জেব্রা ক্রসিং
(১)
চলন্ত রোদে জেব্রা ক্রসিং পার করি
জীবনকে গুঁজে রাখি মানিপকেটে
আনমনে আসা ট্রাম
বিদ্রোহী বাসেদের হুংকার,
দুটো জ্বল্ জ্বলে হলুদ চোখের রাঙানিতে ভয়!
জীবনকে গুঁজে রাখি মানিপকেটে
আনমনে আসা ট্রাম
বিদ্রোহী বাসেদের হুংকার,
দুটো জ্বল্ জ্বলে হলুদ চোখের রাঙানিতে ভয়!
চাপ চাপ রক্তে ভেজা রাস্তায় জীবনানন্দ
হেঁটে হেঁটে
ক্লান্তি শেষে…
ক্লান্তি শেষে…
শক্ত পিচের মেঝেতে খুঁজে পায়
বিষণ্ন বোধহীন জীবনের আনন্দ।
বিষণ্ন বোধহীন জীবনের আনন্দ।
(২)
জেব্রা ক্রসিং পার করে যায় রাতে
দিত-রাতের নিয়ানুবর্তিতা
চড়াই ঠোঁটে খড়কুটোর প্রশ্ন
দু'পা জেব্রা ক্রসিং-এর তোয়াক্কায়
কালের অতি মহামানবের জ্বল্ জ্বলে চোখ ফুটে।
দিত-রাতের নিয়ানুবর্তিতা
চড়াই ঠোঁটে খড়কুটোর প্রশ্ন
দু'পা জেব্রা ক্রসিং-এর তোয়াক্কায়
কালের অতি মহামানবের জ্বল্ জ্বলে চোখ ফুটে।
দুই তিন চার আট পেয়ে জন্মজাত
চলমান নির্বোধ, দুরন্ত অবোধের দল
পাখা ছাড়াই পৌঁছে দিতে পারে-
আকাশে ভরা চাঁদ নক্ষত্র তারাদের মাঝে।
চলমান নির্বোধ, দুরন্ত অবোধের দল
পাখা ছাড়াই পৌঁছে দিতে পারে-
আকাশে ভরা চাঁদ নক্ষত্র তারাদের মাঝে।
ওখানে জেব্রা ক্রসিং অর্থহীন
দেশ-ধর্ম-জাত বৃত্তহীন।
দেশ-ধর্ম-জাত বৃত্তহীন।
(৩)
শিবের কালো পিচের কপালে তিন সংখ্যার
বর্ধিত সরলরেখায় নত মস্তকে জনসাধারণ।
সমুদ্র, ঝর্ণা, সাগর
প্রতীক্ষায় টুকরো টুকরো ঢেউ...
বর্ধিত সরলরেখায় নত মস্তকে জনসাধারণ।
সমুদ্র, ঝর্ণা, সাগর
প্রতীক্ষায় টুকরো টুকরো ঢেউ...
ক্যালেন্ডারের সঙ্গে জনসংখ্যার পরিবর্তনের হারে
চাকাহীন কালোয় সাদা ডোরাকাটা রাস্তায়
একে একে সবাই করে পাহাড় গিরিপথ লঙ্ঘন।
চাকাহীন কালোয় সাদা ডোরাকাটা রাস্তায়
একে একে সবাই করে পাহাড় গিরিপথ লঙ্ঘন।
সমতলের বুকে পা রেখে এদিক ওদিক
অদ্ভুত ভাবের এক পর্বতারোহণ।
অদ্ভুত ভাবের এক পর্বতারোহণ।
বরফ টুকরোগুলো বেতালে ছিঁড়ে ছিটকে
রক্ত স্রোতের ঝর্ণা ধারায় গড়িয়ে চটকে চটকে
কালো চামড়ার হৃদয়হীন কার্পেটে
আছড়ে পরে...
জেব্রার ক্রসিং-এর বুকে
নিস্তব্ধ সাহসী বুকের স্পন্দন।
নিস্তব্ধ সাহসী বুকের স্পন্দন।
(৪)
মুখোমুখি এপার ওপারের ব্যস্ত
শহরের
টুকরো টুকরো কথা
নিমগ্ন আলাপচারিতায় ব্যস্ত
দিগন্তের রাস্তায় শুয়ে শুয়ে
জেব্রা ক্রসিং শোনে আলাপচারিতার সেই নকশীকথা।
জেব্রা ক্রসিং শোনে আলাপচারিতার সেই নকশীকথা।
কৌতূহলী জনতার ভীড়ের পাতায়
হয়তো কোনোদিন আদিম জঙ্গলের দীর্ঘ সরণী পার করে
হয়তো কোনোদিন আদিম জঙ্গলের দীর্ঘ সরণী পার করে
গড়ে উঠেছিল সারল্যমাখা দু’টি গ্রাম,
পারাপারের সেতু - নদী
পরিবর্তিত আজ মাটি পাথর তরল লেভেল জেব্রা ক্রসিং ।
মাঝি দাঁড়হীন নদী পার করে
দু'পায়ের সঙ্গী বনমালী
জল জমে জমে পাথর - পীচ কালো মন
সাদা সরলরেখা টেনে রাখে জন্মজাত সংস্কারের খুঁটি।
জল জমে জমে পাথর - পীচ কালো মন
সাদা সরলরেখা টেনে রাখে জন্মজাত সংস্কারের খুঁটি।
(৫)
অস্ত্রের গান সরব হলে
কালো কার্পেটে জমাট বাঁধে রক্তদানা
সহানুভূতি আলোড়ন তোলে
ধিক্কার স্লোগানের মিছিল হাঁকে রাস্তায় রাস্তায়
জেব্রা ক্রসিং কেঁদে লুটোপুটি।
কত নিথর চোখ শূন্যে চেয়ে থাকে
উদাসীন বেপরোয়া খেয়ালের গতির তালে
চিরহরিৎ-এর ছাল বিমোচন
একটু আলোড়ন
চোখের জলের ধারা গড়িয়ে পরে রাস্তায়
বর্ষার মুক্তো কালো পিচের ওপর
কখনও শিশির বিন্দু রূপে।
জেব্রা ক্রসিং-এর শরীর ছুঁয়ে যায়।
(৬)
কালো পিচ ডাকে
নীরবে তাকিয়ে থাকে
সরবে হাঁকে
আরও তিনটি, তিনটিরও অনেক বেশি
কপালের নয়, চুলের সংখ্যায়
কালো বুক ভরে উঠুক
কালো সাদা ডোরাকাটায়
রাস্তাও হুংকারে গর্জে উঠুক
রাস্তা শুনিয়ে যায় জেব্রা ক্রসিং-এর কথা-
“অনিয়মের জঙ্গলে একটু মাটির- গন্ধ
মাখা
দু’পাশে জনতার ক্ষণস্থায়ী মেলা
ব্যস্ততা দ্রততার মাঝে জীবনগাঁথার
ছায়া
হাতে হাত রেখে বিশ্বাসের আশ্বাসে ভরা
জেব্রা ক্রসিং-এর বুকে পা রেখে নিশ্চিন্তে পথ চলা”
জেব্রা ক্রসিং সহ্য করে আনন্দে সব ব্যথা
পথিকের পায়ের ধুলিতে নুইয়ে আজও উচ্চে মাথায়
জেব্রা ক্রসিং সব জানা-বোঝার সরল লাইনে
কালো-সাদার মাঝে
নীরবে
লুকিয়ে কাঁদে
অবহেলিত পথিকের পদক্লিষ্টের ব্যথায়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন