মুখ
লোকটার শখ
মুখোশের। দেশ বিদেশের কত্ত মুখোশ যে সে জমিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। এ শখ অনেকেরই থাকে। সেটা নতুন কিছু নয়।
নতুন হলো মুখোশের ধরন। মুখোশ বলতেই যে
অদ্ভুতুড়ে একটা মুখবাদ্যান বা রঙ মাখানো কিছু হতে হবে - সে তেমনটা পছন্দ করে না মোটেই।
বরং তার শখ এমনটির যেটা দেখে বোঝাই যাবে না এটা মুখ না মুখোশ। মুখে একবার আটকে
নিলে কারো আর বোঝার উপায় নেই সে আসলে কে বা কী! সে তখন ওই মুখোশটাই। আর হালকা
প্রায় ত্বকের মতো স্বচ্ছ এই সব মুখোশ সে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে সংগ্রহ করতে মরীয়া। কোনোটায় স্মিত হাসি আটকে আছে ঠোঁটের
ভাঁজে। কোনোটায় আলোর মতো ঝকঝকে বুদ্ধি। কখনো আবার এমনটি খুঁজে পেয়েছে যাতে বিদ্রুপের
নিঁখুত বন্ধনী ভ্রু-ভঙ্গিমায় আর নিস্পাপ
হাসির মিশেল ঠোঁটের ধনুকে। নরম উদাসীনতা মাখা মুখোশটা মুখে আটকে কত কত মানুষকে
বোকা বানানো যায়। খুব কাজের জিনিস হলো সেই মুখোশটা যার ভাঁজে ভাঁজে কেমন একটা
মুগ্ধতা মাখানো দৃষ্টি আর মায়ার প্রলেপ আছে। এর সামনে নতজানু হয় না এমন ব্যক্তি - হুঁ
হুঁ বাবা, পৃথিবীতে নেই। কিন্তু সেই বোকা আয়না কিছুই পছন্দ করে না - কেবল বলে - হাসি
আছে, ঠাট্টা আছে, আলো আছে, অন্ধকার আছে, গান আছে, গল্প আছে, ঘেন্না আছে, লোভ আছে,
লাম্পট্য আছে, বিষণ্ণতা আছে, বিদ্রুপ আছে, মোহ আছে - সব, সব মুখোশই তো আছে তোমার।
কিন্তু কান্না? কোথায়?
- কেন? এই তো, এই
তো আমার কান্নার মুখোশ। দ্যাখো!
আয়না হাসে - চোখের
জল ছাড়া কান্না? সে কি কান্না নাকি মুখবিকৃতি? ভেংচি কাটছ কাকে? নিজেকেই? জল কোথায়
তোমার চোখে?
- আছে, আছে। ওকে
লুকিয়ে রাখতেই তো এই মুখোশ।
- মিথ্যে কথা।
কাঁদতে জানো না তুমি। কাঁদাতে জানো কেবল। এই মুখোশ পালটে পালটে কেবল কাঁদাতে পারো
তুমি।
- না, এভাবে বলো না।
দ্যাখ কষ্ট হচ্ছে আমার।
- ধ্যুস! মিথ্যে
বলছ। কখনো কাঁদোনি তুমি। যে তোমার কান্না নিতে চেয়েছিল দু’হাত পেতে, তাকেও ওই
উদাসীনতার মুখোশ পরে সরিয়ে দিয়েছ বারবার।
- আহঃ মিথ্যে
কথা! এই দ্যাখো আমার চোখের জল।
- কোথায়? দেখি
কোথায়?
আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে ও প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে মুখোশটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। পারে না। কারণ
ও জানেই না, কবে ওর মুখটাই হারিয়ে গেছে। নিজের চামড়া টেনে ছিঁড়তে থাকে শুধু আর
আয়নার মধ্যে থেকে হা হা শব্দ ভেসে আসে। কে জানে, তা হাসির নাকি কান্নার!
ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন