কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

গোবিন্দ ধর

 

কবিতার কালিমাটি ১০৭


একটি আস্ত আনস্মার্ট কবিতা

 

চিমতে হালাম বিদ্যাজয় রূপিনী

এবং তিতরাম রিয়াং

তিনটি নাম।

শুধু নাম নয় যদিও তিনটি নাম

এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ

খাদ্যের অভাব বলতে বলতে কিছু হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়।

সমবেত হয় কিছু মানুষ।

 

পুলিশ গুলি ছাড়ে শান্তিপূর্ণ ভাতের দাবীর উপর।

 

একটি পতাকার ভেতর থেকে আওয়াজ

ভাত চাই।

খাদ্য চাই।

সকলের জন্য ভাত চাই ।

 

মন্ত্রী মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম গনি খান

কারো কথা শোনার সময় নেই।

খাদ্যগুদামে সমবেত অনাহারী মানুষ।

 

খাদ্য চাইতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করা অপরাধ।

আগামীর বীজ সমেত মায়ের শরীরে বুলেট গুলিবৃষ্টি হয়।

 

মায়ের পেটে বীজপত্র সবুজ আনবে বলে

পেটের খিদেয়

আগামী শিশুটির কথা ভেবে এই দাবী করেছিলো।

 

একটু ভাত চাই মন্ত্রী

ভাত খামু মন্ত্রী।

তিনজন মানুষ গুলিবিদ্ধ।

 

ভাত চেয়েছিলো এই অপরাধ।

সত্যি অপরাধ?

খাদ্য চাইতে গিয়ে শতকের পর শতকেও

গুলিতে ঝাঁঝরা মা

এবং বৃক্ষ অথবা বৃক্ষদেবী।

 

সবুজের বড় অভাব এই আনস্মার্ট কবিতায় ঝরে পড়ে

টুপটাপ ভাতের গন্ধ

জুঁই ফুলের মতো ঝরে পড়ে!

 

পতাকাশরীর ও পাঁজরের মানচিত্র

 

মধ্যরাতে নিজস্ব পুরুষের নিকট থেকে ঘুমের ভেতর বিলিয়েছো পতাকাশরীর।

ইহাকে স্বাধীনতা বলে?

শরীর রাষ্ট্র ক্রমাগত একে ওকে দিলে

ভাগ হয়ে গেলো দেশ

নেহেরুর ভারত সাইন ইন্ডিয়া

জিন্নার ভারতকে ভারত বলে না বলি পাকিস্তান।

সকল কলকাঠি নেড়ে নেড়ে এডউইন চারমিনারের ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিলো ভারত।

 

স্বাধীনতা এসে এডউইন চারমিনার আর

মধ্যরাতের গোপন আনন্দের নিকট ক্ষীর হয়ে গেলো।

তিনি ইটকাঠ বাড়ি থেকে সবুজ উত্তর পূর্বের দিকে থাকান।

আবার গালিবের দিকে

ইকবালের দিকে

শত বিভক্ত শরীর ইণ্ডিয়া ছিটমহল সুখের পায়রায় তুমি উড়িয়েছো শরীরসুখ।

লক্ষ্যে স্থির অর্জুন পাখিটির চোখ চোখের মণি

তারপর নিক্ষেপ তীর।

তর্জনী উঠুক তাতেও বিভক্ত স্বাধীনতা

বছর বছর ত্রিবর্ণ পতাকা উড়ে পাখিআকাশ।

পাখিদের নীড়ে সেই শলাপরামর্শে জেনে গেলো সবুজের জমাট ছিটমহল।

টুকরো টুকরো শরীররাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী চাই

এই যাদুবিশ্বাস থেকে শুরু হয় উড়াল।

উড়তে উড়তে পায়রাপতাকাগুলো ফৎফৎ করে

আরো আরো উড়ে যায় নীল আকাশপথে।

মাটির সুতো কেটে গিয়ে শরীর রাষ্ট্র আরো রাষ্ট্র গড়ে

মধ্যরাতের গোপন আনন্দ করিডোরের নিকট পৌঁছে যায়

দেশবদলের এডউইনচাবিকাঠি।

বিলিবন্টন থেকে জন্ম নেয় রাষ্ট্র

আরো রাষ্ট্র আরো আরও...

মধ্যরাতের ভুল স্বাধীনতা কাঁটাতার নদী পেরিয়ে

দিন যায় দিন যায় একদিন বেহাত হলে

পরিকাঠামো থেকে পড়ে থাকে পাঁজরের মানচিত্র।

 

এসো, আঁকো শুধু পাখিচোখ

 

চৈতন্য ফকির

যখন ঘুমাই আমাকে ঘুমন্ত বলো না, তখন আমিই ঘুম।  

I am the sleep - সরকার আমিন।

 

জীবন এক কচুপাতার জল। বাকি সব পাখি সব কিচিরমিচির।

অহংকার এখানে শূন্যতা বাড়ায়।

হিংসা এখানে হিংস্রতা বাড়ায়।

প্রাপ্তির ঝুলিতে আরো ধু ধু ফাঁকা হয় বিস্তীর্ণ নদীখাত।

নিদ্রা ও তন্দ্রা দু'বোনের মাঝে আরো এক বোন তার কোন বন্ধু নেই আছে শুধু নিজস্ব যাপন।

হাত ধরে মনুজল পার করে দেওয়া যায় না তাকে।

মনুজল শীতে হাঁটুজল নদী, বর্ষায় তারই গভীর স্রোত।

নিজেকে জাগ্রত রাখা জীবনের ধারাপাত।

 

ঘুমের মেডিসিন তাই ঘুম নয় অহেতুক মাথাকে বালিশে রাখা।

একেকটি মাথায় এত অস্ত্র রেখে ঘুমের কি দোষ বলো

মেডিসিন এনে দেয় ঘুমের প্রত্যয়।

বরং জাগ্রত রাখো নিজস্ব মাথা। জেগে জেগে গেয়ে উঠুক নবান্ন গান।

গানের স্বরলিপি লেখা খাতা হারিয়ে গেলে মিছেমিছি মিছিল হয় স্লোগান হয়।

 

রচিত কুপমণ্ডুকতা থেকে পরিত্রাণ নেই।

নিজের শিক্ষক হিসেবে নিজেকেই জাগ্রত রাখা

মানুষের দরকার।

মিছেমিছি কোলাহল মিছেমিছি মিছিল থেকে গণদেবতাদের কিছুই পাওয়ার নেই।

এই আপ্তবাক্যের ভেতর আর কোন পতাকা নেই।

আছে শুধু নিজস্ব যাপন।

গড্ডালিকা দৌড় থেকে বেরিয়ে গেলেই সঠিক তন্দ্রা আসে নিদ্রাময় শরীরে।

তার মাঝে তার বোন সুখে থাকে বিছানায় আচ্ছন্ন।

 

সকল অস্ত্র রাখো একলব্য। বরং নিজের আঙুল তুলে নিজেকেই বলো:

অহংকার কি পতনের কারণ নয় মোগল সাম্রাজ্যের?

 

এসো পাখি নয় বৃক্ষ নয় রাজসভা নয়

মনোযোগ বসাও বৎস শুধু আঁকো পাখিরচোখ।

 

মাটির কবিতা - ১

 

মাটির গন্ধ মেখে কতদিন কেটেছে

সে সব মনু জানে

আর রাতাছড়ার ধানিজমি।

 

এখন শহুরে আমি।

ধানগাছ দেখতে যাই অবসর সময়।

 

আর মনুর জল ছোঁয়ে গতদিন দেখিনি।

তবু ছোটবেলা সারাক্ষণ ঘুরেফিরে আসে।

আর মাটির গন্ধ বহুদূর থেকে আসে।

 

মাটিশূন্য আমাদের পা পড়ে লাল গালিচায়।

 

মাটির কবিতা – ২

 

প্রতিদিনই মনে হয় মাটির নিকট হাঁটু পেতে দেবো।

লিখবো মাটির ভাষায় লাঙলের কথা।

ধান চারার জন্মদিন।

লিখবো চাষার বুকের স্বপ্ন। চা বাগানের মেয়ে

রাইধনী উরাং কেমন খিলখিল হাসতে হাসতে, পাতা তোলে।

কেমন করে হাসতে হাসতে শ্রমিক শিল্পীর হাতে

ভাঙে ইট। গড়ে উঠে ইমারত।

 

মাটির কবিতা হয়ে উঠে না। মাটি হয়ে যায় সব কবিতা।

হাসির গভীরে লুকানো ক্ষত পড়তে পারি না, পারি না সময়ের যন্ত্রণা পড়তেও।

তাও মাটির নিকট বসি বারবার। নতজানু থাকি।

মাটির বুকেই লাগিয়ে দিই চা পাতার সবুজ, স্বপ্ন।

 

মাটির নিকট ঋণ রেখে একদিন শেষমেশ, এসো

প্রজন্মকে পথ বাৎলে দেবো।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন