গ্রিগর সামসা
ঘুম থেকে উঠে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি যা
তাই আছি। কোনও পরিবর্তন হয় নি!
- মানে?
- মানে আর কিছুই নয়। আমি গ্রিগর সামসা হয়ে যাই নি।
- সেটা কি?
- আরে মাকড়সা। ঐ যে দেওয়ালের মাকড়সাটা, ওইই আছে, ওটা আমি না। কিছুতেই না।
- সেটা তো ভালো কথা।
- মোটেও ভালো নয়। চোখের ওপর চাঁদের আলো পড়লে কত মানুষ কবি হয়ে যায়। সকালের
রোদ নিয়ে রবি ঠাকুর লিখেছেন।
- সে তো যে কেউ যে কোনো সময়ে কবি হয়ে যেতে পারে। আমার
ঠাকুরদা মরার সময়ে বলেছিল, জল পড়ে পাতা নড়ে। আমি তো ফ্রিজ
থেকে মুরগীর ঠ্যাং বের করতে গেলে কবিতা মনে পড়ে।
- একটা মোরগের কাহিনী?
- মোরগ? ব্রয়লাররা সব তৃতীয় লিঙ্গের। মোরগ কোথায় পেলে?
তৃতীয় লিঙ্গ মানে আলাদা জোশ।
- হ্যাঁ, আমি দেখেছি। ট্রেনে আমার সামনেই কাপড়টা পেটের ওপরে উঁচু
করেছিল। আবছা দেখে বুঝতে পারিনি লিঙ্গ বা যোনি আছে কিনা।
- ঐ রকম। কবিতাকে মারিজুয়ানা মুডের হতে হবে।
- মুড কি শরীর ছাড়া হতে পারে? নেশার পর আমার শরীর শুধু উড়তে চায়।
- উড়তে চাওয়াটাই তো আসল। কোনও ঠিকানা থাকবে না। দিশা থাকবে না।
ডায়াস্পোরা থাকবে।
- আমার ঠাকুরদা শান্তিপুর থেকে সুন্দরবন চলে গেছিল। বাবা সুন্দরবন থেকে
কলকাতা। আমি সল্টলেক থেকে দুর্গাপুর।
- তোমরা তো স্পোরের মতোই উড়ে বেড়িয়েছ। তাঁতির বাড়ি নেই তো ব্যাঙের বাসা!
আচ্ছা, গিলোটিনে মেরী আতোয়ানেতের মাথাটা উড়তে উড়তে পড়েছিল?
- আতোয়ানেত রানী থেকে সাধারণ মানুষ হয়ে গিয়েছিল।
- তুমি সিওর, মানুষ? মানে ঐ মাকড়সাটা তেমনই ভাবছে?
- নিজের জালে ঘুম থেকে উঠেছে। রোদ উঠেছে। কয়েকটা খাবার আশপাশে জড়িয়ে
আছে। টিভিতে সাইক্লোনের ছবি দেখালে কিছু এসে যায় না। উভয় তরফের কিছু না কিছু লোক
মরবে।
- ঠিকই। কল কারখানা বন্ধ হবে। কিছু লোক কাজ হারাবে। ছোটছোট ঘটনা ঘটবে।
বাচ্ছাছেলেরা ভুল করবে।
- তোমার চাকরিটা আছে?
- সেকি, নেই? কালকে তো ছিল!
- কাল তো তোমার ছেলেমেয়ে বউ প্রেমিকা সবই ছিল। কাল আর আজ এক হলো?
- কেউ নেই? কোথায় গেল তারা? কাল রাতে তো কোনও নেশা করিনি! হ্যাঙওভার নেই। রোদ্দুরটা
পরিষ্কার জলের মতো দেখতে পাচ্ছি!
ধুস
শালা, একটুও ভালো লাগছে না। সামোভারে চা চাপাতে হবে। এ কথা ভাবতেই মনে
হলো আমি আসলে দেওয়ালের
মাকড়সা। দেওয়ালের ঝুল অনেকদিন ঝাড়া হয় নি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন