সনেট
মহাভিনিষ্ক্রমণের পথে
আজ আর প্রদীপ্ত রাজপ্রাসাদে গৌতম মোহিত নয় নর্তকীর নাচে।
সারথি ছন্দক তাকে চিনিয়েছে জরা ব্যাধি আর মৃত্যু শেষ পরিণতি
অহংকারে অলংকৃত শরীরের। লহরীর সুরে রূপসীরা আসে কাছে।
মোহ নেই, তৃষ্ণা নেই, অবসাদে হীন মনে হয়েছে সংসার, প্রিয় রতি।
দগ্ধ মনস্তাপে ক্লান্ত হয়ে ডুবে গিয়েছে রাজকুমার গভীর নিদ্রায়
অদ্ভুত অবহেলায় চূর্ণ হয়ে অঙ্গনে ঘুমিয়ে গেছে নর্তকী-বাদক।
মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে সিদ্ধার্থের—প্রেতপুরী ছেড়ে সে শয়নকক্ষে যায়
পালঙ্কে যশোধারার কোলে সদ্যজাত রাহুল জাগিয়ে তোলে ব্যর্থশোক।
নিস্পৃহ আর্যপুত্রের নির্দেশে শ্বেতাঙ্গ অশ্ব কন্হকের জিন হাতে নিয়ে
মহাভিনিষ্ক্রমণের রথ দাঁড় করিয়েছে অশ্রুভারে আহত ছন্দক।
রাত্রির আকাশ থেকে, ভূমি থেকে নক্ষত্র জোনাকিপুঞ্জ শুভেচ্ছা বাড়িয়ে
অনোমা নদীরতীরে নামিয়েছে—তলোয়ারে হয়েছেন মুণ্ডিত মস্তক।
একবস্ত্রে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে জীবন-প্রহেলিকার উত্তর সন্ধান
করেছেন কৃচ্ছক্লেশে গয়ায় বটবৃক্ষের নীচে বসে বুদ্ধ ভগবান।
আরণ্যক দাবা
পৃথিবীর নিমন্ত্রণে এসে আজ অনাহারে ফিরে গেল ওরা
খসে গেল সমাজের গা থেকে নক্সাখচিত উজ্জ্বল চাদর।
অন্ধকারে বাস করে যাদের দু-চোখে ছিল স্বপ্নময় ভোর
তাদের চিরনিদ্রায় ফেলে রেখে ছুটে গেছে নির্বাচিত ঘোড়া
দাবার আড়াইচালে প্রতিবার লাফ দিয়ে; কিছু বিষফোঁড়া
গোদের ওপরে থাকে, তাদের জন্যেই তার পা ভারি, আদর।
মাঝে মাঝে বিড়ম্বনা, মাঝে মাঝে সংবাদ চেঁচিয়ে বলে চোর—
মানুষ সহজে সব ভুলে যায়, জলে ফিরে যায় জলঢোঁড়া।
পোশাক দিলে না, ভাত দিলে না, যৌনতা দিলে শুধু ভগবান
অক্ষর দিলে না, জমি দিলে না, পানীয় জলে দিলে আর্সেনিক।
গুহায় ছিলাম ভালো, গুহার ভেতরে ফের নিয়ে যাও তুমি
আবার ফিরিয়ে দাও বনমানুষের পাশে বন্য অবস্থান।
দাবার চৌষট্টি ঘরে আমাদের আলো নেই, আঁধার দৈনিক
কুড়ে কুড়ে খায় আর পা থেকে হারিয়ে যায় আরণ্যক ভূমি।
অক্ষর দর্পণ
যুবতীকে কাছে ডেকে তার হাতে দিয়েছি অক্ষর
কলম বোলাতে বসে যখন সে লিখে ফেলে নাম
জ্বল জ্বল করে চোখ, মনে মনে দর্পণে প্রণাম
করে—আজ থেকে তার নতুন জীবন, সে সাক্ষর।
স্থাবর সম্পত্তি ঢের আছে, তার চেয়ে অস্থাবর
এই সম্পদের স্বাদ পরম তৃপ্তির, ঢের দাম
টের পায় কল্যাণী মণ্ডল, তার বাড়ি বিষ্ণুগ্রাম
ঠিকানাটা বলে, ধীর ধীরে শিখে নেয় যুক্তাক্ষর।
নাম ও ঠিকানা লিখে সে আমকে দিয়েছে কাগজে।
বন্ধুত্ব দিয়েছে, পান আর গোটা তিন সিগারেট,
আমি যে কতটা সুখী সে কথা বোঝাব আজ কাকে
আদরের হাত রাখি তার মাথায়, সে চোখ বোজে।
আমার ফেরার বাস এসে যায় আমি তো পাপেট
দল নিয়ে ফিরে আসি, সারারাত চিঠি লিখি তাকে।
কুমারী মা
আমার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে এক কুমারী মা।
প্রথমে বুঝিনি, চোখে ছিল তার অভ্যর্থনা ফুল
মুখময় হাস্যজ্যোৎস্না, মাথায় গভীর কালো চুল
বুকে ভারি স্তন, তাকে স্পষ্ট করে তোলা গেঞ্জিজামা—
কিছুটা মেমসাহেব, অনাবৃত ত্বকবর্ণ তামা।
মাতৃভাষা বাংলা, শিক্ষা-দীক্ষা সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল
স্বচ্ছল অনুবাদক বিশ্বাস করে না কোনো ভুল—
পিতৃপরিচয় নেই তার সন্তানের, সে শুধু মা।
জিজ্ঞাসা করেছি আমি, ‘বিয়ে হয়েছিল?’ উত্তর, ‘না।’
‘কোনো যোগাযোগ আছে?’ – ‘কোনো প্রয়োজন নেই তার
জঠরে পেয়েছি যাকে, আলোয় ধরেছি তুলে আমি
পরিচয় দিয়েছি আমার, তাকে বলেছি, আমি মা
গাছ হয়ে বেঁচে আছি, তুই নে গাছের অধিকার—
জানে না গাছ কে বাবা, খোঁজে না গাছ কে তার স্বামী।’
মহাভিনিষ্ক্রমণের পথে
আজ আর প্রদীপ্ত রাজপ্রাসাদে গৌতম মোহিত নয় নর্তকীর নাচে।
সারথি ছন্দক তাকে চিনিয়েছে জরা ব্যাধি আর মৃত্যু শেষ পরিণতি
অহংকারে অলংকৃত শরীরের। লহরীর সুরে রূপসীরা আসে কাছে।
মোহ নেই, তৃষ্ণা নেই, অবসাদে হীন মনে হয়েছে সংসার, প্রিয় রতি।
দগ্ধ মনস্তাপে ক্লান্ত হয়ে ডুবে গিয়েছে রাজকুমার গভীর নিদ্রায়
অদ্ভুত অবহেলায় চূর্ণ হয়ে অঙ্গনে ঘুমিয়ে গেছে নর্তকী-বাদক।
মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে সিদ্ধার্থের—প্রেতপুরী ছেড়ে সে শয়নকক্ষে যায়
পালঙ্কে যশোধারার কোলে সদ্যজাত রাহুল জাগিয়ে তোলে ব্যর্থশোক।
নিস্পৃহ আর্যপুত্রের নির্দেশে শ্বেতাঙ্গ অশ্ব কন্হকের জিন হাতে নিয়ে
মহাভিনিষ্ক্রমণের রথ দাঁড় করিয়েছে অশ্রুভারে আহত ছন্দক।
রাত্রির আকাশ থেকে, ভূমি থেকে নক্ষত্র জোনাকিপুঞ্জ শুভেচ্ছা বাড়িয়ে
অনোমা নদীরতীরে নামিয়েছে—তলোয়ারে হয়েছেন মুণ্ডিত মস্তক।
একবস্ত্রে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে জীবন-প্রহেলিকার উত্তর সন্ধান
করেছেন কৃচ্ছক্লেশে গয়ায় বটবৃক্ষের নীচে বসে বুদ্ধ ভগবান।
আরণ্যক দাবা
পৃথিবীর নিমন্ত্রণে এসে আজ অনাহারে ফিরে গেল ওরা
খসে গেল সমাজের গা থেকে নক্সাখচিত উজ্জ্বল চাদর।
অন্ধকারে বাস করে যাদের দু-চোখে ছিল স্বপ্নময় ভোর
তাদের চিরনিদ্রায় ফেলে রেখে ছুটে গেছে নির্বাচিত ঘোড়া
দাবার আড়াইচালে প্রতিবার লাফ দিয়ে; কিছু বিষফোঁড়া
গোদের ওপরে থাকে, তাদের জন্যেই তার পা ভারি, আদর।
মাঝে মাঝে বিড়ম্বনা, মাঝে মাঝে সংবাদ চেঁচিয়ে বলে চোর—
মানুষ সহজে সব ভুলে যায়, জলে ফিরে যায় জলঢোঁড়া।
পোশাক দিলে না, ভাত দিলে না, যৌনতা দিলে শুধু ভগবান
অক্ষর দিলে না, জমি দিলে না, পানীয় জলে দিলে আর্সেনিক।
গুহায় ছিলাম ভালো, গুহার ভেতরে ফের নিয়ে যাও তুমি
আবার ফিরিয়ে দাও বনমানুষের পাশে বন্য অবস্থান।
দাবার চৌষট্টি ঘরে আমাদের আলো নেই, আঁধার দৈনিক
কুড়ে কুড়ে খায় আর পা থেকে হারিয়ে যায় আরণ্যক ভূমি।
অক্ষর দর্পণ
যুবতীকে কাছে ডেকে তার হাতে দিয়েছি অক্ষর
কলম বোলাতে বসে যখন সে লিখে ফেলে নাম
জ্বল জ্বল করে চোখ, মনে মনে দর্পণে প্রণাম
করে—আজ থেকে তার নতুন জীবন, সে সাক্ষর।
স্থাবর সম্পত্তি ঢের আছে, তার চেয়ে অস্থাবর
এই সম্পদের স্বাদ পরম তৃপ্তির, ঢের দাম
টের পায় কল্যাণী মণ্ডল, তার বাড়ি বিষ্ণুগ্রাম
ঠিকানাটা বলে, ধীর ধীরে শিখে নেয় যুক্তাক্ষর।
নাম ও ঠিকানা লিখে সে আমকে দিয়েছে কাগজে।
বন্ধুত্ব দিয়েছে, পান আর গোটা তিন সিগারেট,
আমি যে কতটা সুখী সে কথা বোঝাব আজ কাকে
আদরের হাত রাখি তার মাথায়, সে চোখ বোজে।
আমার ফেরার বাস এসে যায় আমি তো পাপেট
দল নিয়ে ফিরে আসি, সারারাত চিঠি লিখি তাকে।
কুমারী মা
আমার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে এক কুমারী মা।
প্রথমে বুঝিনি, চোখে ছিল তার অভ্যর্থনা ফুল
মুখময় হাস্যজ্যোৎস্না, মাথায় গভীর কালো চুল
বুকে ভারি স্তন, তাকে স্পষ্ট করে তোলা গেঞ্জিজামা—
কিছুটা মেমসাহেব, অনাবৃত ত্বকবর্ণ তামা।
মাতৃভাষা বাংলা, শিক্ষা-দীক্ষা সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল
স্বচ্ছল অনুবাদক বিশ্বাস করে না কোনো ভুল—
পিতৃপরিচয় নেই তার সন্তানের, সে শুধু মা।
জিজ্ঞাসা করেছি আমি, ‘বিয়ে হয়েছিল?’ উত্তর, ‘না।’
‘কোনো যোগাযোগ আছে?’ – ‘কোনো প্রয়োজন নেই তার
জঠরে পেয়েছি যাকে, আলোয় ধরেছি তুলে আমি
পরিচয় দিয়েছি আমার, তাকে বলেছি, আমি মা
গাছ হয়ে বেঁচে আছি, তুই নে গাছের অধিকার—
জানে না গাছ কে বাবা, খোঁজে না গাছ কে তার স্বামী।’
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন