কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭

রঙ্গন রায়

জুলাই মাসের কবিতা


কীরকম হাত পা গুটিয়ে বসে আছি। যেন যুদ্ধ শেষ  
হয়ে গেছে। ক্লান্ত দেহছোট পাখি ছোট বাসায় ফিরে
এসেছে, জোনাকি জ্বলছে ঘরের দেওয়ালে
এই যে অন্ধকার ব্যালকনি - তোমার সন্ধ্যাবাতিতে বন্দী
হয়ে গেছি - মোবাইলে বাজছে 'জব কোই বাত বিগড় যায়ে'
এখনো কিছু কিছু মেঘ বৃষ্টি নামাবে বলে ধেয়ে আসে,
                                                     ধেয়ে যায় সাঁঝের বাতাস...
চুল উড়ছে - ভেঙে পড়ছে কপালে, সন্ধ্যাপ্রদীপে তুমি এতটাই দৃশ্যমান
গালের মসৃতায় পিছলে যাচ্ছে আলো,
যুদ্ধ শেষের পরে যেভাবে বাড়ি ফিরে আসতে হয়
যতটা শান্তি - কোমল ভালোবাসায় সেইসব বৃষ্টি নেমে আসে -
এত উচু থেকেও দেখি                                                                  
                  জলের ফোটায় বুদবুদ্ জেগে উঠছে, ফেটে যাচ্ছে -
ওপাশে ফ্ল্যাটের বাচ্চাটা ভিজবে বলে কান্না জুড়েছে -
টিউশন ফেরত ছাতা নিতে ভুলে যাওয়া মেয়েটিকে দেখি,
ওর্ণা মাথায় চাপা
উড়িয়ে নিয়ে যায় জুলাইমাসের প্রেম।
ল্যাম্পপোষ্টের আলো রাস্তায় চকচক করছে
এই জল কত মোহময়, তুমি জানো
যেন এক্ষুনি কাগজ নিয়ে নেমে পড়তে হবে শৈশবে,
                                              নৌকা অপেক্ষারত-

ব্যালকনি থেকে তুমি এখনো ভালোবাসছো বলেই
                           জুলাই মাস স্বার্থক হয়ে উঠছে



থার্ডবেল


যে ভীষণ উত্তেজনা বুক ঢিপঢিপের কারণ
আমরা তার পেছনে বসে আছি হাঁটুমুড়ে।
প্রেক্ষাগৃহে দ্বিতীয় বেল পড়ে গিয়েছে।
এরপর পর্দা খুলবে আর অডিটোরিয়াম
জুড়ে যে দুর্ধর্ষ দর্শকের দৃষ্টি তা
প্রথমেই দর্শন করে নেবে আমাদের।
সমস্ত অন্ধকারের মধ্যে যেভাবে
মাঝে মাঝে জোনাকির গন্ধ ছুটে আসে -
আমরা রস্টামে বসে ঘ্রা নিচ্ছি
পরস্পরের ঘাম। মেয়েরা পুরুষালি
গন্ধে ছেলেরা মেয়েলি -
কখনো দুয়ে মিলে জটিল আবর্তের মাধ্যমে  
অপেক্ষা, সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে থার্ডবেল
স্মোকলাইট জ্বলে উঠলো।
নমস্কার। পর্দা খুলে যাচ্ছে।
এইবার দৃশ্যমান হবে থার্ডফর্ম।

ইভের জন্য

আসামের বিহু নাচ কেনার খুব শখ ছিল।
তুমি টোকা কিনে নিয়ে এলে
বললে, আসামের জিনিস...
ঠাকুর্দা রেলে চাকরি করতেন। সাহেব ছিলেন।
এভাবেই আমি আসাম কিনে ফেলি।
যেদিন গণ্ডার দেখলাম প্রথম
বাবার এক আসামীয়া বন্ধুর দুর্দান্ত স্বাস্থ্য
আমার মনে পড়ে যায়,
কেন পড়লো মনে? এরকম হয়, অনেকেরই হয়
যেভাবে প্রথম আদমের মনে পড়েছিল ইভের কথা -
                                                বেঁচে থাকার কথা


মহাজীবনের খন্ডকাল


স্নানের ভঙ্গিমায় কিছু গন্ধ লেগে জলের
মগের সাদৃশ্য খুঁজে পেতে বদনা বা গাড়ু
দুঃখিত। আজকাল আর স্নানের কথা শুনলেই
হস্টেলের পাশের বাড়ির মেয়েটার মুখ
মনে পড়ে না,
কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে গাঢ় কুয়াশার মতো

আমার দৃষ্টি বারবার সেই কুয়াশা খুঁজে চলে।

ঠাকুরঘর

বুড়িদি নামটা আমার পছন্দ নয়।
আমি নাম ধরে ডাকতে ভালোবাসি,
কেউ কেউ যারা চশমা খুলে বই পড়ে
তারা বুড়ি নয়, আমি বুড়ি বলতে
সাদা চুল বুঝি - একটু কুঁজো...
পথের পাঁচালী মনে পড়ে যাচ্ছে
জলশহর থেকে নিশ্চিন্দিপুর কতটা দূর হবে?

এইমাত্র যেন বৃষ্টি নেমে এলো পথে
পাঁচালীর সুর গিয়ে পৌঁছচ্ছে মায়ের কানে কানে -
আমার মায়ের ঠাকুরঘর ছিল না কোনোদিন 










2 কমেন্টস্: