সমকালীন ছোটগল্প |
বশীকরণ
পান খাওয়ার ব্যাপারটা আসলে শিল্পের মত। প্রথমে ভাল করে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিরল চিরল সুপারির সাথে দুধ সাদা চুনের সোহাগে আর সুগন্ধি জর্দার আভিজাত্যে অদ্ভুত মোচড়ের জাদুতে খিলিটা তৈরি করতে হয়। তারপর ওটাকে মুখে পুরে এ-গাল থেকে ও-গালে অদলবদল করে নিয়ে মিনিটখানেক পিষতে হয়। যখন পাতা থেকে সমস্ত রস এসে মুখে জমা হবে, তখন নির্যাসটুকু গিলে নিয়ে অবশিষ্ট ছোবড়াটুকু ফেলে দিতে হবে।
শতকরা নব্বই ভাগ লোক
নির্যাসটাই ফেলে দেয়। এরকম আরো অনেক রকম ভুলভাল কাজ করে গাড়ল লোকজন। নজরানা আক্তার
মোটেও এই দলের লোক নয়। মুখভর্তি পান নিয়ে জগতের বিবিধ বিষয় নিয়ে অনর্গল কথা বলতে
পারে নজরানা আক্তার। সেসবে শ্রোতাকুলের মনোযোগ থাকুক বা না থাকুক।
আজকের শ্রোতাটি অবশ্য
মনোযোগ দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এতদিনে লাইনে এসেছে সোনার চাঁন পিতলা ঘুঘু। দেমাগ টেমাগ সব ফুট্টুস। নজরানা
আক্তার মিটিমিটি হাসে। ওকে পাত্তা না দিয়ে যাবে কই! বিপাকে পড়লে তখন লোকে বোঝে নজরানার গুরুত্ব। তার নিজের ভাষ্যমতে সে একটা
ঘাগু মাল। তার চোখ শকুনের মতো, কান
হরিণের মতো আর ঘ্রাণশক্তি কুত্তার মতো। মনে মনে নিজের বুকে নিজেই চাপড় মেরে গলা
কাঁধ টান টান করে বসে সে।
পাবলিক টয়লেট আর কাণায় কাণায় ভরা, উছলে
পড়া পৌরসভার ডাস্টবিনের ময়লার মাঝে হুজুরের অফিসটা সগৌরবে দাঁড়ানো।
অফিসের লোকেশন যেমনই হোক হুজুরের খুব নামডাক। সেজন্যই এত কসরত করে সিরিয়াল নিয়ে
তারপর এখানে আসা।
বেশি আগে চলে আসায়
বাইরে বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করছে ওরা। রাস্তা দিয়ে ভ্যানগাড়িতে করে গাঁক গাঁক
শব্দে লটারির টিকেটের ব্যাপক প্রচারণা চলছে। আর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বন্ধু তুই
লোকাল বাস। কাক সম্প্রদায় ময়লার স্তুপে মুহুর্মুহু রেকি চালিয়ে যাচ্ছে।
নজরানা আক্তার এ-গাল থেকে পানটাকে ও-গালে চালান করে দিতে দিতে গলা পরিস্কার করে বলে-
শোনেন ভাবি, পুরুষ
মানুষের এই রকম ছোঁকছোঁক স্বভাব থাকবই। তা ঘরের বউ যতই হুর পরী হউক। আপনি কিন্তু
নিজেরে হুদাই অপরাধী ভাইবেন না!
রিমি সুলতানা নাকে মুখে
ওড়না চেপে একপ্রকার চোরের মতোই বসে আছে। শুধু উপচে পড়া ময়লা আর দুর্গন্ধের জন্য নয়, এমন বেমানান জায়গায় নিজের উপস্থিতি জানান দেয়াটাও তার জন্য
বিব্রতকর। তার উপর এই যে নিজেকে আড়ালে রাখতে চাওয়ার ব্যাপারটা, সেটাও খুলে বলতে পারেনি নজরানাকে। সব মিলিয়ে বিতিকিচ্ছিরি একটা
অবস্থা।
আপনার কি শরীর খারাপ লাগতেছে? নজরানা আক্তার আরো কাছে এসে বসে। পিঠে হাত রাখে।
সংসার বড় আজব জায়গা।
কখন কোথায় এনে দাঁড় করায় তার নেই ঠিক। এরকম সময় সব রকমের অভিমান, তেজ, দেমাগ, জেদ
ভুলে না গেলে নিজের স্বার্থরক্ষা হয় না।
নজরানা আক্তারের
উচ্চমার্গীয় কথাবার্তা আবহ সংগীতের মত বাজতে থাকলেও রিমি সুলতানার কানে সেসব কথা
যায় কিনা বোঝা যায় না। ঠিক এসময় সতের নম্বর সিরিয়ালের ডাক আসে। ওকে পাথরের মত বসে
থাকতে দেখে এবার নজরানা আক্তারই হুজুরের শাগরেদের কাছে সব বুঝে শুনে আনতে যায়।
ফেরার সময় হতেই
এলোপাথাড়ি বাতাস ছুটল। জোরেশোরে বৃষ্টি নামবে যেকোন সময়। রিমি সুলতানার বাসা বেশ
দূরে। নজরানা আক্তার ওর হাত ধরে বলে -আমার বাসায় চলেন ভাবি। বৃষ্টি থামলে পরে
যাইয়েন।
রিমি মোবাইল ফোনে সময়
দেখে। তিনটা মিসড কল। দুটো মেসেজ। একটা সাইত্রিশ। বাসায় ফিরতে ফিরতে কমপক্ষে তিনটা
বেজে যাবে। এখানে যে এতটা সময় লাগবে বুঝতে পারেনি। শুকনো ঠোঁটটা জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে
নেয় রিমি।
কী ভাবেন এত? চলেন তো। চাইল আর ডাইলে খিচুড়ি বসায়ে দিব। আজকে রেন্ধে আসতে পারি
নাই। ওদের আব্বার জ্বালায় রাতে ঘুমাইছি অনেক দেরিতে, সকালে উঠছি লাফ দিয়া।
কথা বলতে বলতে মিটি
মিটি হাসে নজরানা আক্তার। মফস্বলের মেয়ে নজরানা আক্তার। বাসা লালবাগে। রিমির সঙ্গে
পরিচয় রান্নার ক্লাসে। বাসায় বসে সময় কাটে না বলে এমব্রয়ডারির কোর্স, রান্নার কোর্স করে রিমি। নজরানা আক্তারও করে। কিন্তু তাকে সবার
মধ্যে বেমানান লাগে। ক্লাসে মনোযোগ নেই, শুধু
গল্প করার জন্য ছোঁক ছোঁক। একটু গায়ে পড়া স্বভাব আর খাইছি পরছি করে কথা বললেও
মানুষটা কিন্তু খারাপ না। কারো বিপদ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমদিন ক্লাস শেষে
গেইটের বাইরে আসতেই স্যান্ডেল ছিঁড়ে গিয়ে কী বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল রিমি! সেইফটি
পিন নেই শুনে নজরানা আক্তার নিজের স্যান্ডেল খুলে দিয়ে বলল - নেন এইটা পইরা নেন, আমি তো রিকশায় বইসা আরামসে যামুগা।
এরকম মানুষের সঙ্গে তাই
রিমি সুলতানার খাতির হয়েই গেল। ফলে কখনো ক্লাস শেষে কিশোরী মেয়েদের মত আইসক্রিম, ফুচকা বা চটপটি খাওয়া হয় আজকাল। মাঝেমধ্যে নজরানা ওকে সাথে নিয়ে
বিরিয়ানি খেতে চলে যায় পুরান ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে। বহুবার বাসায় নেবার চেষ্টা
করলেও রিমি কিছুতেই রাজি হয়নি। মনে মনে ভেবেছে এত অল্প সময়ে কিসের এত মাখামাখি! যত্তসব বাড়াবাড়ি।
সাবানের ফ্যাক্টরির
সাথে লাগোয়া সরু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রিমির চোখমুখ জ্বালা করতে থাকে। ধোঁয়া আর
উৎকট গন্ধ। নজরানা আক্তারের নাকি অভ্যাস হয়ে গেছে এসবে। বরং ছুটির দিনে কারখানা
বন্ধ থাকে বলে তার কেমন কেমন লাগে।
চোখেমুখে পানির ঝাপটা
দিতে দিতে কান্না পায় রিমির। দুদিন আগে আবার বেনামে পার্সেল এসেছে সোহেলের। ঠিক
ভরদুপুরে, যখন সোহেল অফিসে থাকে। প্যাকেটটা খুলে হাতের কাজের পাঞ্জাবি আর মেয়েলি
অক্ষরে 'তোমার জন্য' লেখা চিরকুটটা দেখেই সারা দুপুর কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে সে। নজরানা
আক্তার গম্ভীর স্বরে বলেছে, কিছু মনে কইরেন না ভাবি, বাইরের মানুষের দোষ না শুধু, আপনেও তো উদাসীন, হাসবেনকে
বশে রাখতে পারেন নাই।
অনেক ভেবে টেবে ওর মনে
হয়েছে নজরানার কথাটায় যুক্তি আছে। এগুলো ওর ভুলেরই মাশুল। অবসন্ন শরীর মন নিয়ে
সারাদিন বিছানায় শুয়ে রইল রিমি। সে যে স্বপ্নে আসে তবু, স্বপ্নের চেয়ে মধুর। আলাদা করে সেট করে রাখা এই রিংটোনটা বেজে গেল
অনবরত। ও ঠিক করেছে এই নম্বরটা থেকে ফোন এলে আর ধরবে না কক্ষনো। কোন কুক্ষণে ওরকম
একটা সম্পর্কে সে জড়িয়েছে ভাবলে এখন গায়ে জ্বর এসে যায়। মাত্র ছ’মাসের জন্যই তো অফিসের কাজে বাইরে ছিল সোহেল। তাতেই রিমির এমন অধঃপতন হয়ে গেল? এখন নিজের বেলায় ঘটতেই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে, এমন হলে কেমন লাগে। প্রেমটেম বিষের মত লাগছে
ওর। সব বাদ দিয়ে এখন যে করে হোক নিজের সংসারটা বাঁচাতে হবে। হুজুরের কাছে তার যেতেই হবে।
হুজুরের খোঁজটা দিয়েছিল
নজরানা আক্তার। একদিন রান্নার ক্লাস শেষে ঝালমুড়ি খেতে খেতে সুখ দুঃখের আলাপ
হচ্ছিল। নজরানা হঠাৎ বলে উঠল, গোল গোল কইরা শসা কাইটা ডেইলি চোখের উপ্রে দিয়েন তো
ভাবি। এমন হইছে কেন? রাত্রে ঘুমান না আপনে?
রিমি সুলতানা ঝরঝর করে
কেঁদে ফেলল ওর সামনে। কেউ তো ওকে নিয়ে ভাবছে! এটুকু আন্তরিকতায় একেবারে গলে গেল
রিমি। সব বলে ফেলল তাকে। শুধু নিজের অ্যাফেয়ারের ব্যাপারটা চেপে গেল। তা চাপতেই
হতো, এতটাও তো ঘনিষ্ঠতা হয়নি নজরানার সঙ্গে। যা হোক, সব শুনে টুনে নজরানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ কালো করে বলল, সব শালা এক জাত। আপনার হাসবেন আর আলাদা হইব
কেন!
এমনিতে জাদুটোনা তাবিজে
রিমির এতদিন বিশ্বাস ছিল না। বহুবার চেয়েছে সরাসরি সোহেলকে জিজ্ঞেস করবে। সে উপায়
তো নেই। পার্সেলগুলো একটাও সোহেলের হাতে যায়নি, প্রতিবারই সে সরিয়ে ফেলেছে। এখন মুখ ফুটে কথাটা জিজ্ঞেস করতে খুবই
সঙ্কোচ লাগছে। তাছাড়া সোহেল ইদানিং বেশ অন্যমনস্ক থাকে। অফিস থেকে ফিরেও মোবাইল
ফোনে ব্যস্ত হয়ে যায়, হেসে হেসে কার সঙ্গে যেন মেসেজ আদান প্রদান করে।
রিমি তখন রাগে দুঃখে আরো গুটিয়ে নেয় নিজেকে। ফলে পরিস্থিতি এখন আর কথা বলাবলির
পর্যায়ে নেই। এখন তাবিজ কবজই একমাত্র ভরসা।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে
ফ্যানের হাওয়ায় এসে বসে রিমি। নজরানা আক্তার গ্লাসে পানি ঢেলে দেয়। একটা টার্কিশ টাওয়েল
এগিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলে,
মুখটা মোছেন ভাবি।
চোখের উপর আফটার শেভের
গন্ধমাখা নরম টাওয়েলটা চেপে ধরতেই আবার বাঁধ ভাঙে। এবার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে
যায়। নজরানা আক্তার কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। তারপর ধমক লাগায়। হায়রে
মাইয়া মানুষ! খালি কান্দন, খালি
কান্দন!
অপ্রস্তুত রিমি চোখ
মুছে টুছে ধাতস্থ হবার চেষ্টা করে। নজরানা আক্তার ততক্ষণে হিজাব খুলে একটা
ম্যাক্সি পরে নিয়েছে। চুড়ো করে বাঁধা খোঁপাটা খুলে গেছে এখন। রিমি অবাক চোখে
তাকিয়ে থাকে সেদিকে। অন্য সময় হিজাবের আড়ালে এত সুন্দর চুলগুলো ঢাকা পড়ে যায়। ওভাল
শেইপের মুখটাকে লম্বাটে দেখায়। খুবই লাবণ্যময়ী মহিলা নজরানা!
ঝুম বৃষ্টি নেমে গেছে।
চায়ের কাপ নিয়ে রিমি রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়। চমৎকার ঘ্রাণ ছড়াতে শুরু করেছে
খিচুড়ি। চাক চাক করে কেটে রাখা বেগুনের টুকরোগুলো ডুবো তেলে ছেড়ে দিয়ে আরেকটা পান
মুখে দেয় নজরানা আক্তার। তারপর গল্প শুরু করে।
বুঝছেন ভাবি, আমার এক বান্ধবী ছিল, এত ফাইন
চেহারা। তবু তার হাসবেন অন্য মহিলার সঙ্গে প্রেম করত।
রিমি সুলতানা এবার মোড়া নিয়ে দরজার কাছে এসে বসে। আগ্রহ নিয়ে চায়ে
চুমুক দেয়।
মহিলা কম বয়সী, কিন্তু
সেও বিবাহিত।
তারপর?
বলতেছি! টেবিলে চলেন আগে।
ওর গলার চেইনটা দেখে
চোখ সরে না রিমির। রিমির দৃষ্টিকে অনুসরণ করে নজরানা আক্তার নিজের গলায় হাত রাখে।
লাজুক ভঙ্গিতে বলে-বাবুর আব্বু দুবাই থেকে আনছিল, সুন্দর না ডিজাইনটা?
রিমি বলে,
আমারও এমন একটা আছে, সেইম!
ওহ আল্লাহ তাই? কত মিল
দেখছেন আমাদের!
ওর কথা বলার ভংগি দেখে রিমি হেসে ফেলে। নজরানা ওর হাতটা ধরে বলে, দেখছেন
আপনারে আমি হাসাইলাম। কত সুন্দরী আপনি জানেন? এমন গাল ফুলায়ে থাইকেন না তো! অনেক হাসবেন, সাজগোজ কইরা ফিটফাট থাকবেন। দেখবেন হাসবেন সারাদিন আপনার দিকেই
তাকায় থাকবে আর বলবে - আই লাভিউ ডার্লিং!
রিমি হা করে শুনে ওর কথাগুলো। নজরানা আক্তার চোখ টিপে বলে, বাবুর আব্বা এখনো এসব বলে আমারে, হিহিহি!
খেতে খেতে নজরানা
আক্তার আরো নানারকম পরামর্শ দিয়ে যায়। বলে, বাচ্চা নেন না ক্যান ভাবি? এইবার নিয়া নেন। সংসারে মন বসবে আপনার হাসবেনের। অবশ্য বৌ প্রেগনেন
হইলে আবার অনেক পুরুষের পাংখা গজায়। কোনদিকে যাইবেন? এমন ফালতু খাসলত!
ব্যাগের ভেতরে রাখা
ফোনটা বেজে উঠে। সে যে স্বপ্নে আসে তবু, স্বপ্নের
চেয়ে মধুর। এঁটো বাসনগুলো তুলে নিতে নিতে নজরানা আক্তার একবার সেদিকে তাকায়।
ঠিকই আছে, ধইরেন
না। শিক্ষা দেওন দরকার।
গ্লাসের পানির শেষ বিন্দুটুকু শুষে নিতে নিতে রিমি হাসানের চোখের
পাতা কেঁপে উঠে। নম্বরটা ব্লক করতে ভুলে গেল কী করে? এই লোকটাকে সেদিনই বলে দিয়েছে আর কক্ষনো যেন ওকে ফোন না করে। তাদের
রাস্তা এখন থেকে আলাদা। আর ওসব সম্ভব না। তবু এমন ছ্যাচড়ামোর মানে কী! মনে মনে
গজরায় রিমি সুলতানা।
আবার শব্দ হয়। এবার
নজরানার ফোন আসে। রিমি দেখে সাথে সাথে কল রিসিভ করে নজরানা। 'আমার হাসবেন' বলার
সময় ঝলমল করছিল মুখটা। দুপুরে খেয়েছে কিনা, ফিরতে কত দেরি হবে, আসার
সময় কী কী বাজার করতে হবে মিনিট খানেক এইসব আলাপ করে ওরা। রাখার সময় বলে 'রাখি তাইলে জান্টু পাখি'।
রিমির কানে যায় সব
কথাই। সে শক্ত হয়ে বসে থাকে সোফায়। নজরানা আক্তার ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে পাশে এসে
বসে। হুজুরের বলে দেয়া নিয়মগুলো আরেকবার বুঝিয়ে দেয় ওকে। শনিবার ঠিক বেলা বারোটায়
করতে হবে কাজটা। একচুল এদিক ওদিক হলেই গুণ থাকবে না তাবিজের।
তারপর রিমিকে দরজায় এগিয়ে দিতে গিয়ে হঠাৎ করে বলে ওঠে, তারপর কী হইলো শুনলেন না তো ভাবি!
খুব উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে নজরানা। গলার চেইনটা আংগুলে জড়াতে জড়াতে কথা বলে। রিমি সুলতানা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পড়ে গল্পের বাকি অংশ শুনবে বলে।
ঐ যে যেই বান্ধবীর কথা বলতেছিলাম! সে তো খালি সুন্দরী না, মাথায় বুদ্ধি অনেক। সে করল কী জানেন? সে একদিন ঐ মহিলারে ফলো করা শুরু করল। মহিলা যেখানে যায়, সেও পিছে পিছে যায়। এমন করতে করতে বাসাও চিইনা আসল। তারপর আমার বান্ধবী ঐ ঠিকানায় মহিলার হাসবেনরে বেনামে চিঠি পাঠান শুরু করল। কী ডেঞ্জারাস, দেখছেন?
কথা বলতে বলতে নজরানা আক্তার হেসে গড়িয়ে পড়ে। স্বপ্নের চেয়ে মধুর গানটা বাজছে আবার। একবার দুইবার তিনবার। ব্যাগ হাতড়ে ফোনটা বের করতেই মেসেজটা দেখতে পায় রিমি। মিস ইয়্যু মাই ডার্লিং, জান্টু পাখি। সঙ্গে সঙ্গে সুইচটা অফ করে দেয় ও। টের পায় আফটার শেভের চেনা চেনা ঘ্রাণটা এখনো নাকে মুখে জড়িয়ে আছে। হঠাৎ এবার গা গুলিয়ে বমি পায় ওর। ওড়নায় মুখ চেপে ধরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে থাকে রিমি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন