কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৭




খুন অথবা হত্যা

না, লোকটা খুব জোরে চিৎকার করতে পারেনি। চিৎকার করার মুহূর্তেই তার চিৎকার চাপা পড়ে গেছিল কন্ঠনালীতে দুটি বলিষ্ঠ হাতের নিষ্পেষণে। তবে গোটা শরীরটা খুবই ছটপট করছিল। আর তার দুটো হাত আপ্রাণ চেষ্টা করছিল  নিষ্পেষণকারীর হাত দুটো আলগা করার জন্য। কিন্তু তা সম্ভব হলো না। লোকটা আস্তে আস্তে দমবন্ধ হয়ে নিস্তেজ হয়ে গেল।

ফান্টুস আর সময় নষ্ট করল না। খুব যত্ন করে একটা রুমাল দিয়ে ঘষে ঘষে লোকটার মুখ ও গলা পরিষ্কার করল। তার কুঁচকে যাওয়া শার্ট-প্যান্ট ঠিকঠাক করে দিল। একটা আধা-খাওয়া মদের বোতল ভালোভাবে মুছে লোকটার হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিল। তারপর বিগতপ্রাণ শরীরটা সেই অন্ধকার নির্জন মাঠে শুইয়ে রেখে ধীর পায়ে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়াল।

কিন্তু এখন ফান্টুস কোথায় যাবে! আজ রাতে নিজের ঘরে থাকা কি নিরাপদ? কে জানে! পুলিশ যদি রাতেই লোকটার মৃতদেহের সন্ধান পায়, তাহলে রাত থেকেই পুলিশি হুজ্জুতি শুরু হবে। লোকটার পরিচিত লোকেদের বাড়িতে পুলিশ হানা দেবে। ফান্টুস তাহলে নিশ্চয়ই বাদ যাবে না! হয়তো থানায় তুলে নিয়ে যাবে।  নানারকম বিটকেল প্রশ্ন করা হবে। সামান্য সন্দেহ হলেই বেধড়ক ঠ্যাঙানি দেবে। না, এতটা ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।

ফান্টুসের মনে পড়ল একদা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিবতোষের কথা। শিবতোষ কাছেই থাকে। ইদানীং যদিও যোগাযোগ একেবারেই নেই, দেখাও হয়নি বহুদিন, তবুও মনে হলো, অন্তত একটা রাত শিবতোষ তার বাড়িতে ফান্টুসকে থাকতে দিতেই পারে!

রাত এগারোটা বেজে গেছে। শিবতোষ দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল ফান্টুসকে দেখে। বলল, তুই? এত রাতে? এতদিন পরে? কী ব্যাপার! ফান্টুস নিজেকে নর্মাল রাখার চেষ্টা করে বলল, হ্যাঁ, হঠাৎই এলাম। কতরকম ব্যস্ততায় থাকি, তোর সঙ্গে দেখা করা আর হয়েই ওঠে না।

-তাই তুই আজ এলি? রাত এগারোটার পর?

-আজ রাতে যদি তোর বাড়িতে থাকি, তাহলে তোর আপত্তি আছে?

শিবতোষ বিস্মিত দৃষ্টিতে ফান্টুসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। বলল, দেখ  ফান্টুস, তুই আমার বন্ধু ঠিকই। কিন্তু অনেকদিন হলো, আমাদের যোগাযোগ নেই। তুই এখন কী করিস, কোথায় থাকিস, কেন আজ তুই আমার বাড়িতে থাকতে এসেছিস, কিছুই জানি না। আমি মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকি। তুই যদি সত্যি কথাটা না বলিস, তাহলে আমি তোকে আজ রাতে থাকতে দিতে পারি না।

শিবতোষের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফান্টুস একটা অটোরিক্সা ভাড়া করে প্রেমিকা অন্তঃশীলার বাড়িতে পৌঁছল। রাত তখন বারোটা বেজেছে। অন্তঃশীলা ও তার মা শুয়ে পড়েছিল। মা-মেয়ের সংসার। কলিংবেলের আওয়াজে অন্তঃশীলার ঘুম ভেঙে গেল। চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, কে?

-আমি ফান্টুস।

তড়িঘড়ি দরজা খুলে অন্তঃশীলা বলল, এই মাঝরাতে তুমি?

-আজ রাতে তোমার কাছে থাকব।

-কেন?

-আমি একটা খুন করেছি।

-খুন! কাকে?

-বিপুলকে। আমার বোনকে ধর্ষণ করেছিল। পুলিশ নিশ্চয়ই আমার খোঁজ করবে! নিজের বাড়ি নিরাপদ নয়।

অন্তঃশীলা কান্নায় ভেঙে পড়ল। বলল, তুমি চলে যাও ফান্টুস। এবাড়িও নিরাপদ নয়।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন