কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

নদী 

জলের শব্দ শুনছি তোকে খুঁজছি নদী
কোথায় গেলি
পাতার ফাঁকে পথের বাঁকে খুঁজতে থাকি

হাঁটছি আমি
এলোমেলো বনপথে
বেশ ছিলি তুই এতটা পথ সঙ্গী ছিলি কাছাকাছি
বেশ ছিলি তুই কেন এমন হারিয়ে গেলি
আমার গোপন ভালোবাসা হঠাৎ এমন কাঁদতে থাকে

হাঁটছি আমি
ঘরভোলা এক ভবঘুরে উঁচুনিচু পাহাড় পথে
মার্শ ম্যারিগোল্ড রডোড্রেনডন ব্রহ্মকমল ফুটে আছে
আমি আর সঙ্গী গীটার তোর ধারাজল খুঁজি কেবল

ঝরা পাতায় ঢাকা কবর পাইন বনে
চালাঘরের ভগ্ন দশা বাঁশের ঝাড়ে হাওয়ার শ্বাস
একলা পাখির আর্তনাদ
আমার সুজন হারিয়ে গেছে ঠিক এমন তোরই মতোন


শব্দ


শব্দের ভেতর থেকে শব্দ আসে এক
কথার ভেতরে থাকে আবছায়া ইঙ্গিত
জ্বলে যায় পুড়ে যায় রাত্রির বালিহাঁস
তাকে ঘিরে মানুষের উল্লাস
মদ ও ভোজনের মহা আয়োজন


এই যে অবিরাম রয়ে গেছি গোলাপের উদ্যানে
কখনও কি মৃত্যুর কথা ভেবেছি আমি
অথচ আলগোছে দরোজায় কে রেখেছে হাত


বিধ্বস্ত রয়েছে দূরে রাতের পাহাড়
যাবতীয় কোলাহল মেখে সে
মন খারাপ করার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে
যাবতীয় কোলাহল মেখেছে সে
পোড়ামাংস মদের গন্ধ মেখেছে পাহাড়


কখনও কিছু বলে না সে  
বাতাসে কাঁপন এনেছে পাতার দল
পড়ন্ত শব্দের ভেতর শব্দ আসে আরও


কে যেন বাজিয়ে যায়
আদিবাসী মাদলের বুকভরা হাহাকার



শব্দেরা

কদাচিৎ দু’একটি পাখি শব্দ করে ফিরে আসে
দিবসের বিখ্যাত ভ্রমণের শেষে
আমিও জ্বর গায়ে বারান্দায় থাকি
পাখিদের সঙ্গে কিছু কথা বাকি
হৃদয়ের ভেতরে কেউ কথা পুঁতে চলে গেছে

আমাদের ঘুম ঘুম নির্যাতিত চোখ
সে সব স্বপ্ন দেখেছিল
উচ্চারণে পাই না কোথাও সেই ক্ষণজীবী
বাতাসের ঘ্রাণ
তবুও একরাশ পাখি সারাদিন উড়ে গেছে মাথার ভেতরে
আমাকে ছিন্ন করেছে শেকড়ের থেকে

কিছু পাখিদের বলি তোরা তো এখনও
মরূদ্যান খুঁজে পেতে ঠোঁটে করে এনেছিস
এমন এক হাসিখুশি
আমি কান্না ভুলে যাই
ভুলে যাই জ্বর

অধিক পাখিরা কিন্তু হিরণ্ময়ী স্তব্ধতায় ফিরে যেতে চায়
শব্দ ভুলে গেছে



জয়ন্তী ল্যাপটপে

কাল রাত কাটিয়েছি একসাথে-
কনসার্ট দেখে ফিরছিলাম,
নির্জন শহর, বিশেষ করে এ-তল্লাট;
বারবার ধরছিলে হাত।

এখন সকাল, তোমার নজরে আমার ল্যাপটপ,
ফোল্ডারে রাখা জয়ন্তীর অজস্র ছবি-
নানা সময়ের, ব্যাখ্যা কিছু নেই;
বাইনারি পদ্ধতিতে কম্পিউটার-
তার ফাইল ছবি সঙ্গীত
আসলে শূন্য এবং একের বাইরে কিছু নয়।

বাতির জ্বলা নেভা, হ্যাঁ অথবা না;
আমি তো দেখি বাতাসে ঝুলছে ফাঁসির দড়ি।
শূন্য এবং একের মত থাকা অথবা নয়,
বাঁচা অথবা মরে যাওয়া;
গাছে গাছে সার সার মৃতদেহ,
এদিকে মনে তরতাজা জয়ন্তী,
ল্যাপটপে বোঝাই ছবি,
জয়ন্তীকে নিয়ে এর বাইরে ব্যাখ্যা কিছু নেই।
তুমিও এভাবে ভাবতে পার।


রমণীরা

কোনো জটিলতা ছিল না আকাশে,
আমরা প্রান্তরে হাঁটছি ঈষৎ বৃষ্টিপাতে,
কুড়িয়ে নিচ্ছি বালকের সারল্য,
সংগ্রহশালা ক্রমশ ভরে গেল

আমরা এখন দীর্ঘস্থায়ী শীতকালে,
আমরা এখন শীতের বিকেলে,
আমাদের কোনো দৃষ্টিপাত নেই,
বিবশ মৃত্তিকা শুধু জানে
নিয়মিত হলকর্ষণ,
শস্য আহরণের পরে সুদীর্ঘ মুগ্ধতা।
আমাদের চারপাশে ক্রমশ যারা ভিড় করে আসে
তারা কি একই রকম সমস্ত ঋতুতে?
এমনকি রমণীরাও
কি একই রকম হাসে ইদানীং?






0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন