দেওয়াল
‘স্বর্গের জানালা খুলে অজস্র তারার চোখে ঈশ্বর তাকিয়ে আছেন
পৃথিবীর দিকে।’ এটা কি কবির হেঁয়ালি? তারাভরা রাতে অজস্র তারার মাঝে কতদিন যে
ঈশ্বরের চোখ খুঁজেছি আমি! কিন্তু কোথায়
চোখ?
সর্পিল ছায়াপথে আলোর সংক্রমণ চলে একটি তারা থেকে অন্য তারায়। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
ঠিকরে পড়ে উল্কা হয়ে দিকবিদিক। হাত জোড়
করে সেই আলোকে উপলক্ষ্য করে আমি বর চাই, হে ঈশ্বর শান্তি দাও!
সোডিয়াম হলুদ আলোর বিস্তার শাহবাগ থেকে বাংলামটর অব্দি।
থেমে থাকা সারি সারি মোটরযান, জোড়া চোখে
জ্বলন্ত আগুন। এগারো তলার ব্যাল্কনী থেকে ওদেরকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দেখায়। আমি
সেই আলোক বিন্দুর কাছে নতমাথা হই। তবে কি
আলোই ঈশ্বর? আঁধারের নাম কি? ধরে নিই, আঁধারের
শামিয়ানা ঢাকা রাতে ঈশ্বরের চোখ পৃথিবীকে
দেখতে পারছে না ঘোর অমাবস্যায়। এখন এই সৃষ্টিলোক
ঈশ্বরের কৃপা বঞ্চিত। সমুদ্রে আগুন, স্থলে গাছ নেই, নেই মনুষ্য বা
অন্যান্য প্রাণীকূল। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ধোঁয়ার আন্দোলন। ঈশ্বর বন্দনা স্থগিত হলো
অনাদি কালের জন্য। উফ! হতে পারে? ওম
শান্তি!
ঈশ্বর মঙ্গল, ঈশ্বর ধর্ম, ঈশ্বর সত্য। তাহলে এর
বিপ্রতীপের সৃষ্টিকর্তা কে? পৃথিবীতে যা
কিছু আঁধার, যা কিছু জঞ্জাল, মিথ্যা, প্রবঞ্চনা
সেসব কার সৃষ্টি? প্রশ্ন আর প্রশ্ন। এবং কেবলই কনফিউশন।
সেদিন খবরের কাগজে অদ্ভুত এক দেওয়ালের সন্ধান পেলাম। বুরক
দেওয়াল । সে দেওয়ালে মাথা রেখে দুঃখী মানুষের দল শুধুমাত্র কাঁদতে আসে, আহাজারি করে। দেওয়ালেরও কান আছে। সে কান ঈশ্বরের। রুটি চাই, রুজি চাই, চাই সুখ, শান্তি। ঈশ্বর শোনেন কিনা, দুঃখী মানুষগুলো নিশ্চিত নয়।
কিন্তু বিশ্বাস, তিনি শুনছেন। তাঁরা ভাবেন
ঈশ্বর থাকেন সুখী মানুষের ঘরে আর দেওয়ালের ওপারে । আমি ভাবি সুখী মানুষ আর ঈশ্বরের মাঝে কোন স্পেস
নেই। আমিও একটি দেওয়ালের খোঁজে হাঁটছি। তবে কাঁদব না, দেওয়ালে মাথা রেখে হাসব। আমার সাথে ঈশ্বরও হাসবেন।
বহুদিন পর হুল ফোটানো বৃষ্টির টানা কোলাহল চলছে। সবকিছু ভিজে
যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে। আমি হাঁটছি। শাকুরা, রূপসী বাংলা, শাহবাগ
নীলক্ষেত হয়ে পলাশী পেরিয়ে সরু গলি। বানভাসি বর্ষায় ক্রমশ ডুবছে আমার জুতা, পায়ের গোড়ালি, জিন্স। নোনা পানিতে ভাসছে চিবুক। একটি রিকশা গড়িয়ে কাত হয়ে পড়ল ম্যানহোলের গর্তে। আরোহিণী
দুজন মা ও মেয়ে নিশ্চয়ই। শ্যামলা
মেয়েটি স্কুলব্যাগ মায়ের দিকে ছুড়ে দিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ল ঘোলা জলে। দু’হাতের ঝাপটায় ওর চোখে মুখে আর চারপাশে পানির ফোঁটা সহস্র ভাগে বিভক্ত। মেয়েটির মায়ের
চোখে মুগ্ধতা, ঠোঁটের কোণে এক টুকরো রোদহাসি।
এই হাসি কার? মায়ের, নাকি ঈশ্বরের?
ফোন বাজছে। রূপা, আমার ছোটবোন। কণ্ঠে বেহালার রিদম।
হ্যালো দাদা! শোন, ফুটফুটে একটি পরী সন্তানের বাবা হয়েছ তুমি। কংগ্রাচুলেশনস ম্যান!
আমি, বাবা? হা ঈশ্বর, শুনতে পাচ্ছ? বল তো, এই শিশুটির
জন্মদাতা কে?
আমি হাসছি, অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছি। সামনে বোধশূন্য দেওয়াল। কোনো
প্রতিধ্বনি নেই। তবে কি ওপাশে
ঈশ্বর নেই? নাকি পুরো দেওয়াল জুড়েই
ঈশ্বর!
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনBES.KOBITAR SARIR.KINTU DARSHONER MONON.
উত্তরমুছুনthanks a lot :)
মুছুনগল্পটাতে গল্পকারের কবিত্বের পরিচয় মেলে। এই ধাঁচে লেখকের আর কোনো গল্প পাই নি। নিরীক্ষা ভালো লেগেছে।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ জহির :) আশান্বিত হলাম ।
মুছুন