শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

অশোক তাঁতী

গ্রিগর সামসা  

ঘুম থেকে উঠে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি যা তাই আছি। কোনও পরিবর্তন হয় নি!
-   মানে?
-   মানে আর কিছুই নয়। আমি গ্রিগর সামসা হয়ে যাই নি।
-   সেটা কি?
-   আরে মাকড়সা। ঐ যে দেয়ালের মাকড়সাটা, ওইই আছে, ওটা আমি না।  কিছুতেই না।
-   সেটা তো ভালো কথা।
-   মোটেও ভালো নয়। চোখের ওপর চাঁদের আলো পড়লে কত মানুষ কবি হয়ে যায়। সকালের রোদ নিয়ে রবি ঠাকুর লিখেছেন।
-   সে তো যে কেউ যে কোনো সময়ে কবি হয়ে যেতে পারে। আমার ঠাকুরদা মরার সময়ে বলেছিল, জল পড়ে পাতা নড়ে। আমি তো ফ্রিজ থেকে মুরগীর ঠ্যাং বের করতে গেলে কবিতা মনে পড়ে।
-   একটা মোরগের কাহিনী?
-   মোরগ? ব্রয়লাররা সব তৃতীয় লিঙ্গেরমোরগ কোথায় পেলে? তৃতীয় লিঙ্গ মানে আলাদা জোশ।
-   হ্যাঁ, আমি দেখেছি। ট্রেনে আমার সামনেই কাপড়টা পেটের ওপরে উঁচু করেছিল। আবছা দেখে বুঝতে পারিনি লিঙ্গ বা যোনি আছে কিনা।  
-   ঐ রকমকবিতাকে মারিজুয়ানা মুডের হতে হবে।
-   মুড কি শরীর ছাড়া হতে পারে? নেশার পর আমার শরীর শুধু উড়তে চায়।
-   উড়তে চাওয়াটাই তো আসল। কোনও ঠিকানা থাকবে না। দিশা থাকবে না। ডায়াস্পোরা থাকবে।
-   আমার ঠাকুরদা শান্তিপুর থেকে সুন্দরবন চলে গেছিল। বাবা সুন্দরবন থেকে কলকাতা। আমি সল্টলেক থেকে দুর্গাপুর। 
-   তোমরা তো স্পোরের মতোই উড়ে বেড়িয়েছ। তাঁতির বাড়ি নেই তো ব্যাঙের বাসা! আচ্ছা, গিলোটিনে মেরী আতোয়ানেতের মাথাটা উড়তে উড়তে পড়েছিল?  
-   আতোয়ানেত রানী থেকে সাধারণ মানুষ হয়ে গিয়েছিল।
-   তুমি সিওর, মানুষ? মানে ঐ মাকড়সাটা তেমনই ভাবছে?
-   নিজের জালে ঘুম থেকে উঠেছে। রোদ উঠেছে। কয়েকটা খাবার আশপাশে জড়িয়ে আছে। টিভিতে সাইক্লোনের ছবি দেখালে কিছু এসে যায় না। উভয় তরফের কিছু না কিছু লোক মরবে।
-   ঠিকই। কল কারখানা বন্ধ হবে। কিছু লোক কাজ হারাবে। ছোটছোট ঘটনা ঘটবে। বাচ্ছাছেলেরা ভুল করবে।
-   তোমার চাকরিটা আছে?
-   সেকি, নেই? কালকে তো ছিল!
-   কাল তো তোমার ছেলেমেয়ে বউ প্রেমিকা সবই ছিল। কাল আর আজ এক  হলো?
-   কেউ নেই? কোথায় গেল তারা? কাল রাতে তো কোনও নেশা করিনি! হ্যাঙওভার নেই। রোদ্দুরটা পরিষ্কার জলের মতো দেখতে পাচ্ছি!
       

ধুস শালা, একটুও ভালো লাগছে নাসামোভারে চা চাপাতে হবে। এ কথা ভাবতেই মনে হলো আমি আসলে দেওয়ালের মাকড়সা। দেওয়ালের ঝুল অনেকদিন ঝাড়া হয় নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন