কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

০৯) দেবযানী বসু

মাশরুম



‘থাকিলে ডোবাখানা...’! ডোবাখানা... চুরিকচুরিপানা... হ্যাঁ, এভাবেই গানটাকে নিয়ে খেলছিল বাইশের জোয়ান ছেলেটি। ভোরেরও আগের ভোরে জলদাপাড়া অফবিট সময়। এখনো সমস্ত বৃক্ষ ঔংএর লজ্জাবস্ত্র মাথায় দাঁড়িয়ে। সেন্ট জেভিয়ারের পৌলমন বিশ্বাস আর উত্তর বণিক একসঙ্গে এসেছে একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে। দুজনেই প্রকৃতিকে একটু কাছে থেকে দেখার জন্য হাতি কিম্বা জিপ ছাড়াই জঙ্গলের দিকে রওনা দিল।

কুচো চোখের এক মালসা কিন্নরী কন্যা, বাংলোর মালিকের মেয়্‌ ছুটিতে এসেচে। ওর গায়ে গা লাগিয়ে ফিরছে ওর গরিব প্রতিবেশী ফাই ফরমাস খাটা মেয়েটি ইতুমনি। পাঞ্চালি আর ইতুমনি কাল রাতে বাংলোর মশাদৃত উঠোনে বাইকের সুজনমাঝি স্পেসে গল্প ভালোই জমিয়ে তুলেছিল। মেয়েদুটি ওদের সঙ্গে একটু রোমাঞ্চকর অভিযানে যাবার ইচ্ছেতে মশগুল। কিন্তু সেটা অসম্ভব এই ভোররাতের দিকে তাকিয়ে বুঝে নিল পৌলমন।

পেট্রোল পাম্পের চত্বরে পর্যটন বিভাগের নানান গাড়ি আবছা অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েছে। জলদাপাড়ার এখন অফ সিজন। গণ্ডারকে যতটা দূর থেকে দেখলে স্পটেড ডিয়ার বলে মনে হবে, ততটাই দূর থেকে দেখিয়ে আনাবার ও দেখবার প্রলোভনে একদল মানুষ হৈ হৈ করে বেরিয়ে পড়েছে। আর আধঘণ্টা পরেই পাখিদের ঘুম ভাঙবে।

মাটির বাড়ি, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুগত হাঁস, কাঁচা নর্দমা, অসংখ্য নাম না জানা ফুলের ঝোপ পেরিয়ে আর আকাশলীনা গাছদের পাশে রেখে ওদের প্রায় চার কিমি হাঁটা হয়ে গেল।

‘চল মিনি আসাম যাব’ গানটা মনে মনে গান করছিল পৌলমন। আর ভাবছিল, কেমন করে কামাখ্যা মন্দিরের একটা বাঁদর ওর হাতের প্রসাদের প্যাকেট ছোঁ মেরে একটু তফাতে বসে খেয়ে নিল। খানিকটা ছড়ালো। আঠা গলে যাওয়া প্রেমের অথবা আইসক্রিম গলা কাঠিটির দিকে যে ভাবে তাকায় মানুষ, সেভাবেই কলকাতার আবৃতার মুখ মনে পড়ল পৌলমনের। হঠাৎ শাঁসালো সাপের মতো গুঁড়িতে চোখ আটকালো ওর। একটা বেশ চার ইঞ্চি ব্যাসের টাটকা সাদা মাশরুম! ওয়াও! পৌলমন লাফিয়ে উঠল। কিছু না ভেবেই ঝট করে গাছের সঙ্গে আলগা করে দিল ওর সংযোগ। ওজন একশ গ্রাম তো হবেই!

এবার বাংলোয় ফেরার তাড়া। ওদের দৌড়ের মধ্যেই ভোর সকাল হয়ে এসেছে। জুতো ভিজে গেছে ঘাসের কাদার আদরে। মেনরোডে হুশহাশ গাড়ি আসছে যাচ্ছে। ওরা সমানে হাত নাড়তে লাগলো গাড়ি থামাবার জন্য। হঠাৎ একটা জিপ থামল আর সেই জিপে করে ওরা বাংলোর স্টপেজে এসে নামল। ততক্ষণে হাতি চড়া পর্যটকদের দল ফিরে এসেছে। ফিরতে হবে গৌহাটি। অতএব খাওয়া দাওয়া গোছগাছ। বাস রেডি।

দশ বছরের ইতুমনি মলিন পোশাকে দাঁড়িয়ে দেখছে এই বাসের চলে যাবার প্রস্তুতি। পৌলমন সিটে জমিয়ে বসল। হাতে ধরা মাশরুমটি। একটু অফ হোয়াইট হয়ে গেছে। এটা নষ্ট করে লাভ নেই। সে ইতুকে ডেকে ওর হাতে মাশরুমটি দিল। মেয়েটির মুখে উজ্জ্বল হাসি আইফেল টাওয়ারের। চিরকালের।

1 কমেন্টস্: