কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪

২০) কাজী জহিরুল ইসলাম



কাজী জহিরুল ইসলাম


দৌড়

দৌড়ের শুরুতে জন ছিলাম ঠিক মনে নেই
কিছুদূর গিয়ে দেখি বেশ জনের হামাগুড়ি
কিন্তু আমি ঊর্ধ্বশ্বাসে তখনো ছুটছি বুঝি এই
পৌঁছে গেলাম অভীষ্টে, পথে পথে কংকর-নুড়ি
ছড়ানো হোচট খেতে খেতে উঠে দাঁড়াই, নতুন
পথের পাঁজরে সজোরে চালাই বুটের আঘাত
স্বপ্নের পথের বাঁকে দেখি আরো জন নিপুণ
সংসার পেতেছে মুছে দিয়ে ক্লান্তির অভিসম্পাত

আমি এখনো অক্লান্ত(!), ছুটে চলেছি অচেনা লক্ষ্যে
কত দূর বিস্তৃত পথখানি, কোন সমুদ্রের
তীরে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য, অথবা কোন পর্বতবক্ষে
জানি না অমোঘ নির্দেশ শুনতে পাই সুদূরের,   
‘থামবি না খবরদার, কেবল দ্রুত ছুটে চল’
বয়ে চলেছি নিয়ত দাসত্বের নির্মম শেকল।


চা
টি-ব্যাগ নিংড়ে সৌহার্দ্যের শেষ ফোঁটা  
ধরে ফেলি পাথরের পেয়ালায়
তখন বিকেল
তোমার বুকের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি

নুয়ে পড়া রোদ বুকের ওপর  
ওকে টেনে নিয়ে যায় সময়, নাভীর গভীরে, দক্ষিণে...
সময় কি দেয়?
নুয়ে পড়া রোদ!
সমুদ্রে আছড়ে পড়া নদী, মানে মৃত্যু?

থাক এইসব
এই পেয়ালায় দু’চামচ  স্মৃতি
খুব কড়া মিষ্টি চা-ই এখনো আমার প্রিয়


দীর্ঘ যাত্রার সাড়েঙ

আপনি তো অনেকদিন সাড়েঙ, এই জাহাজের
কত ঘাটে থামালেন, উঠা-নামা মানুষের
মালপত্রের, সৌহার্দ্য ও শত্রুতা


কত বাঁক ঘুরে প্রপেলারে মেখেছেন
পাঁচ সাগরের নুন
কতো খুন
লেগে আছে সমুদ্র শৈবালে... 

সেই যে একটি শব্দ ‘বাংলা’ আমাদের করে
স্বপ্নের জাহাজ ভাসালেন নোনা জলে...
কান পেতে শুনেছেন কি একবারও
স্বপ্নের ভেতর কত দুঃস্বপ্নের কান্না আজ
বলক দেওয়া ভাতের মতো ঢাকনা ঠেলছে...

শুনতে কি পান, জাহাজের পেটের ভেতর হট্টগোলের আওয়াজ?
তবে কি আপনিও নুহের মতো ভুল করে
কাউকে ডেকেছিলেন ‘উঠে আয় শয়তান’ বলে?


বিষণ্ণ সূর্যের ছায়ায় বিপন্ন বাস মানুষের

আমরা এখন দাঁড়িয়েছি অস্তগামী সূর্যের করুণ
ছায়ার ওপর। বাদুড়েরা দিগন্তের লাল আভা
লক্ষ্য করে যেতে যেতে আমাদের মাথার কার্নিশে
বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করছে। দিনের আলো আর
রাতের আঁধারে ক্রমশ আমরা দ্বিধান্বিত ভ্রুণ
জন্ম দিচ্ছি। ফেলে আসা রাস্তায় বিস্ফোরণের লাভা
তাড়িত করছে আমাদের; সায়ানাইডের বিষে
মুখগুলো নীল, তবু ফুলঝুড়ি অশ্রাব্য ভাষার।

বেরোবার পথসমূহ রাত্রির চাদরে আবৃত।
তবু ক’জন উৎসাহী আলো জ্বালাবার কসরত
করে যাচ্ছে ক্রমাগত। সেখানেও দুষ্ট শকুনেরা
কয়লার পাথর ছুঁড়ছে। একটি ভাগাড় মৃত-
গলিতদের, ওদের প্রত্যাশার কু-কৃষ্ণ পর্বত।
বিষণ্ণ সূর্যের ছায়ায় বিপন্ন বাস মানুষের।







0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন