Jack the Ripper, Donald Henry Gaskins, Ted Bundy, Tsutomu Miyazaki, এঁরা
কুখ্যাত সিরিয়াল-কিলার। বিখ্যাত/কুখ্যাত দিগ্বিজয়ী, সম্রাট/সম্রাজ্ঞী,
রাজা/রানী/রাজড়ারা
আরো বড় কিলারদের মধ্যে পড়েন। চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং (Qin Shi Huang, খ্রীঃপূঃ ২২১-২১০), হেরড দ্য গ্রেট(Herod the Great, খ্রীঃপূঃ ৩৭-৪), ক্যালিগুলা (Caligula, খ্রীঃঅঃ, ৩৭-৪১), নীরো(Nero, খ্রীঃঅঃ ৫৪-৬৮), অ্যাটিলা দ্য হূন
(খ্রীঃঅঃ ৪৩৪-৪৫৩), চীনের উ জেটিয়ান (Wu Zetiyan, খ্রীঃঅঃ ৬০৯-৭০৫), ইংলণ্ডের
কিং জন (King John, খ্রীঃঅঃ ১১৯৯-১২০৬), গডফ্রে অভ বুইলঁ (Godfrey
of Bouillon, খ্রীঃঅঃ ১০৬০-১১০০), চেঙ্গিস খান (খ্রীঃঅঃ ১২০৬-১২২৭), তৈমুর লং (Tamerlane,
Timur, খ্রীঃঅঃ ১৩৩৬-১৪০৫), ওয়ালাচিয়ার ভ্লাড টেপেস তথা ভ্লাড
তৃতীয় (Vlad III, Vlad the Impaler, ১৪৫৬-১৪৬২), রাশিয়ার
ইভান তৃতীয় (Ivan IV Vasilyevich, ১৫৩৩-১৫৪৭), লিওপোল্ড দ্বিতীয় অভ বেলজিয়াম (Leopold II, ১৮৩৬-১৯০৯), অ্যাডল্ফ হিটলার (Adolf Hitler, ১৮৮৯-১৯৪৫) ইত্যাদি। কিছু নাম নিয়ে আবার
বিতর্ক আছে, যেমন রাশিয়ার জোসেফ স্ট্যালিন, আর কারো কারো মতে হৃদয় পরিবর্তনের আর
সম্রাট হওয়ার আগে অশোক। ভারতে বড়সড় বিতর্ক আছে ঐতিহাসিকদের থেকে ইসলাম ধর্মের আর হিন্দু ধর্মের অবলম্বীদের মধ্যে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে নিয়ে। তো এইসব লোকেরা স্বদেশে বা বিদেশে
স্বধর্মের/স্বজাতির বা পরধর্মের/পরজাতির মানুষদের উপর যে অকথ্য, বৃহদায়তনিক
হত্যালীলা চালিয়েছেন, তাতে কে বেশি নিষ্ঠুর তা নিয়ে তর্ক প্রায়শঃই অবান্তর হয়ে ওঠে। তাও কিন্তু এদের অনেক পরে জন্মানো সন্তান, প্রোডাক্ট, সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এদের
আদ্য বা মধ্যটি নিয়ে নামকরণ হয়েছে। নামকারকরা এটাকে নিয়ে ভাবেনওনি! হয়তো এই জন্যে যে তাঁদের আগেও
ওই বিশেষ সম্প্রদায়/জাতিসত্তা/ধর্মে ওই নামটি প্রাসঙ্গিক ছিল, আর পরেও রয়ে গেছে!
আমি মহাপুরুষদের আসা নামের বাইরের ক্ষেত্রে বলছি। কেউই অবিশ্যি আদ্যমধ্যঅন্ত জুড়ে সন্তান, প্রোডাক্ট, সফটওয়্যারের নাম দেননি। Wu-Tang নামে আমেরিকার হিপ-হপ গ্রুপ, Jacky Wu Jing নামের মার্শাল
আর্টিস্ট, Wu Chun নামের অভিনেতা, Mr.Wu নামের ব্রিটিশ নাটক, মার্কিন সিনেমা, বা Wu Chow নামের মার্কিনী রেস্তোরাঁ;
Leopold নামের মুম্বইয়ের
কাফে; Nero নামের সফটওয়্যার; আর Jack, John, Ivan, Adolf নামের ওই সব
দেশে ঘুরে বেড়ানো অজস্র মানুষ আমাদের বুঝতে দেন যে নামকরণের সময় তাঁদের বাপ-মা’রা অতশত ইতিহাস নিয়ে ভাবেন নি। আসলে ভাববেনই বা কেন? আমরা ইতিহাসের কেবল সেই সব দিক নিয়ে ভাবি
যেগুলো বর্তমানে প্রাসঙ্গিক। ইতিহাস সর্বদাই বর্তমানকে আলোকিত করতে অতীতের কথা
নিয়ে আসে।
এক সময় জর্মানিতে Adolf মোটামুটি কমন নাম ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কমে যায়। জর্মানিতে অ্যাডল্ফ হিটলারের জন্মের আগে পরে বেশ কিছু অ্যাডল্ফ ছিলেন, কম বেশি বিখ্যাত। Adolf Dassler (১৯০০-১৯৭৮, উদ্যোগী), Adolf Albin (১৮৪৮-১৯২০, দাবাড়ু), Adolf von Henselt (১৮১৪-১৮৮৯, কম্পোজার), Adolf Anderssen (১৮১৮-১৮৮৯, দাবাড়ু), Adolf Erik Nordenskiöld (১৮৩২-১৯০১, বিজ্ঞানী), Adolf Jensen (১৮৩৭-১৭৭৯, কম্পোজার), Adolf Behne (১৮৮৫-১৯৪৮, স্থপতি), Adolfvon Baeyer (১৮৩৫-১৯১৭, বিখ্যাত বিজ্ঞানী), Adolf Erik Nordenskiöld (১৮৩২-১৯০১, পর্যটক), Adolf Loos (১৮৭০-১৯৩৩, স্থপতি), Adolf Eichmann (১৯০৬-১৯৬২, হিটলারের কুখ্যাত সহ-যুদ্ধাপরাধী)। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর অ্যাডল্ফ নামধারীদের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু হিটলার? চিত্রপরিচালক Matt Ogens তাঁর ২০১৪ সালের ‘Meet the Hitlers’ নামের তথ্যচিত্রে দেখিয়েছেন, শেষ নাম বা পদবীতে হিটলার থাকা জর্মানরা কীভাবে নিজেদের নাম থেকে আসা সমস্যার মোকাবিলা করছেন। যেমন Jean Hitler নামের এক ৮৩ বছরের চারকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে সুন্দর জীবন বিতানো এক বৃদ্ধ; অথবা St. Louis-এর বাইরে এক ছোট্ট শহরে বসবাসকারী ১৬ বছরের Emily Hittler নামের এক তরুণী, যে বন্ধুদের দ্বারা অপমানিত হয়েছে। কিন্ত সে বড় হয়ে অন্য শহরে গেলে কী হবে তা নিয়ে Ogens নিশ্চিত নন। হয়তো এত খারাপ অবস্থা নাও থাকতে পারে। কারণ ‘My other theory with her is that she's another generation
removed from World War II, the Holocaust, and Adolf Hitler. So a 16-year-old today may not have as strong an opinion on Hitler as we did. Maybe if her name was Bin Laden it would be way worse for her’। এই তথ্যচিত্রে যে পরিবার তাদের ছেলের নাম Adolf Hitler রেখেছে, তাদের সম্পর্কে Ogens-এর মত হলো ‘Some people would say it's a First Amendment right—that you can name your kid whatever you want. But, to me, when you're naming a kid something like that, that's going to affect a kid the rest of their life’.১
ভারতে কেউ ছেলের নাম তৈমুর রাখলে কী হওয়ার কথা ছিল? এক তো
Ogens-এর তত্ত্ব যে সে হলো ‘another generation removed from World
War II, the Holocaust, and Adolf Hitler’
তার ক্ষেত্রে বহু বহু গুণ প্রযোজ্য হওয়ার কথা! এক প্রজন্ম নয়, ১৪০৫ সালের পর ছশো
এগারো বছর কেটে গেছে। আর তৈমুরের ভারত আক্রমণের পর আরো বেশি। উপরন্তু ভারতের ভিতরে ও বাইরে অজস্র মানুষ তৈমুর নাম নিয়ে
ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সব্বাই ইসলামী যদিও। যে অর্থে আমরা ভারত বলি, তাই বা তখন কোথায়? বক্তিয়ার খিলজীর সপ্তদশ অশ্বারোহীর হাতে বাংলা যে বিজিত হয়নি তা বোঝাতে বঙ্কিম কতবার বলেছেন যে, বাংলা তথা ভারত আংশিকভাবে মুঘল যুগে আর পূর্ণভাবে ব্রিটিশ আমলে ঐক্যবদ্ধ হয়? উপরন্তু বহিরাক্রমণ চলছে সিকন্দরের, ব্যাক্ট্রিয়ান রাজাদের সময়
থেকেই, আর যখন তা ঘটছে তখন যার বিরুদ্ধে ঘটছে অন্যরা তা চুপ করে দেখছে। বাবর যখন ইব্রাহিম
খাঁ লোদীকে আক্রমণ করতে আসছেন দিল্লী দখল করতে, রাণা সংগ্রাম সিংহ তখন ‘কন্টকেনৈব
কণ্টকম্’ মন্ত্র আওড়াচ্ছেন। বাবর মরলে দুর্বল লোদীকে আক্রমণ করা যাবে। বাবর জিতলে
ঠাণ্ডা দেশের লোক গর্মিতে কেটে পড়বে, সেনাপতি গরম হাওয়ার কাছে হেরে। পাণিপত থেকে
খানুয়ার সেই ট্রাজিক গল্প। ভারতত্ব কই এখানে?
এবার তৈমুর নামধারীদের কথায় আসি। একজন মাহমুদ তৈমুর (Mahmud
Taimūr পক্ষান্তরে Taymur, ১৮৯৪-১৯৭৩)ইজিপ্টে
জন্মান। এই বিখ্যাত সাহিত্যিক মঁপাসা, টুর্গেনিভ এবং চেখভের লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত
হয়েছিলেন। এই বিখ্যাত ছোটগল্পের লেখক ১৯৪৯ সালে Arabic Academy, Cairo-র কাছ থেকে সাহিত্যিক পুরস্কার পান, আর ১৯৫০ সালে এর সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর কিছু গল্প D. J. Davies এর
ইংরিজি অনুবাদে প্রকাশিত হয় Tales from Egyptian Life নামে Cairo থেকে। আর তাঁর বিপুল শিল্পসৃষ্টির একটা বড় অংশ ফরাসি এবং
অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আরবী লেখকদের হাতে সাহিত্যের একটি ঘরানা হিসেবে ছোটগল্পের উপর অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা সত্ত্বেও
আরব জগতে মাহমুদ তৈমূরকেই ছোটগল্পের জনক হিসেবে মনে করা হয়। তাঁর ‘Alms for the Sake of Allah’ সংকলনটির গল্পসমূহে পাঠকদের
আঙ্গিকগত সম্পূর্ণতা এবং নন্দনন্তাত্ত্বিক সন্তুষ্টি প্রদানের সম্যক প্রচেষ্টা
দেখা যায়।২ তাঁর The
Call of the Unknown বইটির ১৯৩৯-১৯৮০-র মধ্যে তিনটি
ভাষায় সাতাশটি সংস্করণ হয়েছে। Kul ʻām
wa-antum bi-khayr : wa-qiṣaṣ ukhrá বইটির সতেরোটি সংস্করণ হয়েছে আরবী ভাষায়
১৯৫০-১৯৮৮ সময়কালে। বাকি অনেক বইয়েরই একই
রকম দুর্দশা!
‘আধুনিক ওমানের জন্মদাতা’ সঈদ বিন তৈমুর (Sultan Said bin Taimur, ১৯১৯-১৯৭২) ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৭০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পর্যন্ত মাস্ক্যাট এবং ওমানের সুলতান ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ব্রিটিশরা ওমানে ‘অয়েল কন্শেশন’ পায়। ফলে তৈমুর নাম ব্রিটিশদের কাছে মোটেই অনুপাদেয় ছিল না, যদিও অত্যন্ত অত্যাচারী শাসক ছিলেন তিনি। তবুও তাঁর ‘আধুনিক ওমানের জন্মদাতা’ সম্মান পাওয়া তাতে আটকায়নি।৩ Anisfield-Wolf Book Award পাওয়া লণ্ডন প্রবাসী লিবারেটেড পাকিস্তানী লেখিকা কামিলা শামসী (১৯৭৩), যিনি ২০১৪-র ১১ই এপ্রিলে গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলেছিলেন, একক মহিলার জন্য লণ্ডন করাচীর চেয়ে ভালো শহর ('As a single woman, London is a nicer place to live than Karachi')। ছয়টি উপন্যাসের স্রষ্টা কামিলার লেখা জিয়াউল হকের একনায়কতন্ত্রের সময় পাকিস্তানে পাওয়া অসম্ভব ছিল। তাঁর Salt and Saffron উপন্যাসের এক কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম তৈমুর।৪
এক সময় জর্মানিতে Adolf মোটামুটি কমন নাম ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কমে যায়। জর্মানিতে অ্যাডল্ফ হিটলারের জন্মের আগে পরে বেশ কিছু অ্যাডল্ফ ছিলেন, কম বেশি বিখ্যাত। Adolf Dassler (১৯০০-১৯৭৮, উদ্যোগী), Adolf Albin (১৮৪৮-১৯২০, দাবাড়ু), Adolf von Henselt (১৮১৪-১৮৮৯, কম্পোজার), Adolf Anderssen (১৮১৮-১৮৮৯, দাবাড়ু), Adolf Erik Nordenskiöld (১৮৩২-১৯০১, বিজ্ঞানী), Adolf Jensen (১৮৩৭-১৭৭৯, কম্পোজার), Adolf Behne (১৮৮৫-১৯৪৮, স্থপতি), Adolfvon Baeyer (১৮৩৫-১৯১৭, বিখ্যাত বিজ্ঞানী), Adolf Erik Nordenskiöld (১৮৩২-১৯০১, পর্যটক), Adolf Loos (১৮৭০-১৯৩৩, স্থপতি), Adolf Eichmann (১৯০৬-১৯৬২, হিটলারের কুখ্যাত সহ-যুদ্ধাপরাধী)। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর অ্যাডল্ফ নামধারীদের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু হিটলার? চিত্রপরিচালক Matt Ogens তাঁর ২০১৪ সালের ‘Meet the Hitlers’ নামের তথ্যচিত্রে দেখিয়েছেন, শেষ নাম বা পদবীতে হিটলার থাকা জর্মানরা কীভাবে নিজেদের নাম থেকে আসা সমস্যার মোকাবিলা করছেন। যেমন Jean Hitler নামের এক ৮৩ বছরের চারকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে সুন্দর জীবন বিতানো এক বৃদ্ধ; অথবা St. Louis-এর বাইরে এক ছোট্ট শহরে বসবাসকারী ১৬ বছরের Emily Hittler নামের এক তরুণী, যে বন্ধুদের দ্বারা অপমানিত হয়েছে। কিন্ত সে বড় হয়ে অন্য শহরে গেলে কী হবে তা নিয়ে Ogens নিশ্চিত নন। হয়তো এত খারাপ অবস্থা নাও থাকতে পারে। কারণ ‘My other theory with her is that she's another generation
removed from World War II, the Holocaust, and Adolf Hitler. So a 16-year-old today may not have as strong an opinion on Hitler as we did. Maybe if her name was Bin Laden it would be way worse for her’। এই তথ্যচিত্রে যে পরিবার তাদের ছেলের নাম Adolf Hitler রেখেছে, তাদের সম্পর্কে Ogens-এর মত হলো ‘Some people would say it's a First Amendment right—that you can name your kid whatever you want. But, to me, when you're naming a kid something like that, that's going to affect a kid the rest of their life’.১
‘আধুনিক ওমানের জন্মদাতা’ সঈদ বিন তৈমুর (Sultan Said bin Taimur, ১৯১৯-১৯৭২) ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৭০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পর্যন্ত মাস্ক্যাট এবং ওমানের সুলতান ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ব্রিটিশরা ওমানে ‘অয়েল কন্শেশন’ পায়। ফলে তৈমুর নাম ব্রিটিশদের কাছে মোটেই অনুপাদেয় ছিল না, যদিও অত্যন্ত অত্যাচারী শাসক ছিলেন তিনি। তবুও তাঁর ‘আধুনিক ওমানের জন্মদাতা’ সম্মান পাওয়া তাতে আটকায়নি।৩ Anisfield-Wolf Book Award পাওয়া লণ্ডন প্রবাসী লিবারেটেড পাকিস্তানী লেখিকা কামিলা শামসী (১৯৭৩), যিনি ২০১৪-র ১১ই এপ্রিলে গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলেছিলেন, একক মহিলার জন্য লণ্ডন করাচীর চেয়ে ভালো শহর ('As a single woman, London is a nicer place to live than Karachi')। ছয়টি উপন্যাসের স্রষ্টা কামিলার লেখা জিয়াউল হকের একনায়কতন্ত্রের সময় পাকিস্তানে পাওয়া অসম্ভব ছিল। তাঁর Salt and Saffron উপন্যাসের এক কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম তৈমুর।৪
জেম্স এইচ রোবির একটি ইংরিজি অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীতে
নায়কের নাম তৈমুর। তার দাদার নাম আবার ‘সেফ’ (Saif)।৫
২০০৬ সালে আই. এম. এফ. বাজার
অর্থব্যবস্থাগুলিতে রাজস্ব এবং আর্থিক সম্বন্ধ নিয়ে যে
ওয়ার্কিং পেপার বেরোয় তাতে প্রধান অর্থনীতিক তৈমুর বেগ-এর সঙ্গে সহলেখক গরিমা
বশিষ্ঠ, মনোমোহন এস. কুমার, এড্ডা জলি। কী
করে যে এমন নামের কারুর সঙ্গে/অধীনে এঁরা কাজ করলেন,
তাই বা কে জানে!৬
আমার এক পণ্ডিত পদার্থবিদ ফেসবুক-মিতা আমাকে বলেছেন ‘স্যার তিমুর ও তার দলবল নামে সোভিয়েত শিশুসাহিত্যও মাথায়’ রাখতে বলেছেন, তিমুরকে নিয়ে
যাবতীয় কম্পিউটার গেম্স-এর সঙ্গে। ৭কম্পিউটার গেম্স আমার অজানা জগৎ। তবে
Timur and His Squad(Timur I yevo komanda) নামে রুশ লেখা Arkady Gaider-এর
১৯৪০ সালে লেখা এই গল্পে গ্রামের ছেলেদের এক ‘সুচক্রের’
কথা বলা হয়েছে, যারা গ্রামের সকলের, বিশেষ ক’রে Red Army-তে থাকা বাবা আর স্বামীদের পরিবারগুলির জন্য ভালো ভালো সুরক্ষামূলক কাজ ক’রে বেড়াতো। এটা ভালো তৈমুরের গল্প।
এক সত্যিকারের তৈমুরের নাম আমায় দিলেন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। মোটামুটি বিখ্যাত বাঙালি কবি তৈমুর খানের নাম, যিনি নামের জন্য অনেক দুঃখই
সয়েছেন। অজস্র সংগ্রামের পরে রামপুরহাট কলেজে স্নাতক আর পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর
পাঠ সমাপনান্তে এই কবি বোখারা এইচ জে এ বিদ্যাপীঠে পড়ান, কবিতা লেখেন আর
প্রেমেন্দ্র মিত্রর কবিতার উপর গবেষণা করেন।
এবার আসি এক নবতম তৈমুরের কথায়। ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে ইংলণ্ডীয় প্রশ্রয়দানের মধ্যে ভারতীয়দের পক্ষে ক্রিকেট খেলা হয়ে দাঁড়ায় ইংরেজ উচ্চশ্রেণির জীবনের রহস্যগুলির সঙ্গে এক্সপেরিমেণ্ট করার উপায়। যে সব রাজারাজড়ারা ভারতবর্ষে ক্রিকেট আমদানি করলেন তাঁরা অবশ্য প্রায়শঃই ছিলেন ভারতীয় অভিজাতশ্রেণির অপেক্ষাকৃত কম জাঁকালো সদস্য। তাঁরা ক্রিকেটকে বাছলেন কারণ ক্রিকেট ছিল রাজকীয় পৃষ্ঠপোষণ এবং জাঁকজমক প্রদর্শনের অপেক্ষাকৃত শস্তা আঙ্গিক, যা অবসরের অভিজাতোচিত সংস্কৃতিতে পুরুষালি শিল্পকলার চর্চার সঙ্গে ইংলণ্ডে ঢোকার এক ভিক্টোরীয় পরিচয়পত্র দিতো (যেমন দিয়েছিল রাণা রণজিৎ সিংজিকে বা নবাব ইফ্তিকার আলি খানকে)। উপরন্তু উচ্চাঙ্গসঙ্গীত বা নৃত্যের চেয়ে কম খর্চার। অর্জুন আপ্পাদুরাই যে ‘পাবলিক কালচার’-এর কথা বলেছেন, তার দুই আঙ্গিক ক্রিকেট আর বলিউড ফিল্মের সঙ্গে ভাব-ভালোবাসা গভীর হওয়ারই কথা।৭ নবাব ইফ্তিকারআলি খান, ১৩৭ বর্গ কিমি-র পতৌদির অষ্টম নবাব (১৯১০-১৯৫২) ১৯৪৬ সালে ‘ভারতীয়’ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হয়ে ইংলণ্ড গেলেন ও সায়েবদের ‘মাত’ করলেন। এই অসাধারণ ক্রিকেটারের রেকর্ড দেখে নেবেন। তাঁর সন্তান, পতৌদির নবম নবাব, নিজেও ভালো ক্রিকেটার আর ভারতীয় ক্রিকেট দলের কনিষ্ঠতম ক্যাপ্টেন ছিলেন। নইলে ১৯৬১ সালে এক মোটর দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারিয়েও ৪৬টি টেস্ট ম্যাচে ৩৪.৯১ গড়ে, ছয়টি শতরান আর সতেরোটি অর্ধশতরান নিয়ে ২৭৯৩ রান করা চাড্ডিখানি কথা নয়! এদের ৪০টিতে তিনি ক্যাপ্টেনও ছিলেন।১৯৭১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠবিংশতিতম সংশোধনে রাজন্য ভাতা হারিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া এই নবাব ১৯৬৯—এ ঠাকুর পরিবারে জন্মানো এক সুন্দরী বাঙালি অভিনেত্রীকে বিয়ে করে’ ময়দান আর মুভিদুনিয়ার মেলবন্ধনকে পাকা করেন। একচক্ষু সত্ত্বেও তিনি ১৯৯৮ সালে হিন্দি ছবির মাইনর হিরো সেফ আলি খান, আর বহু নিয়মভঙ্গের কারণে বিখ্যাত ম্যাচো নায়ক সলমন খানের সঙ্গে সেই সময় World Wildlife Fund ক্যালেণ্ডারে বিজ্ঞাপিত, সংরক্ষিত বিরল প্রাণী কৃষ্ণসার হরিণ মেরেও জেলবাস থেকে বেঁচে যান। যোগ্যপুত্র সেফ কাপুর পরিবারের এক হাই ভোল্টেজ নায়িকাকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁরা দ্বিতীয় পুত্রসন্তানটির নাম রেখেছেন তৈমুর। কারণ নাকি সেফ আলি খান ইতিহাসের পোকা! অক্সফোর্ডীয় ঘরানার ক্রিকেট থেকে বলিউডি পটবয়লারে অধঃপতিত এই নবাব পরিবারের ছেলের নাম তৈমুর দেওয়া হলো কেন, তাই নিয়ে যে গোলমাল চলছে, তার সম্পর্কে আমার ভীতি এই অখদ্দে পরিবারের জন্যে নয়, ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির মোজেইকের উপর আক্রমণ কত দিক থেকে আসছে, তার সম্পর্কে আকুলতা থেকে। আমরা Ogens- এর মতো বলতে পারি না, ‘you can name your kid whatever you want’?
এবার আসি এক নবতম তৈমুরের কথায়। ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে ইংলণ্ডীয় প্রশ্রয়দানের মধ্যে ভারতীয়দের পক্ষে ক্রিকেট খেলা হয়ে দাঁড়ায় ইংরেজ উচ্চশ্রেণির জীবনের রহস্যগুলির সঙ্গে এক্সপেরিমেণ্ট করার উপায়। যে সব রাজারাজড়ারা ভারতবর্ষে ক্রিকেট আমদানি করলেন তাঁরা অবশ্য প্রায়শঃই ছিলেন ভারতীয় অভিজাতশ্রেণির অপেক্ষাকৃত কম জাঁকালো সদস্য। তাঁরা ক্রিকেটকে বাছলেন কারণ ক্রিকেট ছিল রাজকীয় পৃষ্ঠপোষণ এবং জাঁকজমক প্রদর্শনের অপেক্ষাকৃত শস্তা আঙ্গিক, যা অবসরের অভিজাতোচিত সংস্কৃতিতে পুরুষালি শিল্পকলার চর্চার সঙ্গে ইংলণ্ডে ঢোকার এক ভিক্টোরীয় পরিচয়পত্র দিতো (যেমন দিয়েছিল রাণা রণজিৎ সিংজিকে বা নবাব ইফ্তিকার আলি খানকে)। উপরন্তু উচ্চাঙ্গসঙ্গীত বা নৃত্যের চেয়ে কম খর্চার। অর্জুন আপ্পাদুরাই যে ‘পাবলিক কালচার’-এর কথা বলেছেন, তার দুই আঙ্গিক ক্রিকেট আর বলিউড ফিল্মের সঙ্গে ভাব-ভালোবাসা গভীর হওয়ারই কথা।৭ নবাব ইফ্তিকারআলি খান, ১৩৭ বর্গ কিমি-র পতৌদির অষ্টম নবাব (১৯১০-১৯৫২) ১৯৪৬ সালে ‘ভারতীয়’ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হয়ে ইংলণ্ড গেলেন ও সায়েবদের ‘মাত’ করলেন। এই অসাধারণ ক্রিকেটারের রেকর্ড দেখে নেবেন। তাঁর সন্তান, পতৌদির নবম নবাব, নিজেও ভালো ক্রিকেটার আর ভারতীয় ক্রিকেট দলের কনিষ্ঠতম ক্যাপ্টেন ছিলেন। নইলে ১৯৬১ সালে এক মোটর দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারিয়েও ৪৬টি টেস্ট ম্যাচে ৩৪.৯১ গড়ে, ছয়টি শতরান আর সতেরোটি অর্ধশতরান নিয়ে ২৭৯৩ রান করা চাড্ডিখানি কথা নয়! এদের ৪০টিতে তিনি ক্যাপ্টেনও ছিলেন।১৯৭১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠবিংশতিতম সংশোধনে রাজন্য ভাতা হারিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া এই নবাব ১৯৬৯—এ ঠাকুর পরিবারে জন্মানো এক সুন্দরী বাঙালি অভিনেত্রীকে বিয়ে করে’ ময়দান আর মুভিদুনিয়ার মেলবন্ধনকে পাকা করেন। একচক্ষু সত্ত্বেও তিনি ১৯৯৮ সালে হিন্দি ছবির মাইনর হিরো সেফ আলি খান, আর বহু নিয়মভঙ্গের কারণে বিখ্যাত ম্যাচো নায়ক সলমন খানের সঙ্গে সেই সময় World Wildlife Fund ক্যালেণ্ডারে বিজ্ঞাপিত, সংরক্ষিত বিরল প্রাণী কৃষ্ণসার হরিণ মেরেও জেলবাস থেকে বেঁচে যান। যোগ্যপুত্র সেফ কাপুর পরিবারের এক হাই ভোল্টেজ নায়িকাকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁরা দ্বিতীয় পুত্রসন্তানটির নাম রেখেছেন তৈমুর। কারণ নাকি সেফ আলি খান ইতিহাসের পোকা! অক্সফোর্ডীয় ঘরানার ক্রিকেট থেকে বলিউডি পটবয়লারে অধঃপতিত এই নবাব পরিবারের ছেলের নাম তৈমুর দেওয়া হলো কেন, তাই নিয়ে যে গোলমাল চলছে, তার সম্পর্কে আমার ভীতি এই অখদ্দে পরিবারের জন্যে নয়, ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির মোজেইকের উপর আক্রমণ কত দিক থেকে আসছে, তার সম্পর্কে আকুলতা থেকে। আমরা Ogens- এর মতো বলতে পারি না, ‘you can name your kid whatever you want’?
ফেসখা ‘মম হৃদয়ে রহো’।
গ্রন্থসূত্র
1. https://www.vice.com/en_us/article/meet-the-hitlers-matt-ogens-interview-183, accessed on 23 December 2016.
2. William
M. Brinner & Mounah Abdallah Khouri, Readings in
Modern Arabic Literature, Part One, The Short Story and the Novel (Leiden: E. J.
Brill, 1971),pp. 425.
3. Francis
Owtram, A Modern History of Oman:
Formation of the State since 1920 (London: I. B. Tauris, 2004); Sergey
Plekhanov, A Reformer on the Throne:
Sultan Qaboos Bin Said Al Said (Kensington: Cape Town Trident Press, 2004).
4. Kamila Naheed Shamsie,Salt and Saffron (Bloomsbury: A&C Black, 6 2011)
5. James H. Roby III,The UrbanKnights
Pale Horse (Lulu Com 2012)
6. Taimur
Baig, Garima Vasishtha, Manmohan S. Kumar, Edda Zoli, Fiscal and Monetary
Nexus in Market Economies: How Does Debt Matter? IMF Working Paper (IMF,
2006).
7. আমিএইতথ্য মনে করিয়ে দেবার
জন্যপ্রোফেসর তাপস দাসের কাছে কৃতজ্ঞ।
8. এই বিষয়ে সংগৃহীত তথ্যের জন্যে দেখুন,
Amartya Mukhopadhyay, ‘Culture andPolitics’, in Satyabrata Chakraborty (ed.)Poltical Sociology (Delhi:
Macmillan, 2005), pp. 269-299, esp.
pp. 283-85.
পড়লাম এবং ঋদ্ধ হলাম তথ্য সম্ভারে
উত্তরমুছুন