হিম
আবহের ঐরাবতে
-
আপনি আরাম করে হেলান দিয়ে বসুন।
- আচ্ছা।
- আবার উঠে গেলেন কেন? জাস্ট রিলাক্স...
- কেমন যেন ঠাণ্ডা আপনার এই চেম্বারটা!
- আচ্ছা এসিটা কমিয়ে দিচ্ছি। বাইরে তো
জানেন একদম তাপদাহ!
- জ্বি এক নাগাড়ে ২৩ দিন। গত ৩০ বছরেও এরকম গরম পড়েনি।
- আপনি চাইলে একটু সময় নিন। জোরে শ্বাস নিন। চোখ বুজে
আরাম করতে পারেন।
- আচ্ছা বসছি ড.!
- ফাইলে দেখলাম আপনি জানিয়েছেন কিছুই করেন না। একটু বলবেন
কি?
- জ্বি আমি আপাদমস্তক বেকার।
- কিছু মনে করবেন না, আপনার ভরণ পোষণ... মানে...
- জ্বি আমার মা। বাবার সূত্রে
উনি বেশ ধনী। আমার কোনো ভাইবোন নেই।
- বাবা?
- না, উনিও নেই।
- আচ্ছা। আপনি কি এখনো উদ্বিগ্ন?
মানে কোনো রকম টেনশন ফিল করছেন?
- জ্বি না।
- গুড। সারাদিন কী কী করেন? মানে চাক্রি বা ব্যবসা যেহেতু করেন না...
- এই ধরেন খাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে আমি প্রায় সারাক্ষণ ফেসবুকে থাকি।
- তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং! কী করেন ফেসবুকে?
- কিছু না। মানুষের লেখা পড়ি,
ছবি দেখি চুপচাপ।
- আর...
- আর আমার তিরতির করে একটা কী যেন কাজ করে শুধু...
- বলুন বলুন, কী যেন কাজ করে...
- ভয়।
- ভয়! কীসের ভয়? কার ভয়?
- জানি না...
- কেউ কি আপনাকে থ্রেট করে? কোনো হুমকি?
- জ্বি না...
- তবে?
- (কিছুক্ষণ চুপ) মনে হয়, কে যেন আমাকে মারতে
আসছে...
- কে মারতে আসছে? কে?
- না না, ওরকম স্পেসিফিক কেউ না...
- আপনি কি রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কিছু লেখেন?
- না।
- কারো সমালোচনা?
- না।
- আচ্ছা এ প্রসঙ্গ থাক। আপনি হারমোনিকা বাজাতে ভালোবাসেন?
- কী করে বুঝলেন?
- আপনার পকেটে একটা দেখতে পাচ্ছি তো! সেলফি তোলেন?
- না।
- ব্যক্তিগত জীবনে আপনার কোনো বন্ধু আছে?
- ছিল। এখন নেই।
- কেন?
- ওরা সবাই চাকরি ব্যবসা নিয়ে...
- ও। আপনি কি
ধার্মিক?
- জানি না।
- ভয়টা মানে টেনশনটা কখন শুরু হয়? মানে
প্রতিদিন, নাকি মাঝে মাঝে?
- প্রতিদিন। অবাক ব্যাপার যে,
রাতে করে না। দিনে কলিং বেল বাজলেই...
- তার মানে আপনি তখন ভাবেন কেউ বুঝি আপনাকে আক্রমণ করতে এসেছে...?
- জ্বি জ্বি ড.। মনে হয়, কেউ বুঝি এই চাপাতি নিয়ে এলো... আমাকে কোপাবে।
- চাপাতি?
- জ্বি।
- আপনার কি মনে হয় না, আপনি নিতান্তই নির্ভেজাল মানুষ, আপনার কোনো শত্রু
থাকতে পারে না, আপনি একাকী নাবিক...
- তা তো জানি...
- তাহলে?
- আমার যে একটা শরীর আছে... শরীরে যে একটা ঘাড় আছে....
এসিটার একটা ধাতব ক্ষীণ খুব মৃদু আওয়াজ ভাসছে চেম্বার জুড়ে। লোকটা
চোখ বন্ধ করে ইজি চেয়ারটায় হেলান দিয়ে আছে। কী শান্ত শিশুর মতো মখমল রিল্যাক্সড...
আর কোথাও কেউ নেই। একটা অদৃশ্য চাপাতির ছায়াদুপুর অস্পষ্ট ভেসে
বেড়ায়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর চিন চিন করে ঘামতে লাগলেন এই হিম আবহের
ঐরাবতে।
অদৃশ্য চাপাতির ভয় যেমন তাড়িয়ে বেড়ায় বেকার ফেসবুকচারী যুবককে, ঠিক তেমনি চিরচেনা ফেলে আসা স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় ভাবুক হৃদয়কে। তাড়া খাওয়া দুষ্টচক্রে ঘুরনায়মান এইতো জীবন! সিক্রিয়াটিস্ট ঝিম মেরে বসে থাকে আর দেখে নিয়তির হেয়ালি খেলা!!
উত্তরমুছুন