কালিমাটি অনলাইন / ৩৬
একে একে এই পৃথিবী ছেড়ে
চলে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয়জন ও আত্মজনেরা। একটু একটু করে খালি হয়ে যাচ্ছে
সাহিত্য-কলা-সংস্কৃতির আঙিনা। ক্রমশই শূন্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভাব-ভাবনা-ভালোবাসার
ঠেক ও ঠিকানা। আমরা নিঃস্ব ও নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন।
সমীরদা। সাহিত্যিক সমীর
রায়চৌধুরী দিন কয়েক আগে এভাবেই আমাদের একা ফেলে রেখে অনেক অনেক দূরে চলে গেলেন। আর
কোনোদিন দেখা হবে না তাঁর সঙ্গে। আর কোনো কথাও হবে না। নতুন নতুন লেখায় সমৃদ্ধ ও
ধনী হবে না বাংলাসাহিত্য এবং বিশ্বসাহিত্য। তাঁর সম্পাদনায় আর প্রকাশিত হবে না
‘হাওয়া ৪৯’।
প্রয়াণের দিন কয়েক আগেও
সমীরদার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল দূরভাষে। আমি তখন ছিলাম ব্যাঙ্গালোরে।
‘কালিমাটি অনলাইন’এ প্রকাশিত ঝুরোগল্পের প্রথম সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল ‘সৃষ্টিসুখ’
প্রকাশনা থেকে ২০১৫ কলকাতা বইমেলায়। সমীরদার লেখা ভূমিকা
সেই সংকলনের সম্পদ। এছাড়া তাঁর লেখা ১০টি ঝুরোগল্পও ছিল। আগামী ২০১৭ বইমেলায় ঝুরোগল্প দ্বিতীয় সংকলন
প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। সমীরদা্র তখনও পর্যন্ত না-লেখা আরও ১০টি ঝুরোগল্প সংকলিত
হবার কথা ছিল এই সংকলনে। আর সেই ঝুরোগল্প
সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল আমাদের। না, আর কোনোদিনই সেই ঝুরোগল্পগুলো জন্মলাভ
করবে না, যা তাঁর মনের গভীরে ভ্রূণাকারে ছিল। আরও আলোচনা হয়েছিল সমীরদার সঙ্গে
মুদ্রিত ‘কালিমাটি’ পত্রিকা ১০৩ সংখ্যার বিষয়ে। এই সংখ্যার বিষয় অতিপ্রাকৃত।
সমীরদা একটি ব্যক্তিগত গদ্য লেখার জন্য যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ করে ফেলেছিলেন।
আমাদের ‘দুর্ভাগ্য’, অতিপ্রাকৃত বিষয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনার আর কোনোদিন নাগাল পাওয়া
যাবে না। এছাড়া সমীরদার নতুন এক সৃষ্টি-পরিকল্পনা থেকে বঞ্চিত থেকে গেলাম আমরা।
সমীরদা ও আমার মস্তিষ্কপ্রসূত বাংলা
গদ্যসাহিত্যের নতুন আঙ্গিক ও ভাবনার ফসল ঝুরোগল্পের সূচনার পর আমি কিছুদিন হলো
লেখা শুরু করেছিলাম বাংলা কবিতাসাহিত্যের নতুন আঙ্গিক ও ভাবনায় ঝুরোকবিতা। এখনও
পর্যন্ত আর কোনো কবির ঝুরোকবিতা কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কিনা, আমার জানা
নেই। সমীরদা ও ‘চন্দ্রগ্রহণ’ পত্রিকার সম্পাদক আমাকে অনুরোধ করলেন, আগামী শারদ
সংখ্যার জন্য ১০টি ঝুরোকবিতা পাঠাতে। সেইসঙ্গে সমীরদা জানালেন, তিনিও পত্রিকার
জন্য ১০টি ঝুরোকবিতা লিখবেন। না, লেখা আর হলো না। সমীরদার বড় তাড়া ছিল চলে যাবার। ঝুরোকবিতা
আর তাই লেখা হলো না সময়ের নিতান্ত স্বল্পতায়। সমীরদা যখন ভীষণ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন,
আমাদের একান্ত আপনজন বেলাবৌদি, যাঁর স্নেহ ও ভালোবাসায় স্নিগ্ধ ও আপ্লুত হয়েছি,
সেই বেলাবৌদি জানালেন, সমীরদা বারবার বলেছিলেন, কাজলকে লেখা পাঠাতে হবে, আমাকে
লিখতে হবে। বৌদি সমীরদাকে বলেছিলেন, তুমি তো কলম ধরে লিখতে পারবে না, তুমি বরং মুখে
মুখে বলে যাও, আমি লিখে নিচ্ছি। না, সেটাও সম্ভব হয়নি। শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল,
যা থাবা বাড়িয়েছিল তাঁর মনেরও ওপর।
সমীরদা সদ্য প্রয়াত
হয়েছেন। তাঁর সাহিত্যকীর্তির আলোচনা ও মূল্যায়ন এর আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। তিনি ছিলেন আমাদের
সাহিত্য-অভিভাবক। তাঁর জীবনকালে ‘কালিমাটি’ পত্রিকা প্রকাশ করেছিল ‘সমীর রায়চৌধুরী
সংখ্যা’। আরও দু’ একটি পত্রিকাও। এবার খুব স্বাভাবিক ভাবেই আরও অনেক পত্রিকাও
উদ্যোগ নেবে। তাঁর সাহিত্যসৃজন আরও আরও পাঠক-পাঠিকার কাছে নিশ্চিত পৌঁছে যাবে।
সম্পাদকীয় লিখতে বসেছি। তাই
বিস্তৃত লেখার অবকাশ নেই। শুধু নম্র শ্রদ্ধায় সমীরদাকে স্মরণ করি এবং তাঁর স্মৃতির
প্রতি জানাই আমাদের প্রাণের ভালোবাসা।
আমাদের
সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
দূরভাষ যোগাযোগ :
0657-2757506 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main
Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
সমীরদাকে প্রাণের শ্রদ্ধা নিবেদন করি। সম্পাদকীয় তাঁরই শূন্যতায় সিক্ত হয়ে গেছে।
উত্তরমুছুনসমীরদাকে প্রাণের শ্রদ্ধা নিবেদন করি। সম্পাদকীয় তাঁরই শূন্যতায় সিক্ত হয়ে গেছে।
উত্তরমুছুন