কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

সোনালি ভট্টাচার্য মুখোপাধ্যায়

বৈশাখ




সকালবেলা, মনে পড়ে গেল এস আর দাস রোডের রাস্তা ধোয়ানোর ছবিটা। সারা বছরই দেখতাম। কিন্তু গরমকালে, যখন মর্নিং স্কুল হতো, ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়ায়ে রিকশার দুলুনিতে আরাম লাগতো ঘুম ঘুম চোখে। বাকি বছর তো দুপুরে বারোটায় স্কুল। গরমের কষ্ট থেকে ছোটদের বাঁচাতে মর্নিং স্কুল। তার মানেই রাস্তার কালো পিচে হলুদ রাধাচূড়ার আলপনা। ইশকুলের সামনের কৃষ্ণচূড়াগুলো আমাদের জন্যেই ফোটে। স্কুলের দোতলার ঘরের কোণা করা জানালা দিয়ে তাকালেই বুঝি রবীন্দ্র  জয়ন্তী এসে গেছে। তখন স্কুলে আসার মজাই আলাদা। আহা, রিহার্সালের আনন্দ যে পায়নি, সে বাচ্চার জীবনটাই যে মাঠে মারা গেছে!   
কাজেই সকালে উঠে আহ্লাদে ডগমগ হয়ে রিকশা কাকুর গাড়িতে উঠি প্রতাপাদিত্য  রোডের মোড় থেকে। রিকশাওয়ালার দৌড়ের ছন্দ আর হাতে রাখা গোল চকচকে মোটা ঘণ্টার রিকশার হাতলে ঠোকার টং টং আওয়াজ, কী আরামের হারমনাইজেশান, সে যারা টানা রিকশায়ে না উঠেছে, তারা বুঝবে না। আমার তো   নিজেকে একটি আস্ত রাজকন্যা মনে হতো! আর ঢুলু ঢুলু চোখে দেখতাম, রাস্তার দু'  ধারে গোল গোল লোহার চাকতি একটা চ্যাপ্টা পাত দিয়ে রাস্তার ফুটপাথের সিমেন্টে  গাঁথা। অন্য সময় তার পাশ দিয়ে গল গল করে গেরুয়া জল বেরোতে দেখেছি ভোরবেলা সেই গোল চাকতিগুলো খুলে দাঁড় করিয়ে রাখা হতোটগবগ করে জল বেরিয়ে আসত। বাবা বা মা বলেছিলেন, ওটা গঙ্গাজলহাফ প্যান্ট পরে কিছু লোক, একটা চৌকো বাক্স দুই চাকা দেওয়া, তাতে লম্বা হ্যান্ডেল, ঠেলে ঠেলে রাস্তার নোংরা সাফ করে তুলে নিতো। সঙ্গে লম্বা পাইপ থাকতকিছু দূর অন্তর ওই জলের ফুটন্ত স্রোতের থেকে জল নিয়ে রাস্তা, ফুটপাথ সব ঝকঝকে করে ফেলত এক নিজস্ব নিঃশব্দ ছন্দে। সম্প্রতি একদিন সাউদার্ন অ্যাভেন্যুতে ঐরকম একটা গাড়ি দেখতে পেয়ে ভারি নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। মাথার চুল রুপোলি হলে হয়তো অনেকেরই আমার মতো পাগল পাগল দশা হয়!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন