কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

চিরশ্রী দেবনাথ

 

সমকালীন ছোটগল্প


দশমীর ক্যানভাস

 

অবশেষে একটি ফোন করেই ফেলল চন্দ্রাবলী। করবে কি করবে না, করা উচিত কি অনুচিত হাজার চিন্তা করে শেষপর্যন্ত মনে মনে বলল, একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা করবে, এতো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, এতো ভাবার কী আছে! না, মানুষ এবং মানুষী বলেই সে এতো ভাবছে। আর  কোনদিন জীবনে হবে না। কিছু কথা নেই বলার, জানারও না, শুধু দেখা করবে, না হয় আজকের আবহাওয়া কেমন এই নিয়েই একটু কথা হলো। রোদটা বেশ চড়ে উঠেছে বা কাল বৃষ্টি হবে কি না, এখন আবহাওয়ার কোন ঠিক ঠিকানা নেই, সারাবছরই বৃষ্টি। এসমস্ত কথা সে খুব স্বচ্ছন্দেই বলতে পারবে। ঐ পাশ থেকে কেউ হ্যালো বলল। সেই মন্দ্র গলার স্বর।

কে বলছিস, তনু!

হো হো হাসি ভেঙে ভেঙে গড়িয়ে পড়ল। হ্যাঁ রে চন্দু আমি তনু। দেখ্ অবশেষে তুই ফোন করলি, এসেছিস আমার এই শহরে তাই না, জানতাম একদিন তুই আসবি।  ইট সিমেন্টের মহা জঙ্গলে তোর একদিন একটা খুব কাজ পড়বে আর তুই আসবি। তখন তোর মনে হবে তনুকে ফোন করি।

চন্দ্রাবলী একটু হালকা হলো।

হ্যাঁ রে এসেছি। আসলে আমার রিসার্চ পেপার সাবমিট করা হয়ে গেছে, আর একদিন থাকতে হবে, তোকে একটু দেখতে চাই, কোথায় দেখা করবো বল।

তনুময় গলা চেপে বলল, আমার সঙ্গে যেতে তোর ভয় করবে না তো? যদি না করে  তবে আমি একখানা গাড়ি নিয়ে আসবো আর কোন কথা নয়।

চন্দ্রাবলী ‘ওকে’ বলে ফোন রেখে দিল।
তনুময়কে ভয় করবে ওর! আশ্চর্য! কেন ভয় শব্দটি মাঝখানে এসে গেলো! একেই বলে অনুপ্রবেশ। দুজন মানুষের ভেতর একটি শব্দের ঢুকে পড়া।

কলেজে থাকতেই তো তারা বন্ধু হয়ে উঠেছিল, এর আগে কি কেউ কাউকে চিনত? তখন দুজন দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসকে পর্যন্ত চিনতে শুরু করল। কার কোনদিন মন খারাপ চোখ দেখেই বলে দিতে পারত তারা। এতটাই অকপট বন্ধুত্ব ছিল তাদের। অথচ এক আশ্চর্য কপট সম্ভার যে চন্দ্রাবলী অন্তরে জমাট করেছে তা কি কারণে,  বুঝলো না তনুময় সেদিন।

চন্দ্রাবলী এই মুহূর্তে অতীতের ঝাঁপ খুলতে চাইছিল না। দোকানি অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে পশরা। তবুও রবিবারের একপাট খোলা দোকানের মতো ফেলে আসা দিন উঁকি দিচ্ছে।  দ্রুত কেটেছে সময়। বিবাহ, সংসার, ছেলের মা হওয়া, তারপর বহুদিন পর অতনুর প্রবল উৎসাহে আবার পড়াশোনার জগতে ফিরে আসা, শুধুই আনন্দ আর নিজেকে একবারটি খুঁজে নেওয়ার জন্য। অতনু তার প্রিয় স্বামী, সবচেয়ে বড়ো বন্ধু। অতনু চন্দ্রাবলীকে সুগন্ধা নারী করেছে। নরম লাস্য, উজ্জ্বল স্বাস্থ্য, চোখ জুড়ে দীর্ঘ ঘন ছায়া এসেছে সুখী দাম্পত্যের এই যাপনের মধ্য দিয়ে। বড়ো প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে চন্দ্রাবলী অতনুকে। ওর শক্ত কাঁধ ছাড়া আর বাঁচার কোন অবলম্বন নেই চন্দ্রার।

তবুও মনে হলো তনুময়কে একবার দেখে যাই। এ কোনমতেই অন্যায় নয়। চন্দ্রাবলী তনুময়কে ভালবাসতো। তনুময় জানতো না। তনুময় চন্দ্রাবলীকে ভালোবাসার কথা কল্পনাতেও আনেনি। তনুময় তখন অন্য কাউকে প্রপোজ করছে, সে রাজি হচ্ছে না, তারপর আবার সেকেন্ড ক্র্যাশ খাচ্ছে। চন্দ্রাবলী অপেক্ষা করছে কোনো একদিন তনুময় ওকে বলবে। নাহ্ তনুময় হাজার কথা বলতো, ওর প্রেমের কথা, প্রেমিকাদের  কথা। শুধু চন্দ্রার কাছ থেকে ওর কোন কিছু জানার ছিল না। কোনদিনও চন্দ্রাকে তার জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছে করেনি সে কাউকে ভালোবাসে কিনা।
চন্দ্রা তখন আয়নায় দাঁড়াতো। মোটা ভুরু, ভারী নাক, ফুলো গাল, রুক্ষ  চুল, ব্রণের দাগে ভরা মুখ। অতএব তাকে ভালোবাসার কেউ না থাকাটাই স্বাভাবিক।
তনুময়কে কিছু বলার সাহস কোনদিনই চন্দ্রার ছিল না, বাপরে, এমন হাসি দেবে তনুময়। সে মরমে মরে যাবে।

অতনুর সমস্ত ভরসা এখন সে। তারও। তবুও মনে হয় তনুময়ের সঙ্গে কিছু কথা ছিল। যা বলে যেতে হবে।
আগামীকাল সকাল দশটায় তনু আসবে। ওর হোটেল থেকে ওকে নিয়ে যাবে। কোথায় নিয়ে যাবে জানে না। জিজ্ঞেস করলে তনুময় বলবে তবে আসিস না।

ওর বাড়িতে কি?

নিশ্চয়ই বিয়ে থা করেছে। ছেলে মেয়েও আছে। তবে তো কিছু গিফট কিনতে হয়।  তনুময়ের বউকে প্রথম দেখবে। নাকি না করে দেবে? কোন পারিবারিক সম্মেলনের মাঝে তার যেতে ইচ্ছে করছে না। গুটিয়ে যাচ্ছে মন প্রাণ। কী দরকার আবার একটি সুতোতে গিঁট দেওয়ার। আসলে তো তনুময়ের মনে চন্দ্রার জন্য কোন বিশেষ জায়গা নেই। দুর্বলতাও নেই। তবে ওর মন কেন মানছে না! যা হবার হোক গে।
সকালবেলা অতনুকে ফোন করে বলল, সারাদিন একটু ব্যস্ত থাকবো, বিকেলে ফোন করবো। অতনু ফোন রেখে দিচ্ছিল, চন্দ্রাবলী হঠাৎ বলল, আমার কলেজের এক বন্ধু, তনুময় নাম, দেখা হলো হঠাৎ, কাল ওর বাসায় একটু নেমতন্ন করেছে। যাবো? অতনু বলল, যাও ঘুরে এসো। মন থেকে যেন পাথর নেমে গেলো চন্দ্রার। এবার কিছু সাহস এলো মনে। কতবছর পর তনুময়কে দেখবে। বিশেষ করে সাজবে কি! বড় টিপ, শাড়ি, জুয়েলারি! না কোন সাজ ছাড়াই! অনেক ভেবে চিন্তে হালকা  সাজগোজ করল চন্দ্রা। কাঁথা স্টিচের সুতির শাড়ি। একটু লিপস্টিক, কাজল, টিপ আর কানে ঝোলাদুল।

মোবাইলে রিং হতেই চন্দ্রার টেনশন হতে লাগলো। কী রে তোর হয়েছে, আয় নীচে,  গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চন্দ্রা হোটেলের নীচে নেমেই দেখলো, তনু দাঁড়ানো। একইরকম চেহারা। সামান্য ভারিক্কি হয়েছে। জিনস আর সাদা শার্ট। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। তেমন কোন পারিপাট্য নেই। তবুও সেই দ্যুতিটা ঠিকই আছে। মেধার দ্যুতি, বুদ্ধিমত্তার আলো।

আরেব্বাস চন্দ্রা তুই তো সুন্দরী হয়ে গেছিস রে!

তাই নাকি! মৃদু হাসল চন্দ্রা।

চল্। গাড়ি ড্রাইভ করছে তনু। পাশে চন্দ্রা। হাওয়া ঢুকছে তরতর করে। মধ্য কলকাতা ছাড়িয়ে এলো তনু। চন্দ্রা আগেই ঠিক করে রেখেছে সে আজ কিছু বলবে না। একদিনের জন্য সব তনুর ওপর ছেড়ে দিয়েছে। যেখানে খুশি নিয়ে যাক। সে শুধু কিছুক্ষণ পাশাপাশি বসবে। তনুর নাম হোক উন্মত্ততা। এইসব নামকরণ ওর একার দেওয়া। নিজে ভালোবেসে নিজেই দেউলিয়া। যেন এই পাশাপাশি রাস্তাটুকু পার হওয়ার পর তার সব সাধ মিটে যাবে। নিরাসক্ত হয়ে যাবে ইত্যাদি।

রঙশ্রমণী চন্দ্রা। আগুন ছুঁয়ে শুদ্ধ হয়েছে এতদিনে। কী সব উল্টোপাল্টা ভাবছে।!

তবুও চন্দ্রা তনুর দিকে তাকাতে পারছে না। তনু কি দেখছে তাকে? দুপাশের রাস্তায় শহুরে ভাবটা একটু কমে এসেছে। তনু গল্প শুরু করলো। কি রে বরকে বলেছিস  তো আমার সঙ্গে দেখা করবি? কিছু মনে-টনে করবে না তো? চন্দ্রা বলল, বলেছি।

তনু জিজ্ঞেস করলো, খেয়েছিস সকালে? খিদে পায়নি তো? চন্দ্রা উত্তর দিল, হ্যাঁ খেয়েছি।

তুই নিশ্চয়ই আরো কয়েকবার এসেছিস কলকাতায়। আমার সঙ্গে দেখা করলি না কেন?

চন্দ্রা বলল, না রে, এইসব কাজে এই প্রথমই।

হঠাৎ চন্দ্রার মনে হলো কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত ওরও। তাই বলল, তোর খবর বল। বউ, ছেলেমেয়ে, চাকরি বাকরি।

তনুময় হেসে বলল। খুব সংক্ষেপে বলছি। - বি এস সি অনার্স শেষ করার পর ত্রিপুরার বাইরে চলে এলাম। এম সি এ করলাম। তারপর কয়েকটা চাকরি এদিক ওদিক এবং রিজাইন আবার জয়েন ইত্যাদি চলতে লাগলো। শেষপর্যন্ত এই মালটিন্যাশনেল কোম্পানিটিতে আছি, বছর ছয় হলো, বেতন টেতন ভালো, সুযোগ সুবিধা আছে। জানিস তো একমাত্র ছেলে, তাই মা বাবাকে আর একা ত্রিপুরায় ফেলে রাখতে মন চাইলো না, বাবারও রিটায়ারমেন্ট হয়ে গেলো। ত্রিপুরার বাড়ি বিক্রি করে দিলাম। এখানেই একটা ফ্ল্যাট কিনে আছি।

একটা ছেলে। বোর্ডিং স্কুলে পড়ে। দার্জিলিং-এ। তারপরই তোর কথা শুনেছিলাম ভূপালের কাছে। ও এসেছিল আমার ওখানে। কয়েকদিন রইল। হইহই করল।  ফোন নাম্বার পেলাম। এই তো শুরু হলো পুরনো বন্ধুদের  খুঁজে পাওয়া। ফেসবুকে আছিস জানি। আমি তেমন যোগাযোগ রাখি না ফেবুর সঙ্গে। বড্ড টাইম কিলিং।

তাই হোয়াটসএপে তোর সঙ্গে কানেক্ট হলাম। তুই তো কথাই বলিস না প্রায়।

কোনদিন যে তুই আমার সঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেখা করতে চাইবি, ভাবিই নি। তাই খুব অবাক হলেও কিছু বলিনি। আমার আর অবাক হওয়া না-হওয়া!

চন্দ্রা একতরফা শুনে যাচ্ছিল, এই তোর বউয়ের কথা বললি না!

হ্যাঁ রে, এই আর একজনের কথা বাকি থাকলো। আমার স্ত্রী। ওর ওখানেই যাচ্ছি তোকে নিয়ে। তিনবছর হলো মানসিক হসপিটালে ভর্তি করিয়েছি। বাড়িতে রাখতে পারছিলাম না আর।

চন্দ্রা হঠাৎই ধাক্কা খেলো। সরি। কেন রে?

আমার বউ মানসিক রোগী। পাগল। নাহ্ পাগলও নয়, বদ্ধ উন্মাদ। তাতে তোর সরি বলার কিছু নেই। আসলে এই রোগটা ওদের পরিবারেই ছিল। আমার সঙ্গে চাকরি করত লহরী। ভালোবাসলাম ওকে। অবশ্য আমার ভালোবাসার বহু গল্পই তো তোর জানা। সেগুলো সব পেছনে হটিয়ে এক সত্যিকারের ভালোবাসা। বিয়ে করার, ঘর বাঁধার ভালোবাসা। লহরীর মা বাবা বা লহরী বিয়ের আগে কোনদিনই ওদের এই পারিবারিক রোগের কথা আমাকে বলেনি। আর বললেও আমি মানতাম না তখন। আমি কি আর প্রতারণা করতে পারি ভালোবাসায়! সেইসব ঠাট্টা ইয়ার্কির  ঘটনাগুলো তো কবেই শেষ হয়েছিল। ততদিনে পাল্টে গেছির একটা সুদীর্ঘ সুখী দাম্পত্য আমার কাম্য ছিল। মা-বাবার মতো। সবাই যা চায়, এই তো আশ্রয়, কি বলিস? তা খুব আনন্দে কাটল দু আড়াইবছর। প্রবলেম দেখা দিল তারপর। কাজের  জগতে গোলমাল করতে লাগল। বাড়িতে চুপচাপ বসে থাকত। এরকম অবস্থাতেই প্রেগন্যান্ট হয়। বাচ্চাও নিয়ে নিই আমরা। তারপরই পাগলামো বাড়তে থাকে। চাকরি ছাড়িয়ে দিয়েছি আগেই। বাচ্চাটা কোনমতে একটু বড় হলো। কষ্টে সৃ‌ষ্টে আরো কয়েকবছর টেনেটুনে বাড়িতে রেখে, তারপর বোর্ডিং স্কুলে দিয়েছি বাধ্য হয়ে। নিজের চাকরি, বুড়ো মা বাবা, পাগল বউ, সব মিলিয়ে বেসামাল হয়ে গেছিলাম। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিগুলো বাচ্চাটার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো। কিছুই কেয়ার করতে পারছিলাম না ওর। তাই এই ডিসিশন নিলাম।

তারপর লহরীকে মানসিক হাসপাতালেভর্তি করলাম, নাহলে আমি চাকরিটা করতে  পারছিলাম না। অথচ খরচ এখন অনেক। ছেলের বোর্ডিং স্কুলের খরচ, লহরীর চিকিৎসার খরচ, আরো কতো কতো!

ডাক্তাররা প্রত্যেকবার বলে, ও নাকি একদম ভালো হয়ে যাবে হঠাৎই একদিন। মাথায় জট লেগে আছে লহরীর। কবে কীভাবে কখন খুলবে বলা যায় না। আমি যেদিন যাই, ও আমাকে খুব সুন্দর চিনতে পারে। কিন্তু কিছু বলে না। আমি বলি  বাড়ি চলো। ও বলে আমি তো পাগল। কী করে সামলাবে সব। বোঝ এবার! সেয়ানা পাগল। আমি বলি কই তুমি পাগল। কতো শান্ত মেয়ে তুমি। চলো আবার চাকরি করবে। আমরা সংসার করবো। দার্জিলিং গিয়ে ছেলেকে দেখে আসবো। কিছুতেই রাজি হয় না। আধঘন্টা মতো ও স্বাভাবিক হয়ে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে চোখের দৃষ্টি বদলাতে থাকে। এরপর শুরু করে চিৎকার। নার্সরা এসে ওকে নিয়ে যায়, শান্ত করে। আমি চলে আসি।

বলতে পারিস চন্দ্রা, আমার লহরী কবে তোর মতো একদম ভালো স্বাভাবিক একটি মেয়ে হয়ে যাবে? আর ভালো লাগে না।

তনু তাকালো চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রা তনুর দিকে। মাঝখানে লহরী। পাগল নদী এক।

চন্দ্রার এরমধ্যেই সব তেতো হয়ে গেছে। এই তনুকে তো সে দেখতে চায়নি। বহুদিন পর তার বন্ধুকে দুটো কথা বলে যাবে। এই কথা কটির মধ্যে আছে বেঁচে থাকার একটি প্রতিপালিত সুঘ্রাণ। তা ছড়িয়ে যাক তনুর মনেও, কেউ কাউকে ভালোবাসে, এর মধ্যেই দুর্দান্ত একটি আনন্দ।

কিন্তু এখন চন্দ্রাবলীর মনে হচ্ছে সে  দাঁড়িয়ে আছে একটা ধ্বংসস্তুপের ওপর।

প্রাচীন ভগ্নপ্রায় রাজপ্রাসাদ। স্মৃতির কাঠামোও দুর্বল। সেখানে দাঁড়িয়ে একজন সুখী পরনারীর ভেতরের আহ্লাদি ধ্বংসের কথা বলা যায় না কোনমতেই। কবেকার ভালো লাগা কবেই মরেছে। এখন তো নদীর মধ্যগতি। ভরা সংসার।

তনু বলল কাছাকাছি এসে গেছি গন্তব্যের। তার আগে আমরা কিছু খেয়ে নেবো। তারপর আর খেতে খেতে অনেক দেরী হয়ে যাবে।

মেইনরোড। চারদিকে ধানক্ষেত, সব্জিক্ষেত। নীল আকাশ। সামনে একটা হোটেল। বড় বড় করে লেখা ভাতের হোটেল। আয় নাম্।

চন্দ্রাবলী বলল, আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে নারে।

নাম তো, তোকে আমার বাড়ি নিয়ে আপ্যায়ন করে তো আর খাওয়াতে পারব না। এখানেই দুটো ডালভাত খেয়ে যা। প্লিজ!

চন্দ্রা আর না করতে পারলো না। তনু অর্ডার দিলো, ডাল, ভাজা, মাছের ঝোল, চাটনী, দই।

আমি এখানে সবসময় খাই জানিস তো। লহরীকে দেখতে এলেই, আগে খেয়ে নিই।  পরে মনটা বড়ো কষে যায়। আর সারাদিন কিছু খেতে পারি না। সেদিন রাতে শুধু সিগারেট আর সিগারেট।

কিন্তু এভাবে তো তুই শেষ হয়ে যাবি। মরে গেলে বাচ্চাটার কী হবে রে?

না রে মরব না। লহরী যতদিন বেঁচে আছে আমাকে বেঁচে থাকতেই হবে।

খুব খিদে পাওয়া মানুষের মতো তনু খেয়ে নিচ্ছে। তুই তো খাচ্ছিস না কিছু!

আমি আর খাবো না রে। ভালো লাগছে না। বলে দে বাকি অর্ডারগুলো লাগবে না।

তোর খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত বসছি আমি।

তনু বুঝল লাভ হবে না। সেও কোনমতে খাওয়া শেষ করল।

খাওয়া শেষ হলে চন্দ্রা বাইরে বেরিয়ে এলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো দূরে একটি মন্দির। কিসের মন্দির রে ওটা? টালির চালা উঁচু করে বাঁধা, মন্দিরই তো নাকি? জানিস?

জানি আখড়া। একটা কদম গাছ আছে। দরিদ্র একটি নাটমন্দির। তিন চারজন বৈষ্ণব বৈষ্ণবী থাকে। আশপাশের গ্রামের মানুষদের থেকে পাওয়া ভিক্ষাই শুধু সম্বল তাদের।

এক দুপুরে লহরীর ওখান থেকে আসার সময় মনের অশান্তি সহ্য করতে না পেরে চলে এসেছিলাম এখানে। একজন বৃদ্ধা বোষ্টমী একটু জল আর মুড়ি বাতাসা খেতে দিয়েছিলেন আদর করে। বারবার বলছিলেন একটু পরে খিচুড়ি রান্না হয়ে যাবে, খেয়ে যাই যেন। খাইনি আমি। কোনকিছু না, যাস্ট ইচ্ছেই করছিল না।

চন্দ্রা আর তনুময় হাঁটতে লাগলো, পিচ ঢালা মেইন রাস্তা থেকে মাটির পথ গিয়েছে, সেই পথ ধরে ধরে।

তোর দেরী হয়ে যাচ্ছে না তো? কুন্ঠিতমুখে চন্দ্রা বলল।

না রে। তুই কি আর কোনদিন আসবি! তারপর আবার তো যে কে সেই।

তনুময়ের অবিন্যস্ত চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। চশমার নীচে ক্লান্ত চোখ। দীর্ঘ ঋজু শরীরটা যেন জোর করে কালবৈশাখী ঝড়ের ঝাপট সামলে রেখেছে।

চন্দ্রার খুব মায়া হতে লাগল। তনুময়ের হোটেলে বসে খাওয়া দেখে, এই সময় ওর হেঁটে যাওয়া দেখে, মনে হয় ঘরের বাইরে বসে আছে চুড়ান্ত এক গৃহীযুবক, ভেতরে ঢোকার চাবি হারিয়ে ফেলেছে সে অনিশ্চিত সময়ের জন্য। যে মানুষ একসময় বাজপাখির মতো তীব্র ছিল। এখন আহত ডানা তার। তেজ আছে। আর আছে যাবতীয় গুমরানো। এভাবে কি বাঁচতে পারে একটি পরাজিত পাখিসম্রাট?

আখরার গেটে কাঞ্চনফুলের গাছ। ছেয়ে আছে বৃক্ষতল। খড়ে ছাওয়া কুটির মন্দিরে দ্বারকাপতি দরিদ্রসাজে বিরাজমান। গৌর নিতাই-এর বিগ্রহ পাশে।

কেউ নেই বোধহয়। ‘আছেন কেউ’? জোরে জোরে ডাকল তনু। নাহ্। ভগবানকে  রেখে সবাই ভিক্ষা সংগ্রহে বেরিয়েছে। একদম নির্জন। হাওয়া বইছে।

মাটির দাওয়ায় ধপ করে বসে পরল চন্দ্রা। সামনে রাধাকৃষ্ণ।

তনুময় বলল, কী আশ্চর্য এই সময়! তাই না? বল্ চন্দ্রা কিছু।

চন্দ্রার আর কিছু বলার নেই। সে শুধু মনে মনে চাইছে কখন ফিরে যাবে হোটেলে। একা একা কাঁদবে বহুক্ষণ ধরে।

হঠাৎ তনুময় ওর পায়ের কাছে এসে মাটিতে বসে পড়ল আর চন্দ্রার কোলে মাথা রেখে কেঁদে ফেলল হাউ হাউ করে।

প্রথমে চমকে গেলেও চন্দ্রা সময় দিলো ওকে। আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, শান্ত হ। সব দেখবি একদিন ঠিক হয়ে যাবে।

চল যাই এখন। বারোটা বাজতে চলল।

হ্যাঁ চল । তনুময় উঠে দাঁড়ালো, চন্দ্রাও। দুপুর আসবে একটু পর। কড়কড়ে রোদে ভাসছে প্রাঙ্গন। কৃষ্ণের গলায় তুলসীপাতা আর কাঞ্চনফুল দিয়ে বড়ো যত্নে কেউ মালা গেঁথে পরিয়ে গেছে। রাধার গলায় হলুদ টগরফুলের মালা। হঠাৎ তনুময় বলল, তোর কথা আমি যে শুনলাম না!

চন্দ্রা চমকে বলল, আমার আবার কি কথা?

তুই কিছু একটা বলতে চাস্ আমাকে বহুদিন ধরে, সেটাই শুনতে চাইছি।

চন্দ্রার বিরক্তি এলো মনে। আকাঙ্ক্ষা মরে গেলে যা হয়। আর কিছু থাকে না।

কোন ঘরের চারদেয়াল নয়। উন্মুক্ত প্রান্তরে তনুময় সেই মুহূর্তে চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো। একটি ভীষণ তীক্ষ্ণ চুম্বন। বহুদিনের জমে থাকা। চন্দ্রার একবার মনে হলো, তনু কি পিপাসার্ত, যেহেতু ওর দাম্পত্য বহুদিন ধরে অস্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আবার মনে হলো, না, ও যেন কিছু একটা পুষিয়ে দিতে চাইছে।

এ কথা ভাবা মাত্র চন্দ্রার মনে অন্য অনুভূতি ফিরে এলো। ছিটকে সরে এলো।

তনুময় বলল, সরি। আর কোন কথা হলো না।

আসলে আর কোন কথা নেই।

এক গভীর নিস্তব্ধতায় তনু ও চন্দ্রা আস্তে আস্তে পেরিয়ে এলো মাটির রাস্তা, তারপর গাড়ি আর তারপর লহরীর মানসিক হাসপাতাল। সাদা রঙের দোতালা ছড়ানো ছিটানো বাড়ি। বড় লোহার গেট। দারোয়ান আছে পাহারায়। প্রচুর গাছ। শান্ত পরিবেশ, অনেকটা ঠিক পার্কের মতো। মোরাম বাঁধানো পথের দুপাশে ফুলের গাছ। তনুময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছিল চন্দ্রা। রিশেপসনে যেতেই, কম্পিউটারের সামনে বসা মেয়েটি সামান্য হাসল। বেল টিপল। একজন নীল শাড়ি পরা নার্স এলো। ওদের দুজনকে নিয়ে গেলো লহরীর কাছে।

লহরী দোতালায় থাকে। আরেক রোগিনী তার রুমমেট।

দুপুরবেলা খাওয়ার সময়। একজনকে নার্স খাওয়াচ্ছিল। লহরী নিজেই খাচ্ছিল। ওর সামনেও একজন নার্স।

লহরী সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে। মাঝারি গড়ন। সবুজ রঙের কুর্তা, সাদা লেগিংস পরা। একমাথা চুল। কপালে টিপ। যত্ন করে সিঁদুর পরে আছে ।

তনুময় ডাক দিল, লহরী! লহরী সঙ্গে সঙ্গে তাকালো। হাসিতে ভরে গেলো ওর মুখ। ছুটে এলো তনুময়ের কাছে। আজ কি চকলেট এনেছো আমার জন্য? খুব স্বাভাবিক তরল রিনরিনে গলা। তনুময়ের গলা থেকেও স্নেহ ঝরে পড়ল। এই যাঃ ভুলে গেছি যে আজ!

এমনসময় চন্দ্রার মনে হলো ওর ব্যাগে একটি ক্যাডবেরি বার আছে।

চকলেটটি বের করে, লহরীর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, নাও।

লহরী এতক্ষণ চন্দ্রাকে লক্ষ্য করেনি। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তনুময় লহরীকে  বলল, পরিচয় করিয়ে দিই, এ হচ্ছে আমার কলেজের বন্ধু চন্দ্রাবলী। রিসার্চের কাজে  এসেছিল কলকাতায়, পরশু ফিরে যাবে ত্রিপুরায়। আমাদের বাড়ি ওখানেই ছিল, জানো তো তুমি! অনেকদিন পর আজ ওর সঙ্গে আবার দেখা হল। তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এখানে নিয়ে  এসেছি।

লহরী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছেই চন্দ্রার দিকে। আস্তে আস্তে ওর চোখের দৃষ্টিটা বদলে যেতে লাগল। কেমন ফ্যাঁসফ্যাসে গলায় বলল, এই চকলেটটা তনু তোমাকে দিয়েছে তাই না? তাই আজ ও আমাকে দেইনি। এটা আমার জন্যই কেনা হয়েছিল। তাই না তনু? বলো?

তনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, বলল না না, কী যে বলো! আমি আজকে সত্যি কিনিনি। ভুলে গিয়েছিলাম। আই অ্যাম ভেরি সরি।

লহরী আর কিছু শুনছে না। একদম কাছে চলে এলো চন্দ্রার। ওর ঠোঁটে হাত লাগলো। গভীর বিস্ময় নিয়ে চন্দ্রার গাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। চন্দ্রা ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছে। তনুময়ও। চন্দ্রা মনে মনে ভাবছে, আশ্চর্য, মেয়েরা যেন  বেড়ালের মতো। সামান্য আমিষ গন্ধও টের পেয়ে যায়।

লহরী হঠাৎ তনুময়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি বাড়ি যাবো। এখনি তোমার সঙ্গে। একদম ভালো হয়ে গেছি আমি তনু।

তনুময় আমতা আমতা করে বলল, সে কি করে হয়, হঠাৎ করে এরকম যাওয়া যায় নাকি? তোমার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

বলে নাও তাহলে! আচ্ছা তোমার লাগবে না আমিই বলছি।

ওর রুম থেকে বেরিয়ে ছুটতে ছুটতে, ডাক্তারদের চেম্বারের দিকে যাচ্ছে লহরী।

ডাঃ মোনালিসা রায়, লহরীকে দেখত, উনিই ওর ব্যাপারে সব কিছু স্টাডি করছেন। চেম্বারে বসে কাজ করছিলেন। যাবার সময় তনুময়কে লহরীর প্রোগ্রেসগুলো বলতে হবে, তার আগেই লহরী পৌঁছে গেছে সেখানে।

আমি বাড়ি যাবো। ডঃ প্লিজ, আমাকে রিলিজ করে দিন। আমার তো এতোদিন  মনেই ছিল না, আমার একটি ছেলে  আছে। তনুর কত কষ্ট হচ্ছে। ইস্ ফ্ল্যাট জানি কি অগোছালো হয়ে পড়ে আছে। আমার আর এখানে থাকা ঠিক নয়। এক্ষুণি ওকে  বুঝিয়ে বলুন, না হলে আমাকে নেবে না তনু।

ততক্ষণে তনু আর চন্দ্রা, নার্স সবাই এসে গেছে চেম্বারের দরজায়। ডাঃ মোনালিসা নার্সকে বললেন, লহরীকে তৈরী করে দাও। আর তনুময়কে বললেন, আমি একটু  কথা বলতে চাই একা আপনার সঙ্গে। চন্দ্রা দ্রুত সরে গেলো। ডাঃ বললেন, ওকে বাড়ি নিয়ে যান। একটা ইনসিকিউরুটি ওর মনে এসেছে। সবার সঙ্গে রাখুন। যদি ভালো হয়ে যায় তো মঙ্গল, না হলে আবার নিয়ে আসবেন। আজই নিয়ে যান ওকে।

কারণ ওর যা চরিত্র, ওকে এখন কিছুতেই শান্ত রাখা যাবে না। আপনাকেই লাগবে ওর এখন।

তনুময় গাড়ি চালাচ্ছে, লহরী পাশে বসে আছে, হলুদ সালোয়ার পরেছে আসার সময়, আর সাদা ওড়না, চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। কথা বলছে ভীষণ স্বাভাবিক ভাবে।

চন্দ্রা অনাহুতের মতো পেছনে বসে আছে চুপচাপ। তনু কিছুই বলতে পারছে না। আসলে কী বলবে ও, কিছুই তো আর বলার নেই।

চন্দ্রা বলল, আমাকে হোটেলের সামনে নামিয়ে দিস।

এক একটা দিন জীবনের। এমন হয়, এমনই বোধহয় হওয়ার ছিল। কি এলোমেলো, অস্থির সময় দুহাতে বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রা। এ সবকিছুই তাকে একান্তে গিলে ফেলতে হবে।

চন্দ্রার গন্তব্য এসে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে, লহরীর চিবুকে হাত রেখে বলল, ভালো থাকো দুজনে খুব, আমাদের ওখানে বেড়াতে আসার আমন্ত্রণ রইল। কি রে তনু যাবি তো বউকে নিয়ে?

তনু স্মিতমুখে বলল, হ্যাঁ রে যাবো।

আসি তবে, চন্দ্রা বলল। লহরী একটু হাসল। ওদের গাড়িটা আস্তে আস্তে দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো।

হোটেলে ফিরে চন্দ্রা ধপাস করে শুয়ে পড়ল বিছানায়। পুরো ভ্যাকুয়াম লাগছে সব।  চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ। বন্ধ চোখ, কিন্তু ঘুম নেই, যুদ্ধ, জয় পরাজয় এসব কথাই মনে পড়ছে শুধু। আজ কি সে হেরে গেলো কোথাও, কারো কাছে? মনের সবকিছু একপাশে সরিয়ে, চন্দ্রা নতুন কিছু করার কথা ভাবতেই তার মস্তিস্কে একটি মুখ ভেসে উঠল। সে হলো অতনু।

অতনুকে ফোন করল চন্দ্রা, খেয়েছো?

হ্যাঁ গো খেয়েছি, খেয়েছি। তা তোমার বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো?

হয়েছে।

আচ্ছা বেশ। রিসার্চের কাজ সবকিছু কমপ্লিট?

হ্যাঁ কমপ্লিট।

পরশু হাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে পথে বেরিয়ো, বুঝলে? প্লেনের টিকিট হ্যান্ডব্যাগে রাখবে।  তোমার যা ভুলো মন।

চন্দ্রার হাসি পেলো।

এই হচ্ছে অতনু। সাবধানী, কেয়ার করে সবসময়।

সব ঠিকঠাক মতো করে তোমার বউ বাড়ি ফিরে আসবে বুঝলে, চন্দ্রা বলল। রাখছি এখন, কেমন!

মনটা বেশ হালকা লাগলো চন্দ্রার। হোটেলের রুমে জানালার পাশে দাঁড়ালো এসে। বাইরে আলোকময় মহানগরী। কত কত মানুষ। উজ্জ্বল, উদ্দাম, উচ্ছসিত। এতক্ষণে নিশ্চয়ই লহরীকে নিয়ে তনুময় ওদের ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেছে। এতোদিন পর নিজের সংসারে ফিরে এসে লহরীর কিরকম লাগছে কে জানে!

লহরী সুস্থ হয়ে গেছে যদি ধরা যায়, তবুও তনুর মুখে সেই আলো কোথায়, খুব ম্লান লাগছিল ওকে। কিছুদিন একজন মানুষ জীবনে না থাকলে, মানুষ তাকে ছাড়াই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তনুময়ের মধ্যেও কি সেই ভাব এসেছে?

আচ্ছা, চন্দ্রা এতো খুঁটিনাটি ভাবছে কেন? তনুর এই ম্লান হয়ে থাকায় কি সে খুশি হয়েছে?  না না, ছি ছি, কী যে ভাবলো ও, দূর!

লহরী এই এক চিমটি অবান্তর ঈর্ষা নিয়ে এমন করেই যেন সারাটি জীবন সুস্থ হয়ে তনুময়কে আঁকড়ে থাকে, চন্দ্রা শুধু তাই চায়।

 

 



2 কমেন্টস্: