কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

০১ সমীর রায়চৌধুরী

বাদামতলার ভুবন
সমীর রায়চৌধুরী


...কেউ কেউ বলেন, এ জি বেঙ্গলের ভুবন। আবার কেউ কেউ বলেন, নন্দীগ্রামের ভুবন। শেষপর্যন্ত বাদামতলায় তিনি যে জমিটা কিনেছিলেন, তার একদিক দিয়ে হাই-টেনশন বিদ্যুতের তার চলে গিয়েছিল বলে, ওই জমিটা কেউ কিনছিল না। শেষে ভুবনই কিনলেন।

ভুবন গল্প বলেন। গান শোনেন। কবিতা আওড়ান। সারক্ষণ মুখে মুখে কবিতা তৈরি করেন। তাঁর দুই মেয়ে হবার পর দেখা গেল, কিছুতেই আর ছেলেপুলে হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এক বড় গাইনিকের শরণাপন্ন হলেন। অনেক পরীক্ষার পর ধরা পড়ল, ভুবনের স্পার্মে ক্যানসার হয়েছে। ডানদিক ও বাঁদিকের দুটো আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করে দেখা গেল, বাঁদিকের বিচিতেই তার এই রোগ হয়েছে।

ভুবন এখানে এসে থামেন। কেননা, গাইনিক তাঁকে বলেছিলেন, বিচির একটা ভালো বাংলা প্রতিশব্দ আছে –- ‘বৃষণ’। সেই থেকে ভুবনও তাঁর গল্পে বৃষণ শব্দটি ব্যবহার করতেন।

ভুবনের ফার্স্ট স্টেজ আর বড় চাকরি, গাইনিকরা তাঁকে পাঠিয়ে দিলেন টাটা ক্যানসার ইনস্টিটিউটে, পরবর্তী চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য। ট্রেনে সারা রাস্তা গান গাইতে গাইতে গেলেন ভুবন। যেন কিছুই হয়নি। তারপর হাসপাতালে পৌঁছে দেখলেন, তাঁর ডাক্তার একজন পুরুষ, কিন্তু ডাক্তারের সঙ্গে রয়েছেন প্রচুর সুন্দরী নার্স। তাঁরা অধিকাংশই মহারাষ্ট্র ও কেরলের মেয়ে। তবে একজন বাঙালিও ছিলেন। তিনি ভুবনের গানগুলো অনুবাদ করে অন্যদের বলে দিতেন।

ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, আপনাকে একটা বৃষণের মোহ ছাড়তে হবে ভুবনবাবু। ভুবন বললেন, আপনারা যা ভালো বুঝবেন, তাই করবেন। অপারেশন থিয়েটারেও গান গাইতে গাইতেই অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।

ঘুম যখন ভাঙল, যিনি প্রধান নার্স, তিনি বললেন, আপনার অপারেশন সাকসেসফুল, চিন্তা করবেন না! বিভিন্ন বিভাগ থেকে অন্যান্য ডাক্তাররা এসেও ভুবনকে দেখে নিজের নিজের মন্তব্য মেডিক্যাল চার্টে লিখে রাখলেন। যিনি গাছ গাছড়ার স্টেরয়েড নিয়ে কাজ করছেন, তিনি এসে বললেন, আপনি ফিরে গিয়ে নিয়মিত কাঁচা হলুদ আর আখের গুড় খাবেন। ঠিক কতটা খেতে হবে, তিনি তাঁর প্রেসক্রিপসনে লিখে দিলেন। আর যিনি প্রধান গাইনিক, তিনিও তাঁর ওষুধ লিখে দিলেন।

দশদিন পর ভুবন ছাড়া পেলেন হাসপাতাল থেকে। ইতিমধ্যে ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভুবন মনে মনে তাঁর মনের মতো একটি কবিতাও সৃষ্টি করে ফেলেছেন। কবিতার শেষ দুটি লাইন –- “একটি আমার নিঃস্ব / আরেকটিতে সারা বিশ্ব”।

ভুবনের চিকিৎসার যে ফলাফল, অর্থাৎ দুটি বৃষণের মধ্যে একটির বাদ যাওয়া এবং একটির থেকে যাওয়া, যেন মহাজগৎকথার সঙ্গে ভুবনের অস্তিত্বের মিলেমিশে যাওয়া!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন