কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

অশোক তাঁতী

বর্ষা এবং রোদটা
  
বর্ষা শেষের এই সময়টা একটুও ভালো লাগে না প্যাচপ্যাচে ঘন সবুজ বাগানের ওপর তেরছা রোদ। অচৈতন্য করে দিতে পারে এমন কিছু নাম না জানা ফুল। পাতার ওপর কেলাসিত জলকণা। তাদের একাকী এবং সমবেত ঝরে পড়া। এই রোদে ঝরে পড়ার কোনো কলতান তৈরি হয় না। যদিও এই সব মিলিয়ে একটা নরম স্রোত চলে গেছে নদীর দিকে। নদী দিনের আড়ালে সরিয়ে নিয়েছে তার সুর আর ছন্দ।

কিছু আগে যে বৃষ্টিটা হয়ে গেল, সেটা সারা পৃথিবীকে একাকার করে দিয়েছিল। উড়ে উড়ে এসে ছুঁয়ে গেছে সমস্ত শরীর। থিরথির কাঁপতে থাকা রোমকূপের ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীর জুড়ে বিছিয়ে থাকা চেতনাকেবৃষ্টি যেন বা একটা রাত নিরাকার, নির্বিকার, নিরাসক্ত রাত থেকে তৈরি করতে পারি নিজস্ব পৃথিবী শব্দ, গন্ধ আর মাথার ভেতর ঘটে চলা অবিরাম স্রোতএই নিয়েই নির্মাণ ধ্যান আর মায়ার পৃথিবী ফুল ফোটার নিজস্ব শব্দ অনুভব করা যায় অনুভব করা যায় অন্ধকারের মাধ্যাকর্ষণ রাতের বাতাসের শেষ আদরে এখনি যে ফুলটা ফুটল সেটা এই পৃথিবীর নয়। তাৎক্ষণিক এক গ্রীবা ভঙ্গিমায় ডাটির অনন্য নকশা। অকস্মাৎ সন্ত্রাসের মতো আলোটাকে সে চ্যালেঞ্জ জানালোআলোটাকে যখন ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছে তখনই সে অগ্রাহ্য করল ফুলটাকেফুলটা নুইয়ে পড়ল অদৃশ্য লাশকাটা টেবিলের ওপর।

বর্ষা শেষের এই তেরছা রোদটা আমার একটুও ভালো লাগে না। আলো শুধু অগ্রাহ্য করতে পারে। রাত আর বৃষ্টির কণা যে গোপনকে চারিয়ে দিয়েছিল সমস্ত শরীরে আর চেতনায় তা নিমেষেই খানখান। গরবিনী ফুলটাকে এক লহমায় ভুলে গেল আলোটাসাদা পেঁজা মেঘের আড়াল থেকে সে রুপোলী রেখার মতো গিয়ে পড়ল রাস্তার পাশে জোড়লাগা কুকুরের ওপর। কুকুরদুটো রোদে নিঃস্পৃহ মৃতদেহের মতো স্থির দাঁড়িয়ে আকাশে তখনো চাঁদ আছে। চাঁদ আমার মতো এত নিরাসক্তভাবে আকাশে শুয়ে আছে , আর রোদটা তাকে ক্রমশ অদৃশ্য করে তুলছে। হয়তো রোদ থেকে সে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চরাচর জোড়া মায়ার রাজত্বে। আমি সরতে পারছি না।

আমার শরীরের হাড় মাংস চামড়াতে অচেনা শীত জেগে উঠছে। রোমকূপ নড়ে উঠে বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বড় নগ্ন এই রোদ। ব্যাগ্রতায় গ্রাস করে নিচ্ছে সকল অনুভব। জানালার ঠিক বাইরে একজোড়া মানবমানবী একটা প্রাচীন অর্জুন গাছের আবছায়া আড়ালে চলে গেল এই ক্যাটক্যাটে আলোতে সবাই ভূতের মতো ব্যস্ততায় আশপাশ থেকে নিজেকে অচেনা করে তুলছে।  

হুইল চেয়ারের চাকার দুদিকে ছোট্ট কাঠের টুকরো লাগিয়ে দিয়ে মাসি কোথায় যে গল্প করতে চলে গেছে এই সকালে! দিনের এই জানালা আমার একটুও ভালো লাগে না। রোদ এসে পড়ছে আমার পায়ের কাছে। আমি সরতে চাই। আমার পায়ের পাতাদুটোও খুব বিরক্ত হচ্ছে। হুইল চেয়ারের চাকা কিছুতেই ঘোরাতে পারছি না। একা এই রোদে বড় অসহায়। আমার জলজ সবুজ দেওয়ালের দিকে সরে যেতে চাই।

রোদ থেকে অসহ্য রকমের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।    

      

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন