেক সময়ই আপস করতে হয়েছে। শ্রোতাসাধারণের প্রত্যাশা বা ইচ্ছা এক্ষেত্রে নান্দনিকতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধ সৃষ্টি করেছিল। বাংলাগানকে শিল্পের অভিমুখ থেকে সরে বিনোদনের গড্ডলিকায় সামিল হতে হয়েছে বার বার। লোকপ্রিয় গীতিকারদের কাব্যদক্ষতা আদৌ আছে কি না তার প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ তাঁদের কাছে বিশেষ আসেনি। এই প্রবণতাটি শুরু হয় নজরুলের সময় থেকে। নজরুল ছিলেন টোটাল কম্পোজার। পরবর্তীকালে এই ক্ষমতা দেখাতে পেরেছিলেন সলিল চৌধুরী ও সুমন। কিয়দংশে জটিলেশ্বর, মৌসুমি। যদিও সলিলের লিরিক অনেক সময়ই সুরের প্রয়োজনে আপোস করেছে। সুমন লিরিক নিয়ে আপোস করেননি বটে, কিন্তু তাঁর সুরে পুনরাবৃত্তি এসে গেছে বিভিন্ন গানে। একশো বছর আগে বাংলা কবিতায় নির্দিষ্ট বিষয়বদ্ধতা ছিল বিশেষভাবে প্রকট। কবিরা তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভাবনাগুলিকে প্রকাশ করতে চাইতেন কাব্যমাধ্যমে। তা প্রকৃতিপ্রেম, মানুষীপ্রেম, দেশপ্রেম, ভগবৎপ্রেম যে কোনও কিছুই হতে পারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অসংখ্য বিবর্তনের ধারায় কবিতার শরীর, ভাষা, শৈলি ক্রমশ বিমূর্ত হয়ে যেতে থাকে। বিষয়গুলির মধ্যে পরিবর্তন আসেনি, কারণ তারা চিরন্তন। কিন্তু প্রকাশভঙ্গির নিরন্তর ভাঙাচোরা ও পুনর্গঠন তাকে আপাতভাবে দুরূহ করে তুলতে থাকে। যে কাব্যচর্চা এককালে ছিল কীর্তন, রামায়ণগান, শ্যামাসঙ্গীত বা কবিগান, মূলত সঙ্গীতমাত্র, সেটি রবীন্দ্রপ্রভাবে কবিতা ও লিরিকে বিভক্ত হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ দু'টি ধারার প্রতিই সমান সুবিচার করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরিরা সে পর্যায়ের উৎকর্ষ স্পর্শ করতে পারেননি। কিন্তু যেহেতু শ্রোতৃসাধারণের কাছে 'গীতবিতান' ও 'স্বরবিতান', দুইই সুলভ, তাঁদের প্রত্যাশাও তাই অত্যন্ত বেড়ে যায়। পরবর্তীকালের বাংলাকাব্যে কবি ও গীতিকারের ভার্টিক্যালগুলি একেবারে পৃথক হয়ে যাবার ঘটনাটি তখন থেকেই শুরু হয়। ঘর পৃথক হওয়া পর্যন্ত শৈলেন রায়, হীরেন বসু, হিমাংশু দত্ত বা অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখের 'কবিত্বশক্তি' নিয়ে মানুষের সংশয় ছিল না। কিন্তু এই জলবিভাজনটি ঘটে যেতে তাঁদের লেখায় ক্রিয়াপদের গীতিকরণ বা আবৃত্ত দশমিকের মতো কিছু বহুব্যবহৃত কয়েনেজ ও ইমেজারি ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে এবং কবিতাপাঠকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আকর্ষণ করে। শ্যামল গুপ্ত বা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার পর্যন্ত বাংলা গীতিকবিতার যাত্রায় এই ধরনের সাজানো শব্দ ও তার ক্রমাগত প্রয়োগ তাদের বাংলাকবিতার মূলধারা থেকে বহুদূরে নিয়ে চলে গেল। কারণ যতদিন গেছে, গীতিকারদের উপর সুরকারদের চাপ ক্রমশ বেড়ে উঠেছে। এই চাপের পিছনে বাজারের সমর্থন ও আনুকূল্য ছিল। তাই গীতিকারদের খেলার মাঠটি বিশেষ ছোট হয়ে যায়। টিকে থাকার অনিবার্যতায় তাঁরা গতানুগতিকতার ঊর্ধে যাবার প্রয়াস বিশেষ করেননি। তবে এটাও স্বীকার্য যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো নানা গানে তাঁদের কাব্যকৌশল প্রতিফলিত হয়েছে বহুবার। কিন্তু 'কবি' হয়ে ওঠার স্বীকৃতি তাঁদের কাছে অধরাই থেকে গেছে। অত্যন্ত 'সফল' গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জন্য বারবার আক্ষেপ করে গেছেন। তাঁর অবসাদরোগের পিছনে হয়তো এটাও একটা কারণ ছিল।
এই মুহূর্তে বাংলাগানের বাণীর মধ্যে সংলাপবাহুল্যের লক্ষণ খুব স্পষ্ট। প্রাত্যহিক জীবন ও দৈনন্দিন যাপনের সঙ্গে 'সাযুজ্য' রাখার চাপ বিচিত্র শব্দবন্ধ ও ইমেজারির জন্ম অবশ্যই দিচ্ছে, কিন্তু কবিতার সঙ্গে ওতপ্রোত মননের স্ফূরণ বা উপলব্ধিকর্ষিত শ্রমের চিহ্ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। সুরযোজিত নাটকীয় মুহূর্ত বা ঘটনাক্রমের অস্থির চিত্রকল্প তাৎক্ষণিক কৌতূহল তো অবশ্যই জাগায়, কিন্তু কবিতার মতো দীর্ঘস্থায়ী অনুরণন জাগিয়ে তুলতে পারে না। এটা মনে করা অন্যায় হবে না যে এখনও বাংলা লিরিক, বাংলা কবিতার সমগোত্র হয়ে ওঠার ক্ষমতা অর্জন করেনি। হয়তো এভাবে ভাবাটাই অসমীচীন। কারণ লিরিক ও কবিতা বাস্তবিকভাবে দুটো পৃথক ভাষামাধ্যম। তাদের পারস্পরিক ডায়নামিক্সগুলি মাপার কোনও সাধারণ মাপকাঠি নেই। চিরকালীন এই দ্বন্দ্বসমাসের ব্যাসবাক্যে বদলের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই বলাটাই বিধেয়। কবির মুকুটের দাবিদার শুধু কবিরাই থেকে যাবেন, এটাই ভবিতব্য।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন