কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০১৪

০৬) অলোকপর্ণা

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ


চায়ের কাপগুলোর গায়ে হাত বোলালে টিঙ্কার ঘুম পেয়ে যাওয়ার মতো আরাম বোধ হয়। যেন নিজের গায়ে আদর হাত রাখল, - কাপগুলোকে ছুঁয়ে টিঙ্কার হাত স্নেহে অবশ হয়ে আসে। অশোক ডাকে না আচ্ছন্ন টিঙ্কাকে। টিঙ্কা শো-কেস থেকে শো- কেসে ঘুরে ঘুরে কাপগুলোকে ঘুম পাড়ায়, রোজকার লাইফস্টাইল শোরুমের টুংটাং শেষে তারা ঘুমিয়ে গেলে টিঙ্কা সিঁড়ির নিচে এসে চাদর পাতে, এক কাপ চায়ের মতো গুদামে শুয়ে যত্ন করে মুছে মুছে নিজের চোখেও ঘুম নামানোর চেষ্টা করে।

টিঙ্কার ঘুম আসে না। কান পেতে সে ওপরের শো-কেস থেকে কাপগুলোর নিঃশ্বাস আর দেয়ালা শোনে সারারাত। কাপগুলোর থেকে দূরে থাকলে নিজেকে নোংরা লাগে টিঙ্কার, গা থেকে কেমন যেন বোটকা গন্ধ বের হয়। তাই সকালে উঠেই স্নান সেরে ‘সারুক্ষান’ - চুল আঁচড়ে দুদ্দার সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠে আসে টিঙ্কা। কাপগুলো যেন তার অপেক্ষাতেই ছিল, টিঙ্কার হাতে পড়তেই তাদের ঘুম ভেঙে শোরুমে টুংটাং উইন্ড চাইম শব্দ ছেয়ে যায়। চায়ের সুন্দর গন্ধ লেগে টিঙ্কার চোখ বুজে বুজে আসে।

নতুন মাল ডেলিভারি হয়েছে গতকাল। অশোকের কথা মতো টিঙ্কা বাক্সগুলো নামাতে থাকে বাংক থেকে। হঠাৎই টিভির দিকে চোখ পড়ে তার, ‘সারুক্ষান’-এর বাড়ি দেখাচ্ছে সেখানে। সেই বাড়ির ঘর, মেঝে, বাথরুম, টেবিল, চেয়ার আর কাপও দেখাচ্ছে। টিঙ্কা অবাক চোখে দেখে, - শাহ্‌ রুখ খান চুমু খাওয়ার ভঙ্গিতে টেবিল থেকে কাপ তুলে মুখে ঠেকাচ্ছেন, আর অমৃতের মতো চা ঢেলে দিচ্ছে কাপটা তাঁর ঠোঁটে। টিঙ্কা একবার আড়চোখে শো-কেসের কাপগুলোকে দেখে। নাঃ, ওই কাপের কাছে এরা কিছুই নয়। হিংসা হয় টিঙ্কার, - শাহ্‌ রুখ খানের প্রতি অতটা নয় যতটা তাঁর কাপের প্রতি। শোরুমের কাপগুলোর ওপর অধিকারবোধ কাঁধে জাঁকিয়ে নিয়ে টিঙ্কা বাংক থেকে নামতে গিয়ে একটা ধাপ ফসকায়। সাথে সাথে হাতের বাক্সটা নিচে আছড়ে পড়ে সমস্ত শোরুম নিস্তব্ধ হয়ে যায়। টিঙ্কার চোখে অন্ধকার নেমে আসে।

শোরুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে টিঙ্কা সিঁড়ির নিচের গুদামের দিকে তাকায়। চারদিকে প্যাকিং বাক্স ছিটিয়ে আছে। তাদের গায়ে লাল কালিতে লেখা ফ্র্যাজাইল, - টিঙ্কার হাসি পায়। ইস্তফা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে টিঙ্কা নিজের হাতের দিকে তাকায়। নতুন বোন চায়নার কাপের বাক্স ফেলে দেওয়ার পর সমস্ত হাতের পাতা জুড়ে যেন চির ধরেছে... হাতের ভাঁজগুলো মন দিয়ে দেখে টিঙ্কা। করুণা হয় তার।

করুণা হয় এই ভেবে, - যদি শাহ্‌ রুখ খান জানতেন ‘ফ্র্যাজাইল’ শব্দটার মানে!
হাসতে হাসতে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয় টিঙ্কা। তার নাক দিয়ে চায়ের সুগন্ধ ঢুকে আসতে থাকে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন