বর ও বর্বর
অথচ আমার স্বামীর শার্টে লিপস্টিকের দাগ দেখলেও আমি
নির্লিপ্ত থাকি। কিন্তু এই বয়সে এসেও আমি ওকে ভালোবাসি।
কাল রাতে স্বামী বাড়ি ফেরেনি। কাকভোরে ফোনের শব্দে ঘুম
ভাঙ্গে। পুলিশের, থানা থেকে। ‘আপনাকে একটু আসতে হবে ম্যাডাম’। কাল রাতে আখের
রস বিক্রি করত যে মেয়েটি রাস্তার মোড়ে বাবার সাথে, ওকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা
হয়েছে। আপনার স্বামী এখন আমাদের জিম্মায়, গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে’।
তাকিয়ে দেখি, কার্নিশ থেকে চড়ুই ছানাটি ডানা মেলে উড়তে
শিখেছে।
ঝামেলা উড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করছে তুমুল বাতাসে পলিথিন ব্যাগের মতো, উড়ে যাক! শূন্যতায় পৌঁছেই নির্ভরতা
ছোঁয়া যায়। কিছু কিছু ঘটনা কাকতালীয়ভাবে ঘটে যেন এর সম্ভাবতা নিতান্তই অনিবার্য। একফোঁটা মেহেরবানি করে সেই অনিবার্য, হৃদয়ের পেন্ডুলামে সম্ভব সব সম্ভাবনা এবং আপাত অসম্ভব সব স্বপ্ন কল্পনার সময়
হয়ে ঢুকে পড়ে। ব্যাটারি নেই চার্জ নেই জং ধরা মরচে পরা সেই এক হৃদয়ঘড়ি ঢং ঢং
ধুকপুকুনিতে চলতেই থাকে। বাজতেই থাকে।
চাবি দেওয়া পুতুল সে নয়। মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে আসতে চায়। শরীর এসে যায় উদ্ধারকারী ব্রাত্য
হয়ে। স্পর্শের মানব আঙ্গুল নয়, অনুভবে শুধু ষোলকলা পূর্ণ হয় সঙ্গমে। দুটো আলাদা সত্ত্বা এক, এক শরীর। এই এক শরীরের এত ভাষা, এত শব্দ!
এত জেগে ওঠা এক সাথে অন্ধের মতো! মাঝখানে দেয়াল। হৃদয় পেন্ডুলাম ছেড়ে বের হয়ে
দম ফেলতে চায় প্রাণ। মাঝে মাঝেই বিকল হয়। চলে না। চলা বন্ধ করে। ওয়ান ওয়ে রোড। নো এক্সিট।
পকেটে সবসময় অন্তত দশ টাকা হলেও রাখা উচিত। কিছু খুচরো যেমন পঁচিশ পয়সা। বিপদ আপদ বলে কয়ে আসে না। নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ইনসার্ট
চিপ অথবা ট্যাপ ইওর কার্ডযন্ত্র বিকল হতে পারে। গায়েব হতে পারে সব ইনফো, ডাটা।
ক্যাশ উদ্ধার করতে পারে মুহূর্ত, স্থান বা কাল। ড্রাগ এডিক্ট মেট্রোতে ভোরে
ছুরি ধরলেও ওয়ালেট আর আই ফোনের বদলে দশ টাকা দিয়ে বিদেয় করা যায়।
আহ এক নিমিষেই টেক্সট আসে। সারাবিশ্বে বৃষ্টি নূপুরর সন্ধ্যা রোদ সকালে পৌঁছে যায়। সার্ভার বিট্রে করলে হৃদ-দুয়ার কী বন্ধ! হাতে লেখা এজন্যই শেখে মানুষ। মোড়ের ডাকবাক্স ঠায় দাঁড়িয়ে।
উল্টোপাল্টা কিছু খেয়ো না তুমি আজ রাতে।
শিখছি সব ধারাপাত। পাটি আর বীজের মতো সহজ অথচ
জটিল সব সূত্র। মিললে মিলে গেল। সূত্র একটু এদিক সেদিক হলেই
পুরো এক গোল্লা। নিয়মের ঐকিক ধরে কথা বলতে হবে। মনের সব কথা ৯০ অথবা ১৮০ ডিগ্রীর বাইরে গেলেই বিপত্তি। অংক ভুল। ভুল সারাবেলা ভুল আপন। ভুল একটু ভালোবাসার বোধটুকুনও।
গণিতপাঠে মনোযোগ হিসেব একেবারে একেবারে পাক্কা এখন। মনের সূত্র ডিলিটেড। সাজানো সব সূত্র ডাউনলোডেড। একাধিক ছবি থেকে বাছাইকৃত একটি কী দুটি
ছবি আমরা যেমন ফ্রেমবন্দি করি, তেমনি সময়
অভাবহেতু একাধিক অর্থহীন মেসেজে চোখ বুলিয়ে শুধু সঠিক উত্তরে তোমার গোল্লা ভরাট দারুণ
লাগে হে...
শীত স্মরণ করে প্যাকেট হয়ে বের হবেন ভোরে কিংবা যখন তখন।
আজ অনেকটা সুন্দর ওয়েদার। মাতাল বাতাস জানালা ভেঙ্গে শুধুই ভয় দেখায়।
আমার বরের মুখটা চৌরাস্তার মোড়ের মতো, খানা খন্দের মতো
প্রকট লাগে...
বৃষ্টির শব্দ যাকে তুমি বলো বৃষ্টি নূপুর… শোঁ শোঁ হাওয়া আর্তনাদ করছে ভয়ানক অথচ বৃষ্টি জানালার কাচে নানা
বাড়ির টিনের চালে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এই বিষাদমাঝরাতে...
প্রকৃতিই তো বোঝে কেবল ভেতরকার খবর।
I am learning peacefulness, lying by myself quietly
As the light lies on these white walls, this bed, these hands.
I am nobody…
(সিলভিয়া প্লাথ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন