কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

দেবযানী কর সিনহা

ঘুম

বলেছিলে অপেক্ষা করতে সারারাত! তুমি থাকবে স্টেশনের একেবারে শেষদিকে। কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লে। তারপর!
এখন তুমি কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছ? তখন বসবার আর শোবার শব্দ এলো। আমি নিশ্চিত এখানে খুব কাছাকাছি কোথাও আছ। কোনো খামতির কারণে দেখতে পাচ্ছি না, হ্যালো হ্যালো হ্যালো, তিনবার চেঁচালাম, এভাবে জীবনে এই প্রথমবার। দেখ শেয়াল কুকুরগুলো দূরের ঝোপঝাড় থেকে চিৎকার করে যাচ্ছে, রাতচরা পাখির মতো কিছু একটা টিনের শেডের ওপর নখ দিয়ে আঁচড় কেটে উড়ে গেল আকাশে। আশঙ্কায় রক্ত হিম হয়ে আসছে, তুমি ঠিকঠাক আছ তো? ওরা ঘুমন্ত প্রাণীকে মরা মানুষ ভেবে ঠোকরায়। সত্যি তো ঘুমন্ত থাকা মানে তো মৃত্যুর কাছে সাময়িক ভাবে চলে যাওয়া! আবার অবুঝ থাকা মানেও বোধহয় মৃত্যু! নাও নাও ঘুমিয়ে নাও ঘুমিয়ে নাও, অনেক ক্লান্ত তুমি, অনেকটা ঘুমিয়ে নিলে বাস্তবের ক্ষতগুলোর নিরাময় হয়। নিজেকে বদলে নেওয়ার ক্ষমতা পায় দুর্বল নার্ভগুলো। কেউ পাশে থাকা মানেই তো মাটি খোঁড়ার প্রকল্প। মাটি চাপা দেওয়ার আগে ঝড়বৃষ্টি শুরূ হয়ে যাওয়াও দৈব কারসাজি। এই বেশ ভালো হলো, একটু একটু করে এগিয়ে যাব। কাল থেকে সময় ধরা হবে না। শূন্যের কাছাকাছি এসে যাচ্ছি ক্রমশ। আজকের রাতটাই এই শতাব্দীর শেষদিন। যেভাবে হোক খুঁজে বের করবই অমৃতকাঠি।
আর হ্যাঁ, আবেগভরা মানুষ চট করে মরে যায় না। হয়তো এই পৃথিবীটা আবেগশূন্য হয়ে যাচ্ছে অনেক আগে থেকে। আবার পুরোটা বুঝে গেলেও হাতে পড়ে থাকে না ভাবনার কিছু। নির্বোধ থাকা নয়, নির্বোধ হওয়া ভালো। ওপাশে কেউ চুপ করে শুনে যাচ্ছে আমার সব কথা; তুমি নও তুমি নও তুমি নও, অন্য কারও শ্বাসপ্রশ্বাস!
“এই রাতে নৌকার মতো ভেসে যাচ্ছি, কোনো ঠিকানা নেই, নেই ওপারের হাতছানি। একটা পিছুটান নিয়ে বছরের পর বছর ভেসে আছি”।
আকাশের চাঁদ ভরসা দিলেও তা জোলো। নারীরা কখনও নারীর সখী হয় না। গভীর নদী তো পায় না, শুধু ছায়া ঢেলে ঢেলে প্রগলভ হয়ে ওঠে। আমার অতীন আমার যতীন তুমি উজ্জ্বল লাস্যময়ী, কিন্তু যোনিহীনা। রাতের সঙ্গে সঙ্গম করতে শেখোনি।
সব আমাদের নিয়তি। জন্ম দিই অনেক নিগূঢ় রহস্য। তারপর রহস্যের মায়া ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় ধ্বংস হয়ে যাই। গর্ভ বিদীর্ণ হয়ে বেরিয়ে আসে স্মৃতি, তা আমরা আর কতটুকু ভোগ করতে পারি!

গভীর রাতে নিস্তব্ধতার চুমুকে আমি নিজেকে প্রথমে খন্ডিত তারপর তরল হয়ে যেতে দেখলাম। পর্যায়ক্রমে কতকগুলো অনাবাসী ঢেউ আমাকে কুয়াশার রাজ্যে নিয়ে গেল। এরপর হয়তো ভোর। তুমি কি এখনও ঘুমোচ্ছ? 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন