কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

উমাপদ কর

 

কবিতার কালিমাটি ১০৯


শিরোনাম রাখতে হবে এমন কোনও কথা নেই

 

(১০)

 

মুঠো করা মুঠো-মুঠো হাত উঠছে উঁচুতে। ব্যারিকেডের ওপারে। এপারে রাশি রাশি নল আপাত বগলবন্দি। কাঁধ থেকে কিছুটা উঁচিয়ে। জ্যামিতিক চলাচলে রোবট যত। রিমোট নিয়ে বসে আছে কফিকাপের সকাল ওরফে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র জানে, বোঝে, পাত্তা দেয় না। বাগে আনতে চায়। জল গড়ালে বাঁধ দিয়ে দেবে শক্ত মজবুত।

পথ নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অ্যাত্তো ব্যারিকেড! দিকে দিকে! মুখে অবশ্য পারফিউমড্‌ হাসিটা ঝুলিয়েই রেখেছে। ভুগছে অ্যানিমিয়ায়। আজ কতদিন কাউকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারছে না। কেমন বেকার! কিছু রাইফেলভারীট্রাক, জলবাহীহোসপাইপ, একবেশধারী মানুষের জটলা, এই কি পথের পেশা? সাধারণ বেহদিশ, বা ব্যরিকেডের ওপারে ট্রাকটরের চাকায় পিঠ ঠেকিয়ে স্লোগানে স্লোগান। থুড়থুড়ের গলা এখনও এতটা ফোলে!

ব্যারিকেড ভাবে, কী করবে সে? ঘা খেতে হতে পারে, ওপার থেকে। এপারের ব্যর্থগুলি বুক ভেদ করে চলে যেতে পারে। তবু আদেশ পালন করাই তার ধর্ম। অটুট রাখতে হবে কেন্দ্রক, ক্ষমতার শ্বাস, প্রাণরাষ্ট্রভোমরার গুনগুন। পরিধিতে অবস্থান যেন মৌরুসিপাট্টা। জানে, ভেসে যেতে পারে, হড়পা এলেই।

মুঠো হাতের রুঠো পা জানে বর্ষায় ভিজে নরম হবে। রুঠো পায়ের মুঠো হাত জানে আসি আসি শীতে লাঙলে বা স্টিয়ারিঙে প্রায় একই মুঠো কার্যকর। বাঁকানো শরীর জানে, ফসলের ভারে যত না, তারও চেয়ে বেশি বেঁকে যাবে মুনাফাতোয়াজিদের ফরমানে। তাই, হয় ছেঁড়ো, নয় রইলাম মুঠো হাত, রুঠো পা, শিরাফোলা গলা।

আকাশে লক্ষমুঠি হাত উঠছে আর উড়ছে। মাটি পায়ের চাপে গর্ত হচ্ছে। গর্জনে ভারী হচ্ছে বাতাস।

 

(১১)

 

দিল্লিতে আজ ভোরে কত ডিগ্রি সেলসিয়াস জানে ওরা। শুধু জানেই না, শরীর দিয়ে মাপে। মাঝে-মাঝে ডাকে তারা, আদর করে বসায়, দরদী গলায়— কী ঠাণ্ডা! তাই না! ওরা জানে মানবে না, মানাতে ডেকেছে। অমীমাংসিত দরজা দেখাবে শেষে। তারা দাবি করবে, নিজের ভালোটা কেন যে বোঝে না ওরা! মূর্খ যত্তোসব! 

মূর্খ! গতরে খাটতে জানে। মাটি বানাতে জানে, বীজ ছড়াতে জানে, রুইতে জানে, আগাছা উগরাতে জানে, জৈব-অজৈব মেশাতে জানে, পালতেপুলতে জানে, কাটতে জানে, জানে ঝারাইবাছাই, নিজের দরে বেচতে জানে, খেতে ও খাওয়াতে জানে। শুধু নিজের ভালোটা জানে না, বোঝে না! মূর্খ।

তারা বিজ্ঞ এবং চালাক। তারা গদিসীন, গদাসীন। তারা ইজারাদার, ওজনদার। সব জানে-বোঝে। জানে জল নীচের দিকে চলে যেমন, তেলও নীচের দিকে গড়ায় ও জমে। তেলামাথাদের জানে, তাদের জন্য আরেকটু তেল ঢালতে জানে, সেই তেলে লুচি ভাজতে জানে, গরম-গরম খেতে জানে ভরাপেটে, ওদের ভাগেরটা তেলামাথাদের খাওয়াতেও জানে। জানে না শুধু কাল রাতগভীরে আর আজকে ভোরে দিল্লির তাপমাত্রা সঠিক কত! বিজ্ঞ ওরা, চালাক ওরা।

আমরাই কি জানি! বিজ্ঞ হয়তো নই, অজ্ঞও তো নয়! ভাষণ জানি, তোষণ জানি, দূর থেকে দেখতে জানি, কোন দলে ভিড় মাপতে জানি, ওদের খাওয়াতে-জানাকে স্যালুট করি, ফাঁকতালে লুচির প্রসাদ পেতে জানি। ঝোলে লাউ, অম্বলে কদু হতে জানি। এমনকি কালরাতে আর আজ ভোরে দিল্লিতে তাপমাত্রা কত তাও জানি, টিভি খুলে। শুধু শরীর দিয়ে মাপতে জানি না।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন