কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৯ |
করোনার দিনকাল
সুর্য উঠছে।
অদ্ভূত সুন্দর এই দৃশ্য পৃথিবীতে করোনা না এলে দেখাই হতো না হয়তো। দেখিনি তো কখনো।
বছর দেড়েক ধরে দেখছি ইনসমনিয়ার কারণে। এই ইনসমনিয়াও করোনারই দান। নইলে আমার বদনাম ছিল
ঘুমকাতুরে বলে। কোনদিন রাত জেগে আড্ডা দিতে পারিনি, সবাই যখন আড্ডায় রাজা উজির মারছে
আমি এককোণে গুটিশুটি শুয়ে গভীর ঘুম। সমুদ্র বা পাহাড়ে নাকি সুর্যোদয় বিশেষভাবে দর্শনীয়।
আমি সেখানে গিয়েও ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারণে দর্শন লাভে বঞ্চিত হয়েছি কয়েক দফা।
এহেন আমি এখন প্রতিদিন সুর্যোদয় দেখি।
করোনার শুরুতে
বেশ উত্তেজনা ছিল। আলাপের বিষয় খুঁজে না পাওয়া বা কোন গল্পই জমে না ওঠার ফাঁপড়ে আমরা
যখন হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, করোনা ভাইরাস বেশ বাঁচিয়ে
দিয়েছিল। আমাদের দীর্ঘ ক্রোধের কাল শেষ হলো করোনাকে কেন্দ্র করেই। দিনরাত ফেসবুক জুড়ে
স্ট্যাটাস, কার্টুন, ভিডিওর ছড়াছড়ি, করোনার অতীত-ভবিষ্যত নিয়ে টিভিতে অন্তহীন আলোচনা
আর টকশোর লম্বা-চওড়া লেকচার; আমরা দেখি আর
মেতে থাকি। আতঙ্কে আমরা পরস্পরকে কঠিনভাবে
জড়িয়ে ধরি।
কিন্তু করোনাকালের
দীর্ঘ বন্দীত্বে আমরা ভীত হতে হতে ক্লান্ত হয়ে পড়তে থাকি। আমাদের যাপন বদলে যেতে থাকে।
কর্মহীন ঢিলেঢালা দিন জুড়ে থাকে মৃত্যুর মিছিল; স্বার্থপরতা আর নিষ্ঠুরতার অভিজ্ঞতা।
নিদ্রা আমাদের ছেড়ে যায়। ফিরে আসে ক্রোধ, শাণিত জিভের ত্রাসে কন্টকিত হওয়া। ঝড়ঝঞ্ঝায়
দুমড়েমুচড়ে গিয়ে টিকটিক বেঁচে থাকা।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন