কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

০৩) রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

একটা ছক করা জন্ম বিষয়ক গল্প...
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়



গুল্লি বিশেষ কোনো একটা কারণে মনোনিবেশ করেছে। শীতের সকালগুলোতে একটাই মাথা থেকে পায়ের পাতা ঢাকা পর্যন্ত আঁটসাঁট পরে, দুলকি চালে, দু’হাতে একটা কিছু সন্তর্পণে ধরে এঘর থেকে ওঘর হেঁটে চলে যায়। পাপা পাশ ফিরলে দেখতে পায়।

--গুল্লি

--ইয়েস পাপা...

--তোমার হাতে কী

-- নো পাপা, কিছু না...

পাপার আর সন্দেহ ভঞ্জন হয় না। তাই সেদিন অফিস থেকে ফেরার তাড়াতাড়ি তোড়জোড় করতেই মাথুর বলল, কি, দালাল স্ট্রিট?

পাপা মাথা ঘামালো না, তার মাথাটাকে এখন শান্ত আর কিছুটা ছেলেমানুষি ফিকির খুঁজতে ব্যস্ত করতে হবে।

পাপা ঘরে ফিরল। ঘরের প্রথম আলোটা তখন গুল্লির দাদাই-র ছবির ওপর জ্বলে। সেদিন, বহুদিন পর, ছবিটার দিকে পাপার চোখ গেল। কিন্তু বসল না।

গুল্লির হাতে ওটা কী থাকে?

গুল্লির মম তখনও ফেরেনি। অপ্রাসঙ্গিক অথচ অসতর্ক নয়, তেমন কিছু প্রশ্নবাণ থেকে নিশ্চিত গুল্লির পাপা গুল্লির ঘরে ঢুকে, কাঁধটাকে একটু হেলিয়ে, হাত দুটো পকেটস্থ করে দৃষ্টি ফেলতে লাগল ঘরের আনাচে কানাচে।

গুল্লির পাপা, হঠাৎ যেমন আবিষ্কার করে বসে, তেমনই বসল সেই পার্চমেন্ট কাগজটা, গুল্লির মমের প্রেগাটেস্টের দিন থেকে গুল্লির পাপা দিনের পর দিন বিভিন্ন কালি দিয়ে দাগ কেটেছিল। সেটাই আপাতত সেখানে, গুল্লির পড়ার টেবিলে, একটা চোঙাকৃতি দাঁড়িয়ে আছে।

গুল্লির পাপা সেটা তুলতেই ভেতর থেকে একটা কাচের সরু বোতল পড়ে গড়িয়ে গেল। মুখ খুব ভালো করে আটকানো ছিল না। ঢাকনাটা খুলে গড়িয়ে যেতেই বোতল থেকে যারা বেরিয়ে এলো, তারা বেশ কয়েকটা মৃত ও সুন্দরী।

উত্তরের বারান্দাটা বন্ধ করে দেওয়ার আগে ডিম একটা আলো জ্বেলে রাখা হয়। তারা উড়ে আসে। বসে। তারপর পারদ নামতে থাকলে, ওদের শরীরের পারদও নেমে যায়। পরদিন সকালে গুল্লি তাদের শিকার করে আর ভরে ভরে রাখে সেই কাচের বোতলে।

বোতলটা মোড়া থাকে বহু রঙিন, জন্মের প্রত্যাশা জাগানো, দাগানো পার্চমেন্ট কাগজে।

গুল্লির পাপা তারপর, যেখানে যেমনটা ছিল, শুধু সুন্দরীদের বাদ দিয়ে, তেমনটাই রেখে, এক প্রকার নিজেরই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নিজেকে বার করে দেয়, ছুটে একটা ট্যাক্সি নেয়, আর বাইপাসের ওপর সবচেয়ে কাছের বারটায় গিয়ে হাঁপ ফেলে।

Fly, fly high the most colourful flight of moths... গুল্লির মা একটা মৃদু ধাক্কা দেয়, একী রে বাবা, যত রাত বাড়ছে, তত ঘুমের মধ্যে কথা...

গুল্লির পাপা তখন আরো দ্রুত স্বপ্নকুণ্ডীর মধ্যে তলাচ্ছে আর সেইসব বিদুষীরা অধোগমনের প্রতিদানে তার গালে এঁকে দিচ্ছে অনুজ্জ্বল আর গাঢ়, পুরু আর আহত জন্মদাগ।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন