নিদাঘ
প্রায় গ্রেফতারের ভঙ্গিতে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে আসছে ছেলেটাকে। প্রায় ছ’সাতজনের দল। একটু পেছনে অমল, খোঁড়াচ্ছে। আরেকজন ডান হাতের পাতা দিয়ে নিজের কপাল চেপে ধরে আছে। সব ক’টার বয়স বারোর মধ্যে। কয়েকটি মুখ চেনা।
--কাকু! কাকু!
বারান্দায় বসেছিল তুষার। চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে উঠে বাগানের গেটের কাছে এগিয়ে এলো।
--কী হয়েছে অমল? পড়ে গেছিস্?
অমল চেপে রাখা রাগী কান্নাটা উগড়ে দিল বাবাকে দেখে,
--ঠেলে ফেলে দিয়েছে। এই যে এই ছেলেটা!
নুনছাল উঠে গিয়ে সামান্য রক্তও গড়াচ্ছে হাঁটু থেকে। অমলটা দেবযানীর আহ্লাদে এমনিতেই আতুপুতু।
--ঠিক আছে, খেলতে গেলে হয়। ডেটল্ লাগিয়ে নে... আর তোমরা ভেতরে এসো।
--না কাকু, অমলকে পৌঁছোতে এলাম। এবার বিট্টুকে পৌঁছোতে যাব। তারপর... দেখা যাক্!
বিজ্ঞগোছের একজন মাতব্বরি মুখ করে যাকে সবাই ধরে আছে, তার দিকে কটকট করে তাকালো। অমল এতক্ষণে সাহসী,
--ওকে দেখ বাবা... এই ডিউক! ডেঞ্জারাস্! বলে বড় হয়ে গজ্নী হবে!
বলেটা কী? চম্কে ওঠে তুষার। সিনেমাটা কিছুদিন আগেই টিভিতে দেখিয়েছে।
--দেখ কাকু, আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিয়েছে।
--ক্যারাটে শেখে। হাতগুলো কী শক্ত!
উত্তেজিত ফরিয়াদীরা। হাজারো নালিশের কল খুলে দিয়েছে। কবে কার পেটে লাথি মেরেছে, কার সাইকেলের হ্যান্ডেল তেব্ড়ে দিয়েছে, বল্ ফাটিয়ে দিয়েছে, জন্মদিনের গিফটে পাওয়া প্যাস্টেল রং ভেঙে দিয়েছে টুকরো করে। তুষার আসামীর দিকে তাকায়। বড় জোর বছর নয়। ধপধপে ফরসা। চুলগুলো খুব ছোট করে ছাঁটা। জেদী ঘাড় গোঁজা। সে অস্বস্তি কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে,
--ডিউক ওদের মেরেছ তুমি? কেন?
উদ্ধত মুখে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা।
--তুমি ডিউক না? কী করছ একা একা?
--পীইয়িং। হোয়াই?
রেল কলোনির সাজানো পার্কের বাইরের হেজ্-এ ঘুরে ঘুরে পেচ্ছাপ করছে ছেলেটা। প্যান্টের বাইরে উদ্যত পুরুষাঙ্গ।
--জিপারটা লাগাও।
--নো!
কথা শোনে না ছেলেটা। দেবযানী খুব ভালো মা। তুষার অমলের ব্যাপারে দায়িত্বমুক্ত হয়ে নিশ্চিন্ত। একটু ভাবে সে। বলে,
--অমলের বন্ধু তুমি? চলো, পার্কের ভেতরে বসি আমরা।
বেঞ্চের সিমেন্ট খুঁড়ে চলে ছেলেটা। কোথা থেকে একটা পেরেক বের করেছে। চোয়াল কঠিন।
--ডিউক দেখ, ওরা খেলছে। তুমিও যাও।
--নো!
এত জোর দিয়ে বলে, তুষার থমকে যায়।
--কেন?
--নো, আই ফিল্ লাইক...
--কী?
ঘুরপাক খেতে খেতে মুখ তুলে তাকায় ছেলেটা। ফুটফুটে। চোখদুটো একটু লাল। তুষার আস্তে করে ওর হাতটা ধরে বসায়। কেমন ছ্যাঁকছ্যাঁক করছে। জ্বর নাকি? হঠাৎ বলে ছেলেটা,
--তুমি... আই মীন ইউ... অমলস্ বাবা?
--ইয়েস। তোমার বাবা কে? আমি চিনি? কী নাম?
ডিউক সটান উঠে দাঁড়ায়। ভীষণভাবে অস্থির। সক্রিয়। মাটি থেকে একটা সরু গাছের ডাল তুলে নেয়। হাতে পায়ে চেপে ধরে ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে। হিস্হিস্ করে।
--ডেড্ ডেড্ ডেড্...
তুষার বীভৎস ভাবে চমকে ওঠে।
--স্কুটারে স্কিড্ করল ডিভাইডারে... হেলমেটের মধ্যে ভাঙা মাথা...! আই স... আই উইল কিল্... কিল্...!
ছোট্ট শরীরটা প্রতিবাদে কাঁপছে। তুষার নার্ভাস। কী বলবে ঠিক বুঝে পায় না।
--মাম্মা হ্যাজ্ আ নিউ হাজব্যান্ড... মিহির আঙ্কল... নিউ বেবী... রাজা...!
তুষারের হাত ছাড়িয়ে দিকশূন্য হয়ে ছুটছে ছেলেটা--
--আই নো... আমার পাপাকে মার্ডার করা হয়েছে...!
প্রায় গ্রেফতারের ভঙ্গিতে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে আসছে ছেলেটাকে। প্রায় ছ’সাতজনের দল। একটু পেছনে অমল, খোঁড়াচ্ছে। আরেকজন ডান হাতের পাতা দিয়ে নিজের কপাল চেপে ধরে আছে। সব ক’টার বয়স বারোর মধ্যে। কয়েকটি মুখ চেনা।
--কাকু! কাকু!
বারান্দায় বসেছিল তুষার। চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে উঠে বাগানের গেটের কাছে এগিয়ে এলো।
--কী হয়েছে অমল? পড়ে গেছিস্?
অমল চেপে রাখা রাগী কান্নাটা উগড়ে দিল বাবাকে দেখে,
--ঠেলে ফেলে দিয়েছে। এই যে এই ছেলেটা!
নুনছাল উঠে গিয়ে সামান্য রক্তও গড়াচ্ছে হাঁটু থেকে। অমলটা দেবযানীর আহ্লাদে এমনিতেই আতুপুতু।
--ঠিক আছে, খেলতে গেলে হয়। ডেটল্ লাগিয়ে নে... আর তোমরা ভেতরে এসো।
--না কাকু, অমলকে পৌঁছোতে এলাম। এবার বিট্টুকে পৌঁছোতে যাব। তারপর... দেখা যাক্!
বিজ্ঞগোছের একজন মাতব্বরি মুখ করে যাকে সবাই ধরে আছে, তার দিকে কটকট করে তাকালো। অমল এতক্ষণে সাহসী,
--ওকে দেখ বাবা... এই ডিউক! ডেঞ্জারাস্! বলে বড় হয়ে গজ্নী হবে!
বলেটা কী? চম্কে ওঠে তুষার। সিনেমাটা কিছুদিন আগেই টিভিতে দেখিয়েছে।
--দেখ কাকু, আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিয়েছে।
--ক্যারাটে শেখে। হাতগুলো কী শক্ত!
উত্তেজিত ফরিয়াদীরা। হাজারো নালিশের কল খুলে দিয়েছে। কবে কার পেটে লাথি মেরেছে, কার সাইকেলের হ্যান্ডেল তেব্ড়ে দিয়েছে, বল্ ফাটিয়ে দিয়েছে, জন্মদিনের গিফটে পাওয়া প্যাস্টেল রং ভেঙে দিয়েছে টুকরো করে। তুষার আসামীর দিকে তাকায়। বড় জোর বছর নয়। ধপধপে ফরসা। চুলগুলো খুব ছোট করে ছাঁটা। জেদী ঘাড় গোঁজা। সে অস্বস্তি কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে,
--ডিউক ওদের মেরেছ তুমি? কেন?
উদ্ধত মুখে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা।
--তুমি ডিউক না? কী করছ একা একা?
--পীইয়িং। হোয়াই?
রেল কলোনির সাজানো পার্কের বাইরের হেজ্-এ ঘুরে ঘুরে পেচ্ছাপ করছে ছেলেটা। প্যান্টের বাইরে উদ্যত পুরুষাঙ্গ।
--জিপারটা লাগাও।
--নো!
কথা শোনে না ছেলেটা। দেবযানী খুব ভালো মা। তুষার অমলের ব্যাপারে দায়িত্বমুক্ত হয়ে নিশ্চিন্ত। একটু ভাবে সে। বলে,
--অমলের বন্ধু তুমি? চলো, পার্কের ভেতরে বসি আমরা।
বেঞ্চের সিমেন্ট খুঁড়ে চলে ছেলেটা। কোথা থেকে একটা পেরেক বের করেছে। চোয়াল কঠিন।
--ডিউক দেখ, ওরা খেলছে। তুমিও যাও।
--নো!
এত জোর দিয়ে বলে, তুষার থমকে যায়।
--কেন?
--নো, আই ফিল্ লাইক...
--কী?
ঘুরপাক খেতে খেতে মুখ তুলে তাকায় ছেলেটা। ফুটফুটে। চোখদুটো একটু লাল। তুষার আস্তে করে ওর হাতটা ধরে বসায়। কেমন ছ্যাঁকছ্যাঁক করছে। জ্বর নাকি? হঠাৎ বলে ছেলেটা,
--তুমি... আই মীন ইউ... অমলস্ বাবা?
--ইয়েস। তোমার বাবা কে? আমি চিনি? কী নাম?
ডিউক সটান উঠে দাঁড়ায়। ভীষণভাবে অস্থির। সক্রিয়। মাটি থেকে একটা সরু গাছের ডাল তুলে নেয়। হাতে পায়ে চেপে ধরে ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে। হিস্হিস্ করে।
--ডেড্ ডেড্ ডেড্...
তুষার বীভৎস ভাবে চমকে ওঠে।
--স্কুটারে স্কিড্ করল ডিভাইডারে... হেলমেটের মধ্যে ভাঙা মাথা...! আই স... আই উইল কিল্... কিল্...!
ছোট্ট শরীরটা প্রতিবাদে কাঁপছে। তুষার নার্ভাস। কী বলবে ঠিক বুঝে পায় না।
--মাম্মা হ্যাজ্ আ নিউ হাজব্যান্ড... মিহির আঙ্কল... নিউ বেবী... রাজা...!
তুষারের হাত ছাড়িয়ে দিকশূন্য হয়ে ছুটছে ছেলেটা--
--আই নো... আমার পাপাকে মার্ডার করা হয়েছে...!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন