কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

অচিন্ত্য দাস

হেলিকোনিয়া


এদিকটা কখনো আসিনি আসবই বা কী করে, যখন কলকাতা ছেড়েছি তখন এসব জায়গা ছিল বাদাবন, শেয়াল ডাকত সমীরণ বলল - গর্ভমেন্টের বাড়ি, সাড়ে ছশ স্কোয়ার ফুট - আমাদের মতো ছা-পোষা কেরাণীদের জন্য তাও তো মাথাগোঁজার একটা ঠাঁই পাওয়া গেল!

অনেক অনেক ফ্ল্যাট হয়েছে, লোকও এসে গেছেবাদাবন এখন ফ্ল্যাটারণ্য

বেল টিপতে সমীরণের বৌ দরজা খুলল সাত-আট বছরের ছেলে পাশে দেখলাম ওরা খুব খুশী, যদিও মুখে বলছে এই নেই সেই নেই, এটা করেছে বোকার মতো, ওটা কেন যে করেনট!  টু বি-এইচ-কে বাড়ি, একটা ব্যালকনি রয়েছে আর সেখানেই তাকে দেখলাম হেলিকোনিয়া জিগেস করলাম - এ গাছ কোথায় পেলে? বৌ উৎসাহে ডগমগ হয়ে বলল - স্বর্ণা, মানে আমার মাস্তুতো দিদির দেওর সিঙ্গাপরে কাজ করে, ও-ই এনে দিয়েছে বললাম – এ ফুলগাছ  আমি দেখেছি অনেক জায়গায়...
বৌ-এর উৎসাহ একটুও কমল না বলল হ্যাঁ, তা হয়তো আছে অনেক জায়গায়, তবে এটারেয়ারজাত সোনা রঙের ফুল হয় নাকি! অন্য সাধারণ গুলোতে ত লাললাল ফুল ফোটে

মনে মনে ভাবলাম, কলাবতী ধরনের গাছ, টবে বাঁচবে তো? লোকে তো  বাগানের মাটিতে লাগায় বাঁচে যেন, ফুল না ফুটলে মেয়েটা কষ্ট পাবে

বাড়িতে করা কুচো নিমকি, মেরি বিস্কুট আর বেশি চিনি দেওয়া চা খেলাম ছেলের ড্রইংখাতা, নতুন কেনা স্টীলের আলমারি, চারমুখওয়ালা গ্যাসের উনুন সব দেখালো আমাকে-এম-আই-এর সুবিধে-অসুবিধে, ছেলের জন্য আঁকা  শেখাবার মাস্টার পাওয়া যাচ্ছে না – এইসব গল্প হলো

সমীরণ নিচে নামল আমাকে এগিয়ে দিতে রাস্তা থেকে দোতলার ব্যালকনিতে সমীরণের বৌ আর ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাত নাড়লাম পাশে হেলিকোনিয়ার চারাটাও চোখে পড়ল

যেতে যেতে দেখলাম অজস্র ফ্ল্যাটএক কামরা, দু’ কামরা খুপরি বাক্সের মতো  বারান্দা হালে তৈরি হয়েছে, বছর দুইও হয়নি, কোনো কোনো বাড়িতে রঙের জেল্লা চলে গেছে এর মধ্যেইকোথাও কালো কালো ছোপও পড়েছেজানালা-দরজা অতি সাধারণ, কোনো কোনো ফ্ল্যাটে বোধহয় বারান্দাও নেই এত বাড়ি একসঙ্গে থাকায়, কিছু কিছু জায়গায় আলো-বাতাস খানিকটা কম


ফিরে আসার সময় মনে হলো, নতুন বাড়ি যেমনই হোক, তাতে বারান্দা থাক বা  না থাক, আলো-বাতাস আসুক বা না আসুক, দিদির দেওর সিংহপুরে কাজ  করুক বা না করুক, হেলিকোনিয়ার চারা কিন্তু সব ফ্ল্যাটে একটা করে আছে আজকের  ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে কাল, পরশু বা তরশু সোনা রঙের কিছু  একটা ফুল যে ফুটবে তা সবাই মনে মনে ধরে রেখেছে দেওয়ালের রঙ, জানালা-দরজা, বর্গফুটের হিসেব এসবে তেমন কিছু যায় আসে না। নতুন বাড়ির মন আটকে থাকে ওই অপেক্ষাটুকুর মধ্যে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন