কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

০৭ নবেন্দু বিকাশ রায়

অনিমেষের ব্লগ
নবেন্দু বিকাশ রায়

চিত্রার্পিত চাহিয়া রহিল অনিমেষ। এক প্রকারের স্রোত তাহার সুষুম্নাকান্ডের ভিতর দিয়া বহিয়া গিয়াছিল কি? ‘কিকি’ এই নাম তাহাকে অস্বস্তিতে ফেলিয়াছে অথবা নামের সহিত অনুভূমিক ওই মিনিমালিস্ট তীর সে ঠিক ঠাওর করিতে পারিতেছে না। অপিচ তাহার সকরুণ ত্রাস এমনই যে অনিমেষ ভাবিতে বসে, অফিসের কেহ এই কান্ড ঘটায় নাই তো? যদিও তাহার ব্লগের সম্বাদ অনিমেষ সঙ্গত কারণে কাহাকেও জানায় নাই তথাপি বিস্ময়কে সে কিছুতেই বাগ মানাইতে পারিতেছে না...

ঠিক কোন ঐশী নির্দেশে মাস দু’য়েক পূর্বে সে লিখিতে শুরু করিয়াছিল তাহা অস্পষ্ট কিন্তু তাহার কাহিনীর একা সেই ছিল লেখক পাঠক ও সমালোচক। পাঠক এইক্ষেত্রে উপভোক্তাও বটে। যদিও প্রচলিত যে পর্ণোগ্রাফি এক হাত দিয়া পড়িতে হয়, তথাপি সে এই মিথ তাচ্ছিল্য করিয়াছে, তাহার লক্ষ্য ছিল মেধাবী একপ্রকারের ক্ষরণ। স্বভূম হইতে বহুদূর শহরে চাকরী করিতে করিতে তার জীবনের সবথেকে যৌন সম্ভাবনাময় বৎসরগুলি চলিয়া যাইতেছে, প্রিয় বান্ধবীরাও ন’মাসে ছ’মাসে হয়তো একবার এই চত্বরে আসিবার সুযোগ পায়, এই প্রেক্ষাপটে সে যদি বাসায় ফিরিয়া ল্যাপটপে দু’চারিটি উত্তেজক গল্প লিখিয়া আত্মমৈথুন করিয়া সুখী হয় তাহাতে কাহারই বা কি বলিবার থাকিতে পারে? কালক্রমে সেই অভ্যাস যদি ব্লগে আত্মপ্রকাশ করিয়াও ফ্যালে তাহা হইলেও অনিমেষকে দোষ দেয়া অনুচিত।

অনিমেষ তাহার ব্লগের নাম রাখিয়াছিল, ‘মৌনজীবন’। নিজের মনে মনেই হাসিয়াছিল।

অনিমেষের স্টাইল ছিলো তাহার নিজস্ব। লেখা শুরু করিবার কিছুদিন পরপরই সে হাতেনাতে ফীল করিতে পারে যে প্রতিটি যৌনতার গল্প একই রকম। সেই শুরুর দিকে শৃঙ্গার, তারপর কথোপকথন, এক রাউন্ড পি.ও.ভি-র উত্তর মিনিট চারেক অ্যানাল... অনিমেষ কিছুদিনের মধ্যেই বোর হইতে শুরু করিল। সে কাগজে লিখিত না, কম্পিউটারে টাইপ করিত, ফলত পছন্দ না হইলে বিভিন্ন অংশ বদলাইবার সুযোগ ছিল তাহার। এই পর্যায়ে সে উপলদ্ধি করিয়াছিল ক্রিয়েটিভিটি আসলে কল্পনা ও ট্রায়াল-এন্ড-এরর এর অভূতপূর্ব দড়ি-টানাটানি। সে একদিন একখানি ধর্ষণের গল্প লিখিয়া ফ্যালে এবং লক্ষ্য করে অন্তিম লাইনে একটি নিসাড়, শীতল দেহের উল্লেখ কিভাবে লেখাটিকে টিটকিরি মারিতে থাকে। গল্পটি তার ব্লগে আপলোড করিয়া অনিমেষ যারপরনাই আনন্দিত হয়, ডায়াগোনালি ২০ ইঞ্চি পর্দার দিকে তাকাইয়া থাকে এবং ভাবে সে যেন এক আশ্চর্য দ্বীপ আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছে। এইভাবেই দিনে দিনে তাহার ব্লগ ডাগর হইয়া উঠিতেছিল। অনিমেষ বস্তুতপক্ষে একটি উপন্যাস লিখিবার কার্যেও হাত ঠেকাইয়াছিল। তবে অনুপ্রেরণার অভাবে বেশিদূর অগ্রসর হইতে পারে নাই। ছোট, শাণিত, যৌন বর্ণনাময় আখ্যানই ছিল তাহার চা-এর পেয়ালা।

...রবিবারের সকালে সে যখন ব্লগখানি খুলিয়া দেখিল ‘কিকি’ নামক তাহার প্রথম পাঠক শীর্ষোক্ত মন্তব্যটি করিয়াছে অনিমেষ ঠিক বিশ্বাস করিতে পারিল না। একই লাইনে তিনবার বিস্ময়চিহ্ন! বিস্ময়ের এ কী অপচয়! পিচুটি চোখে লইয়া অনিমেষ দেখিতেছে, তাহার গল্পের প্রথম প্রতিক্রিয়া, তাহার ব্লগের মেইডেন ফীডব্যাক। অথচ কিছুতেই যেন তাহার ত্রাস ও বিস্ময় কাটিতেছে না। একখানি ব্যক্তিগত দ্বীপ ছিল তাহার। জাহাজ অবতরণ করিতে পারিবে এমন বন্দরও বানাইয়াছিল সে সেই দ্বীপে, অথচ যখন প্রথম জাহাজটি ভোঁ করিয়া জেটিঘাটে আসিয়া দাঁড়াইল সে নাবিকগণকে চিনিতে পারিতেছে না। অনিমেষ ‘কিকি’র মন্তব্য মুছিয়া ফেলিবে এমনই ভাবিয়াছিল। কি দরকার তাহার পাবলিসিটি লইয়া? সে তো বেশ নিজের মতো করেই আছে। অনেকগুলো ফেক আইডি বানাইয়া নিজের ‘মৌনজীবনে’র গল্পে নিজেই মন্তব্য করিত অনিমেষ। ইহাতে হয়তো তাহার লেখক সত্ত্বা আরাম পাইতো কিম্বা কেবল ব্লগটিকে সাজাইয়া তুলিবার চেষ্টা ছিল তাহার। অনিমেষ নজর রাখিত যাতে মন্তব্যগুলি সজীব ও বুদ্ধিমান হয়, দিনের শেষে নিজের সাজান গোছানো ব্লগ দেখিয়াই তাহার যেন রেতঃস্খলন হইয়া যাইত প্রায়। তবে অনিমেষ জানিত তাহার এই আনোখা প্রাইভেট ব্লগিং বেশীদিন চলিতে পারে না। যেভাবেই হউক একদিন তাহার এই ব্লগ সংসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবেই করিবে। ইহা লইয়া একটু লজ্জামিশ্রিত গর্বের ভাবও ছিল তাহার। সামান্য দ্বিধাও কি ছিল না তাহার বুকে?

...একে একে আগের মন্তব্যগুলো মুছিতে শুরু করিল অনিমেষ। দীর্ঘক্ষণের কাজ সন্দেহ নাই। তবে এই কাজ তাকে করিতেই হইবে। একে একে মুছে যাইতেছে AK47, চিচিং FUCK, অসহ্য নীলা ও কামরূপের কমেন্টগুলো... দ্বীপ হইতে অনিমেষসমূহ মুছিয়া যাইতেছে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন