কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

ঊষসী ভট্টাচার্য


আরশি...  THE BROKEN MIRROR 




সিনেমা বানাব বা সিনেমা বানাতে পারি, এমন চিন্তাই কোনোদিন মাথায় আসেনি। সিনেমা বা নাটক দেখতে ভালোবাসি ছোটবেলা থেকেই। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্ত্বিক ঘটকের হাত ধরেই বাংলা সিনেমার প্রেমে পড়া। পড়াশোনার সূত্রেই বাংলা  তারপর নাটক নিয়ে পড়া। লেখার সাহসটা অনেকদিন ধরেই করে যাচ্ছি। কিছু প্রশ্রয় পাওয়ায় সাহসটা দু:সাহসেও পরিণত হয়েছে। কিন্তু নিজে পরিচালক হব বা সিনেমা বানাব, এমন চিন্তাই করিনি। নাটক নিয়ে যখন স্নাতকোত্তর পর্বে পড়তে গেলাম, তখন নাটক লেখাটাকেই নির্বাচন করলাম। হঠাৎ করে একদিন অনিলদা বলল, তুই পরিচালনা করতে পারিস তো! নাটক লিখিস, নাটক পরিচালনা করলেও তো মন্দ হয় না! অনিলদা আমার অগ্রজ লেখক, ফ্রেন্ড ও ফিলোজফার। অনিলদার কথায় মাথার পোকা নড়ে উঠল সেই। কিন্তু নাটক পরিচালনা করব যে, রসদ   কোথায়? আমার বান্ধবী জয়িতা আর আমি মিলে তখন ঠিক করলাম, নাটক না পারি স্বল্প দৈর্ঘ্যর চলচ্চিত্র তো করতেই পারি! বাবার মদতও পেয়ে গেলাম। ব্যাস  আর কী, নেমে পড়লাম কাজে। ২০১৫য় সেই, প্রথম যাত্রা শুরু, জন্মান্তরদিয়ে। মহাভারতের অম্বা-শিখণ্ডিনীকে নিয়ে নতুন ভাবে কিছু করব, এই ভাবনা থেকেই কিছু করা। করেও ফেললাম। গোপীদা ক্যামেরায় ছিলেন জয়িতা, সুস্মিতা, অনির্বাণ অভিনয় করল। পরিচালনায় সাহায্যও করল জয়িতা অনির্বাণ। তারপর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টেও অতি সাহস করেই পাঠিয়েও দিলাম সিনেমাটি। কিন্তু সেটি যে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হবে, এটি আশাও করিনি। সাহস পেলাম, উৎসাহ পেলাম। এবছর নির্মাল্যদার গল্প দহন নিয়ে বানালাম আরশি... THE BROKEN MIRROR গল্পটি  একটি সাধারণ দাম্পত্য, সাধারণ বিশ্বাসঘাতকতার গল্প। তবু এর একটি নিজস্ব সারল্য আছে। নির্মাল্যদার উৎসাহেই কাজটি করে ফেলি। সঙ্গে ছিল অনসূয়া, শিব, সায়ন্তী, আবির, প্রবীর, অঙ্কুশ, শিবলি,দেবলীনা সবাই। এবারেও কলকাতা ফিল্ম ফেস্টে সিনেমাটি পাঠাই গত নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ এটি প্রদর্শিত হয়।

আগেই বলেছি, আমি রিচালক নই। পরিচালক হবার যোগ্যতাও হয়তো নেই আমার। তবে বাবা, অনিলদা, জয়িতা এদের প্রশ্রয়-আশ্রয় অনুপ্রেরণায় পরিচালক অভিধায়  কাজ শুরু করেছি। এবছর আরশি...’ দেখতে অগণি মানুষ যখন নন্দনে এলেন, খুব ভালো লাগল। তাঁদের মতামত পেলাম, সমৃদ্ধ হলাম। আমি জানি, আমার কাজে অনেক ভুল আছে, অনেক অপারগতা আছে, অনেক না-শেখা আছে। বু কাজ করার আনন্দ নিয়েই কাজ করেছি বং ভবিষ্যতেও আরো কাজ করব, আশা রাখি


রিভিউ  

মানুষের মন, সম্পর্ক আর তার ক্ষণ ভঙ্গুরতা এটাই এই সিনেমার উপজীব্য। যুবক স্বামী আর তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর নিশ্চিন্ত সুখের সংসারের সবটাই যে নিটোল নয়, সেটা স্পষ্ট হলো। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যুবক স্বামীর ক্ষণিক চারিত্রিক বিচ্যুতি একমুহূর্তে  মানুষের ভিতরের লোভী চেহারাটা চিনিয়ে দেয়। সে নিজের বাসনা চরিতার্থ করতে অর্থের টোপ ফেলে এবং প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন স্ত্রীর কাছে কাজের মেয়েটিকেই অপরাধী প্রমা করতে চেষ্টা রে, আর তাতে তার নীতিহীনতা প্রকট। স্ত্রী স্বামীকে  ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, কিন্তু কাজের মেয়ে টিয়াকেও চেনে ভালোভাবে। তবু স্বামীর  কথাই মেনে নেয় দ্বিধা সত্বেও বুঝি কোনো বাধ্য বাধকতায় বাঁধা সে। সন্তান সম্ভাবনাও একটা পরম বাধা পরে যখন আসল ব্যাপার বুঝতে পারলো, তখন ভাঙ্গা  আয়নার মতো ভেঙে টুকরো হয়ে গেল তার বিশ্বাসের ভিত কিন্তু ভাঙা আয়নাতে  মানুষের বিকৃত রূপ দেখা যায়, আঠা দিয়ে জুড়লেও রূপ আর স্বাভাবিক হয় না তাইআরশি’ (The broken mirror)। কত সম্পর্কই তো এরকম জোড়াতালি দিয়ে চলে, চলতে বাধ্য হয় নানা কারণে। কত মানুষ, মানুষের সম্পর্ক, জীবন অহরহই  এরকম ভাঙ্গা আয়না জুড়েই চলে, চলছে ছবিটি আমার ভালো লেগেছে। নির্মাল্য বিশ্বাসের গল্প কিছু না বলেও অনেক কথা বলে, আর ঊষসীর নির্দেশনা সেই না-বলা  কথাটুকুও আমাদের মনের গভীরে পৌঁছে দেয়। আমাদের অনুভব করতে, ভাবতে বাধ্য করে, সেটাই এদের কৃতিত্ব কিন্তু দু-একটা কথা না বলে পারছি না )   আমার মতে অতনুর চরিত্র আরেকটু প্রস্ফুটিত হওয়া দরকার ছিল। তাকে লম্পট ধরনে মানুষ মনে হয় নি কিন্তু; তাহলে কোন শারীরিক বাধ্যতা তাকে এইরকম কাজে নামতে বাধ্য করল, কেন, আমি বুঝি নি। এমনি হঠাৎ একদিন সুযোগ পেয়ে  কেউ এইরকম ঝুঁকি নেয় কি? ) জাহ্নবী এত সহজে যে স্বামীর পদস্খলন (একটা নয়, একসঙ্গে দুটো, কামুক স্বভাবের প্রকাশ এবং মিথ্যাচার) মেনে নিল, তার বাধ্যতা কি ছিল সেটাও একটু বোঝানো উচিত ছিল। আপন মনে কান্নার ভিতর দিয়েই সেকথা সে নিজেকেই বলতে পারতো!

ক্যামেরার কাজ ভালো, ছিমছাম, সীমিত খরচে  এর থেকে বেশি করা সম্ভব নয়। অভিনয়ে টিয়াকে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বউ জাহ্নবী মানানসই কিন্তু মূল চরিত্র অতনুর অভিনয় আরেকটু ভালো হাওয়া দরকার ছিল সেই মূল চরিত্র, কিন্তু তার মনের টানাপোড়েন, শেষ পর্যন্ত  কামনার জয় এবং ব্যর্থ হয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া, এগুলি আরেকটু প্রকট হলে ভালো তো মনে হয়এদের কাছ থেকে ভবিষ্যতেও আরো ছবি পাবো আশা রাখি শুভকামনা রইলো যাত্রা শুভ হোক

ছবিটির সঙ্গে যুক্ত সব কলাকুশলীদের সম্পূর্ণ তালিকা দিলাম-  
 
কাহিনী - নির্মাল্য বিশ্বাস
অভিনয় শিব (অতনু, বর), সায়ন্তী ঘটক (টিয়া, কাজের মেয়ে), অনসূয়া দাস (জাহ্নবী, বউ)
ক্যামেরা - মহ: আরাফাত হোসেন
সম্পাদনা - প্রবীর কুন্ডু
আবহ - অঙ্কুশ
সাবটাইটেল - দেবলীনা চৌধুরী
বিশেষ কৃতজ্ঞতা - শিবলি
চিত্রনাট্য পরিচালনা - ঊষসী ভট্টাচার্য

মমতা দাস


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন