বিষণ্ণতা
স্নায়ুবিজ্ঞান, জেনেটিক্স এবং ক্লিনিকাল তদন্ত থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের একটি রোগ। এই রোগ সব সৃষ্টিশীল মানুষের থাকে কম বেশি থাকে। কিন্তু আমি বলব, বিষণ্ণতা হলো সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। এর থেকে উদ্ভূত হাজারো শব্দ যা কিনা পৌছে দেয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। গন্তব্য অর্থাৎ শূন্য, যার পরিধি মাপা যায় না। এমন শূন্যতা দিয়ে প্রায় প্রত্যেক কবি,
লেখক তাঁদের সৃষ্টিতে অনাবিল আঁচড় কেটে গেছেন। কবি জীবনানন্দ এক কবিতায় বিষণ্ণতার এক সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছে –
“জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ নয় সবখানি;
অর্থ নয়,
কীর্তি নয়,
স্বচ্ছলতা নয়
আরো - এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে”।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষণ্ণতাকে সরাসরি দুঃখময়তার (sadness)
সাথে তুলনা করা হয়। বিষণ্ণতার একটা কারণ দুঃখময়তা হতেই পারে। কখনও কখনও মনে হয় বিষণ্নতা যদি না থাকত, তবে এত স্পর্শ এত অনুভূতিকে ছোঁয়া যেত না। একাধিক প্রত্যাখান, নীরবতা বা নিবিড় শূন্যতার যোগফল বলা চলে এই বিষণ্ণতা। রবীন্দ্রনাথের এই গানটির কথা মনে পড়ে গেল –
“ভালোবাসি, ভালোবাসি--
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি।
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় ভাসি”।
এই গানটির মধ্যে অসাধারণ ভাবে বিষণ্ণতাকে খুঁজে পাই। কাছে দূরে জলে স্থলে বাঁশি বাজে। সে বাঁশির আওয়াজ শোনার জন্য কবি অপেক্ষারত। এই অপেক্ষার এক রূপ বিষণ্ণতা। চরম তীব্রতর এই শব্দ। শব্দটি'র যদি বুৎপত্তিগত অর্থ পর্যালোচনা করি তবে দেখা যায়, বিষণ্ণ পূর্ববর্তী শব্দ বিষণ ও পরবর্তী শব্দ বিষণ্ন চিত্তে। চিত্ত অর্থাৎ মন সে এক সুনিবিড় কল্পনা। এত মোহজাল, এত পিছুটান তবুও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে সময়। সময় অর্থাৎ পথ। এ পথে সবাই একা। এ প্রসঙ্গে Sylvia Plath কিছু লাইন মনে পড়ে গেল –
Jilted /
Sylvia Plath
“My thoughts are crabbed and sallow,
My tears
like vinegar,
Or the
bitter blinking yellow
Of an
acetic star.
Tonight
the caustic wind, love,
Gossips
late and soon,
And I wear
the wry-faced pucker of
The sour
lemon moon.
While like
an early summer plum,
Puny,
green, and tart,
Droops
upon its wizened stem
My lean,
unripened heart.”
Sylvia
Plath জীবনের কয়েক বছর ধরে বিষাদ ও নৈরাশ্যে ভোগেন। পরিশেষে আত্মহত্যার পথ তিনি বেছে নেন। বিষাদ ও মৃত্যুর নিখুঁত কবি হিসেবে প্লাথের নাম আজও স্মরণীয়। তাঁর কবিতার মূল ও প্রধান বিষয় বিষণ্ণতা বা
Depression.
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা এগিয়ে চলে বহমান নদীর মতো। পলির বুক থেকে নির্জনতা সরিয়ে আলোর দিশারী বলা চলে। বিষণ্ণতা আমার বড় ভালোবাসার বিষয়। জীবনের প্রতিটি বাঁকের কথা লিখতে আমি বাধ্য। বড় কাছ থেকে দেখা এই কটি লাইন
আমার হেমন্ত কথাগুলো পাতাল রেলের মতো ঘোরাফেরা করে
দরজা বন্ধ করতে আসে না দারোয়ান
কামরায় ভিজে মোজার গন্ধ পুরানো প্রেমিকের কথা মনে করায়
বেঁচে থাক শক্র, থাক কপট মানুষের দল
তখন সবে গোঁ গোঁ শব্দ ডুকছে
পরবর্তী স্টেশন মহানায়ক উত্তমকুমার
ট্রেন মাটির নিঃশ্বাস ভেদ করে এগিয়ে চলে
পরবর্তী ... পরবর্তী
রাস্তার প্রতিটি বাঁকের কথা লিখতে আমি বাধ্য
পুড়তে চাওয়াটাই আমার অহংকার”
পারমিতার কলমে তাই বারবার ঘুরে ফিরে আসে বিষণ্ণতা। এই শব্দটিকে তাই বারবার বলতে ইচ্ছা করে ‘ভাবো , ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো!’
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন