কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

আসমা সুলতানা শাপলা

বৃষ্টিবিলাস


রিমঝিম বৃষ্টির হালকা তোড়ে দৌড়ে সেদিন বটের গভীর পাতার নিচে আশ্রয় দুজনের সেই প্রথম জড়িয়ে ধরা একে অন্যকে বুকের গভীর নিঃশ্বাস শুনতে পাওয়া  দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট রক্তে আগুন বৃষ্টির দারুণ তোড় বৃদ্ধ বটগাছ আমাদের  ধারণ করতে পারছিল না ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে অনেকটা ভিজে গেছিলাম আমরা ভিজছিল গায়ের কাপড় গাছের ডালে কাক পায়ের নিচে সবুজ ঘাস শুধু ভিজছিল না মন সতৃষ্ণ আবেগেরউন্মার্গ কামনা বস্তুগত জৈবিক বোধ কোনোমতে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লাম দুজনে তারপর আধো প্রেম আধো জয় আধো পরাজয়ের মধ্যেই বৃষ্টির প্রগাঢ় আস্ফালন সেদিন গাছের ডালে বসে ছিল দুটো পাখি বুঝি সূদুর কোনো রূপকথার দেশ থেকে উড়ে এলো ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী সত্যি সত্যি অনেকদিন পর দূর দেশ থেকে পাখিদুটো উড়ে এসে বসলো আমার কানে জোড়াপাখি আমাদেরই মতো গলায় সুবর্ণ কঙ্কণ গায়ে কিশোরী বধূর পায়ের মলের মতো সুচিক্কণ মল কপালে জয়ললিতা টিপ  

তারপর বৃষ্টির কাছে পরাজয় মেনে ফেলে দিলাম রিক্সার হুড বৃষ্টিকে স্বাগত জানিয়ে মুখর ভিজে ভিজে কোথায় হারিয়ে গেলাম, এখন আর মনে পড়ে না কেবল বৃষ্টি এলেই দিকভ্রান্তি মেঘলা আকাশে বাতাসের উতল আহ্বান খুব দ্রুত পৌঁছুতে গিয়ে  খেলাম পিছল ছিটকে পড়ে গেলাম দূরে হলের গেট বন্ধ হতে তখন বাকি মোটে ১৫ মিনিট কোনোমতে উঠে দিলাম দৌড় ট্রাকটা সেদিন কো্নোমতে খুব কাছে এসে না থামাতে পারলে এতদিনে মাটির নিচে সাপের ছোবল খেতে খেতে শুনতাম বৃষ্টির গান আর সে, বাকিটা রাত বৃষ্টির জলে রাস্তায় পড়ে গিয়ে অকেজো হয়ে পড়া বাইকটা  টেনে টেনে নিয়ে চলল প্রায় মধ্যরাত অবধি সেই থেকে জলের সাথে প্রেম তার সাথে প্রেম সে আমার মনোনীত

যেদিন ছাদের জোৎস্না আমার পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল, ছাদের বসন্তে সেদিন ছিল  বাতাসের হিল্লোল আমি গাইছিলাম আর ফেরানো যায় না কেন অথচ সে আর ফিরতে পারেনি ফেরাতে পারেনি! পূরবীর সে রাগ হৃদয়ে গেঁথে পৌঁছে গেছিল ভৈরবী পর্যন্ত উত্তাল অতল বুঝতে অত দেরী বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে পথে সাথে সাথে বাসস্ট্যান্ড অবধি সম্মোহিত পদযাত্রা তারপর বা-বাই গাড়ি ছেড়ে দিল শুরুটা ছিল এখানেই

আমি যাব কবিতা পড়তে শক্তি চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবিতা খুব লেট হয়ে গেছিল সেদিন স্রোতা দর্শক বুঝি অলরেডি চলেই এসেছে! দ্রুত শাড়িটা পড়ে কোনোমতে চোখে কাজলের একটা রেখা টেনে দিয়েই বের হই টিপের পাতাটা হাতের  কাছে পেলাম না আই লাইনার দিয়েই ছোট একটা টিপ কপালে এঁকে দৌড় দিই নিচে সে কোথাও ছিল না আশেপাশে আছে কিনা, তাও জানা নেই আসবারও কোনো কথা ছিল না নিচে নেমেই তাকে দেখে অবাক হবারও সময় আমার নেই তখন ভেতরে তখন কেবলই শক্তি...
একা লাগে ভারী একা লাগে / তোমাদের ছেড়ে এসে অমূল বৈরাগে
আমার ভেতরে তখন
যে যায় সে দীর্ঘ যায় / একজন মানুষ সামনে থেকে চলে গেল দূরে

ঝটপট একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ি কোনো কথা নেই সেও উঠে পড়েঅদ্ভুত! আমার কোনো বাঁধন নেই নেই কো্নো বিরক্তিও এমন কি নেই কোনো নিষেধ চলছি দুজনে
- কোথায় চলেছি?
তার প্রশ্নের উত্তরে প্রথম কথা বলি-
- ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার ধানমন্ডি প্রোগ্রাম আছে
- চলো আমিও যাচ্ছি
সে তো যাচ্ছেই আর নতুন কী! কোনো অনুমতির তোয়াক্কা নেই্ কোনো  ভদ্রতার বালাই নেই এই অভদ্রতাটুকু যখন একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করল, তখনই-
- একটা কথা বলি?
আমি কোনো কথা বলি না প্রশ্ন চোখে তাকাই শুধু
- তোমার কপালে কাজল লেপ্টে গেছে ছোট লুকিং গ্লাস আছে সাথে?
- না বড্ড তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি!
- যদি কিছু মনে না কর, আমি ঠিক করে দিই?

আমি কিছু বলার আগেই টিস্যু বের করে থুতনিতে আলতো স্পর্শ এক হাতে অন্য  হাতে কপালের টিপ সংস্করণের চেষ্টা এবং যথারীতি সংস্করণে ব্যর্থ হয়ে টিপটা মুছে ফেলা তার ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমীর একটা হাসির রেখা আমার ভীষণ লজ্জা মুখ  লাল হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা না না, প্রথম স্পর্শ টর্শ বলে কিছু নয় নিজের আনস্মার্ট কাজটার জন্য লজ্জা একটা অনুষ্ঠানে যাচ্ছি কবিতা পড়তে কপালে কাজল লেপ্টে! ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা! সে মুচকি হেসেই চলছে  সম্পর্কটাও এমন নয় যে ফাজলামো করে হালকা করব সে নির্বাক একা একাই আমার অস্বস্তিটুকু যেন প্রাণভরে উপভোগ করছে আমিও নির্বাক কোনো কথা নেই কিন্তু সেই থেকে প্রেম কাজল ছোঁয়া প্রেম কাজল ছুঁয়ে প্রেম কবিতার ঘোরে প্রেম  কবিতার মতো প্রেম অধরা অনামা অনন্তের পথে প্রেম

বাইরে তখন দারুণ বিকেল সোনালি বিকেল সব পথচারী তাকিয়ে দেখছে হুড ফেলে দিয়ে একটা রিক্সাছুটে চলেছে একজন যুবক একজন যুবতীর কপাল স্পর্শ করছে...



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন