চোখে আমার তৃষ্ণা
(১)
"সেদিন চৈত্রমাস
তোমার
চোখে দেখেছিলেম, আমার সর্বনাশ..."
টলটলে নদীর জল। শান বাঁধানো পাড়। পরনের লালপেড়ে গেরুয়া শাড়ি আর ব্লাউজটি ছেড়ে দাঁতে দিয়ে চেপে ধরে পেটিকোটের
সম্মুখ ভাগ, তাতেও কিনা সেই রমণীর ভরন্ত আগুন কিছুতেই ঢাকা পড়ছে না। ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছেন স্বচ্ছ জলের
মধ্যে। পায়ের পাতা ডুবছে, ডুবে যাচ্ছে হাঁটু। কোমর ছুঁয়ে মুগ্ধ হয়ে ঝরে পড়ছে জলের প্রেম-বিন্দু, একি অঘটন! জল বুক ছুঁতেই যেন ভেঙে পড়ছে সৃষ্টির
বুনিয়াদ। আর এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি একজোড়া মোটা ভ্রূর চোখ গাছের আড়াল থেকে এক নাগারে চেটেপুটে গিলে নিচ্ছে। দৃশটা ভাবলেই কি মনে হচ্ছে না, ঈস্ যত দোষ তবে ওই চোখের! মনের উপর যদি চোখকে
ধারণ করা যায় তবে পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, যাবতীয় সৌকর্য হৃদয়ের পরম-চোখ ছুঁয়ে নিতে পারে অপূর্ব দক্ষতায়।
সায়ন্তনী পুততুন্ডুর 'অসভ্য চোখ' উপন্যাসের পিডিএফ পড়তে পড়তে হঠাৎই উদ্ভট
চিন্তা মাথার ভিতর পাক খেতে খেতে খাতার পাতায় নেমে এলো বটে। চোখকে আমরা স্বর্গীয় মণি বলি, তাই তো নায়ক-নায়িকার দেহসৌষ্ঠব বর্ণনায়
লেখককুল কিছুতেই নয়ন বর্ণনায় বিভ্রম ঘটান না। চোখের আমি চোখের তুমি চোখ দিয়ে যায় চেনা। নায়িকার চোখ হবে ঝিলের মতো স্বচ্ছ, হবে অতলান্ত গভীর, হবে অমরাবতীর মতো শান্ত। আবার ভিলেন ব্যক্তিটিরও চোখের বর্ণনায়
থাকবে লাল-ক্ষুধার্ত। সেক্ষেত্রে যদি গোয়েন্দা কাহিনীগুলি নেড়েঘেঁটে
দেখা যায়, তবে প্রায় সব গোয়েন্দা গল্পে লেখক ভিন্ন
হলেও একটি বিষয়ে তাঁরা সহমত, নায়কের চোখ, একই রকমের ব্যক্তিত্ত্বময়। সে ফেলুদা থেকে শার্লক হোমস বা ব্যোমকেশ থেকে কিরীটী, সবাই চোখের বর্ণনায় বুদ্ধিদীপ্ত। ধারালো গভীর অথচ তীক্ষ্ণ দর্শনান্দ্রিয়ের অধিকারীরা তাদের গল্পের নায়ক হয়েছেন। চোখ
উপমা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার ব্যবহারও কম হয়নি। বৈষ্ণব পদাবলীর বিদ্যাপতি বা
চণ্ডীদাস, সকলেই শ্রীমতী রাধিকার নিখুঁতভাবে রূপ বর্ণনা যেমন করেছেন, তেমনি রাধিকার মেঘরাজি চুলের রাশি, উন্নত যৌবন-সম্পন্না দেহসৌষ্ঠবের সাথে তার
মুখমণ্ডলের কমনীয় ভাবকে পরিস্ফুট করতে চোখের যে কত উপমা দিয়েছেন! চোখকে নারীর আকর্ষণীয় অঙ্গগুলির মধ্যে
একটি অন্যতম হিসাবে ধরা হয়। পদকর্তাগণ যখন রাধার নয়নযুগলকে ভ্রমর কালো
আঁখি কিংবা হরিণীর মতো নয়ন বলে আখ্যায়িত করেন, তখন সেই নয়নের বাণে
শুধুমাত্র কৃষ্ণই নয়, বরং বৈষ্ণব কবিদের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি রসবিলাসী সকল পাঠককুলের হৃদয় যে মুহূর্তে হরণ হয়ে যায়, তা বলাই বাহুল্য। কোনো কো্নো কবি আবার উপমা হিসেবে বলেছেন, খঞ্জরের মতো রাধিকার নেত্র। তার কাজলকালো বাঁকা ভ্রূর এমনই শক্তি যে, পুরুষের বুকে গিয়ে তৃতীয় পাণ্ডবের বাণের
মতো বেঁধে। কৃষ্ণের প্রতি কৃত্রিম রাগে যখন রাধিকা ভ্রুকুটি
হানে, তখন তার কাছে নীল যমুনার জল ও তরঙ্গ যুদ্ধ
ভঙ্গ দিয়ে হার মানে।
মধ্যযুগের প্রায় সকল কবিদের নায়িকাই সৌন্দর্যের অধিকারীনি ছিলেন। রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় কিন্তু
ব্যতিক্রমী, তিনি ধরে ধরে প্রতি অঙ্গের বর্ণনায় না
গিয়ে এক কথায় বলেছেন -
কে বলে
শারদ শশী এমুখের তুলা
পদনখে পরে আছে তার কতগুলা।
সামান্য এই কটি শব্দেই নায়িকা ছাড়িয়ে গেছে
পূর্বের কয়েকশ কবির নায়িকার সৌন্দর্যকে। এরপরে অবশ্য আধুনিক বাংলা সাহিত্যে
রবীন্দ্রনাথের রচনায় বারবার নারীর রূপের বর্ণনা পাই।
তবে মোটামুটি ভাবে ধরাই যায়, বাংলা সাহিত্যের নারীর সৌন্দর্য বর্ণনার প্রথম ধাপ হিসাবে চোখের উপমা সেই আদিকাল থেকেই
চলে এসেছে, যা এখনো পর্যন্ত বিদগ্ধ কবিগণ বয়ে চলেছেন। তবে চোখের উপমা সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল জীবনানন্দের হাত ধরে
বাংলা আধুনিক সাহিত্যে-
"পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটরের বনলতা
সেন"
তাঁর লেখায় মারাত্মক রকম জটিল কিছু উপমার
প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। তার মতে, উপমাহীন কাব্য হয় না। তবে জীবনানন্দের মৌলিকতা সত্বেও আলংকারিক
প্রয়োগ নির্মাণে কবি নজরুলের প্রভাব বেশ লক্ষ্য করা যায়। নজরুলের যে গানটির প্রভাব ঘুরে ফিরে কবি
জীবনানন্দর বনলতায় এসেছিল বলে অনেকে মনে করেন-
"আঁখি তোলো, দানো করুণা ওগো অরুণা!
মেলি নয়ন জীর্ণ কানন কর তরুণা।"
জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গবেষক বুদ্ধদেব
বসু 'বনলতা সেন' কাব্যগ্রন্থের আলোচনায় বলেছিলেন, "উপমার এত ছড়াছড়ি
আজকালকার কোনো কবিতেই নেই। তার উপমা উজ্জ্বল, জটিল ও দুর্গন্ধবহ। এক একটি উপমাই এক একটি ছোট কবিতা হতে পারতো। তিনি যে জাতের কবি তাতে উপমাবিলাসী না হয়ে তার
উপায় নেই, অর্থাৎ উপমা তার কাব্যের কারুকার্য মাত্র
নয়, উপমাই তার কাব্য।"(জীবনানন্দ দাশ : বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত বুক এজেন্সি, ১৯৮৬,পৃ: -১৯৪)।
আধুনিক আরও অনেক কবিদের কবিতায় চোখ ঘুরে ফিরে এসেছে। যেমন কবি নির্মলেন্দু গুণের 'তোমার চোখ এত লাল কেন?' কবিতাটি ভাবুন তো!
(২)
চোখ এবং
মনের শাসনকে যদি এক খাতে বইতে দেওয়া হয়, তবে কেমন হয়!
আমার
চোখ...
পুরনো গান শুনতে শুনতে লিরিক মেলডিতে
তলিয়ে যেতে বেশ লাগে। আসলে হারিয়ে যাওয়া মুহূর্ত নিয়ে বাঁচতেই বোধহয় মানুষ বেশি
ভালোবেসে। মা'কে দেখেছি বিশেষ অনুভবের মুহূর্তে তার গোপন দেরাজের চৌখুপি থেকে ঝপ করে নেমে আসে
ছোটবেলার টুকরো টুকরো কথা। সেগুলো যেন তখন আর কথা থাকে না, মায়ের চকচকে মুখের অনুভবের
ছোঁয়াতে উজ্জ্বল পরশপাথর হয়ে ওঠে। মায়ের মুখের সেই আনন্দটুকু দেখতে পাওয়া যেন শক্ত
মাটিতে শিশির ফোঁটায় ভিজে থাকা সকালের মতো পরম। একটা সময় 'মেরে আওয়াজ শুনো' রিয়েলিটি শো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার একটা দৃশ্য আজো মনে আছে। যে দৃশ্যে সুনিধী
চৌহান লতা মঙ্গেস্করের হাত থেকে জয়ের
মুকুটটি মাথায় পরে নিচ্ছেন, আর সুনিধীর চোখ আনন্দে চকচক করছে, হৃদয়ের মণিকোঠায়
এমন দৃশ্য অমর হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনি জীবনের কিছু মুছে যাওয়া ছবি চোখের
চিত্রপটে আজীবন থেকেই যায়। আমি যেন দেখছি ভাইয়ের হাত ধরে প্রজাপতি ধরতে
বেরিয়েছি ফুলের দেশে, দেখছি পিঁপড়ের ডিমের বাসা
খুঁজে ছিপের মাথায় লাগিয়ে চার বানিয়ে মাছ ধরছি পুকুরের পাড়ে। এসব দৃশ্যজন্ম
সিনেমার রিল গোটানোর মতো কিরকির শব্দে মাথার মধ্যে এক একটা সুতোর প্রাধান্য ছেড়ে যাচ্ছে, আমি চলছি সিনেমার দেশে। এই দেখাটা কি চোখ দেখছে?
অনেকবার ভেবেছি।
আরও কত
দৃশ্য আছে। চিত্রপট আঁকাতে গেলে জীবনে কত চোখের অদেখা জগতও ভিড় করে। যেখানে মনই রাজা
সর্বেসর্বা একচ্ছত্র অধিপতি, আর চোখের ধারণ তো
আয়ুর ব্যপ্তির চেয়ে বৃহত্তর নয়। চোখ মনের আয়না, ফেলে আসা দৃশ্যগুলি আজন্মকাল একই সুর তাল
লয়ে ছন্দে ছন্দে বেজে যায় বুকের বাঁ পাশের আপেল বাগানে। যেখানে জীবন ফিনিক্স শবের
অস্তিত্ব অস্বীকার করে। জলাজমিনে পচা শামুকে চিড়ে যাওয়া পায়ের রক্তিম আভা ও
যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়ার বিচ্ছিন্নতাকে নস্যাৎ করে টগবগিয়ে ছুটে চলে ডানাওয়ালা দুটি সাদা ঘোড়া, সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখার শুরু।
বিনু বৈরাগী বিকেলে মেঠোপথে গরুর খুরের ওঠা
রক্তিম ধূলির সাথে যখন কণ্ঠের সুর ভাসিয়ে দিতেন বাতাসের দিকে, কৃষ্ণচূড়া ছুঁয়ে শিরিষ
গাছের পাতায় যেন তখন সুরের বসন্ত নেমে আসত।
বসন্তর বুক ছুঁয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া ছেলে
মেয়েটি একে অপরকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল। ভালোবাসায় খেয়ায় তখন ওরা বাঁধভাঙা নদী। একদিন ওদের জিন ধারণ করে জন্ম নিল ছোট্ট
একটা ঘোড়া। অথচ কয়েক বসন্ত পুড়ে গিয়েছিল একদিন, একদিন বসন্তের গায়ে নোনাধরা আস্তরণ। বর্ষার জন্য আকুল পাখ-পাখালি, আকুল গাছ-গাছালি। বর্ষার কথা মনে হলেই জল ও বৃষ্টির অভিন্ন
বুনিয়াদের সম্পর্ক জেগে ওঠে মনে। বৃষ্টি কি ততটা দামী! জীবন দামী জলের চেয়ে! জলের শুদ্ধতায় বেঁচে থাকে সংকটমুখী
অস্তিত্বও। কিন্তু বৃষ্টির স্বেচ্ছাচারিতা অমোঘ, তাই তো মেঘ জমতে জমতেই একদিন নিখাত বর্ষা ওই
কলম-কালির হিসেবভোলা ছেলে কিংবা আগুনখেলায় মেতে থাকা মেয়েটির মনেও। মুক্ত আকাশ খুঁজতে থাকা অন্যকোনো বুক মেতে উঠবে বুক বদলের খেলায়। খেলতে খেলতে পাড়ি জমাবে কোনো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎে। প্রিয়জনের আবেগের ঘাম মুছে তলিয়ে যাবে
আসন্ন শীতের দেশে। এমন করেই কি কোনো কো্নো কবিতার জন্ম হয়? যে শব্দে লেখা থাকে ভাতহীন শিশুর ডাগর
পেটের খিদে! খিদের কথায় বলি, আমাদের বাড়ির কাজের মাসি 'নন্দর মা'(নাম জানা নেই), এই পাড়ায় আমার জ্ঞানচক্ষু জাগ্রত ইস্তক
নন্দর মা নামেই জয়জয়কার তার। নন্দর মা যেন একটা ব্র্যান্ড নাম। যে কোনো নন্দই কাজের মায়ের সন্তান সেই
মুহূর্তে। আর নন্দ মানেই রুক্ষ লালচুল, ডাগর টলটলে কালো দু'খানি চোখের এক ইনোসেন্ট লুকের কোনো বছর বারোর ছেলে। যার এখনো নাকের নিচের গোঁফের রেখায় পাপ গজিয়ে আকাশ ছুঁতে
চায় নি। নন্দর মায়ের সাদা সিঁথি, কাপড়ে ঘেঁষে বাসন লাগা হলুদ এঁটোর ছোপ। কোনো কোনো দিন বা অজান্তেই রক্তকরবী বিভোর বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে হেঁটে গেলেই পাড়ার ছেলেরা বুঝতে পারে, নন্দর মা'রা এখনো যুবতী আয়ু। হাতে কয়েকশ টাকার নোট
গুঁজে পাওয়া যেতে পারে কুঁচকানো চাদরের তৈলাক্ত গন্ধ। নন্দর মায়েদের বায়ু নেই, বায়ুর ভিতরে
শ্বাস-চালিত সত্ত্বা নেই, আছে কেবল শরীর ভরা বিষ। ঠোঁটের আগায় বিষ নিয়ে
ঘুরলেও ছোবলে ছোবলে প্রতিঘাতগুলো গুঁড়িয়ে যায় বস্তি পাড়ায়। নন্দর মা'রা খালের ধারে বিবস্ত্র শরীরে রক্তাক্ত
হলে খবর হয় না কোনোদিন। এদের ব্র্যান্ডেড নান্দনিক জীবন যে!
দৃশ্যভূক ব্যপ্তিতে শিরায় শিরায় রোমন্থনের
নেশা প্রবল ভাবে জাঁকিয়ে বসে, আর পেয়ে বসে সেই চাক্ষুষ মুহূর্তের পিছনের রূপকে টেনে বের করে আনতে মনের
দরজায়। যেমন ধরা যাক বড়বৌদি পুজোর থালে হাতে প্রসাদ দিতে এলেন। ফুল বেলপাতা কপালে ছুঁইয়ে হাতে প্রসাদ দেবার মুহূর্তেই বৌদির গা থেকে সেই ধূপ, ধূনার গন্ধ ভেসে এসে একটা চাক্ষুষ দৃশ্যর
বাইরে আরও একটা দৃশ্য আছে, জানিয়ে গেল না কি? যেটার মধ্যে আমি চোখে না দেখলে ও
প্রসাদ হাতে অনুভবে ধরতে পারলাম বউদি সকালবেলায় স্নান সেরে, লালপেড়ে সাদা শুদ্ধ শাড়িতে আটপৌরে আঁচলে চাবির গোছায় ঝুন ঝুন শব্দ তুলে
চুল ছেড়ে পুজোর ঘরের দিকে হেঁটে গেলেন, আর যাবার পথে ছড়িয়ে গেল ক্লিনিক প্লাস শ্যাম্পু এক ভিন্ন মহিমা। ধূপ, ধূনায় ঘন্টা আর কাঁসরের শব্দগুলোও রচিত হলো প্রসাদী ফলের গায়ে। এও তো এক প্রকার পূর্বমুহূর্তকে
আবিষ্কারেরই দ্যোতনা। অথবা যদি বোঝাই গরম ভাতের ধোঁয়া ওঠা স্বাদের পাশে তিনটি
রান্না সবজির বাটি কি মনে করিয়ে দেয় না, এক খিলি পান মুখে রমা পিসির লাল ঠোঁটের ইতিহাস! যেখানে অব্যক্ত বেদনাগুলো পাথর হতে হতে
ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে ক্রমশ হলুদরঙা সবজির বাটির সাথে।
আসলে কোনো অবস্থাকে পূর্ণ অবলোকন-এর জন্য চোখ যতখানি জমিন স্বত্বাধিকারী মন কিন্তু অনেক বেশি দখলদারিতে থাকে আগে। পুরনো চাল ভাতে বারার মতো রাবীন্দ্রিক অস্তিত্ব গেঁথে রয়েছে শিল্প সাহিত্যের
অন্তরে, তাকে অনুধাবন করতে হলে
শুধু চোখই কি যথেষ্ট!
ছুটন্ত ঘোড়ার চারটি পা শূন্যে ওঠার
অবস্থানকে চলচ্চিত্র দৃশ্যের মতো একটানা কল্পনা করে গেলে ধীরে ধীরে তার এগিয়ে যাবার বা ছোটার মূর্তিটি ক্রমেই মনের
জগতে বিছিয়ে যাবে সব পাওয়ার রাজ্য। শিল্পসৃষ্টির কর্তা তবে কি ঈশ্বর? কিংবা ঈশ্বরের কাছাকাছি? শিল্পকে যদি সাধনার বা
তপস্যার মাধ্যম ধরা হয়, তবে শিল্পীসাধক সেই উপচারের। শিল্পই শিল্পীকে খায়, শিল্পীর চিতাভস্মের উপর রচিত হয় মিলনান্তক
কাব্য। কাব্যের উপসংহারে জন্ম নেয় নব্যশিল্প ভবিষ্যৎ, এ সব কিছুই কি মিছে!
(৩)
এবার চোখ নিয়ে একটু অন্য কথায় আসি। চোখ মানে এমন একটি অঙ্গ যা দিয়ে পৃথিবীর
যাবতীয় রূপ রস বর্ণ বিপুল সৌন্দর্য দেখতে পাই। মানুষের মনোভাব প্রতিফলিত হয় তার চোখে। দেখে নেওয়া যাক, বিজ্ঞানের ভাষায় চোখকে কি বলা হয়।
চোখ প্রাণীর আলোক সংবেদনশীল অঙ্গ এবং
দর্শনেন্দ্রিয়। প্রাণী জগতের সবচেয়ে সরল চোখ কেবলমাত্র আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির পার্থক্য করতে পারে। উন্নত প্রাণীর চোখের গঠন জটিল, এর দ্বারা আকৃতি বা বর্ণ পৃথক করা যায়। অনেক প্রাণীর চোখ একই তলে অবস্থিত হওয়ায়
একমাত্রিক দৃশ্য গঠন করে। যেমন মানুষের চোখ। আবার কিছু প্রাণীর চোখ দুটি
ভিন্ন তলে অবস্থান করায় দুইটি পৃথক দৃশ্যপট তৈরি হয়, যেমন গরু। চোখ বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত - কার্নিয়া, রেটিনা, অপটিক নার্ভ, আইরিস, আকোয়াস হিউমার, ভিট্রিয়াস হিউমার ইত্যাদি। সঠিক দেখার জন্য চোখের প্রতিটি অংশই নিজ
ছন্দে কাজ করে।
জ্যোতিষশাস্ত্রের বিখ্যাত লেখক কিরোর একটি
বইতে চোখের বর্ণভেদে মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যার সুন্দর বর্ণনা আছে।
চোখ যে মনের কথা বলে - এ কথাটি সবাই জানলেও, আপনি জানেন কি, চোখ
দেখে জানা যায় ব্যক্তিত্ব? ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বিস্ময়কর সব তথ্য দিতে পারে
চোখ।
কালো চোখের অধিকারী ব্যক্তিরা রহস্যময়
এবং হালকা বাদামী রঙের চোখের অধিকারী ব্যক্তিরা স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাবের হয়ে থাকেন।
আই এ এন এসের জরিপে চোখের এই বিস্ময়কর ক্ষমতা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন প্রকাশ
করেছে।
কালো রঙের চোখ:
কালো রঙের চোখের অধিকারী ব্যক্তিরা রাতের
মতোই রহস্যময় এবং সুচতুর হয়ে থাকেন। তাঁরা বিশ্বাসযোগ্য এবং কারো গোপন তথ্য ফাঁস করেন
না। তাঁরা বিশ্বস্ত এবং দায়িত্বশীল। কঠোর পরিশ্রমী এবং
আশাবাদী। নিজেদেরকে দক্ষতার সঙ্গে
অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে তাঁদের তুলনা নেই।
বাদামী রঙের চোখ:
বাদামী রঙের চোখের অধিকারীরা সাধারণত
আত্মবিশ্বাসী, আকর্ষণীয় এবং সৃজনশীল হয়ে থাকেন। নিজেদের ব্যপারে দৃঢ় বিশ্বাস থাকা
সত্বেও তাঁরা তা কখনো কখনো অন্যের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হন।
হালকা বাদামী রঙের চোখঃ
যাঁদের চোখ হালকা বাদামী রঙের তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত, হাসিখুশি এবং
দুঃসাহসিক। যে কোনো স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন।
একঘেয়েমি পছন্দ করেন না। তাঁদের সৌন্দর্য অন্যদের আকর্ষণ করলেও তাঁরা সম্পর্ক বেশিদিন ধরে রাখতে পারেন না।
ধূসর রঙের চোখঃ
ধূসর রঙের চোখের অধিকারীরা ভীষণ কর্তৃত্বপূর্ণ, শক্তিশালী এবং ভদ্র।
তাঁরা বেশি আক্রমণাত্মক নয় এবং সর্বোচ্চ যত্নের সঙ্গে যে কোনো কাজ করেন। ভালোবাসা এবং রোমাঞ্চকে তাঁরা খুব গুরুত্ব দেন। অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং
যুক্তি দিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে তাঁরা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
সবুজ রঙের চোখঃ
সবুজ রঙের চোখের অধিকারী ব্যক্তিরা
বুদ্ধিমান, কৌতূহলী এবং প্রাণবন্ত হয়ে থাকেন। তাঁরা বেশ আবেগের সঙ্গে যে কোনো কাজ করেন এবং সর্বদাই আকর্ষণীয়। দ্রুত
ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পরা তাঁদের একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য।
নীল রঙের চোখঃ
নীল রঙের চোখের ব্যক্তিরা অত্যন্ত
আকর্ষণীয়, শান্তিপ্রিয়, স্মার্ট এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের অধিকারী। অন্যকে সুখী করতে তাঁরা ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। মিশুকে এবং গভীরভাবে সব দিকে খেয়াল রাখেন।
(৫)
পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে
বিভিন্ন রঙের চোখ দেখা যায়। কারও চোখের রঙ বাদামী তো কারও চোখের রঙ কালো; কারও হয়তো নীল। তবে
বিভিন্ন গবেষণায় চোখের রঙ সম্পর্কে নানা কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য বের হয়ে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানবজাতির শুরুতে সব
মানুষের চোখের রঙই ছিল বাদামী। এর পরে বিভিন্ন এলাকার
মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে বংশানুক্রমে চোখের রঙ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। তবে, চোখের নীল রঙ এসেছে
একজন মাত্র নির্দিষ্ট পূর্ব পুরুষ থেকে। ধারণা করা হয়, ঐ
নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির জন্ম ৭ হাজার বছর আগে কৃষ্ণ সাগরের আশেপাশের কোন অঞ্চলে। Mutation
বা পরিব্যক্তির দরুণ তিনি নীল রঙের চোখ নিয়ে জন্মে ছিলেন।
University of Copenhagen এর Department of
Cellular and Molecular Medicine এর Professor Hans
Eiberg বলেন, “একটি জেনেটিক মিউটেশনের দরুণ আমাদের ক্রমসমের OCA2 জিনটি প্রভাবিত হয়
এবং এর ফলে তৈরি হয় এক ধরনের 'switch', যা কিনা
আক্ষরিক অর্থেই আমাদের বাদামী চোখ উৎপন্ন হওয়া বন্ধ করে দেয়”।
Professor Eiberg নীল চোখের উপর নানা গবেষণা করতে
১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে তুরস্ক, জর্ডান, ডেনমার্কে ভ্রমণ করেন। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডি এন এ-এর উপর নানা গবেষণায়
তিনি চোখের রঙের জন্য দায়ী জিনের অবস্থান আবিষ্কার করেন।
OCA2 জিনটি মূলত মেলানিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
মেলানিন দ্বারা নির্ধারিত হয়, চুল, চামড়া এবং চোখের রঙ। 'switch'এর অবস্থান OCA2 জিনের কাছাকছি। এটি
মেলানিনের উৎপাদন হ্রাস করে দেয় এবং
ফলশ্রুতিতে চোখের নীল রঙ দেখা যায়।
মেলানিনের পরিমাণে একটি নির্দিষ্ট
ভিন্নতার জন্য নীল চোখ দেখতে পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়। এটির উৎপত্তিও কোনো একজন নির্দিষ্ট পূর্বপুরুষ থেকে। আবার সবুজ বা হ্যাজেল রঙের চোখ দেখা যায় মেলানিনের বিভিন্ন রকম ভিন্নতার
দরুণ। ফলশ্রুতিতে এই রঙের সাথে
কোনো একজন
নির্দিষ্ট পূর্ব পুরুষকে সম্পর্কিত করা যায় না।
তবে এখানে অন্য আরেকটি যে বিষয় উল্লেখ্য, তা হলো, আমাদের চোখের রঙের
সাথে আমাদের স্বাস্থ্য বা দৈনন্দিন দক্ষতা বা কাজের সফলতার কোনো সম্পর্কই নেই।
চোখের গল্প যখন বলতে বসেছি, স্বপ্ন সরিয়ে নিলে চোখের অস্তিত্ব থাকে
না। তাই বলে যার দৃষ্টিশক্তি নেই, তিনি কি স্বপ্ন দেখেন না! অবশ্যই দেখেন। স্বপ্ন আসলে কি? এই নিয়েই নানা মতভেদ রয়েছে। ঘুমের সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে যে
পরিবর্তন হয় তার কিছুটা অনুমান সম্ভব হয়। বন্ধ চোখের স্বপ্নের বিষয়ে গবেষণায় উঠে
এসেছে সারাদিনের চিন্তাভাবনা বা দৈনন্দিন কাজকর্মের বড় প্রভাবের ফল ঘুমের মধ্যে
স্বপ্ন। মস্তিষ্ককে দ্বিতীয় অন্ত্র হিসাবেই অভিহিত করেছেন এরিজোনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম এবং স্বপ্ন বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী ড: রুবিন নেইমান। তাঁর মতে রাতে, ঘুমের ঘোরে আমাদের মস্তিষ্ক দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়, যাতে পরিপাকতন্ত্রের মতোই কাজকর্ম চলতে থাকে। আর মজার বিষয়থলো, সেখান থেকে তথ্য নিষ্কাশিত হয়ে কল্পনাপ্রবণ বিষয়গুলি একটি অংশে জমা হতে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের জানানো তথ্য অনুসারে নিচে
স্বপ্ন সম্পর্কে কয়েকটি ভুল তুলে ধরা হলো-
আমরা প্রতি রাতেই হয়তো দীর্ঘ সময় স্বপ্ন দেখি। যখন চোখের পাতা
দ্রুত নড়ে তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। কিন্তু নেইমান বলেন, আমরা সব সময়ই স্বপ্ন দেখছি। তবে বেশি স্বপ্ন দেখি চোখের পাতা দ্রুত
নড়ার সময়। কিন্তু স্বপ্ন না দেখলেও
চোখের পাতা নড়ে, এটা জেনে রাখা দরকার। ভোরের দিকেই স্বপ্ন দেখার ব্যাপারটা ঘটে থাকে।
ঘুমের সময় পোকা মাকড়ের চোখের পাতা নড়ে না। কিছু স্বপ্ন চোখের
পাতা নড়া ছাড়াই দেখা গেলেও REM বা দ্রুত চোখের পাতা নড়ার ঘটনা অন্য প্রজাতির
প্রাণীদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায় বলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
গবেষকরা জানিয়েছেন। পপুলার সায়েন্সের মতে, সব স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ এবং কিছু পাখির ঘুমের সময় চোখের পাতা নড়ে। তাই এদের মধ্যেও যথারীতি স্বপ্ন দেখার বিষয়টি ঘটে।
যদি এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, তবে স্বপ্নের কথা মনে রাখা কঠিন। এলার্মের শব্দে জেগে উঠেও ঠাহর করতে না পারা যায় কোথায় আছি কিংবা ঘুম থেকে উঠে
মুহূর্তের মধ্যেই মনে হবে ভেসে আছি। নেইমান স্বপ্ন মনে রাখার উৎকৃষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, খুব ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠুন, এক মিনিটের ওপর সময় নিয়ে উঠুন, অলসতার সাথে
উঠুন। দ্রুতগামী কোনো ছবি সামনে রাখার খুব শক্ত চেষ্টা করবেন না। তিনি বলেন, আপনি যদি স্বপ্নকে তাড়া করেন, তাহলে স্বপ্নই পালিয়ে যাবে।
তাদেরই স্বপ্ন মনে থাকে, যারা মস্তিষ্কের বিভিন্ন ক্রিয়া
প্রদর্শনে অভ্যস্ত। কিন্তু এটিও ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। মস্তিষ্কের
বেশ কিছু স্বতঃস্ফূর্ত কার্যকরণের কারণে স্বপ্ন মনে পড়ে।
স্বপ্ন দেখার সময় জেগে ওঠার শারীরিক
ভঙ্গিমা:
যাঁরা স্বপ্নের মধ্যেই ঘুম থেকে পাগলের মতো জেগে ওঠেন, কিছু করা শুরু করেন, তাঁদের সঙ্গে প্রকৃতিস্থ মানুষের পক্ষে
কথাবলা সম্ভব হয় না। কিন্তু জীববিজ্ঞান মতে, যাঁরা ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতে সময় নেন, তাঁদের ইন্দ্রিয় সক্রিয় হয় বলে নেইমান জানান। তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, আমাদের প্রায় হুবহু একই
ভাবে শরীরে এবং মস্তিষ্কে স্বপ্ন নিবন্ধনের বিষয়টা চলে।
আমরা বাস্তব সময়েই স্বপ্ন দেখি। প্রচলিত আছে, আমাদের স্বপ্ন দেখাটা সেকেন্ডে ভেঙে ভেঙে
আসে। আদতে বাস্তবতা হচ্ছে স্বপ্ন টানা ২০ মিনিট বা ৩০ মিনিট, এমনকি ঘণ্টাব্যাপী চলতে পারে।
দুঃস্বপ্ন সবসময় ভয় থেকে হয় না। খারাপ স্বপ্ন নিশ্চয়ই ভীতিকর। কিন্তু
অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের আবেগ থেকেও এটা হতে পারে। ২০১৪ সালে ৩৩৩
জন মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, অনেক দুঃস্বপ্ন এবং খারাপ স্বপ্ন - বিভ্রান্তি, নিরানন্দ, অপরাধবোধ, ব্যর্থতার অনুভূতি, জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়
থেকে দেখা হয়। গবেষকরা এটাও জানান যে, নারীদের খারাপ স্বপ্ন, সম্পর্কের দ্বন্দ্ব থেকে এবং পুরুষরা
অধিকাংশ দুঃস্বপ্ন সহিংসতা বা শারীরিক আগ্রাসন
থেকে দেখে থাকে।
কিছু অদ্ভুত স্বপ্ন, স্বপ্নে যদি দেখা হয়
এক বুনো লাল চোখের ষাঁড় তাড়া করছে আর আমি ছুটছি, এটাও অদ্ভুত স্বপ্ন নয়। এটা কোনো বিষয় না যে নিজে কতটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছি।
ঘুম থেকে উঠে কোন্ স্বপ্নটা দেখা হয়েছিল এবং সেটা কতটা অদ্ভুত সেটা নির্ণয় করতে হবে। তার সম্পর্কে নিজের অভিমতের ওপরই নির্ভর করবে সেটা কতটা অদ্ভুত ছিল। জাগ্রত অবস্থাতেই দুই
ভিন্ন কোণ থেকে স্বপ্নকে ব্যাখ্যা করা উচিত।
ধরুন যদি দেখা হলো স্বপ্নেই মারা গেলেন! মানুষের বিশাল একটা অংশ মনে করে যে, স্বপ্নে মারা যাওয়া অর্থ সে মরে যাবে। কিন্তু নেইমান বলেন, এর কোনো সত্যতা নেই। তিনি বলেন, যদি স্বপ্নে দীর্ঘ সময় মারা যাওয়ার সুযোগ পান তবে সেই সুযোগ গ্রহণ করুন।
পটুয়া ছেলেটি সেই নদীয়া থেকে সুদূর
মুম্বাইতে এসেছেন পেটের তাগিদে। একমনে বসে দেবীর চক্ষুদান করে চলেছেন। প্রতিমার মুখমণ্ডলে মণি আবিষ্কারের সাথে সাথেই যেন প্রতিমা জগত সংসারের সবটুকু
করায়ত্ত করে নিলেন। আসলে এক দু-টুকরো মণিই বোধহয় বাসুকি নাগ ফণায় ধরে আদি অনন্তকাল থেকে সৃষ্টির
গর্ভকে লালিত করে চলেছে।
আমরা জানি কুকুরের চোখের পাতা 'ডবল' হয়। মানুষ তার চোখের ভাষায় যতখানি ইঙ্গিত
বোঝাতে সক্ষম ততখানি বোধহয় কোনো প্রাণী পারে না। অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে চোখের মণিতে। যেমন আনন্দ, ভয়, ঘৃণা ইত্যাদিতে চোখের মণি প্রসারিত হয়ে থাকে।
আবার আলোর রকম ফেরের উপরেও নির্ভর করে মণির আকার পরিবর্তন হয়ে থাকে। অন্ধকার পরিবেশে চোখের তারা বড় হয়ে যায়
পরিমাপের আলো প্রবেশ করানোর জন্য। সূর্যের বা অন্যকিছু প্রচণ্ড আলো থেকে রেটিনাকে
রক্ষা করার জন্য মণি ছোট হয়ে যায়। এর জন্য অবশ্য কনীনিকা দায়ী। আনন্দ বা উত্তেজনার কারণেও চোখের তারা বড়
হয়ে ওঠে। স্নায়ুতন্ত্রের এক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। তারা প্রসারিত হলে তবে আলাদা করে চোখের
তারায় ঠিক কোন অনুভূতিটি ফুটে উঠেছে বোঝা যায় না। আমস্টারডাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী
ভিলেম ডেজি ও টোবিয়াস ডোনার চোখের মণি নিয়ে গবেষণা করে নতুন তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন।
"কোনো মানুষ যদি মিথ্যে বলে এবং সেই মিথ্যে ধরা
পড়তে পারে বলে ভীত হয়, চোখের
মণি প্রসারিত হতে পারে"...
গবেষণায় বলা হয়েছে যে, চোখের মণির আকার দেখে মানুষের সিদ্ধান্ত
সম্পর্কে জানা যায়। হ্যাঁ বা না সূচক সিদ্ধান্তে হ্যাঁ হলে মণি
প্রসারিত হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন মতও ও উঠে এসেছে। চক্ষু চিকিৎসা বিজ্ঞান বা অপথ্যামোলজি
সোসাইটির হেলমুট ভিলহেল্ম এই তথ্যকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলেছেন, চোখের বিস্তৃত মণি এটাই প্রকাশ করে, ব্যক্তিটি উত্তেজিত কিনা। তবে সেই উত্তেজনা কী ধরনের, তার প্রকাশ পায় না।
"চোখে আমার তৃষ্ণা ও গো তৃষ্ণা আমার বক্ষ
জুড়ে"
হিউম্যান সেক্স অফ বডি ল্যাঙ্গুয়েজের
রিসার্চেও এক চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। অন্যান্য প্রাণীদের সেক্স পরিতৃপ্তির চরম অনুভব
হিসেবে চোখ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাগন্মোচন প্রক্রিয়ার চরম পরিতৃপ্তি
হিসেবে তার চোখে প্রভাব ফেলে অর্থাৎ কিনা সেই ব্যক্তিটি
যৌন সংসর্গে কতখানি সুখলাভ করল তা তার চোখের অভিব্যক্তিতেই বোঝা যেতে পারে।
যাইহোক শুরু করেছিলাম যে স্থান থেকে, সেই স্থানেই ফিরে গিয়ে শেষ করি। প্রাচ্য
হোক বা পাশ্চাত্য, সাহিত্যে চোখের উপমার প্রয়োগ বারবার ঘুরে ফিরে
আসবেই নব নতুন হয়েই। এখন শূন্য দশকের কবিদের কলমে চোখ কতখানি প্রভাব ফেলে,
সেটাই দেখার।
পরের দিকটা বাংলা সিরিয়ালের মত গ্যাদগেদে হয়ে গ্যালো
উত্তরমুছুন