কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

সুকান্ত দেবনাথ

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

           

দূরত্ব

 


(সাত)   

আমরা সকলেই এক একটি মিথ্যে নিয়ে বাঁচি। মিথ্যে কখনও প্রেম কখনও বা আক্রোশ। কিন্তু সে আছে সে সব সময় আমাদের সাথে আছে। আমরা মানি বা  না মানি। কস্তূরী, কস্তূরীর ভাই শৈলেশ, কস্তূরীর বাবা, তার মা, আমার মা, সাথী, সাথীর শাশুড়ি, সাথীর শ্বশুর, সাথীর গ্রামের সব গ্রামবাসী। আর এই কাপড় বিক্রি করতে আসা মেয়েটির দখলি কলোনি। যেখানে স্বপ্নটাই মিথ্যে আর মিথ্যেটাই স্বপ্ন। যা খুব ভালো বোঝে পার্টির লিডাররা। তারা আসে সাহায্য করে। আশ্বাস দেয় আমরা আছি যতদিন আপনারা আমাদের পাশে আছেন। আমরা দেখছি, দেখবো, লড়ছি, লড়বো। অন্যদিকে কস্তূরী, শৈলেশ, তার মা, তার বাবা, আমার মা। আমাদের কাছে স্বাবলম্বী শব্দটাই একটা মিথ। আমরা অবশ্য উচ্চারণ করি শেলফ ইনডিপেন্ডেন্ট। গৌতম বুদ্ধ এক মুঠি শস্য দানা আনতে বলেছিলেন, যে বাড়িতে কোনো মৃত্যু হয়নি। কিন্তু আজকের দিনে যদি শহরাঞ্চল একটু ঘুরে দেখা যায় তবে এমন বাড়ি অনেক পাওয়া যাবে যেখানে মৃত্যু নেই। কেননা এতই ছোট সে সব ঘর যে মৃত্যুর জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু পায়নি। যাকে বলে নিউক্লিয়ার ফ্যামেলি। স্বামী স্ত্রী আর তাদের মেয়ে। স্বামী অফিস করে, অফিশিয়াল টুর করে, লেট নাইট মিটিং করে। স্ত্রী করে সোশ্যাল ওয়ার্ক। মেয়ে স্কুলে যায়। সেখানে জিজ্ঞেস করো দেখবে সে বাড়ির মেয়ে কোনো মৃত্যু দেখেনি তখনও, সে পনেরো থেকে আঠেরো বছর বয়স। তার গ্র্যান্ড ফাদার বা গ্র্যান্ড  মাদার কেউ মারা গিয়েছিল যখন তারা মিশর বা প্যারিসে ছিল বাবার টার্গেট অ্যাচিভের জন্য। আবার সে মেয়ে আরও বছর পাঁচেক পরে যখন একটি নিউট্রন বা প্রোটন বা পজিট্রন ফ্যামিলিতে পরিণত হল, তখন তার বাবা বা মা রয়ে গেল মৃত্যুর অনুভূতি একা অনুভবের জন্য।  

আমার কল্পনার মেয়ে সাথী, তার চারিদিকে ঘিরে থাকা গ্রাম্যতা। তার ঘর তার দুয়োর, তার উঠোনের মাটি, তার সারা অঙ্গে জড়িয়ে থাকা (‘পিতি অঙ্গ লাগি কান্দে পিতি অঙ্গ মোর’)। কখনও দূর লঙ্গ পাহাড়ের উচ্চতা কখনও অতল  কোনো খাদ। আমাকে কাছে ডাকে অথচ সীমারেখায়। তার হাত ধরতে ইচ্ছে করে আমার, ইচ্ছে করে পাশে বসিয়ে দেখি কিভাবে তার মাতৃত্ব আমার পরিচিত নারীদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সে এসে তার ছেলেটিকে কোলে তুলে নেবে, বুকের দুধ দেবে হয়তো। ছেলেটির খিদে পেয়েছে দেখা যাচ্ছে। সে খেলে খেলে ক্লান্ত,  ঘুমোবে। ঘুমের সময় তার মাকে চাই। তার শাশুড়ি সরে যাবে রান্নার দিকে যদিও হেঁশেলের ভার সে কখনওই তার ছেলের বউয়ের উপর ছেড়ে দিতে রাজি নয়। আর আমি দূর থেকে আমার ঠাকুমার দেওয়া সেই স্বভাব, মুখের পিছনের গল্প বানিয়ে যাচ্ছি।  

আমার উপস্থিতি, বা এ বাড়ির ছেলের অনুপস্থিতি, ছেলের বউয়ের হার বা তার মায়ের জিত। কোনটা বেশি অর্থ রাখে, আমার তার দিকে এগিয়ে না যেতে পারা। নাকি নিজেকে কিছুটা দূরে রাখার সার্থকতা। লেপা উনুনের চারপাশে কিছুটা সোঁদা গন্ধ। কাঠের খুঁটি, বাঁশের চালা তার উপর টিনের ছাউনি, দর্মার দেওয়াল। মডিউলার কিচেন থেকে কম দেখা যাচ্ছে? যাচ্ছে হয়তো আমাকে তাই সে একবার আড়ে আড়ে দেখে গেল। বলে গেল মাকে গিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করুন। আমিও আড়ে আড়ে বললাম মাকে কি ঠকানো যাবে? সে বলল ঠকাবেন কেন, বলুন সারারাত ট্রেন জার্নি করে এসেছি, আবার দুপুরেই ট্রেন আছে। বাবুকে দেখতে ইচ্ছে যাচ্ছিল তাই হয়তো আমাকেও ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

কখনও কখনও মনে হয় ক্লান্তি কাউকে মুক্তি দেবে, কেউ কেউ আছে যারা ক্লান্ত  হতে খুব ভালোবাসে। পরিশ্রম তাদের প্রায় জীবন সাথী, কোনো একদিন কিছু পরিশ্রমের কাজ না থাকলে ভাবতে শুরু করে আজকের দিনটি ব্যর্থ গেল। কিছু কাজ করা হল না। আমিও তেমনই কিছুটা অনুকরণ করে দেখবো ভাবছি যদি উপায় আসে। কিন্তু কি হবে সাথীর শাশুড়ির সাথে কথা বলে? সে কি কিছু অন্য কোনো আঙিনা দেখাতে পারবে। দেখে তেমনই মনে হচ্ছে পরিশ্রম করতে ভালোবাসে। পরিবারের জন্য রাঁধাবাড়া, ঘর কন্নার কাজ করা, পাতা উনুনের জন্য শুকনো কাঠ পাতা জোগাড় করা। সেগুলিকে ঠিক মতো সাইজ করে কেটে রাখা দা দিয়ে। গুছিয়ে রাখা উনুনের পাশে। গোবর জোগাড় করা, লেপা পোঁছা।  তারপর নিজের জন্য কিছুটা সময়, কিছুটা তার ঠাকুরঘরের খেলনাপাতি। সেসব বাসনকোসন তেঁতুল দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাজতে বসা। এও এক মন ভোলানো জ্বালা, যে জ্বালায় মরে অর্ধের মানুষ। কিন্তু এসবই যে দেখেছে সে দেখে এসেছে সেই ছোটবেলা থেকে। বৈষ্ণব পরিবারের মেয়ে, বাবা হয়তো সাত্ত্বিক মানুষ ছিলেন। মা ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। ঘরে গিরিধারি, ঘরে নিত্যপুজো, সন্ধ্যা আরতি। তারপর একদিন হঠাৎ কি হল বাবা বললেন আর হয়তো চালানো যাবে না। আমাদের চলে যেতে হবে। গাছে ফল আছে, পুকুরে মাছ আছে, কিন্তু তুলতে পারিনা। কেউ তুলে নিয়ে গেলে দূর থেকে দেখি শুধু, তারপর নিজেরই জিনিস নিজেই হাত পেতে চাইতে হয়। এভাবে কি মানুষ বাঁচে? আমাদের কাজ নেই  রোজগারও নেই তেমন, চলে যাওয়াই শ্রেয়। ছেলেমেয়ে বড় হতে গেল। স্ত্রী বলে কিন্তু এই ঘর এই মাটি, এদের কি ফেলে চলে যাবেন! ফেলে কেন, ফিরে  আসবো নিশ্চয়ই ফিরে আসবো। শুধু কিছু বছর ওদিকে দেখি ছেলেটা যদি কিছু করে উঠতে পারে, এ গ্রামে আর নয় শহরের দিকে কোথাও বাড়ি কিনে ফিরে আসবো। সেই চলে এসেছিল। তারপর একটু একটু করে রেশন কার্ড, পরবর্তী  কালে ভোটার কার্ড, সবই হয়েছে। সরকারের খাস জমিতে প্রথমে দখল করে  পরে সেখানেই দলিল পেয়েছি। ঘর হয়েছে, তৈরি হয়েছে আরেক গ্রাম, কিন্তু ফেরা আর হয়নি।      

আমি সেই মুখের পিছনের গল্প কল্পনা করে যাচ্ছি। সে নারীর চোখে ঘুম নেই, এই অনুভূতি ঘুম থেকে চিরবঞ্চিত করেছে তাকে। জেগে থেকেছে সে সারা জীবন। তার দেখা সেই মায়ের আঁচল দিয়ে ঘেরা পৃথিবী, সে জেগে থেকেছে দেখার জন্য। নিজেকে বিচ্ছিন্ন বিচ্যুত অনুভব করেছে, যেহেতু হারিয়ে যাওয়া বাড়ির স্মৃতি, প্রতিশ্রুত নতুন দেশে নতুন কিছু আশার স্মৃতি। তাকে বাস্তবে এক নির্বাসন দিয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃত নির্বাসন কি এভাবেই আসে? আমিও তো দেখেছি কস্তূরীর মাকে। সে তো কোনো আশাহীন উদ্দেশ্য নিয়ে এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীতে চলে আসতে বাধ্য হয়নি। তবু তিনি কি জানতেন তাকে এভাবেই একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে? কে জানে তিনি কী দেখতেন ওভাবে। তবে তাকিয়ে থাকতেন শুধু, কেননা তার কথা বলার মতো তেমন কেউ ছিলনা সাথে। চাকরি থেকে রিটায়ারমেন্টের পরে এভাবেই দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, ছেলে বাইরে গেছে পড়তে। সেখান থেকে ফোন করে কখনও, কখনও বা ভুলে যায়। আমাকে বলেছিল মাঝে মাঝে খবর নিয়ো। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি কাকে খবর নিতে বলছেন তিনি, কেননা বিগত জীবনে কখনও খবর নিলে বলতেন, আমি কি খারাপ থাকতে পারি, আমি খারাপ থাকলে যে বাকি সকলেই খারাপ হয়ে যাবে। আর তাঁর ছেলে শৈলেশ, আমার থেকে কখনও খারাপ থাকতে পারে বলে আমি ভাবতে পারিনি। তাহলে সেও কি এক প্রবঞ্চনা? অথচ একদিন খুব আশ্চর্য  এক খবর পেয়ে ছুটতে হল। কস্তূরীর মা নাকি অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কস্তূরীর বাবা খবর দিলেন আমাদের, যেহেতু তাঁর ভাই নেই কাছে তবে আমাকেই সামলাতে হবে সবকিছু। সব তো সামলানো যায় কিন্তু ওই মারাত্মক সিদ্ধান্তের পরেও যদি কেউ ফিরে আসে তবে তার আত্মগ্লানি। যে মানুষ নিজের বিশ্বাসের সাথে বেইমানি করে, তাকে কেউ কিভাবে আগলে রাখে! এই  ফাঁকি দিয়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছে, এই জীবনের সবকটি মানে বুঝে ফেলার দাবি। তারপর তার দিকে তাকিয়ে কথা বলা বা তার আমাদের দিকে তাকানোর চেষ্টা করা। এ সমস্ত কিছুই কয়েকটি হ্যাঁ বা না এর উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অন্তত যেটুকু আমি বুঝতে চেয়েছিলাম, অ্যাবসার্ড, সবকিছুই। এমনকি কাজকর্ম, এগিয়ে যাওয়া, অধিকার, এডুকেশন, সার্টিফিকেট, চ্যালেঞ্জ যেমন বিবাহ। বা হয়তো যুদ্ধ, মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই, যেমন বাইরের নীরবতা। সবকিছুই হতে পারে সব কিছুই, মুলত এক বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে জীবনের প্রথম সঙ্গম পর্যন্ত। যাকে আমরা আত্মার উপস্থিতি বলে থাকি। যেখানে মানুষ আর তার নশ্বরতা একসাথে বসবাস করে। অথবা যেখানে মানুষই নেই সেখানে আর নশ্বরতা কি করবে!  তাই তার থাকাটাও অর্থহীন হয়ে পড়ে। কস্তূরীর মাকেও আমি সেভাবেই কিছু একটা প্রাপ্তির দিকে যেতে দেখেছিলাম, নাকি বাস্তবে মৃত্যুর দিকে! কিন্তু সেই প্রাপ্তি মৃত্যু ছাড়া কি করে সম্ভব। মৃত্যু ছাড়া কিভাবে ফেরা সম্ভব। যা কিছু আছে সব এই পৃথিবীতে বা যা কিছু নেই আমাদের পৃথিবীর বাইরে। অর্থাৎ যা আছে তা এক শূন্যতা আর যা নেই তা হল শাশ্বত।

তাহলে সাথীর শাশুড়ি এই শাশ্বতের পিছনেই হয়তো কাটিয়ে দিয়েছেন তার  মেয়েলী চাহিদা। যা ছিল বাস্তবে স্বার্থপর এবং লোভী। কিন্তু তার প্রকাশ নেই। তাই দেখা যায়না, অনুভব করা যায়, বুঝতে পারে তার সাথে যারা ঘর করে। তার স্বামী জানে এমন কিছু বা তার ছেলে জানে যা আমার জানার কথা নয়। অথচ আমার অভিশপ্ত জীবন অন্যের ভাতের হাঁড়িতে উঁকি দেওয়ার ইচ্ছে। তাহলে কি আর করা, দেখি কি রেখেছে সে আঁচলে জড়িয়ে। সেকি, এ যে তার প্রায় মৃত স্বামীর প্রাণপাখী তার আঁচলের কোণায় জড়িয়ে বাঁধা পড়ে আছে! একটি পা আটকে আছে আর প্রাণপণ ডানা ঝাপটে যাচ্ছে অস্ফুট চিৎকারে। আর আমি হয়তো ছোট অন্তর্যামী, দেখতে পাচ্ছি সবকিছু ততটাই স্পষ্ট। কিন্তু বসে আছি কিছুটা অন্ধকারের প্রতীক্ষায়।

শেষমেশ তাও এলো, এলো সেই প্রতীক্ষিত অন্ধকার রাত, যার জন্য আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। কেননা খুব ইচ্ছে ছিল রাতের কথা জানার, সে মেয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তার হাতের সামান্য চুড়িগাছা কোনো কথা বলে কিনা। দেখা করে কিনা তার মরণপ্রিয় সতীনদের সাথে। সতীন বলতে কিন্তু আমি সে সময়কেই বোঝাতে চাইছি যেখানে তার স্বামীর পাশে হয়তো শূন্যতা আর তার পাশে আমি। সে মেয়ে আমাকে তার অন্ধকার ঘরের ভিরতে নিয়ে যাবে মনে হল। হয়তো কিছু দিতে চাইছে, দিতে চাইছে যা বরাবর পুরুষের আকাঙ্ক্ষিত। আমিও মোহগ্রস্তের মতো প্রায় অনুসরণ করবো। ভুল হতে হতে ঠিক যেখানে এসে আমাকে দাঁড়াতে হবে সেই কিনারায়, অর্থাৎ তার ডিম লাইটের সামনে। সারাটা দিন গিয়েছে নানান কাজে বা কাজের অছিলায়। দুপুর গিয়েছে, আমাকে সে বলেছিল তার মায়ের সাথে দেখা করতে, আমি অবশ্য পারিনি। কেননা কেউ কিভাবে তার ছেলেকে ভুলে যাবে। তার থেকে বরং দূর থেকে দেখা ভালো। একদিন কোনো একদিন হয়তো আমরা আমাদের সেই ফেলে আসা ভিটেতে ফিরে যেতে পারবো। ছেলেটা গেছে রোজগারে, কিছু একটা  করুক। এতটা অনিশ্চয়তার মধ্যেও একটি নিশ্চিত পরিণতির দিকে তাদের চোখ। তাই কথা হয় খুব কম, হয়তো কথা বলার প্রয়োজনই নেই। বা সব কথা শেষ হয়ে এসেছে। স্বামী স্ত্রী, ছেলের বৌ, মেয়ে সবাই নিজের কাজটুকু করে রাখে। যেন কাজটুকু করে রাখাই দায়িত্ব। যে কারণে সে এ ঘরে থাকার অনুমতি পেয়েছে। সকাল থেকে দুপুরের দিকে একবার ভাত খায় সবাই, ওটাই নাস্তা ওটাই দুপুরের ভাত, তারপরে আবার সন্ধ্যের অপেক্ষা। গোটা জীবনই একটা অপেক্ষা, যদিও সবার ক্ষেত্রেই তাই তবু, যারা সেভাবে রিফিউজি হয়ে অসেনি দেশ ভাগের সময় বা বাংলাদেশ হওয়ায় সময়ও আসেনি, বরং তার পরে অনেক পরে এসেছে ওপারে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়ে। তাদের অপেক্ষাটা বাস্তবে একেবারে আলাদা। আর এ মেয়েটি এবং তার স্বামী যাদের ছোটবেলার স্মৃতি ঠিক মনে নেই। তারা না আছে এখানে না আছে সেখানে। তারা বুঝেই উঠতে পারেনা আসলে দেশ কোনটা। দেশ তো কারোর একার হয়না। তবে আমরা কোথায় আছি!  

যখন থেকে সন্ধ্যে হয়েছে, দেখতে পাচ্ছি এক নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে তাদের বাড়ির চারিদিকে। ঘরগুলি বড় বড় গাছের ছায়ায় যেন নিজেকে ঢেকে রেখেছে। সাথী এবার ঘুরে তাকাল আমার দিকে, আর আমার মনে হল তা গভীর অর্থবহ। তার ঘরে একজন পরপুরুষ যে নাকি তার স্বামীর মতো দেখতে। তাকিয়ে আছে। সাথী আয়নার সামনে ঘুরে গেছে, দেখছে নিজেকে। তার ভুরূর মাঝে টিপ আর কপাল ফাটা। যদিও তা আমার দৃষ্টিকোণ। আমি দেখে যাচ্ছি এও নারী সেও নারী। সাথী এবার তার শাঁখা পলাগুলি হাত থেকে খুলে দিল, রাখলও ড্রেসিং টেবিলের উপর। শাড়ি আলগা, সায়ার বাঁধন খুলে আবার ঢিলে করে বেঁধেছে। চুলের ক্লিপ, মাছের কাঁটা, খোলা হয়ে গেছে। আমাকে বলছে একটি চেয়ার দেখিয়ে, ওখানে বসুন, বসে থাকুন। ঘরের আলো হালকা ডিম লাইট। বাকি সবই তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে, শুধু ঐ শাঁখা পলা আর চুড়ি কটি খুলে রাখা হয়তো  বিমূর্ত যা বাস্তবে অ্যাবসার্ড। আমাকে বলছে চেয়ারে বসে থাকো এবং দেখো কিভাবে আমরা শুয়ে আছি।

(ক্রমশ)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন