কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

জিনাত রেহেনা ইসলাম

মেয়েখেলা (পর্ব - ১৭) 


     

খুব ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি মেয়েরা গায়ে আগুন দেয় বা তাদের পুড়িয়ে মারা হয় এখনও শুনি ওরা মরে এভাবেই আগে জবরদস্তি বিষয়টা খুব ছিল, এখন মেয়েরা নিজেই সারেন্ডার করে নিজের জীবন দিয়ে দেওয়ায় আলাদা একটা অহং কাজ করে মনে হয় তদের মধ্যে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণের বার্তাটাও রেখে যায় অভিমান মুক্তি পায় যন্ত্রণার অন্তিম চিতায় ইন-লজদের কেউ পলাতক বা কেউ ধরা পড়েনি বা আবার বিবাহেরর আগাম প্রতিফলন দিয়ে অস্তিত্বের শেষ ছায়া বিদায় নেয় এখন সেসব  খবরে চোখের সামনে আসে, আগে মুখে মুখে প্রচার হতো। কিন্তু কেন মরে বা মারা হয় তা নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ হয়নি মৃত্যুকে বেছে নেয় মানুষ তখন যখন তার সামনে অপশন কমে আসে অপশন তখন কমে আসে যখন মানুষের ভাবনা শেষ হয়ে যায় আর এই শেষ কার যে কোথায়, তা বোঝা বড়ই কঠিন মেয়েদের পণের দাবী নিয়ে বিবাদ তো অহরহ, কিন্তু পারিবারিক হিংসার কাহিনী নিয়ে কথা খুব কম

প্রশ্ন আসে মা কী করে অসহায় হয়! একজন স্ত্রী অসহায় হলেও হতে পারে! বাড়িতে ঝামেলা, অত্যাচার, গঞ্জনা, মারধর - এর ফলে শুধু মানসিক নয়,  মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে মস্তিষ্কে। পারিবারিক হিংসায় ক্রমশ ক্ষইতে থাকে মস্তিষ্কের কোষ। সেই ক্ষত থেকে পারকিনসন্স বা অ্যালঝাইমার্সের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই মারাত্মক তথ্য। পারিবারিক হিংসার কারণে মাথায় একাধিক আঘাত পান ৮৮ শতাংশ মহিলা। ৮১ শতাংশ মহিলা তারও বেশি আঘাত পান বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ক্রমাগত মানসিক শারীরিক অত্যাচারের পরেও যাঁরা বেঁচে থাকেন, মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় তাঁদের। চিরকালের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারেন তাঁরা। পারকিনসন্স বা অ্যালঝাইমার্সের মতো মারাত্মক রোগেরও শিকার হতে পারেন তাঁরা।
বাইরে থেকে আঘাতের ফলেই মস্তিষ্কে এই ধরনের ক্ষত তৈরি হয়। তিনভাবে হতে পারে এই ক্ষত।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে ক্ষত।
ঘুসি বা মাথা ধরে সাঙ্ঘাতিক ঝাঁকুনির ফলে মস্তিষ্কে ক্ষত।
এবং শ্বাসরোধ করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন না পৌছে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
মস্তিষ্কে এই ক্ষত হলে বেশ কয়েকটি উপসর্গ দেখা যায়।
কানে কম শোনা।
সাঙ্ঘাতিক মাথার যন্ত্রণা।
তীব্র ক্লান্তি।
স্মৃতিশক্তি হারানো।
দৃষ্টিশক্তি হারানো।
ইনসমনিয়া।
ডিপ্রেশন এবং
কথাবার্তায় অসংলগ্নতা।


মন এবং শরীরের সঙ্গে সঙ্গে এভাবেই ক্ষয়ে যেতে থাকে মস্তিষ্ক তার চেয়ে কি আত্মহনণ শ্রেয় নয়? হয়তো! পান্ডবেশ্বরের নবগ্রামে সম্পত্তির কারণে নিজের দাদু দিদিমাকে কোপালো নাতি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দিদিমা বুলানোর বিবির(৫৫)  আশঙ্কাজনক অবস্থায় দাদু মির সালামকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনার পরেই নাতি কামরুল ওরফে উজ্জ্বল গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ কামরুলের খোঁজ শুরু করেছে। পান্ডবেশ্বরের এই ঘটনায় পুলিশ হয়তো কামরুলকে খুঁজে বের করেও নেবে আর  তারপর বিচারে তার শাস্তিও হবে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন যেটা, সেটা হলো যত দিন  যাচ্ছে পারিবারিক হিংসা আর তার জেরে খুন, এই প্রবণতা কেন বাড়ছে? খবরের  কাগজ বা টেলিভিশন খুললে বা মোবাইলে নিউজ অ্যাপসে ঢুকলেই দেখা যায় আজ এখানে সন্তানের হাতে মা বাবা খুন, আবার কোথাও বাবা মায়ের হাতে সন্তানের নিধন। এ তো গেল বাবা মা কিংবা সন্তানের কথা। কিন্তু এর বাইরেও যে কত এরকম পারিবারিক হিংসার শিকার হতে হচ্ছে কতজনকে, তার কোনো হিসেব নেই।

মনে পড়ে সেই সজল বারুইএর ঘটনা? ১৯৯৩এর ২২শে নভেম্বর কলকাতায় ১৬ বছরের সজল বারুই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে নিজের বাবা, সৎ মা ভাইকে খুন করে, মনে পড়ে। আজ ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সজল বারুইএর নাম কেউ ভোলেনি, কারণ অতটুকু একটা ছেলে এরকম একটা কাজ করতে পারে কিনা তা ভেবেই আজও মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। ঘটনার জেরে সজল বারুইএর জেলও হয় কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সে হয়ে ওঠে এক পাক্কা ক্রিমিনাল। ২০১১এর ৩রা জুন সে ফের এক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়। সদ্য ঘটে যাওয়া ভোপালের উদয়ন-আকাঙ্ক্ষার ঘটনা এখনও টাটকা হয়ে রয়েছে। নিজের হাতে বাবা মা আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে বলে উদয়ন  নিজেই দাবী করেছিল, আর সেই দাবীর ভিত্তিতে ভোপালের ফ্ল্যাট থেকে আকাঙ্ক্ষার  দেহাবশেষ আর বাঁকুড়াতে উদয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার বাবা মায়ের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। কত ভয়ানক ছিল সেই মুহূর্ত যেখানে নিজের সন্তানের হাতে তার মা বাবাকে খুন হতে হয়েছিল।




মনে পড়ে শিনা ভোরার সেই হাড় হিম করা ঘটনা মা ইন্দ্রানী মুখার্জির হাতে তার মেয়ে শিনা ভোরাকে খুন হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। দিল্লীর এই ঘটনা সারা দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আলোড়ন তৈরি করেছিল  তখনও, যখন নূপুর তলোয়ারের ঘটনার তদন্তে সবাই জানতে পারে যে নূপুরের হত্যার পেছনে তার বাবা মায়ের হাত রয়েছে।

২০১২এর সেই অনার কিলিংএর ঘটনার প্রসঙ্গ উঠলে আজও বোধহয় শিউড়ে ওঠে মানুষ মেহতাব আলম তার বোনের অবৈধ প্রণয়ের সম্পর্ক মেনে নিতে না  পেরে, তরোয়াল দিয়ে তার বোনের মাথা কেটে ফেলে। এরপর একহাতে সেই কাটামুন্ডু আর অন্য হাতে তরোয়ালটি নিয়ে প্রকাশ্য জনবহুল এলাকা দিয়ে হেঁটে গিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করে মেহতাব আলম।

এমনি করে চলছে ধারাবাহিক স্রোত। আসছে নতুন ঘটনা, নতুন বিশ্লেষণ কিন্তু পারিবারিক হিংসা প্রতিরোধের নামে চালু হয়েছে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, বিজ্ঞাপন  আইনের ভূমিকা সেখানে খুব নগন্য, কেননা সেখানে বিচারপ্রার্থী কম। নির্যাতিতদের বিচারের সামন্বে আনবে কে? নিশ্চিত তার বিবেক ও শিক্ষা কিন্তু  সেসবের সাথে পরিবারে নিশ্চিত আশ্রয় করে দেবে কে? এখানে তার নিজের প্রতি নিজের দায় অপরিসীম। সেটাই তার পায়ের বেড়ি।




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন