গন্ডীবদ্ধ
আমে
মুকুল ধরবে ঠিক যে সময়ে সে সময়ে ঝড় আসবেই। মুকুলঝঞ্ঝা। এই সময়ে সুরেন্দ্র সিং
হাওড়ায় আসবে কথা ঠিক হয়ে আছে। হাওড়ায় তার সগাই করা পাত্রী আনন্দীর সঙ্গে এই
নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখতে আসবে। এই সব দেখাশোনা আজকাল দস্তুর সমাজে। আর মোবাইল তো
পথ সহজ করে রেখেছে আগে থাকতে। রানিগঞ্জের কারখানায় একেবারে সামনে থেকে কাজ করে এই
গাট্টাগোট্টা বিহারিসন্তান।
তবে কিনা আনন্দী যে তার
প্রথম বৌ হবে তা নয়। প্রথম বৌ ছিল মোতিগঞ্জের লাজবন্তী - গ্রাম্য ঘরনী। তার কমলারঙের
মেটে সিঁদুর পরা বৌ খুবই নাজুক আর অনুগত ছিল। কিন্তু বিবাহের এক বছরের মধ্যে সে
হরিদ্বারে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গঙ্গায় ডুবে মারা গিয়েছিল। একেবারে
চোখের সামনে পা পিছলে স্রোতে পড়ে ভেসে যায়। সুরেন্দ্র বাঁচাতে পারে নি। এই নিয়ে
প্রচুর থানা পুলিস করতে হলো।
সবচেয়ে বিশ্রী ব্যাপার ছিল,
লাজবন্তীর আত্মা তাকে দিনে দুপুরে রাতে তাড়া করেছিল অনেকদিন পর্যন্ত। সেই সময়ে সে রামনাম জপত আর
মন্দিরে যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাগড়াই যুবক হলে কী হবে! খুবই ভূতকাতুরে।
তারপর দেখতে দেখতে পাঁচ বছর
পার হয়ে গেছে। একবার আম্মাকে চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে নিয়ে এসেছিল কলকাতায়। চাচাতো
ভাইয়ের মিষ্টির ব্যবসা। কলকাতার পাঞ্জাব হল-এ এলাহি আয়োজন হয়েছিল। সেখানে আনন্দীকে দেখে তার খুব মনে ধরেছিল। আনন্দী ও তার
আত্মীয় বহিনদের সঙ্গে আনন্দ হুল্লোড় কম হলো না সেই উৎসবে। এবং দুই পরিবারে
বিয়ের কথা পাকা হলো।
হাওড়ার পিলখানায় পুরনো
চারতলা বাড়ির নিচতলায় আনন্দী্রা ভাড়া থাকে। নিম্নমধ্যবিত্ত। সুরিন্দর অবশ্য হাওড়ার হোটেলে উঠেছে। আর
দুপুরের খাওয়া সেরেই সে কনের বাড়িতে চলে এলো। আনন্দী স্বাস্থ্যবতী কৃষ্ণাঙ্গী রোজগেরে মেয়ে। খুবই ছটফটে
মুখে খৈ ফোটানো মেয়ে। পরিবারের সবাই আনন্দিত সুরেন্দ্র আসাতে। গল্পগাছা, খবর আদান
ও প্রদা্ জামাই-আদর সব হলো। সন্ধ্যার মুখে পরিবারের অনুমতি নিয়ে দুজনে গঙ্গার তীরে
এলো। তখন পশ্চিমকোণে ঝড় আসন্ন।
আনন্দীর কোনো ডর নেই, ভ্রূক্ষেপ নেই। উচ্ছ্বসিত হয়ে বায়না ধরল জলে নামবে। সিঁড়ি
বেয়ে জলে নামল বুক অব্দি। হাতে মোবাইল। চেঁচিয়ে বলল, ফটো খিঁচো! হঠাৎ সুরেন্দ্র
হাঁউমাঁউ করে চেঁচাতে চেঁচাতে জলে নামতে শুরু করল। আনন্দী হতবাক। পাড়ে জনতার ভিড়। মোবাইলে সুরেন্দ্র আনন্দীর দিকে যতবার ক্লিক করে ততবার
লাজবন্তীর ছবি দেখতে পায়। সুরেন্দ্র আনন্দীকে দেখতে পাচ্ছে না। সে খালি চিৎকার
করছে, লাজবন্তী মত যা্ও, আর রুখোজলের গভীরে হাত পা ছুঁড়ছে।
তখন কালবৈশাখীর মুকুলঝঞ্ঝা
এগিয়ে আসছে। কিছু ডাকাবুকো মানুষ পাড়ে ছোটাছুটি করছে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন