কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

০৪) অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়

ছাতা


একদল ছাতা আজ রাস্তায়। এরকম দৃশ্যের সাথে শহরের জুন মাস খুব পরিচিত। কিন্তু আজ কোনো মানুষ নেই। কোনো মোমবাতি নেই।

আমাদের ছাতা দুটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিকেল থেকে। একটি যুবকছাতা। আরেকটি সেই আদিম দাদুর ছাতা। দাদু বলতেন - “ছাতার হৃদয় আছে। আন্তরিকতা আছে। তাই সে চাইলেই অনেক মানুষকে ঠাঁই দিতে পারে অই সামান্য এরিয়ায়।” আমরা ভাবি, ছাতা পোষ মানে। মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে, আমাদের ইচ্ছেমতো। কিন্তু ভুলে যাই - ক্রীতদাসেরাই একদিন বিপ্লব আনে।

ছাতা আড়াল করে রোদ-বৃষ্টি-আকাশ। তৈরি করে একটি ব্যক্তিগত ছাদ। মানুষ-ছাতা-পথ এই বদ্বীপের সৃষ্টি হয়। অথচ ছাতা হারালে কান্না পায় না। ভেসে ওঠে নতুন ছাতার চিত্রকল্প। সেও একইভাবে শিখে নেয় মানুষ-আগলানো। আগলে রাখার কোনো রবিবার নেই। তাই ওরা অপেক্ষা করে শীতকালের। ওরা ভুলে যেতে চায় শ্রাবণ।



ছাতারও ব্যর্থতা থাকে। ছাতা হাতেও ভিজতে হয় আপাদমস্তক। ছেলেটি মেয়েটিকে ডেকে সাড়া না পেলে, মেঘ কালো হয়। ছাতা উপুড় হয়ে নৌকা হয়ে যায় তখন। ভাসতে থাকে মানুষ বৃষ্টিতে। কান্না মোছাতে পারে না। শুধু জলের দাগে এঁকে দেয় বাড়ি ফেরার ম্যাপ। দরজা পেরোলেই জীবনফেরৎ ছেলেটি ভুলে যায় ছাতাকে। জ্বর আসে রাতে। এইভাবেই একদিন কাশির সিরাপের বদলে বিক্রি হয়ে যায় জুলাই মাসের বিকেল এবং আধভেজা ছাতাটি।

ছাতা ফুটো হলে খোঁজ পড়ে হারুর। হারু ছাতা সারিয়ে বাঁচিয়ে রাখে আরও দুটো আইবুড়ো ছুঁচকে। তাই কে সি পালের মতো সেও ছাতার অসুখ কামনা করে। হারুদের নিজস্ব ছাতা থাকে না। আর এই না-থাকা জড়ো হয়ে জন্ম দেয় - একটা বিশাল ছাতা। যার নিচে ফুর্তি হয় নিউ ইয়ারে। মদ উড়ে গিয়ে লাগে তার গায়ে। নেশা হয়।

ছাতা বিপ্লব ভুলে যায়। কাক হয়ে উড়তে থাকে ট্রামলাইনের উপর দিয়ে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন