প্রতিবেশী সাহিত্য
জি.মেন্ড ওয়ো গমজাভ-এর কবিতা
(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)
কবি পরিচিতি : G.Mend
Ooyo Gombojav--(Mongolia)
কবির জন্ম ১৯৫২ সালে। বর্তমান সময়ে
তিনি মঙ্গোলিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবি। ছোটবেলা তাঁর কেটেছে যাযাবর জীবনের ভেতর দিয়ে। ঘোড়ায় চড়া, ভেড়া চরানো, ভোরে উঠে উঁটের পিঠে বসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া ইত্যাদি। ১৯৭০ সালে ওয়ো মঙ্গোলিয়ান
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হ'ন। এরপর মাষ্টার্স ও ডি-লিট ডিগ্রী লাভ করেন। তের বছর বয়স
থেকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। কুড়িটিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ তাঁর রয়েছে। ছোটবেলার যাযাবর জীবন তাঁর কবিতায় বিশেষ ছায়া
ফেলেছে।
আমি আসছি
সূর্য এবং চাঁদের সাহচর্যে বহু
বছর এবং সময় কাটিয়েছি! সাথে ছিলো
সেই উঁচু নীচু ঢেউ খেলানো রাস্তা,
বুদ্ধিমান মানুষদের পরিত্যক্ত
বিপজ্জনক মোড়!
পাহাড়ের চড়াই উতরাই,
ছোট ছোট টিলা অতিক্রম করে
শত শত অগভীর নদী পার হয়ে
আমি পথ পরিক্রমা করে চলেছি,
ভাবনায় সাজাতে সাজাতে
সেই শব্দগুলি; যা তোমাকে বলবো,
আমি চলেছি শুধু চলেছি
জানিনা কখন আমাদের দেখা হবে!
আমি আসছি তোমার কাছে!
আমার রাস্তাগুলো বরফের শীতলতা অথবা
অগ্নিময় বাতাসের জন্য অবারিত,
অপবাদের কুয়াশা সেখানে ছেয়ে থাকলেও
আমি আমার স্বচ্ছ মুক্ত চিন্তায় কোনো
দাগ লাগতে দিই না!
প্রেমিকার সাথে সব বন্ধন খুলে ফেলে
এবং বর্ফিলি হাওয়ায় আচ্ছাদিত হয়েও
পথ চলেছি সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে
-
আমি আসছি তোমার কাছে!
একসাথে বহন করছি
শরতের বেদনা ও বসন্তের উজ্জীবন!
যৌবনের আগুন এবং
সূর্যের উত্তাপ আমার হাতের মুঠোয়!
উদগত সবুজ পাতার সাথেই বেড়ে উঠি
তাদের সাথেই শুকিয়ে ঝরে যাই,
ফুলে ফলে ভরা বাগান অতিক্রম করার
সময় প্রসারিত হাতের এক পেয়ালা
আনন্দ পান করে নিই!
বাসনায় তাড়িত হয়ে
আমি তোমার কাছে আসছি!
যাত্রাপথের পেলব চিন্তাগুলো,
জীবনের যত স্মরণীয় মধুর মুহূর্ত,
গোপনীয়তা
সব একসাথে বেঁধে
জমা করেছি আমি হৃদয়ের মণিকোঠায়,
আমার সময়ের না আছে শুরু না শেষ
আছে শুধু অফুরান স্থান
আমি আসছি তোমার কাছে!
আমার একমাত্র স্বপ্ন -
যা আমার জীবনের ভিত্তি
যা আমার নিজস্ব,
আমার সেই কবিতার স্বাদ গ্রহণ করে
তোমার ও হৃদয়ের এস্রাজ বেজে উঠুক
উতসাহে, অনুপ্রেরণায় আনন্দে!
উঁচু পাহাড়ের ফাটলের ভেতর
দুর্গম পথ চলার সাথে সাথে
ভালোবাসার ঘ্রাণভরা
অনাদি অনন্ত সে সঙ্গীতের মূর্ছনা
শুনতে শুনতে
আমি আসছি তোমার কাছে!
স্বর্গের পাখিরা
নীলচে স্তেপ-ভূমিতে কুহেলী
যেন এক স্বর্গীয় শহর।
আমার পূর্বপুরুষেরা সবসময়ের জন্য
শুধুমাত্র স্বর্গেই বাস করেছেন।
নির্জন ভূমির ওপর কেবল
দোয়েলপাখিরাই উড়ে বেড়ায়…
আমাকে আমার বাবার ভূমিতে
স্বাগত জানাও হে!
ঘন নীল কুয়াশা সারা আকাশে ছেয়ে আছে।
শুধু তোমরাই পারবে পাখা প্রক্ষালন করে আমাকে
সেখানকার রাস্তা দেখাতে!
পৃথিবীর পথ
আমরা ঘোড়ায় চরে বের হই আবছা ভোরে
ছোট্ট পাখিগুলো আমাদের সঙ্গ দেয়।
সন্ধ্যায় ফিরি আস্তানায়… যেখানে শালিকেরা
এক সারিতে বাঁধা থাকে!
শতাব্দীর পর শতাব্দী চামড়া নিয়ে কাঠ
কেটে,
তলোয়ার বানিয়ে মানুষ এগিয়ে যায়
ইতিহাস হয়ে যায়… একটা মোমবাতি নেভে
আর একটা জ্বলে!
নদীর জল ঘোলাটে হয়...
সময়ে আবার স্বচ্ছ হয়ে ওঠে!
তীরের জংগলে আগুন লাগানো হয়...
পাথর সরিয়ে পাহাড় কেটে
তারা বসতি গড়ে আবার স্থানান্তরিতও
হয়!
এমন করেই প্রতিদিনের ধূলোর তলায় মানুষের
জীবনের পথ চাপা পরে থাকে!
আমরা ভোরে বেরিয়ে
সন্ধ্যায় ফিরি নিজেদের বাঁধা নির্দিষ্ট
স্থানে।
আমরা তলোয়ার ধার করি
কবর খুঁড়ি মোমবাতি জ্বালাই।
ভোরে ঘোড়াদের বের করি..আমাদের কেউ
শহর তৈরি করবে... কেউ রাগ করে জ্বালিয়ে
দেবে। দুজনেই তাদের সেনাপতি ঠিক করবে
একে অন্যের সাথে যুদ্ধের জন্য।
পড়ে থাকবে শুধু কাহিনী, ইতিহাস...
পৃথিবীর রাস্তাটা এমনই!
ধারালো তলোয়ারের মতো, ভরা পেটেও
ভুলে যায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন