কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

০২) সাঁঝবাতি

ধক্‌
সাঁঝবাতি



(১)

তুলো দিয়ে লুকিয়ে রাখতাম। সাইজটা ম্যাটার করতো। মনটা নয়। ছেলেদের প্রথমেই বুকের দিকে চোখ চলে যেত। ফলে মুখের সাথে পাছার কোনো তফাত থাকতো না; থাকা আর না থাকা! মাঝে মাঝে চান করতে গিয়ে তেল দিয়ে ঘষতাম। ওরে, বড়ো হ! বড়ো না হলে প্রেম করে সুখ নেই। নিজেকে মেয়ে লাগত না। আমার থেকে ভোলা ময়রারও বেশি ‘ঝোলা’। মহিনের সাথে প্রেম হলো। প্রেম ঠিক না, ওই সবাই বলল মহিনই নাকি একমাত্র ছেলে যে আমায় সাচ্চা দিলসে কেয়ার করে। আবার বুক! পেয়ার করে না; পেয়ার? আমারও তো ইচ্ছে হয় কেউ আমায় ভালোবাসুক।

এক্সটা প্যাডেড ব্রা আমার যৌবন।

মহিন আমায় ভালোবাসবে বলেছিল। ভালোবাসতে গেলে একা ঘরে ডাকতে হয়। আমি গেছিলাম। ঠান্ডা ঠান্ডা ঘরে নরম মেয়ের মতো ঠোঁট গোল করে এগিয়ে আসি। মহিন চুমু খেতে গিয়ে জামা ছিঁড়ে দেয়। হাতড়ায়। চোখ বুজে থাকি আমি, ধরণী তুমি দ্বিধা হও! সাক হার্ড! ওয়াক! তুমি ছেলে নাকি! একটা হালকা উঁচু মাংসপিণ্ড। ইহ! বমি উঠে আসে আমার। প্রেমের নামে বমি উঠে আসে। ঠেলে ফেলে দিই মহিনকে। পালাচ্ছি, সিঁড়ি ভেঙে ধপধপিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছি। নিচে সরস্বতী পুজো হচ্ছে -- ‘জয় জয় দেবী চরাচরসারে/ কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে...’ মুখ বুক গুলিয়ে যায় আমার। গা হাত পা গুলিয়ে যায়। গ্রামের মেয়ে আমি। ফেমিনিজ্‌ম, রেবেল বুঝি না। উনুনে ঢুকিয়ে দিই আমার বত্রিশ সাইজ...



(২)

এখন ন্যাকড়া জড়িয়ে রাখি। যদিও জড়ানোর মতো কোনো উচ্চতাই নেই। প্লেন লাগাটাই দরকার আমার। খোলস দিয়ে ঢেকে রাখি। বয়েস্‌ শার্ট প্যান্ট। মেয়েরা দূর থেকে কেমন কেমন দ্যাখে, মেশে না। ছেলেরা বলে হিজড়ে মাগী। আমি এখন ‘লড়কা-লড়কি’। এই ভাবেই কলিগরা ডাকে। ছোট করে ছাঁটা চুলের পাশ দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া কাটে। সুখ বলতে এইটুকুই আরাম। ঘাড়ে এইটুকুই আহ্‌! তবে মায়া বলে মেয়েটা নতুন আসার পর থেকেই গন্ডগোল করছে। কাজ করতে করতে মায়ার দিকে চোখ চলে যায়। হাঁ করে মুখের দিকে চেয়ে বসে থাকে। লজ্জায় লাল হতে হতে সামলে নিই। রুমাল দিয়ে মুছে নিই মুখের এমব্যারাসমেন্ট। কে যেন ব্যাগের কাছে গোলাপ রেখে যায়! কী ন্যাকামি এসব? কিন্তু গোলাপ তো, মেয়েলি লাগে নিজেকে একবারের জন্যে, চোখে আলো আসতেই মুঠো শক্ত করে ফেলি। মায়া ক্যান্টিনে এসে বলে যায়, ‘তোর ঠোঁটটা কেন গোলাপের মতো লাল?’ আচ্ছাসে শুনিয়ে দিই। মাথা নিচু করা অভিমান দেখে কষ্ট হয় বুকের ভেতর। আবার বুক! গ্লেসিয়ার গলে যায়, গ্লেসিয়ার...

মায়া আমার রুমে শিফট্‌ করে। এরপর রাতে মাথা পিছলে গেলে মাথা বুকে তুলে নেয় মায়া। চোখে জল চলে আসে। মায়া, মায়া, মা মা......য়ায়ায়ায়য়ায়ায়া...... আআআআআআ...... স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিত গোঙানো কান্না ঘরময় ঘুরতে থাকে। ধুলোজমা শার্টের উঠোনে বহুকাল পরে কারোর হাত পড়ে। চোখ বুজে থাকি আমি, ধরণী তুমি দ্বিধা হও। এরপর আবার চোদ্দো বছর বনবাসে যাবো। প্রস্তুত করি নিজেকে। গোল ঠোঁট নেমে আসে ঠোঁটের ওপর। বুকের ওপর। ‘কি সুন্দর তুই! কী আলো তোর মুখে!’ কাঁদতে কাঁদতে কুঁকড়ে গোল হয়ে যাই। আমার মুখ সুন্দর?! মুখ বুক গুলিয়ে যায় আমার। গা হাত পা গুলিয়ে যায়। আমার ওপর থেকে পুরুষের চামড়া খসে যাচ্ছে। কালোমেঘ পাছা ছাড়িয়ে হয়ে উঠছে র‍্যাপুনজেল। শুকনো চোখ কোহলে জ্বলছে, টসটসে হয়ে উঠছে গোলাপি লাল ঠোঁট। ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে আসছি প্রীটি উওম্যান। জন্ম হচ্ছে আমার। এতদিন পর! নারী হওয়া? প্রেমিকা হওয়া? বউ হওয়া? মা হওয়া? সমস্ত একই সাথে ধক্‌ধক্‌ করে। মায়া বুকে মুখ ঘষে, ‘তোকে ভালোবাসি, কেন বুঝিস না তুই...’! আমার বুক থেকে দু এক ফোঁটা দুধ গড়াতে থাকে। বুক ভিজে যায়। মায়ার চোখের জল? আমার বুকের দুধ? কে জানে কিসে?... বুঝতে পারি না।...








1 কমেন্টস্: